Jumadal Akhirah 1437   ||   March 2016

বিশ্বাস : মানিকে মানিক চিনেছে

Khasru Khan

তার নাম শামসুজ্জোহা মানিক। ব-দ্বীপপ্রকাশনীর সাইনবোর্ড নিয়ে মেলায় স্টল বসিয়েছিল। তার এই প্রকাশনীটির কার্যালয় রয়েছে কাটাবন কনকর্ড টাওয়ারের বইপল্লীতে। ইসলাম বিতর্কতার একটি বই। এটিই আলোচনায় এসেছে। এরকম বেশ কয়েকটি বই-ই সে প্রকাশ করেছে। এবং মেলার স্টলে এনে বিক্রিবাট্টা করেছে। বইগুলোর বিষয়বস্তু পত্র-পত্রিকার ভাষায়-চরম ইসলাম বিদ্বেষী। কোনো কোনো সংবাদসূত্রে জানা যায়, ইসলামের মহান নবী শ্রেষ্ঠতম রাসূল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের চরিত্র-হননমূলক বক্তব্যে বইগুলো ভরপুর। এসব বই শুরু থেকেই মেলায় প্রচার-বিক্রি হচ্ছিল। তখন কর্তৃপক্ষীয় কেউ বাঁধা দেয়নি, দিতে চায়ওনি। কিন্তু কিছু লোকের প্রতিবাদ এবং ধরিয়ে দেওয়ায় বিষয়টি সামনে চলে আসে। তখন একাডেমী কর্তৃপক্ষ মেলায় তার স্টল বন্ধ করে দেয়। দুদফা তাকে আদালতের বারান্দা ঘুরিয়ে আনা হয়। দুজন সহযোগীসহ, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, তাকে জেলহাজতে রাখা হয়েছে। দৃশ্যত ভয়ংকর ধৃষ্ঠতাপূর্ণ কিছু প্রকাশনা ও প্রচারনার পর কর্তৃপক্ষীয় পদক্ষেপ এখানেই শেষ হয়ে যায়। ইবলিসের ওই চামুণ্ডাকে নতুন কোনো ফুলের টোকাদেওয়ার আর কোনো আলামত দেখা যায়নি। যেন তার যা পাওনা ছিল সে তা পেয়েই গেছে। কিন্তু একদিকে এমন সন্তুষ্টি থাকলেও অপরদিকে ঠিকই কাজ করছে অস্থিরতা। তার পক্ষের লোকেরা নীরবে ও প্রকাশ্যে শয়তানী কর্মকাণ্ডের পক্ষে ধুয়া তুলেই যাচ্ছে। তারা থামছে না মোটেই। বরং বিষয়টিকে উল্টে দেওয়ার চেষ্টায় নানা রকম কসরত ব্যয় করে চলেছে তারা।

অথচ দেখার একটি বিষয় হলো, এঘটনার পর মুক্তচিন্তারঝাণ্ডাবাহী একজন পাঠকপ্রিয় ও নামজাদা অধ্যাপক-লেখক এ জাতীয় প্রকাশনায় চরম ক্ষুব্ধতা ব্যক্ত করেছেন। ইসলাম বিতর্কনামের বইটি থেকে কিছু বর্ণনা শোনার পর তিনি নাকি এগুলোকে মারাত্মক অশ্লীল ও অশালীন বলেও অভিহিত করেছেন। তাঁর সে অভিব্যক্তি গণমাধ্যমেও এসেছে। লেখালেখির ক্ষেত্রে তিনি সকলকে আরো সাবধানী হতে আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কামারা প্রগতিশীল ওই প্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক- লেখকের বক্তব্যে মুক্তচিন্তকমহলের প্রতিক্রিয়া মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। শুরু হয়ে গেছে তাদের মাঝে ব্যাপক মাতম-বিষোদগার। এরই মধ্যে ওই অধ্যাপকের পক্ষেও কলম ধরেছেন কেউ কেউ। এমন কেউ কেউ, যারা এই সেদিনও তসলিমার সর্বগ্রাসী নারীবাদী চিন্তায় আচ্ছন্ন ছিল। এমন একজন সাংবাদিক লিখেছেন-এ কোন মুক্তচিন্তা, ধর্মকে গালাগালি?’ নারীবাদী এই সাংবাদিকের লেখায় মুক্তচিন্তার নাম ব্যবহার করে ইসলামের প্রতি উদ্ভট বিষোদগারের নিন্দা জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে অধ্যাপক-লেখকের অবস্থানের প্রতিও সমর্থন উচ্চারিত হয়েছে। এরকম আরো কেউ কেউ কিছুটা ইতিবাচক ভঙ্গিতেই এ ঘটনায় নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরেছেন। যা দেখে এদিক-ওদিকের অনেকেই অবাক হয়ে গেছেন। মুক্তচিন্তারনামে যথেচ্ছ শয়তানীর বিরুদ্ধে একটি-দুটি প্রগতিশীলকণ্ঠের উচ্চারণকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। এ অবস্থানটিকে আমরাও অ-তাৎপর্যপূর্ণ মনে করতে পারি না।

ব-দ্বীপ, শামসুজ্জোহা মানিক আর ইসলামবিতর্ক। এই নাম ও শিরোনামের প্রতি প্রভাবশালী একটি গণমাধ্যম-মহলের ব্যাপক সহানুভূতিও দেখা যাচ্ছে। দেশের সবচেয়ে প্রচারবহুল ও প্রভাবশালী দৈনিক পত্রিকাটির সংবাদ-শিরোনাম ছিল: প্রবীণ লেখক-প্রকাশক পাঁচ দিনের রিমান্ডে।১৭ ফেব্রুয়ারি শেষ পাতায় প্রকাশিত ওই খবরের ভাষায় ব্যাপক সহানুভূতি প্রকাশ করা হয় নরাধম মানিকের প্রতি। শব্দের মারপ্যাঁচে তারা কোনো ফাঁকি দিতে চাননি। এমনকি আমাদের মতো মূর্খদেরও তারা তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তাদের একটি বাক্য: শুনানির সময়ও প্রবীণ এই লেখকের হাতে হাতকড়া পরানো ছিল।পক্ষপাত ও আবেগ লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেনি ওই গণমাধ্যম। তাদের আরেকটি ছোট্ট প্যারা হলো-আদালত চত্বরে শামসুজ্জোহা বলেন, তিনি ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। পরে তিনি বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর লেখালেখি ও প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত হন। তাঁর ৪৬টি বই রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বই হলো আর্য জনসিন্ধু সভ্যতাইসলাম বিতর্কবইটি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন লেখার সংকলন। পুলিশ গ্রেপ্তারের সময় তাঁর বাসার মালামাল তছনছ করেছে বলে জানান তিনি।

শামসুজ্জোহা মানে মানিক। নবী-বিদ্বেষী এই মানিকের প্রতি গণমাধ্যমের বড় মানিকদের টানটা বেশিই দেখা যায়। বইমেলায় শয়তানি বন্ধ করার পরের সহানুভূতির চিত্র এটি। মেলার শুরুর দিকেও তারা একটি লেখা প্রকাশ করেছিল এ-জাতীয় শয়তানির প্রতি আশকারা দিয়ে। আলী রিয়াজের সেই লেখার শিরোনাম ছিল: উসকানি দেওয়াই লেখকের কাজ। ২ ফেব্রুয়ারির উপসম্পাদকীয় পাতায় ছাপা হয়েছে। এই পুরো লেখাটিতে মুক্তচিন্তারনামে উসকানি দেওয়ার প্রকাশ্য প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে। সে লেখার শেষ প্যারার শুরুর বাক্যটি এমন : প্রচলিত চিন্তা ও শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর উসকানি কেবল তরুণদের বিষয় নয়; যে কোনো চিন্তাশীল লেখক ও বুদ্ধিজীবীর দায়িত্বই হচ্ছে এই চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রাখা।প্যারার শেষ বাক্যটি হচ্ছে-লেখকের কাজ হচ্ছে সব ধরনের সাবধানবাণীকে অগ্রাহ্য করে যাঁরা ভক্তির মোহ আবরণে সত্যকে ঢেকে রাখতে চান, তাদের বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়া।এজন্যই কেউ কেউ বলেন, ব-দ্বীপের মানিক তো এক মানিক। কিন্তু এরকম হাজার মানিকের কাণ্ডারী হচ্ছে সাবেক-বামপন্থী পরিচালিত গণমাধ্যমের মানিক। তাদের রুখতে না পারলে হয়তো হঠাৎ হঠাৎ একটি-দুটি স্টল বন্ধ হবে। একটি-দুটি মানিক ধরা পড়বে। কিন্তু রাসূল-অবমাননাকারী বিষবৃক্ষের বড়-বাড়ন্ত বন্ধ হবে না।

আমাদেরও সেরকমই মনে হচ্ছে। এজন্যই এক মানিকের পেছনের আশকারাদাতা অন্য মানিকদের কোমরেও দড়ি পেঁচানোর জন্য আমরা প্রশাসনের উঁচু মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। তারা তো এ যাত্রায় দ্বিধা ও ভীরুতার পরিচয় দেননি। আশা করি সামনেও ইসলামবিদ্বেষী বাম-অপশক্তির বিরুদ্ধে সাহসের পরিচয় দেওয়ার ক্ষেত্রে মোটেও পিছপা হবেন না।

 

advertisement