একটি নতুন রসমঃ প্রবল বৃষ্টি বন্ধের জন্য আযান
গত সংখ্যার প্রচলিত ভুল বিভাগে অনাবৃষ্টির দিনে বৃষ্টির অবতরণ কামনা করে প্রচলিত একটি কু-সংস্কারের কথা লিখেছিলাম। সেদিন একজন লেখকের একটি লেখায় আরেকটি নতুন রসমের কথা পড়লাম। তবে তা বৃষ্টি অবতরণের জন্য নয়; বৃষ্টি বন্ধের জন্য। তিনি লিখেছেন , ‘বৃষ্টিপাত প্রবল থেকে প্রবলতর হয়, ... কেউ কেউ ব্যাকুল হয়ে ইমাম সাহেবকে অনুরোধ করে আযান দেওয়ার জন্য, যিনি বৃষ্টি দেন সেই আল্লাহ আযান শুনে হয়তবা অনুভব করবেন তাঁর বান্দার অসহায়ত্ব, রহমত করবেন এবং ফিরিয়ে নেবেন বজ্র, বৃষ্টি, বাতাস।’
জানি না, বজ্র-বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের সমূহ ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ‘আযান দেওয়ার’ এই আমল লেখকের স্রেফ কল্পনা না বাস্তবেও কোনো এলাকায় এর প্রচলন রয়েছে। হয়তো বা দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার চিন্তা থেকেই এই নতুন আমল।
এখানে উল্লেখ্য, সুদিনে আল্লাহর শোকর আদায় করা, দুর্দিনে সবর করা এবং তাঁর দেয়া আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাঁরই আশ্রয় প্রার্থনা করা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে এই কথাও মনে রাখতে হবে যে, এই শোকর, সবর ও আশ্রয় প্রার্থনার ক্ষেত্রে একজন মুমিনকে প্রথমত ঐ আমলগুলিই করা উচিত, যা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, অনাবৃষ্টি ও অতি বৃষ্টি দু’টোই বান্দার কষ্টের কারণ। এ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে। অনাবৃষ্টির সময় আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চাওয়ার সুন্দর নিয়ম যেমন ইসলামে রয়েছে তেমনি অতি বৃষ্টির ক্ষতি থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় নেওয়ার সুন্দর শিক্ষাও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে দিয়েছেন। একজন মুমিনকে তাঁর শিক্ষা দেওয়া আমলের মাধ্যমেই আল্লাহর আশ্রয় কামনা করা উচিত।
সহীহ হাদীসে এসেছে, একবার মদীনায় এক সপ্তাহ একাধারে প্রবল বৃষ্টিপাত হল। অবিরাম বৃষ্টির সমূহ ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে সাহাবীগণ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর দরবারে দুআ করার জন্য অনুরোধ করেন। তখন নবীজী এভাবে দুআ করেন,
اللهم حوالينا ولا علينا، الله على الآكام والظراب وبطون الأودية و منابت الأشجار
নবীজীর দুআর ফলে মুহূর্তে মদীনার আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ১০১৪
এমনিভাবে ঝড়-তুফানের সময় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ করতেন,
اللهم اني اسئلك خير ما آمرت به وأوعوذبك من شر ما آمرت به
আর বাতাস কমে বৃষ্টি নেমে এলে তাঁর চেহারা উজ্জ্বল দেখাত। তখন তিনি আল্লাহর ‘হামদ’ করতেন, বলতেন, এটি ‘রহমত’। আরও বলতেন,
اللهم صيبا نافعا
-ফাতহুল বারী ২/৬০৪, ৬০৮
অতএব হাদীসে বর্ণিত এসব দুআ, এছাড়া অন্যান্য দুআ-ইস্তিগফার বা ‘সালাতুল হাজত’ পড়ে আল্লাহর কাছে এ সকল বালা-মুসিবত থেকে পানাহ চাওয়া উচিত। কিন্তু আযান তো ইসলামের অন্যতম শিআর। যার জায়গা ও ক্ষেত্রগুলো শরীয়ত কর্তৃক সুনির্ধারিত। তাই সেই নির্ধারিত জায়গাতেই এই আমল সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।