Jumadal Ula 1437   ||   February 2016

এসকল ক্ষেত্রেও এজাযত প্রয়োজন : বিলুপ্তপ্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ আদব

Mawlana Muhammad Abdul Malek

কুরআনে কারীম আমাদেরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ আদব শিক্ষা দিয়েছে, যা  গ্রহণ ও অনুসরণ করা জরুরি। আর তা হচ্ছে, কারো ঘরে প্রবেশের পূর্বে অনুমতি নাও। যদি এজাযত না পাওয়া যায় তো ফিরে আস। এমনকি বিশেষ বিশেষ সময়ে একই পরিবারের সদস্যদের জন্যও এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে অনুমতি নেওয়া জরুরি। নিজের মাহরাম ব্যক্তির ঘরেও যেন কেউ ঐ সময়গুলোতে অনুমতি ছাড়া ঢুকে না পড়ে। হাদীস শরীফের ভাষ্য হল,

إِنَّمَا جُعِلَ الِاسْتِئْذَانُ مِنْ أَجْلِ البَصَرِ.

অর্থাৎ অনাকাক্সিক্ষত বিষয় দৃষ্টিগোচর হওয়া থেকে বাঁচার জন্যই তো অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করাকে আবশ্যক করা হয়েছে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬২৪১) যে বিষয় বা যে অবস্থা অন্যের দৃষ্টিগোচর হওয়াটা ঘরওয়ালার পছন্দ নয়, তাতে যেন অন্যের নযর না পড়ে; এ উদ্দেশ্যেই প্রবেশের আগে অনুমতি প্রার্থনার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

উপরোক্ত হাদীস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই প্রেক্ষাপটে বলেছেন যে, এক ব্যক্তি সাক্ষাতের অনুমতি নিতে এসে দেখল, পর্দার মাঝ দিয়ে একটু ফাঁকা রয়েছে। তখন সে ঐ স্থান দিয়ে ঘরের ভিতর তাকাচ্ছিল।

শরীয়তে অনুমতি প্রার্থনা বিষয়ে আরো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসকল নির্দেশনা নিয়ে চিন্তা-ফিকির করলে ইনশাআল্লাহ বুঝে আসবে যে, এসকল নির্দেশনার রূহ হল :

১. শরীয়তের দৃষ্টিতে যেসকল বিষয় অন্যের দৃষ্টিগোচর না হওয়া উচিত, তার উপর যেন দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার আশংকা না থাকে।

২. কারো কোনো বিশেষ অবস্থা বা অবস্থান, ব্যক্তিগত সামানা বা কাগজপত্র অথবা একান্ত গোপনীয় বিষয় যেন তার ইচ্ছার বাইরে কারো দৃষ্টিগোচর না হয় বা কেউ জেনে না ফেলে।

৩. কারো সময় বা অন্য যে কোনো জিনিস তার সন্তুষ্টি ব্যতীত ব্যবহার না হয়।

বিষয়টির উপরোক্ত উদ্দেশ্য যদি ঠিক হয়, এবং ইনশাআল্লাহ সকলের দৃষ্টিতেই এর উদ্দেশ্য এটাই হবে তাহলে আমরা একটু ভেবে দেখি, যেসকল স্থানে আমাদের এজাযত নেওয়া জরুরি ছিল, অথবা অন্তত এজাযত নেওয়া কাম্য ছিল- এমন কত স্থানে আমরা বিনা এজাযতে হস্তক্ষেপ করছি, অথচ কোনো পরোয়াই করছি না!

বাকি কথা বলার আগে কয়েকটি ঘটনা লক্ষ করুন :

১. দারুল উলূম সাহবানিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা নিআমাতুল্লাহ ছাহেব দামাত বারকাতুহুম আমাকে শুনিয়েছেন, তার শায়েখ ও উস্তায শাইখুল মাশায়েখ হযরত মাওলানা সাহবান মাহমুদ রাহ. যখন ঢাকায় তাদের বাসায় এসেছিলেন তখন হযরত যে ঘরে অবস্থান করেছিলেন সে ঘরে ঐ সকল কিতাব রাখা ছিল, যা তিনি দারুল উলূম করাচীর ছাত্রাবস্থায় পুরস্কার স্বরূপ পেয়েছিলেন। হযরত এক দুদিন ঐ ঘরে থাকার পর তিনি তাঁকে বললেন, হযরত ঐ কিতাবগুলো আমি দারুল উলূম করাচীর পক্ষ থেকে পুরস্কার স্বরূপ পেয়েছিলাম। (তার ধারণা ছিল, হযরত ইতিমধ্যে কিতাবগুলো দেখেছেন।) হযরত তখন বললেন, ভাই! আমি তো কোথাও গেলে যেখানে বসি বা অবস্থান করি, এর আশেপাশে কী রাখা আছে দেখি না!

২. অনেক বছর আগের কথা। সাপ্তাহিক তাকবীর’-এর মরহুম সম্পাদক সালাহুদ্দীন সাহেব প্যারিসে ড. মাওলানা হামীদুল্লাহ রাহ.-এর বাসায় সাক্ষাতে যান এবং তাঁর একটি ইন্টারভিউ নেন। ইন্টারভিউ শেষে তাঁর একটি ছবি তোলার অনুমতি চাইলে তিনি বললেন, আমাকে মাফ করবেন; এটা থেকে আমাকে মুক্ত রাখুন! ফলে তিনি তাঁর ফটো তোলেননি এবং ফটো ছাড়াই ইন্টারভিউ ছেপেছেন। (ডক্টর হামিদুল্লাহ কি বেহতেরীন তাহরীরে: ভমিকা)

শরীয়তে তাছবীর অকাট্যভাবে হারাম এবং মারাত্মক গুনাহ। আর আরবের অধিকাংশ আলেম এবং হিন্দুস্তানী সকল আলেমের নিকটেই ডিজিটাল-পূর্ব ক্যামেরার ছবি তাছবীরের অন্তর্ভুক্ত। ডিজিটাল ছবির ব্যাপারে তাদের কেউ কেউ বলেন, প্রিন্ট করার আগ পর্যন্ত এটা সম্ভবত হারাম তাছবীরের মধ্যে পড়বে না।

ব্যস! তাঁদের এ কথাকে বাহানা বানিয়ে বহুত এমন লোকও ছবির ব্যাপারে ঢিলেঢালা হয়ে গেছেন, যারা এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতেন। এমনটি না হওয়া উচিত ছিল। শরয়ী প্রয়োজন ছাড়া কোনো প্রাণীর ডিজিটাল ছবি থেকেও বেঁচে থাকা জরুরি। কোন্ ধরণের ছবির ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় ú্রয়োজনের আওতায় আসে, তা বিজ্ঞ আলেমদের থেকে জেনে নিতে হবে।

এখন মাসআলা বর্ণনা করা আমার আসল উদ্দেশ্য নয়, আমি তো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী আদব সম্পর্কে আলোচনা করতে চাচ্ছি। ড. হামীদুল্লাহ রাহ. প্যারিসের মত স্থানে বসে নিজের ফটো দিতে অপারগতা পেশ করছেন এবং সালাহুদ্দীন ছাহেব মরহুমের মত আধুনিক ব্যক্তিও অনুমতি না দেওয়ায় তার ছবি নেওয়া থেকে বিরত থাকছেন!

৩. একবার কোনো এক মজলিশে এক ব্যক্তি মোবাইলের ক্যামেরায় শায়েখ মুহাম্মাদ আওয়ামা দামাত বারাকাতুহুমের ফটো নেওয়ার এজাযত চাইলেন। তিনি নিষেধ করাতে ঐ ব্যক্তি ছবি নেওয়া থেকে বিরত থাকলেন।

৪. কয়েক বছর আগের কথা। মসজিদে হারামে একজন আরব হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত বারাকাতুহুমের সাথে মানহাজে তালীম  ও নেযামে তারবিয়াত বিষয়ে আলোচনা করলেন। মাদানী নেসাবের বিষয়ে জানলেন। কথা শেষে সে বারবার অনুরোধ করল; আমাকে একটি ছবিতোলার অনুমতি দিন। কিন্তু তিনি ছবি না দেওয়ার ব্যাপারে অটল থাকলেন। শেষপর্যন্ত সেও আর ছবি নেয়নি।

আমার উদ্দেশ্য এই যে, যারা ডিজিটাল ছবিকে না-জায়েয মনে করেন না, তারাও জবরদস্তিমূলক বা ব্যক্তির অজান্তে ছবি তোলেন না। এজাযত নেওয়ার প্রতি লক্ষ রাখেন।

৫. আরেক সফরে রওযায়ে আতহার যিয়ারতের সময় একবার হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত বারাকাতুহুমের সাথে থাকার সুযোগ হয়েছিল। যিয়ারতের পর যখন মসজিদে নববী থেকে বের হলেন, বললেন, সালামের সময় দৃষ্টি অবনত রাখা চাই। কিছু মানুষ এদিক ওদিক দেখতে থাকে। জালি দিয়ে উঁকি-ঝুঁকি মেরে ভেতরে দেখতে চেষ্টা করে। এমনটি করা তো সূয়ে আদবহবে মনে হয়।

এখন চিন্তা করুন, অনেক লোক যে সালাম পেশ করার সময় বা আগে-পরে মোবাইলে অথবা ক্যামেরায় রওযায়ে আতহারের ছবি তুলতেই থাকে- এটা তাহলে কত বড় বে-আদবী হবে?!

উল্লিখিত মূলনীতি এবং এসকল ঘটনার আলোকে দ্বিতীয়বার আমাদের হালতের উপর চিন্তা করি যে, যেখানে অনুমতি নেওয়া জরুরি বা কমসে কম অনুমতি নেওয়া কাম্য, এমন কত ক্ষেত্রে আমরা অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনই বোধ করি না। আমাদের এ কাজ ইসলামী আদবের পুরোপুরি খেলাফ। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমীন

উদাহরণ স্বরূপ কিছু বিষয় আলোচনা করছি :

১. কারো সাথে সাক্ষাতের জন্য তার পূর্ব এজাযত ছাড়া যাওয়া

এর মাঝে উভয়ের সমস্যা। উভয়ের জন্য এটা কষ্টের কারণ হয়। সুতরাং এ থেকে বিরত থাকা চাই।

২. সাক্ষাতের জন্য অসময়ে হাযির হওয়া

স্বাভাবিকভাবেই সকলের জানা থাকে যে, অমুক অমুক সময় সাক্ষাতের সময় নয়। সুতরং এ সময় কারো সাথে সাক্ষাতের জন্য যাওয়া উচিত নয়। পূর্ব এজাযত নিয়ে এলে এমনিতেই এসকল না-মুনাসিব বিষয় থেকে বাঁচা যায়।

কেউ কেউ বলেন, আমি মানসিকভাবে এ প্রস্তুতি নিয়েই এসেছি যে, সাক্ষাৎ হলেও ঠিক আছে, না হলেও ঠিক আছে। কিন্তু এ চিন্তা একতরফা। যার সাথে সাক্ষাতের জন্য আসা হয়েছে তাকে তো মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হল না! যখন সাক্ষাতের জন্য কেউ হাজির হয়ে যায় তখন তো তাকে আর না করা যায় না। অবশেষে নির্ধারিত কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে হলেও তাকে সাক্ষাতের সময় দিতে হয়।

৩. সাক্ষাতের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে সাক্ষাতের জন্য যাওয়া

কারো যদি সাক্ষাতের জন্য নির্দিষ্ট সময় থাকে, তাহলে ঐ সময়ের প্রতি লক্ষ রাখা জরুরি। এছাড়া অন্য সময়ে সাক্ষাতের জন্য হাযির হওয়া একেবারেই অনুচিত। হাঁ, যদি খুব বেশি প্রয়োজন হয় এবং নির্দিষ্ট সময় ছাড়া অন্য সময় যেতেই হয় তাহলে এজাযত না নিয়ে বা কমসে কম না জানিয়ে যাবে না।

৪. কারো সাক্ষাতে গিয়ে তার ছবি নেওয়া

এটা এমনিতেই গলদ কাজ। আর অনুমতি ছাড়া এমনটি করা আরো বড় অন্যায়। কিছু মানুষ এজন্য এজাযত নেয় না যে, এজাযত চাইলে পাওয়া যাবে না। যদি এজাযত না পাওয়া যায়, ছবি নিবে না। এজাযত পেলেও তো এ কাজ না করা চাই। আমরা কি সকল খাহেশ পুরা করার জন্য দুনিয়ায় এসেছি?

ارزوئيں خون ہوں يا حسرتيں پامال ہوں

اب تو اس دل كو بنانا ہے ترے قابل مجهے

৫. কারো সাক্ষাতে গিয়ে তার কথা রেকর্ড করা

কারো কাছ থেকে শুধু সাক্ষাতের এজাযত পাওয়ার অর্থ এ নয় যে, তার কথা রেকর্ড করারও অনুমতি হয়ে গেছে। এজন্য আলাদা এজাযত নেওয়া প্রয়োজন।

৬. সাক্ষাতের মজলিশ ভিডিও করা

শরীয়তসম্মত জরুরত না হলে এমনিতেই ভিডিও থেকে বিরত থাকা জরুরি। আর যদি তা হয় এজাযত ছাড়া, তাহলে তো আরো অন্যায়।

৭. কারো কল রেকর্ড করা

কারো ফোনের জবাব দেওয়া, ফোনে যা জিজ্ঞাসা করা হয় তার উত্তর দেওয়া বা মাসআলার উত্তর দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, অপরপ্রান্তের ব্যক্তিকে তা রেকর্ড করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কারো কল রেকর্ড করার প্রয়োজন দেখা দিলে তার অনুমতি নেওয়া জরুরি।

৮. খাছ বিষয়কে আমভাবে প্রচার করা

একান্ত মজলিশের কথা-বার্তা এজাযত ছাড়া আমভাবে প্রচার করার জন্য দেওয়া; এটিও একটি অন্যায় কাজ।

এজাযত নিয়েও যদি কারো ছবি তোলা হয় বা কোনো মজলিশের ভিডিও করা হয় কিংবা কারো কথা রেকর্ড করা হয় তথাপিও শুধু এইটুকু এজাযতের দ্বারা এসবের ব্যাপক প্রচারের এজাযত ছাবেত হয় না। কিছু মানুষ এ ধরনের খাছ বিষয় পত্রিকায় ছেপে দেয় বা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয় অথবা সিডি বানিয়ে ব্যাপক প্রচার করেÑ এ সবই গলদ এবং ইসলামী আদবের সরাসরি খেলাফ কাজ ।

এটি এখন ব্যাপক রূপ ধারণ করেছে; ব্যক্তিগতভাবে কাউকে কোনো প্রশ্ন করা হয়েছে, এর উত্তর নেটে দিয়ে দেওয়া হল। কাউকে ফোনে মাসআলা জিজ্ঞেস করা হয়েছে এরপর মাসআলার জবাব নেটে ছেড়ে দেওয়া বলা। এমনটি করা অনুচিত। এর জন্য এজাযত নেওয়া জরুরি। কারণ, মানুষের যখন একথা জানা থাকে যে, তার কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করা হবে তখন তিনি বেশি সতর্ক হন এবং বেশি গুরুত্বের সাথে কথা বলেন। কারো ব্যক্তিগত আলোচনা প্রচারের জন্য যদি এজাযত নেওয়া হয় তাহলে তিনি দ্বিতীয়বার দেখে সম্পাদনা করে দিতে পারবেন। কিন্তু এজাযত ছাড়া যদি প্রচার করা হয় তাহলে আর সম্পাদনা করার সুযোগ পাওয়া যাবে না।

উসূলে হাদীসের কিতাবে মুযাকারার মজলিশে শোনা রেওয়ায়েত একেবারে আম রেওয়ায়েতের মত মুযাকারা-মজলিশে শ্রুত হওয়ার কোনো লক্ষণ রাখা ছাড়া বর্ণনা করা যখন নিষেধ   তখন ব্যক্তিগত মজলিশের আলোচনার হুকুম কী হবে?

যারা আম মজলিশের বয়ানও দ্বিতীয়বার দেখা ছাড়া না কিতাব আকারে প্রকাশ করতে চান, না অডিও আকারে; শুনেছি তাদেরও কিছু কিছু বয়ানের ভিডিও কোনো বদযওক লোক নেটে ছেড়ে দিয়েছে। এমনকি খাছ মজলিশের কথাও নেটে ছেড়ে দিয়েছে।

যে ব্যক্তি নিজের ফটো এবং ভিডিওর এজাযত দেন না, তার ভিডিও যদি নযরে আসে তাহলে বুঝতে হবে, নিঃসন্দেহে এটা তার অজান্তে সংগ্রহ করা হয়েছে। ইনসাফের সাথে ভেবে দেখা দরকার যে, এটাও একপ্রকারের চুরি কি না!

ব্যক্তিগত মুযাকারা বা একান্ত মজলিশের আলোচনা প্রচারকারীরা যদি তা নিজেদের ভাষায় প্রচার করে, তখন তো তাতে সঠিকভাবে না বুঝেও প্রচারের সম্ভাবনা থাকে। আর ভাষা ও উপস্থাপনার পার্থক্য তো হতেই থাকে, যার কারণে অনেক সময় বক্তব্যের মাঝে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। এছাড়া এ ধরনের বর্ণনার ক্ষেত্রে বক্তব্যের প্রেক্ষাপট সামনে থাকে না। আর স্বাভাবিক কথা যে, বক্তব্যের প্রেক্ষাপট ছাড়া তা যথাযথভাবে বোঝা খুবই কঠিন!

যারা মিডিয়ায় এধরনের কাজ করে, তাও আবার দাওয়াতের নামে; আল্লাহ তাদের হেদায়েত নসীব করুন। আমীন

৯. মাহফিলের বয়ানকে কিতাব বানিয়ে দেওয়া

আম মাহফিলের কোনো বয়ান শুনে ওটাকে ওভাবেই লিপিবদ্ধ করে ব্যাপক প্রচার করা বা কিতাবে রূপ দেওয়ার সহীহ তরিকা হল, যদি বয়ানকারী জীবিত থাকেন তাহলে লিপিবদ্ধ করার পর তাকে দেখানো এবং তার এজাযত ছাড়া ব্যাপক প্রচার না করা। আর যদি বয়ানকারী জীবিত না থাকেন তাহলে লিপিবদ্ধ করার পর কোনো বিজ্ঞ আলেমকে দেখিয়ে নেওয়া।

হাকীমুল উম্মত রাহ.-এর মাওয়ায়েয -ওয়ায চলা অবস্থায়- লিপিবদ্ধ করতেনই বড় বড় আলেম। তা সত্তে¡ও তারা পরিষ্কারভাবে লিখে হযরতকে দেখাতেন। হযরত দেখে সম্পাদনা করে দেওয়ার পর তা প্রকাশিত হত বা প্রকাশের স্বীকৃতি পেত।

এ ব্যাপারে মাজালিসে মুফতীয়ে আযম (মুফতী আবদুর রউফ ছাহেব কৃত)-এর শুরুতে হযরাতুল উস্তাযের লিখিত ভূমিকায় যে সতর্কবাণী ও দিকনির্দেশনা রয়েছে তা আমাদের বারবার পড়া উচিত। অনুরূপভাবে তাঁর পিতা হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.-এর কিতাব মাজালিসে হাকীমুল উম্মত’-এর ভমিকাও পড়া উচিত। হাকীমুল উম্মত রাহ.-এর বিভিন্ন মজলিশে লিখিত ফাওয়ায়েদ, যা মুফতী ছাহেব রাহ. নিজে নোট করেছিলেন যখন সেগুলো প্রকাশ করার অনুরোধ করা হল, তো মুফতী ছাহেব রাহ. তা প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে কত সতর্কতা অবলম্বন করেছিলেনÑ এ ভূমিকায় তা বর্ণনা করা হয়েছে। বহুতই গুরুত্বপূর্ণ কথা এবং অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

১০. কিতাবের উপর সম্পাদক হিসেবে কারো নাম ছেপে দেওয়া

কেউ যদি কোনো কিতাব তাসহীহ (সংশোধন-সম্পাদনা) না করে থাকেন তাহলে তার অনুমতিক্রমেও সম্পাদক হিসেবে তার নাম দেওয়া জায়েয নয়। তেমনি ঐ ব্যক্তির জন্যও এই এজাযত দেওয়া নাজায়েয। আর আমি যে আদবের কথা আরয করতে চাচ্ছি, তা হল, কেউ যদি আমার কিতাবের সংশোধন-সম্পাদনা করেনও তবুও এজাযত ছাড়া সম্পাদক হিসেবে তার নাম উল্লেখ করা একেবারে অনুচিত কাজ।

আর মাত্র কয়েক পৃষ্ঠার সম্পাদনার ভিত্তিতে কিতাবের মলাটে সম্পাদক হিসেবে কারো নাম ছেপে দেওয়া যে না-জায়েয কাজÑ যারা এমনটি করে সম্ভবত তাদেরও জানা আছে।

১১. দাওয়াত দেওয়া ছাড়া প্রচার-পোস্টারে কারো নাম ছেপে দেওয়া

এটা কত বড় গুনাহ এবং নির্লজ্জতা তা সুস্থ বোধ-বিবেকের অধিকারী যে কেউ অনুভব করতে পারেন।

১২. শুধু দাওয়াত দিয়েই নাম ছেপে দেওয়া

কাউকে শুধু দাওয়াত দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এখনো তিনি দাওয়াত কবুল করেননি; পরবর্তীতে যোগাযোগ করতে বলেছেন। এ অবস্থায় পোস্টারে তার নাম ছেপে দেওয়া কীভাবে জায়েয হয়? আর যদি তিনি দাওয়াত কবুল করতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং পরিষ্কার ভাষায় ওযর পেশ করেন, এর পরও যদি তার নাম ছেপে দেওয়া হয় তাহলে তো তা আরো বড় অন্যায়।

বরং কিছু মানুষ তো এমন আছেন, যারা পোস্টার বা হ্যান্ডবিলে নাম প্রচার করা পসন্দ করেন না। এমন ব্যক্তি যদি দাওয়াত কবুলও করেন এরপরও তার নাম পোস্টার বা হ্যান্ডবিলে প্রচার করার জন্য আলাদাভাবে জিজ্ঞাসা করা জরুরি। স্পষ্ট অনুমতি ছাড়া এমন ব্যক্তিদের নাম ছেপে দেওয়া অনুচিত।

১৩. না জানিয়ে কাউকে মজলিসের আহবায়ক বানিয়ে দেওয়া

এজাযতও নেওয়া হয়নি এমনকি জানানোও হয়নি, কিন্তু দাওয়াতনামায় কিংবা পোস্টারে তাকে মজলিসের আহবায়ক হিসেবে পেশ করা হয়েছে- এমনও ঘটনা ঘটে থাকে আমাদের সমাজে। এও স্পষ্ট অন্যায় এবং নাজায়েয কাজ।

১৪. মজলিশে শুধু উপস্থিত রয়েছে বলে আলোচনায়ও দখল দেওয়া

কোনো মজলিশে বসার এজাযত হয়েছে; এর অর্থ এই নয় যে, আমি ঐ মজলিশের আলোচনায়ও শামিল হয়ে যাব। এ জন্য আলাদা অনুমতির প্রয়োজন। আমি ছোট। বড়দের মজলিশে বসেছি। তো এক্ষেত্রে সাধারণ আদব হল, বড়দের কথা ও হাসি-ঠাট্টায় শরীক না হওয়া; বরং আদবের সাথে চুপচাপ বসে থাকা। আমার প্রতি খাছ নির্দেশ না আসলে কথা  না বলা।

১৫. খাছ দরসে বসে যাওয়া

এক হল আম দরস, যা সকলের জন্য উন্মুক্ত। এর কথা ভিন্ন। কিন্তু খাছ দরস, খাছ মজলিশ বা খাছ আলোচনায় আমাকে ডাকা ছাড়া বা আমি ঐ মজলিশের সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তি হওয়া ছাড়া মজলিশে বসে যাওয়াÑ এটা শুধু অনুচিতই নয়, না-জায়েযও বটে। মজলিশে বসার বেশি আগ্রহ থাকলে অনুমতি চাইব, অনুমতি মিললে বসব, নইলে বিরত থাকব।

১৬. কারো অপ্রকাশিত কোনো লেখার পাণ্ডুলিপি ফটোকপি করে নেওয়া।

১৭. কারো ডায়েরী পড়া।

১৮. কারো চিঠি পড়া।

১৯. কেউ কোনো কিছু লিখছে, তার অজান্তেই তা দেখতে থাকা। বিশেষ করে যদি সে চিঠি লেখে।

২০. কারো ব্যক্তিগত কিতাব মুতালাআর জন্য উঠিয়ে নেওয়া।

২১. কারো ব্যক্তিগত সামান ব্যবহার করা।

এ ধরনের আরো অনেক বিষয় রয়েছে, যে সকল ক্ষেত্রে এজাযত নেওয়া জরুরি। কিন্তু আমরা এজাযত ছাড়াই এগুলো করতে থাকি। আল্লাহ তাআলা আমাদের হেদায়েত নসীব করুন। এজাতীয় সকল অনুচিত কাজ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন! 

 

advertisement