Shaban-Ramadan 1437   ||   May-June 2016

অভিধান ও শব্দকোষ অর্থে القاموس শব্দের ব্যবহার : একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর

 

রোযনামচার পাতা থেকে 

[০৫ জুমাদাল উলা ১৪৩৭ হি. ০৩ ফাল্গুন ১৪২২ বাংলা, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ . সোমবার] 

প্রশ্ন : গতকাল জুমাদাল উলা ৩৭ হি. সন্ধ্যা ৭টা ২১ মিনিটে আমার পুত্র সাইফুল্লাহ ফুআদের উস্তায আমার প্রিয় মাওলানা ইমদাদুল হক ফোন করে বললেন, কিছু ছাত্র আমাকে মাসিক আলকাউসারে চলতি সংখ্যার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, অভিধান শব্দকোষ অর্থে القامُوْس   শব্দের ব্যবহার নাকি ভুল। বাস্তবতা কী? আমি তাঁকে উত্তরে যা বলেছি, তা আরও পরিষ্কার করে এখানে বলছিÑ

আলকাউসারে লেখাটি আমিও দেখেছি। লেখাটি ফেব্রুয়ারি ১৬ সংখ্যার ৪৩ নং পৃষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের পাতায় প্রকাশিত হয়েছে। আলকাউসারে অবশ্য অভিধান শব্দকোষ অর্থে القامُوْس শব্দের ব্যবহারকে ভুল বলা হয়নি। বলা হয়েছে মুনাসিব ব্যবহার নয় তবে পরবর্তীতে বলা হয়েছে, শব্দকোষ অভিধান অর্থে আরবীতে المُعْجَم শব্দটি ব্যবহৃত হয়। বাক্যে যেহেতু শুধু المعجم শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে, القامُوس শব্দটিও উল্লেখ করা হয়নি, তাই বাক্য থেকে অনুমিত হয়, শব্দকোষ অভিধান অর্থে القاموس শব্দের ব্যবহার মুনাসিব নয় দ্বারা হয়ত ভুল বুঝানো হয়েছে। তাছাড়া মুনাসিব ব্যবহার নয়-এর পর লেখা হয়েছে, কারণ আল-কামূস শব্দের অর্থ সাগর বা সমুদ্র। এখানেও যেহেতু القاموس শব্দের অর্থ শুধু সাগর বা সমুদ্র লেখা হয়েছে, অভিধান শব্দকোষ লেখা হয়নি, তাই থেকেও অনুমিত হয়, শব্দকোষ অভিধান অর্থে القاموس শব্দের ব্যবহার মুনাসিব নয় দ্বারা ভুল বুঝানো হয়েছে। উপরন্তু শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ.-এর নি¤œাল্লিখিত اِقْرَأْها دائمًا : ্রالمعاجمগ্ধ  উক্তির অর্থ তো এটিই হয় যে, ولا تَقرَأها أبدًا : ্রالقواميسগ্ধ-  যেন অভিধান অর্থে القاموس শব্দ ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই।

তাই আপনাকে যারা বলেছে, আলকাউসারের চলতি সংখ্যায় অভিধান শব্দকোষ অর্থে القامُوْس শব্দের ব্যবহারকে ভুল বলা হয়েছে, তারা খুব একটা ভুল বলেনি। আলকাউসারের কথাটি কিছুটা ঠিক যে, আল-কামুস শব্দের অর্থই অভিধান নয়। কিন্তু আলোচনা তো এখানে অর্থ নিয়ে নয়। এখানে আলোচনা হল ব্যবহার নিয়ে। আলকাউসারের ভাষাটি আবার দেখুন, মুনাসিব ব্যবহার নয় কিছুটা বলার কারণ হল, যদি লেখা হতো, আল-কামুস শব্দের আদি অর্থ অভিধান নয়, তখন পুরোটা ঠিক হতো। কারণ কোনো শব্দের আদি অর্থই শুধু শব্দের অর্থ নয়। আদিতে হোক আর পরবর্তীতে, একটি শব্দের যত অর্থে ব্যবহার ভাষা একাডেমীগুলোর পক্ষ থেকে স্বীকৃত, সবগুলোই শব্দের অর্থ। 

একটু পরে আমি যথাক্রমে

المُعْجَم الوسيط، المُنْجِد في اللغة، المُنْجِد الأَبْجَدِيّ، المُنْجِد في اللغة العربية المُعَاصِرَة، الرائد

অভিধানগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে القاموس শব্দের অর্থ উল্লেখ করব। তাতে আপনি দেখতে পাবেন, অভিধান শব্দকোষ অর্থে القاموس শব্দের ব্যবহারকে ভুল আখ্যা দেয়ার সুযোগ নেই। এটি অবশ্য ঠিক যে, শব্দটির আদি অর্থ সাগর সমুদ্র। অভিধান শব্দকোষ অর্থ পরে য্ক্তু হয়েছে। যদি অভিধান শব্দকোষ অর্থকে ভুল বলা হয়, তাহলে বলতে হবে,

المُعْجَم الوسيط، المُنْجِد في اللغة، المُنْجِد الأَبْجَدِيّ، المُنْجِد في اللغة العربية المُعَاصِرَة، الرائد

অভিধানগুলোতে ভুল লেখা হয়েছে এবং القاموس নামে যারা নিজেদের অভিধানের নামকরণ করেছেন তাঁরা না-মুনাসিব কাজ করেছেন। নি¤œ আমি ধরনের ১১টি অভিধানের একটি তালিকা উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ।

আদি অর্থ সাগর বা সমুদ্র হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের অভিধানকে ফায়রুযআবাদী রাহ. প্রমুখ القاموس নামে কেন নামকরণ করেছেন, সেটা ভিন্ন এক প্রসঙ্গ। সেই ভিন্ন প্রসঙ্গের বিবরণ হল, অভিধানকে তাঁরা সমুদ্রের সাথে তুলনা করেছেন। সমুদ্র হল পানির সাগর। আর অভিধান হল শব্দের সাগর। এই হল القاموس শব্দের আদি অর্থ পরবর্তী অর্থের মধ্যকার যোগসূত্র।

অভিধান শব্দকোষ অর্থে القاموس শব্দের ব্যবহার মুনাসিব না হওয়ার দাবি কতটুকু মুনাসিব, এর জন্য নি¤œ উদ্ধৃতিগুলো দেখুন। অর্থের ভিন্নতা বোঝার সুবিধার জন্য আমি নম্বর ব্যবহার করেছি। الرائد ছাড়া অন্য উদ্ধৃতির নম্বরগুলো মূল কিতাবের অন্তর্ভুক্ত নয়।

1.في المعجم الوسيط :

1. البَحْر العظيم. 2. وعَلَمٌ على مُعْجَم الفَيْرُوزْآبادِيّ. 3. كُلُّ مُعْجَمٍ لُغَوِيٍّ، على التوسُّع.

2.  في المُنْجِد في اللغة :

 1. البحر. 2. مُعْظَمُ البحرِ وأَبعَدُه غَوْرًا. 3. كتابُ الفَيْرُوزْآبادِيّ في اللغة، سُمِّي بذلك لاتِّسَاعه وبُعْد غَوْره. 4. ويُطلِقُه أهلُ زماننا على كلِّ كتاب في اللغة، فهو عندهم يُرَادِف كلمةَ مُعْجَم وكتابَ لغة

3. في المُنْجِد الأَبْجَدِيّ نَفْسُ ما ورد في المُنْجِد في اللغة باختلافٍ طَفِيف في العبارة في المعنى الرابع، ففيه :

 1. البحر. 2. مُعْظَمُ البحرِ وأَبعَدُه غَوْرًا. 3. كتابُ الفَيْرُوزْآبادِيّ في اللغة، سُمِّي بذلك لاتِّسَاعه وبُعْد غَوْره. 4. ويُطْلَقُ اليومَ على كلِّ كتاب في اللغة، فهو يُرَادِف كلمةَ مُعْجَم وكتابَ لغة.

4. في المُنْجِد في اللغة العربية المُعَاصِرَة :

 1. مُحِيط، بَحْرٌ عظيم (يونانية). 2. مُعْجَم، دِيوانُ مفرداتِ لغةٍ مُرَتَّبٌ على حروف الأَلِفْبَاء، فيه تُحَدَّد الألفاظ وتُشرَح، أو تُنقَل إلى لغةٍ أخرى.

5. في الرائد :

 1. لقبُ كتابِ الفَيْرُوزْآبادِيّ في اللغة. 2. كلّ معجمٍ أو كتابٍ في اللغة. 3. بحر عظيم. 4. أَبعَدُ موضِعٍ في أعماق البحر.

 আলকাউসারে সর্বশেষ লেখা হয়েছে, বিষয়টি শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ. تصحيحُ الكُتُبِ وصُنْعُ الفهارسِ المعجمة রিসালায় তামবীহ করেছেন।

تصحيحُ الكتب وصنعُ الفهارس المعجمة وكيفيةُ ضَبْط الكتاب وسَبْقُ المسلمين الإِفْرَنْجَ في ذلك

রিসালাটি আমার দেখার সুযোগ হয়েছে। মিশরের মেডিকেল কলেজের শিক্ষক শায়খের বন্ধুবর আল্লামা মুহাম্মদ আহমদ গামরাভী রাহ. তাঁর مُرْشِدُ المتعلِّمِ কিতাবে এক প্রসঙ্গে লিখেছেনÑ ولعلّك لاحظتَ في وَصْف هذه القواميس ...- শায়খ تصحيحُ الكتب... রিসালার ৪৩ নং পৃষ্ঠায় [মাকতাবুস্ সুন্নাহ কায়রো, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪১৫ হি.] এই বাক্যের القواميس থেকে টীকা টেনে লিখেছেনÑ

اقرأها دائما : ্রالمعاجمগ্ধ. قال عبد الفتاح : فإن ্রالقاموسগ্ধ الذي سَمَّى به كتابَه مجدُ الدين الفَيْرُوزْآباديّ معناه : ্রالبحرগ্ধ، وسمَّاه ্রالقاموسَ المحيطগ্ধ لسعته وزيادته على المعجم المسمَّى ্রالصحاحَগ্ধ للجوهري. ولما اشتَهَر ্রالقاموس المحيطগ্ধ ظَنَّ بعضُهم أن معنى ্রالقاموسগ্ধ كتابُ معجمٍ لغويّ، فسَمَّوا بلفظ ্রالقاموسগ্ধ غيرَ كتابٍ في المفردات العربية وغير العربية!!

আমার ধারণা হলো, আলকাউসারের আলোচ্য লেখাটি শুধু শায়খের এই লেখাটির উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। অভিধান অর্থে القاموس শব্দের ব্যবহার মুনাসিব কি না, এর জন্য নতুন করে পরবর্তী আরবী অভিধান দেখা হয়নি এবং القاموس নামে যারা নিজেদের অভিধানের নামকরণ করেছেন তাঁদেরকে বিবেচনায় আনা হয়নি। القاموس নামে যেসকল অভিধানের নামকরণ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ

. القاموس البَسِيط في معاني القرآن المُحِيط، إعداد : محمد الرفاعيّ أبو زيد

. القاموس الفقهيُّ لغةً واصطلاحًا، تأليف : سعدي أبو حبيب، الناشر : إدارة القرآن والعلوم الإسلامية باكستان.

. قاموس الفقه، تأليف : مولانا خالد سيف الله رحماني، الناشر : زمزم ببلشرز كراتشي، ২০০৭م.

. القاموس الإسلاميُّ للناشئِينَ والشباب، إعداد : محمد علي الهمشري والسيد أبو الفتوح وعلي إسماعيل موسى، الناشر : مكتبة العبيكان الرياض، الطبعة الأولى ১৪১৮هـ / ১৯৯৭م.

. قاموس الألفاظ الإسلامية : عربي – إنكليزي إنكليزي – عربي، تأليف ديب الخضراويّ، طبعة ্রاليمامةগ্ধ دمشق – بيروت.

. القاموس الجديد عربي – اردو، إعداد : فضيلة الشيخ وحيد الزمان الكيرانويّ

. القاموس الجديد اردو – عربي، إعداد : فضيلة الشيخ وحيد الزمان الكيرانويّ

. القاموس الاصطلاحيّ عربي – اردو، إعداد : فضيلة الشيخ وحيد الزمان الكيرانويّ

. القاموس الاصطلاحيّ اردو – عربي، إعداد : فضيلة الشيخ وحيد الزمان الكيرانويّ

القاموس الوحيد، إعداد : فضيلة الشيخ وحيد الزمان الكيرانويّ

১০. القاموس الذي يحتاج إليه العروس

শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ.-এর

ولما اشتَهَر ্রالقاموس المحيطগ্ধ ظَنَّ بعضُهم... 

উক্তি থেকে বুঝা যায়, অভিধান অর্থে القاموس শব্দের ব্যবহার একটি ভুল ধারণাবশত হয়েছে। কিন্তু المعجمُ الوسيط-এর عَلَى التَّوَسُّع শব্দ এবং المُنْجِد في اللغة المُنْجِد الأَبْجَدِيّ-এর سُمِّي بذلك لاتِّسَاعه وبُعْد غَوْره বাক্য দ্বারা বুঝা যায়, ব্যবহারটি ভুল ধারণাবশত হয়নি। বরং অভিধান অর্থে القاموس শব্দের ব্যবহার একটি মজবুত যোগসূত্রের ভিত্তিতে হয়েছে এবং ভাষা একাডেমীগুলোর পক্ষ থেকে উক্ত ব্যবহার স্বীকৃতি লাভ করেছে। 

মোটকথা, অভিধান القاموس শব্দের একটি অর্থ। অভিধান অর্থে القاموس শব্দের ব্যবহার না মুনাসিব হবে না ইনশাআল্লাহ। واللهُ أَعلَمُ بِالصَّوَاب

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ.-এর উপরিউক্ত উদ্ধৃতিতে الفَيْرُوزْآباديّ শব্দটি এভাবেই হরকত দিয়ে লেখা হয়েছে। অর্থাৎ ফায়রুযআবাদী ফিরূযাবাদী নয়।   

উত্তর :

القاموس শব্দ সম্পর্কে আপনার মূল্যবান তাহকীক আমাদের অবহিত করার জন্য আপনাকে অনেক মুবারকবাদ। আমরা আপনার তাহকীক থেকে ইস্তেফাদা করেছি। জাযাকুমুল্লাহু খায়রান। আল কাউসারের বিগত ফেব্রুয়ারী সংখ্যায় শব্দকোষ অর্থে আল-কামুস শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ রাহিমাহুল্লাহ-এর একটি তামবীহ সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন আপনার তাহকীককে সামনে রেখে বিষয়টির কিছু ব্যাখ্যা পর্যালোচনা তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।

المعجم : শব্দটি মূলত মাসদারে মীমী। الإعجام Ñএর সমার্থক। এর একটি মৌলিক অর্থ অস্পষ্টতা দূর্বোধ্যতা দূর করা। কারণে কোনো আরবী হরফ, শব্দ ইবারতে নোকতা হরকত লাগানোর মাধ্যমে কিংবা ব্যাখ্যার মাধ্যমে তার অস্পষ্টতা দূর করাকে আরবীতে এভাবে বলা হয়Ñ

أعجمت الحرف- أعجمت الكلام- أعجمت الكتاب

এবং আরবী বর্ণমালাকে বলা হয়  حروف المعجم

এরপর উলূম ফুনূনকে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করার ব্যাপক প্রচলন যখন হয় তখন কোনো বিষয়বস্তু তথ্যকে  حروف المعجم  তথা আরবী বর্ণানুক্রমে বিন্যস্ত করে সংকলিত গ্রন্থকে  المعجم নামে অভিহিত করা শুরু হয়। ক্ষেত্রে মুহাদ্দীসেনে কেরাম হলেন পথিকৃৎ। তাঁরা হাদীস, তারীখ আসমায়ে রিজালের অনেক কিতাবকে المعجم নামে নামকরণ করেছেন। আরবী ভাষার ইমাম খলীল ইবনু আহমাদ (জন্ম : ১০০ হি. মৃত্যু: ১৭০) দ্বিতীয় শতকের মাঝামাঝি সময়ে বর্ণানুক্রমে কিতাব সংকলনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।  কারণ তিনি আরবী ভাষার অভিধান কিতাবুল আইন বর্ণানুক্রমে রচনা করেছেন। এরপর অনেক ইমামুল লুগাত পদ্ধতিতে বহু শব্দকোষ সংকলন করেছেন বটে। কিন্তু পূববর্তী আইম্মায়ে লুগাতকে সরাসরি المعجم শব্দ দ্বারা নিজেদের সংকলিত শব্দকোষকে নামকরণ করতে সাধারণত দেখা যায় না, বরং তারা কোনো গুণবাচক বিশেষণ উপাধিকে কিতাবের নামরূপে ব্যবহার করেছেন। যেমন- 

كتاب العين- جمهرة اللغة- البارع- ديوان الأدب- صحاح العربية- المحيط- تهذيب اللغة- أساس البلاغة- المحكم - مقاييس اللغة- المصباح المنير- لسان العرب- العباب- القاموس المحيط- تاج العروس.

এরপর আধুনিক কালে এসে যখন নতুন আঙ্গিকে আরবী অভিধান লেখা শুরু হয় তখন المعجم শব্দ দ্বারা ভাষার শব্দকোষ বা অভিধানকে বিশেষভাবে নির্দেশ করা হয় এবং অনেক শব্দকোষকে সরাসরি المعجم নামে নামকরণ করা হয়। যেমন ধরুন المعجم الوسيط প্রথম প্রকাশ ১৯৬০ ঈসায়ী। এতে المعجم শব্দের পরিচয় এভাবে দেয়া হয়েছেÑ

المعجم: ديوان لمفردات اللغة مرتب على حروف المعجم، جمعه معجمات و معاجم، وحروف المعجم حروف الهجاء.

যাহোক المعجم শব্দটি এখন একটি পরিভাষা যাতে তার মূল আভিধানিক অর্থ আদি ব্যবহারিক অর্থ অক্ষুণœ রয়েছে। তাই শব্দটি পরিপূর্ণভাবে আরবী ব্যকরণ অভিধানসম্মত  এবং ফসীহ শব্দ।

পক্ষান্তরে القاموس শব্দটি এমন নয়। কেননা القاموس শব্দটির মূল আভিধানিক অর্থ: মধ্যসাগর বা মাঝ দরিয়া, সাগরের তলদেশ, গভীর সাগর কিংবা মহাসাগর ইত্যাদি। এছাড়া   শব্দটি রূপকার্থে বিশালতা গভীরতা বুঝাতেও ব্যবহার হয়ে থাকে। এই রূপকায়নের ভিত্তিতেই কোনো কোনো ইমামুল লুগাহ তাঁদের রচিত অভিধানের নামকরণের ক্ষেত্রেও মাহাত্ম্যজ্ঞাপক উপাধিরূপে সাগর বা সাগরের বিশালতা গভীরতা প্রকাশক কোনো বিশেষণকে ব্যবহার করেছেন। যেমন সাহেব ইবনু আব্বাদ (মৃত্যু : ৩৮৫ হি.) তাঁর রচিত অভিধানকে المحيط, সাগানী (মৃত্যু: ৬৫০ হি.) তাঁর রচিত অভিধানকে العباب বা مجمع البحرين এবং ইবনু সীদাহ (মৃত্যু : ৪৫৮ হি.) তাঁর রচিত একটি অভিধানকে المحكم و المحيط الأعظم নামে নামকরণ করেছেন। এরপর হিজরী নবম শতকে মাজদুদ্দীন ফায়রুযাবাদী (৭২৯ হি.-৮১৭ হি.) রাহ. তাঁর রচিত অভিধানকে القاموس المحيط নামে অভিহিত করেন। এই নামকরণের কারণ তাঁর ভাষায়Ñلأنه هو البحر الأعظم অর্থাৎ আরবী শব্দসম্ভারকে পরিবেশষ্টনের ক্ষেত্রে অন্য সকল অভিধানের তুলনায় এটি মহাসাগরের ন্যায় অধিকতর সমৃদ্ধ সামগ্রিক। এই নামকরণের ব্যাখ্যায় আল্লামা যাবিদী রাহ. লিখেছেনÑ

"قال شيخنا : وإنما سمي كتابه القاموس المحيط على عادته في إبداع أسامي مؤلفاته؛ لاحاطته بلغة العرب كإحاطة البحر للربع المعمور" ( تاج العروس........)

এখানে আল-কামুস শব্দটি কিতাবের সুসমৃদ্ধি সামগ্রিকতা নির্দেশ করছে; ভাষার অভিধান শব্দকোষকে নয়। আসলে এখন থেকে দেড় বা দু বছর আগে আল-কামুস শব্দটি সরাসরি   ديوان المفردات বা المعجم اللغوي তথা বর্ণানুক্রমিক শব্দকোষ অর্থে ব্যবহৃত হওয়ার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। 

القاموس المحيط কিতাবটির যে পূর্ণাঙ্গতার সমৃদ্ধির দাবী করা হয়েছে তা আক্ষরিক অর্থে সামগ্রিক নয়; আপেক্ষিক। কিতাবটি সুসংক্ষিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও অন্য অনেক অভিধান বিশেষত জাওহারির আসসিহাহ-এর তুলনায় এতে অধিক সংখ্যক মাদ্দা শব্দ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং অধিক  শব্দার্থ স্থান পেয়েছে। অন্যথায় এর আগে রচিত ইমাম ইবনু মনযুর আফ্রিকী (৬৪০ হি.- ৭১১ হি.) রহ.-এর লিসানুল আরবে শব্দসংখ্যা আলকামুসে তুলনায় বিশ হাজার বেশি। কারণ আল্লামা যাবিদী রাহ.-এর ভাষ্যমতে আসসিহাহ-এর শব্দসংখ্যা চল্লিশ হাজার, আলকামুসের শব্দসংখ্যা ষাট হাজার এবং লিসানুল আরবের শব্দসংখ্যা আশি হাজার।

যাহোক আল-কামুসুল মুহীত কিতাটি আরবী লুগাতের মৌলিক উৎসগ্রন্থ বা বিশদ গ্রন্থ না হওয়া সত্ত্বেও এটি আরবী লুগাতের মুখতাসার জামে একটি মতনের মর্যাদা রাখে। কিতাবটি যখন প্রসিদ্ধি লাভ করে তখন তা মানুষের কাছে ব্যবহারিক অভিধান হিসাবে ব্যাপক সমাদৃত হয়। সম্ভবত হিজরী দ্বাদশ শতক মোতাবেক ঈসায়ী আঠার শতকে আল-কামূস কিতাবটি অধিকতর প্রসিদ্ধি লাভ করে। কারণ হাফেজ জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহ. (৯১১ হি.) আল-মুযহির ফী উলূমিল লুগাহ-এর প্রথম অধ্যায়ে আরবী অভিধান সংকলনের ইতিহাস উল্লেখ করেছেন। এতে তিনি ইমাম ইসমাঈল ইবনু হাম্মাদ আলজাওহারী রাহ. (৩৯৩ হি.) সংকলিত আস-সিহাহ-এর পর তিনটি অভিধানের নাম উল্লেখ করেছেন। যথাÑ . ইবনু সীদাহ রচিত المحكم والمحيط الأعظم . সাগানী রচিত العباب . ফায়রুযাবাদী রচিত القاموس المحيط এরপর সুয়ূতী রাহ. মন্তব্য করেছেনÑ

 ولم يصل واحد من هذه الثلاثة في كثرة التداول إلى ما وصل إليه "الصحاح" ولا نقصت رتبة الصحاح ولا شهرته بوجود هذه، وذلك لالتزامه ما صح...) انتهى.

মুরতাযা যাবিদী রাহ. (মৃত্যু ১২০৫ হি.) হাফেয সুয়ূতীর উপরোক্ত মন্তব্য উল্লেখ করার পর লিখেছেনÑ

قلت : وقوله : ولم يصل واحد من الثلاثة ... الخ، أي هذا بالنسبة إلى زمانه، فأما الآن فإن القاموس بلغ في الإشتهار مبلغ اشتهار الشمس في رابعة النهار وقصر عليه اعتماد المدرسين وناط به قصوى رغبة المحدثين وكثرت نسخه ...) (تاج العروس /৪১)

অন্যান্য মৌলিক অভিধানের তুলনায় দ্বাদশ শতকে আলকামুসে উপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পেলে সে যুগে ইয়ামানের আলেম আব্দুল কাদির আল কাওকাবানী রাহ. (মৃত্যু ১২০৭ হিজরী) এই অতি নির্ভরতার সমালোচনা করেন এবং আল-কামুস সম্পর্কে فلك القاموس নামে একটি রিসালা লেখেন। তিনি আল্লামা মুরতাযা যাবীদী রাহ. (১২০৫ হি.)-এর সমসাময়িক সহপাঠী এবং আল-কামুসের ভাষ্যকার মুহাম্মাদ ইবনু তায়্যিব আল ফাসী (মৃত্যু ১১৭০ হিজরী)-এর শাগরিদ। ফালাকুল কামুস রিসালাটির কিছু উদ্ধৃতি নওয়াব সিদ্দিক হাসান খাঁন ভুপালী (১৩০৭ হি.) البلغة إلى أصول اللغة (পৃ. ১৫১)- উল্লেখ করেছেন।

পরিশেষে উনিশ শতকে আধুনিক মুদ্রণ শিল্পের বিকাশের ফলে অন্যান্য কিতাবের মত আল-কামুস মুদ্রিত হয়, তখন তা মানুষের মাঝে আরো ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং শব্দার্থ জানার জন্য সার্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং মকবুল সমাদৃত উদ্ধৃতিগ্রন্থে পরিণত হয়। এর উপর মানুষের নির্ভরতা অধিকতর বৃদ্ধি পায়। মানুষের মুখে মুখে আল-কামুস শব্দটি প্রচারিত হতে থাকে। ফলে এক পর্যায়ে কতক মানুষ শব্দটিকে (المعجم اللغوي) ভাষার অভিধান শব্দকোষের সমার্থক হিসাবে ধারণা করতে থাকে এবং যেকোনো অভিধানের উপর শব্দটি প্রয়োগ করতে থাকে। ছোট-বড় যে কোনো কলেবরের এবং যে  কোনো মানের অভিধানকে আলকামুস নামে অভিহিত করা হয়। এমনকি পকেট সাইজের অভিধানকেও মিসরের গত শতকের প্রখ্যাত আদীব আব্বাস মাহমূদ আক্কাদ (মৃত্যু ১৩৮৩ হি. মোতাবেক ১৯৬৪ .) আস-সিহাহ-এর উপর যে নাতিদীর্ঘ ভূমিকা লিখেছেন তাতে তিনি বলেছেন,

 وحسب القاموس شهرة أنه أصبح عند المتأخرين مرادفا للمعجم، حتى أن أحدنا يسمع سائلا يقول: قاموس الصحاح؛ وقاموس لسان العرب، وقاموس التهذيب، وقاموس العين مما يدل على طغيان اسمه على المعجمات، بل سمي باسم القاموس كثير من المعجمات، مثل: القاموس العصري، وقاموس الجيب.

এই হল আধুনিক কালে আলকামুস শব্দের উপর আরোপিত নবউদ্ভাবিত অর্থ, যাকে পরিভাষায় المُوَلَّد বা  المُحدَث বলা হয়। অন্যথায় প্রামাণ্য আরবী ভাষায় এই অর্থটি সম্পূর্ণ অজ্ঞাত। হিজরী দ্বাদশ শতক মোতাবেক ঈসায়ী আঠার শতকে আল্লামা মুরতাযা যাবিদী রাহ. (১১৪৫-১২০৫হি.; ১৭৩২-১৭৯০ঈ.) আল কামুসের  যে ব্যাখ্যা গ্রন্থ তাজুল আরুস লিখেছেন তাতেও আল কামুস শব্দের অর্থ শব্দকোষ লেখা হয়নি। কারণ অর্থটি পরবর্তী শতাব্দীতে উদ্ভাবিত হয়েছে। ইংরেজ প্রাচ্যবিদ এডওয়ার্ড উইলিয়াম লিন (জন্ম ১৮০১ মৃত্যু ১৮৭৬ ঈসায়ী) রচিত আরবী-ইংরেজি অভিধান مد القاموس  এবং জার্মান প্রাচ্যবিদ জর্জ ফ্রেতেগ (জন্ম ১৭৮৮ মৃত্যু ১৮৬১ .) রচিত আরবী-ল্যাটিন অভিধান, (খবীরপড়হ অৎধনরপড়-খবঞরহঁস) যা আল-মুনজিদসহ অনেক আধুনিক আরবী অভিধানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে প্রাচ্যবিদ কর্তৃক রচিত উপরোক্ত অভিধান দুটিতেও القاموس শব্দের অর্থ অভিধান লেখা হয়নি।

 . আদনান খতীব লিখেছেন, এই নবউদ্ভাবিত অর্থটির প্রচারের ক্ষেত্রে শায়খ আহমদ ফারেস শিদয়াকের বড় ভূমিকা রয়েছে। যিনি ১২৯৯ হিজরী মোতাবেক ১৮৮১ ঈসায়ীতে الجاسوس على القاموس নামে ফায়রুযাবাদী রাহ.-এর আলকামুস কিতাবের উপর পর্যালোচনা-গ্র্রন্থ প্রকাশ করেন। সম্ভবত সর্বপ্রথম আধুনিক আরবী অভিধানগুলোর মধ্যে খ্রিস্টান -িত মুয়াল্লিম বুতরুস বুস্তানী ১৮৬৯ ঈসায়ী সনে محيط المحيط নামে যে নতুন আরবী অভিধান প্রকাশ করেন তাতে القاموس শব্দের লোকমুখে প্রচারিত নবউদ্ভাবিত অর্থটিকে স্থান দেয়া হয়। এতে القاموس শব্দের মূল অর্থ প্রাচীন ব্যবহার উল্লেখ করার পর বলা হয়েছেÑ

 والقاموس كتاب الفيروزآبادي في اللغة العربية، لقبه بالقاموس المحيط لاتساعه وبعد غوره، ومنه سمي كل كتاب في اللغة مشتمل على مفرداتها، مرتبة على حروف المعجم مع ضبطها وتفسير معانيها بالقاموس، وهو من اصطلاح المولدين ويرادفه عند العرب اللغة فإنهم يسمون القواميس بكتب اللغة. انتهى. (ص ৭৫৬)

এরপর যখন ১৮৯০ ঈসায়ী সনে সাঈদ খুরী শারতূনীর আধুনিক অভিধানأقرب الموارد ছাপা হয় এবং ১৯০৮ সনে খ্রিস্টান পাদ্রি লুয়িস মালুফ المنجد নামে আরবী অভিধান প্রকাশ করেন। তখন محيط المحيط গ্রন্থের অনুকরণে দুটি অভিধান গ্রন্থেও القاموس শব্দের নতুন অর্থটি উল্লেখ করা হয়। এরপর আরো অনেকে  বেশ কিছু অভিধান রচনা করেন এবং সেগুলোকে সরাসরি القاموس নামে নামকরণ করা হয়। এভাবে আল-কামুুস শব্দের নতুন অর্থ প্রসিদ্ধি লাভ করে। আরো পরে ১৯৬০ সালে মিসরের ভাষা একাডেমির পক্ষ থেকে প্রথম প্রকাশিত المعجم الوسيط গ্রন্থেও  القاموس শব্দের এই নতুন অর্থটি স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

লক্ষণীয়, আল-মুজামুল ওয়াসিত গ্রন্থে القاموس শব্দের তিনটি অর্থ লেখা হয়েছে। এক. শব্দের মূল অর্থ : البحر الأعظم মাহাসাগর দুই.  علم على معجم الفيروزآبادي তিন.  كل معجم لغوي، على التوسع অর্থাৎ ভাষার যে কোনো অভিধানকে (على التوسع) সম্প্রসারিত অর্থে القاموس বলা হয়। মিসরের ভাষা একাডেমীর এক সময়ের প্রধান . আহমদ শওকী যইফ (জন্ম ১৯১০ মৃত্যু ২০০৫ ঈসায়ী) القاموس শব্দের নতুন অর্থের ভিত্তি সম্পর্কে লিখেছেনÑ

واختصت الكلمة (المعجم) في العصر الحديث بالمعاجم اللغوية وشركها كلمة القاموس في أداء نفس المعنى، بسبب الشهرة الدوية التي نالها المعجم اللغوي المعروف باسم القاموس المحيط للفيروزآبادي...) انتهى. (انظر مقالةً: مجمع اللغة العربية في خمسين عاما: ১৯৩৪-১৯৮৪)

এই সম্প্রসারিত ব্যবহারকে ভুূল ধারণাজনিত অর্থান্তরণ বলুন কিংবা  রূপকজনিত অর্থান্তরণ২। কিন্তু চিন্তার বিষয় হল এখানে সম্প্রসারিত অর্থের এমন পরিবর্তন ঘটেছে যে, মূলের সঙ্গে (অর্থাৎ পূর্ববর্তী অর্থ, যাকে পরিভাষায়  المعنى المنقول منه  বলা হয়।) তার যোগ প্রায় ছিন্ন হয়ে গেছে। কেননা  (المعنى المنقول منه) পূর্ববর্তী অর্থ মহাসাগর ধরা হোক কিংবা ফায়রুযাবাদী রাহ.-এর রচিত সুনির্দিষ্ট একটি অভিধান গ্রন্থের সমৃদ্ধি মাহাত্ম্যজ্ঞাপক নাম : القاموس المحيط -কেই ধরা হোক, উভয় অবস্থায় যে কোনো অভিধান গ্রন্থকে ব্যাপকহারে القاموس নামকরণ করা হলে তাতে অর্থের অবনতি ঘটে এবং পূর্ববর্তী অর্থের সঙ্গে তার যোগসূত্র খুবই দুর্বল হয়ে যায়।

সারকথা

পরিশেষে বলার অপেক্ষা রাখে না, القاموس শব্দটি সরাসরি শব্দকোষ অর্থে যথাবিহিত না হলেও আধুনিক যুগে তার একটি প্রচলিত অর্থ শব্দকোষ। কারণে আরবী ভাষার কোনো কোনো লেখক-সাহিত্যিক আহলে ইলম নমনীয় নীতির ভিত্তিতে প্রচলিত অর্থে আল-কামুস শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু অনেক লেখক-সাহিত্যিক মুহাক্কিক আহলে ইলমগণ অধিকতর বিশুদ্ধতা যথার্থতার বিবেচনায় বর্ণানুক্রমিক অভিধান অর্থে المعجم শব্দের ব্যবহারকে শ্রেয় মনে করেন এবং এই অর্থে القاموس শব্দের ব্যবহারকে সযতেœ পরিহার করেন। এটি শুধু শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ.-এর রায় নয় বরং শায়েখ আহমদ শাকের রাহ.সহ সমকালীন অনেক আহলে ইলমের রায়। ইরাকের আরবী ভাষাবিদ, কবি সাহিত্যিক . ইবরাহিম সামিরায়ী (মৃত্যু : ১৪২২ হি. মোতাবেক ২০০১ ঈসায়ী) শব্দকোষ অর্থে القاموس শব্দের প্রয়োগকে আপত্তিকর বলেছেন।

 (ينظر مقاله : مع المعجمات العربية ومسألة التصحيح اللغوي، المنشور في مجلة البحوث والدراسات العربية، الكويت : العدد : ১৫، سنة ১৯৮৮)

উল্লেখ্য, تصحيح الكتب و صنع الفهارس المعجمة রিসালাটি মূলত শায়েখ আহমাদ শাকের রাহ.-এর লেখা, যা তিনি তাঁর তাহকীক তালিকসহ প্রকাশিত সুনানে তিরমিযির শুরুতে ভূুমিকা আকারে লিখেছিলেন। পরবর্তীতে শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ রাহ. কিছু সংযোজন এবং তাহকীক তালীকসহ ভিন্ন রিসালা আকারে উপরোক্ত নামে ছাপেন। এতে শায়েখ আহমাদ শাকের রাহ. তার বন্ধু প্রফেসর মুহাম্মদ আহমদ গামরাভী-এর مرشد المتعلم কিতাব থেকে একটি ইবারতের উদ্ধৃতি উল্লেখ করেন এবং ইবারতের القواميس শব্দের উপর টীকা টেনে লিখেছেন- اقرأها دائما: المعاجم

শায়েখ আহমাদ শাকের রাহ.-এর এই কথারই ব্যাখ্যা শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ রাহ. করেছেন, যা আপনি আপনার  লেখায় উল্লেখ করেছেন।

এখানে আরেকটি বিষয় স্মরণীয়, শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ রাহ.-এর কাছে উপরোক্ত রিসালাটি ছাপানোর সময় المعجم الوسيط-সহ একাধিক আধুনিক অভিধান ছিল। রিসালাটির ৪৫ নং পৃষ্ঠায় শায়েখ রাহ. টীকায় المعجم শব্দের অর্থ লিখতে গিয়ে  المعجم الوسيط কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। আর সে সময় পর্যন্ত অনেকে একাধিক অভিধান গ্রন্থকে القاموس নামে নামকরণ করেছিলেন, যার প্রতি ইশারা করে শায়েখ রাহ.লিখেছেনÑ

"ظن بعضهم أن معنى القاموس كتاب معجم لغوي، فسموا بلفظ القاموس غير كتاب في المفردات العربية و غير العربية!!"

সুতরাং “‘অভিধান অর্থে القاموس শব্দের ব্যবহার মুনাসিব কি না, এর জন্য নতুন করে পরবর্তী আরবী অভিধান দেখা হয়নি এবং القاموس নামে যারা নিজেদের অভিধানের নামকরণ করেছেন তাঁদেরকে বিবেচনায় আনা হয়নিÑ কথাটি যথার্থ নয়।

وبالجملة أن لفظ اللغة هو اللفظ الأقدم ثم لفظ "المعجم" هو أقرب أيضاً لللغة الفصحى في عصورها القديمة؛لمطابقته للمعنى الأصلي والاستعمال القديم وأما لفظ القاموس بمعنى المعجم اللغوي فليس كذلك.

উত্তর প্রদানে : মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মাজীদ

 

 

 

advertisement