অনুকরণবাদী গণমাধ্যমের চেহারা
গণমাধ্যমে বিদেশী ভাষার সাহায্য নিতে হয়। তথ্যের প্রয়োজনে কখনো। কখনো খবর সংগ্রহে। কখনো মতামত ও ধারণা গ্রহণ করতে। বিদেশী ঘটনাবলির ক্ষেত্রে এটি ব্যাপকভাবে ঘটে থাকে। এ জন্য খবরের অনুবাদ কিংবা সম্পাদিত অনুবাদ গণমাধ্যমের একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। এ দেশের গণমাধ্যমের ক্ষেত্রেও বিষয়টি অবধারিত। গণমাধ্যমগুলোতে বিদেশী সংবাদপত্র, চ্যানেল কিংবা সংবাদ সংস্থার খবরের অনুবাদের সাহায্য নিতেই হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তথ্যের আগমন ও গ্রহণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উপযোগিতা ও সতর্কতা কি আমাদের সব পর্যায়ে রক্ষিত হয় কি না এটি একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। এ প্রশ্ন অতীতের এবং বর্তমানেরও। কিন্তু বিভিন্ন স্পর্শকাতর ইস্যু ও ঘটনায় বর্তমানে এ প্রশ্নের প্রাসঙ্গিকতা বেশ তীব্র হয়ে ওঠেছে।
আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহের অনেক চরিত্র থাকে। থাকে খবরের মেজাজেও বৈচিত্র। কিছু খবর সাধারণ চরিত্রের। সুঘটনা-দুর্ঘটনা, সাফল্য-ব্যর্থতা, মৃত্যু ইত্যাদি। আবার কিছু খবর ও ঘটনায় কিছু বাড়তি স্পর্শকাতরতা থাকে। যেমন : ইসলামী কোনো ইস্যুসংশ্লিষ্ট খবর, মুসলিম নিগ্রহ ও অসহায়ত্বের খবর। কিংবা এ জাতীয় বিশ্লেষণ। এই দ্বিতীয় ধরণের খবর বা বিশ্লেষণে আমরা অনুসৃত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশিত খবরের ভাষা ও বক্তব্যে অনেক সময়ই কাঙ্খিত চিত্রটি দেখতে পাই না। দুঃখজনক হলো, আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলোতেও কাঙ্খিত সেই চিত্রের অনুপস্থিতি বজায় রাখা হয়। অপূর্ণ, অসঙ্গতিপূর্ণ কিংবা বিষদুষ্ট বিদেশী খবরের হুবহু অনুকরণ করার পারঙ্গমতা দেখানোর মাঝেই আমরা কৃতিত্ব অনুভব করি বেশি। অথচ এটা নৈতিকভাবেও প্রত্যাশিত নয় এবং তথ্যের যথার্থতার দৃষ্টিকোণ থেকেও যুক্তিসঙ্গত নয়। সেজন্যই বিদেশী ভাষার বিদেশী খবর (প্রধানত ইংরেজী ভাষার) জানতে ও বুঝতে কিছু প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণ আমাদের জন্য কল্যাণকর সাব্যস্ত হতে পারে।
। দুই।
গণমাধ্যমে আন্তর্জাতিক ডেস্ক-এর দায়িত্বে থাকে এ জাতীয় কাজ। কিন্তু সচেতন যে কোনো লেখক-পাঠকের জন্যও এটি তথ্যের একটি প্রয়োজনীয় এবং সহজ উৎস বা ক্ষেত্র। ইতিহাস, দাওয়াহ ও সচেতনতার সঙ্গে দ্বীনদারির জীবন প্রত্যাশীরাও এ ক্ষেত্রটিতে পূর্ণ সতর্কতা বজায় রাখতে পারেন। এর সুফল বহুমাত্রিক। নিজের ক্ষেত্রের জন্য এবং দাওয়াহ ও সচেতনতার অপর ক্ষেত্রের জন্যও। এখানে পক্ষ-বিপক্ষ নির্বিশেষে খবরের অনুবাদ গ্রহণে কিছু মূলনীতি অনুসরণ করা প্রয়োজনীয় মনে করা হয়। সেগুলো হচ্ছে, (ক) শুধু অনুবাদ নয় সম্পাদনার সঙ্গে অনুবাদ। কপিতে কিছু থাকবে, কিছু বাদ পড়বে। (খ) উপযোগিতা বিবেচনা করে অনুবাদ। খবরটি আরেক দেশের। কিন্তু যে দেশের জন্য (বাংলাদেশ) অনুবাদ করা হচ্ছে সে দেশের পাঠকের বোধগম্য করার মতো উপযোগিতা অনূদিত কপিতে নিয়ে আসা। (গ) পরিভাষা, ভ‚গোল ও চরিত্র সম্পর্কে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করা। (যেটা হয়তো মূল কপিতে নেই) (ঘ) খবরের কাঠামো ও স্বভাবগতভাবে জেগে ওঠা কৌত‚হলের উত্তর পূরণের বিষয়টি সম্পন্ন করা। অর্থাৎ অনূদিত কপিটিতে খবরের কাঠামো যেন ভেঙ্গে না যায় এবং সহজাত কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তরশূন্যতা না থাকে- সেদিকে সযত্ন নজর রাখা। এরকম প্রাসঙ্গিক আরো কিছু কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখা বাঞ্চনীয় যেগুলো সাধারণ ও সার্বজনীন। আন্তর্জাতিক যে কোনো খবর নিজে অনুবাদ করে কপি করি কিংবা অনুধাবন করি বা ব্যক্ত করি- এই বিষয়গুলো আমলে রাখলে যথেষ্ট সুফল পাওয়া যাবে আশা করা যায়।
অবশ্য এখানে এ বিষয়টি স্মরণ রাখা সঙ্গত যে অনুবাদে সম্পাদনা কিংবা কাটছাটের এ অবকাশ কেবল তথ্য, খবর কিংবা নিউজের ক্ষেত্রে। সাধারণত প্রবন্ধ কিংবা ভালোমন্দ যে কোনো বিষয়ের অনুবাদে মূল কপির প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে হয়। কিন্তু নিউজ কিংবা নিউজের পাশাপাশি যায়- এমন ফিচার ইত্যাদির অনুবাদে এ স্বাধীনতা স্বীকৃত ও চর্চিত।
। তিন।
যেসব খবর কিংবা বিশ্লেষণে বাড়তি স্পর্শকাতরতা বিদ্যমান- সেসব ক্ষেত্রে আরো কিছু সতর্কতা বাঞ্চনীয়। ইসলামী নীতি, শিক্ষা ও অনুশাসনের কোনো ইস্যু কিংবা মুসলিম দেশ ও গোষ্ঠীর খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ভারসাম্যপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য ভাষায় পরিবেশন করে খুব কমই। মুসলিম কোনো তৎপরতা কিংবা মুসলমানদের প্রতি পরিচালিত নিগ্রহ ও অসহায়ত্বের খবরও যথাযথ অনুঘটকসহ মনোযোগও পেয়েছে কম। এ বিষয়গুলো মোটামুটি সর্বজনগ্রাহ্য। দুঃখক্লিষ্ট ও মজলুম পরিস্থিতিতে অতি অল্প সময়ের কোনো সহানুভ‚তি থাকলেও প্রভাবশালী ইংরেজী ভাষার গণমাধ্যম মুসলমানদের সেসব দুঃখের পেছনের কারণে হাত দিতে যায় না। সর্বোপরি দুঃখের সে চিত্রটা উধাও করে দিতে তারা বেশি একটা কালক্ষেপণও করে না। আর মুসলমানদের প্রতি আক্রমণ বর্ষণের অবকাশ হাতে এলে এ প্রবণতাটাই ভয়াবহরকম উল্টে যায়। তখন সর্বাত্মক পর্যায়ে মুসলমানদেরকে ঢালাওভাবে ঘায়েল করার চেষ্টা সক্রিয় হয়ে ওঠে। যেমন: সাম্প্রতিককালে ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানসহ মুসলিম দেশগুলোতে পশ্চিমা শক্তির বর্বর আক্রমণের খবরাখবর। আক্রমণের পক্ষে অজুহাতের কথাগুলো পশ্চিমা গণমাধ্যমে ঘন ঘন উচ্চারিত হয়েছে। এভাবে আক্রমণের বৈধতাও দেয়া হয়েছে। অথচ ইরাকে লাখ লাখ মানুষ হত্যার পর যখন আত্মস্বীকৃতি দিয়ে বলা হলো- ইরাকে পরমাণু অস্ত্র মজুদের খবর ভুল ছিল- তখন আর সেই দুনিয়াজোড়া বেদনা, হাহাকার, অত্যাচার এবং সেসবের বিচারের কথা বলা হয় না। গভীর কৌত‚হলী ও অনুসন্ধানী পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো তখন অতিশয় নিরবতাবাদী সাধুজনে পরিণত হয়ে যায়।
সেজন্যই এ জাতীয় খবর ইংরেজী সংবাদমাধ্যম থেকে অনুবাদ ও গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন সুস্থতা ও ভারসাম্যের জন্য সহায়ক। সেসব বিষয়গুলো সংক্ষেপে আমরা আরো আলোচনা করতে পারি। তবে সেগুলো আলোচনার আগে আমরা জেনে নিতে পারি আলোচিত আন্তর্জাতিক কিছু গণমাধ্যমের নাম। রেডিও/টিভি ও ওয়েবসাইট হিসেবে প্রভাবশালী কয়েকটি গণমাধ্যম হলো : বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, ভয়েস অব আমেরিকা, এনডি টিভি, ডন (সংবাদপত্র ও ওয়েবসাইট) ইত্যাদি। আর বিশ্ববিখ্যাত সংবাদ সংস্থা হিসেবে আছে এপি, এএফপি, রয়টার্স ইত্যাদি। সারা পৃথিবীতেই এদের পরিবেশিত খবর, ভাষা ও ধারণা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করা হয়। প্রশ্ন ছাড়াই অনুবাদ ও কপি করা হয়। আর এ কারণেই স্পর্শকাতর ইস্যুতে তাদের ছড়িয়ে দেয়া বিষ মানুষের বোধ-বিবেচনাকে অসুস্থ ও ভারসাম্যহীন করে যেতে থাকে। সত্য হচ্ছে, তথ্যের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের ‘মজবুরি’ তাদেরকে অনেক বেশি সুযোগসন্ধানী হওয়ার অবকাশ দেয়। আন্তর্জাতিক খবরের জন্য পশ্চিমা গণমাধ্যমের বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় দৃশ্যত আমাদের সামনে উন্মুক্ত নেই। তাদেরটা নিতেই হচ্ছে বলে তারা তাদের তথ্য, পক্ষ ও যুক্তি অবাধে চাপিয়ে দিতে পারছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কি এসব নামকরা সংবাদমাধ্যম ও প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছাকৃতভাবেই করে থাকে? এ প্রশ্নের প্রথম উত্তর হলো, আমাদের জানা নেই। দ্বিতীয়ত বলা যায়, অতীতে এবং এ যুগে কোনো গণমাধ্যমই এজেণ্ডা কিংবা নিজস্ব কোনো উদ্দেশ্য না নিয়ে কাজ করে না। সেই কাজটি কে কতটা সাফল্যের সঙ্গে, প্রচ্ছন্নভাবে ও কৌশলী ভঙ্গিতে করতে পারলো- সেটাই কৃতিত্ব হিসেবে সাব্যস্ত হয়। সে হিসেবে তারাও ইচ্ছাকৃত এজেণ্ডার অংশ হিসেবে এটা করতেই পারে। তৃতীয়ত অজ্ঞতা ও বিরোধও এর একটি কারণ হতে পারে। কারণ যাই হোক, বিষয়টি যে ঘটছে এ নিয়ে সচেতন পাঠক-দর্শকদের মাঝে তেমন কোনো প্রশ্ন নেই। সেজন্যই এ ক্ষেত্রে অনুবাদ ও অনুধাবনে কৌশলগুলো অনুসরণের চেষ্টা করাই হবে সুবিবেচনাপ্রসূত কাজ।
। চার।
এ জাতীয় খবর ও বিশ্লেষণের অনুবাদের ক্ষেত্রে প্রথম করণীয় হচ্ছে, আত্মঘাতী অনুকরণ না করা। খবরের তথ্য, বিষয় ও ভাষার ক্ষেত্রে অনুকরণবিমুখতা বজায় রাখা। তারপর বেছে-কেটে অনুবাদ করা। তারা যদি লেখেন, অমুক মুসলিম দেশে ড্রোন হামলায় এতজন ‘জঙ্গি’ নিহত; সেখানে আবার দেখা যাচ্ছে নিহতের তালিকায় নারী ও শিশুও রয়েছে। সুতরাং তারা ঢালাওভাবে বললেও আমি তো সেই নিহতদের ‘জঙ্গি’ বলতে পারি না। এ রকম উদাহরণ অসংখ্য। এসব ক্ষেত্রে আত্মঘাতী অনুকরণ না করে যথোপযুক্ত চিন্তাভাবনা করে শব্দ প্রয়োগের চেষ্টা করাই মঙ্গলজনক ।
দ্বিতীয়ত খবরের অনুবাদের সময় ভাষা ও বর্ণনায় (দৃষ্টিভঙ্গি ও চেতনার দিক থেকে) অসঙ্গতি ও ভারসাম্যহীনতা চোখে পড়লে কপি করার সময় পরিমিত ভাষায় নিজ থেকে স্পষ্টীকরণ মন্তব্য জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা যায়। কোনো কোনো সময় খবর পরিবেশনকারী প্রতিষ্ঠানের (বিবিসি/ সিএনএন/ রয়টার্স ইত্যাদি) মালিকানা ও পলিসির পরিচিতি খবরের শেষে তুলে ধরা যায়। এতে ওই খবরের অসঙ্গতিটি (যদি থাকে) কেন তৈরি করা হলো- সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। একইভাবে খবরের প্রাসঙ্গিক কোনো জরুরি পর্যবেক্ষণ থাকলে সেটিও উল্লেখ করা যেতে পারে। খবরের শেষে একটি প্যারায় ‘উল্লেখ্য’ ‘প্রসঙ্গত’ কিংবা বন্ধনীর মধ্যে ‘পর্যবেক্ষণ’ লিখে ওই পর্যবেক্ষণটি ব্যক্ত করা যায়। এতেও তাদের তৈরি করা ভ্রান্তি বা অস্পষ্টতা দূর হওয়ার পথ রচিত হতে পারে।
করার মতো তৃতীয় বিষয়টি হলো, পরিবেশিত খবরের কপির সঙ্গে কখনো কখনো প্রয়োজনীয় ইতিহাস ও তথ্যের সংযোজন ঘটানো। একতরফা একটি ঘটনা বা দুর্ঘটনার জন্য ঢালাও প্রচারণার পরিবেশ তৈরির বেলুন ফুটো করা সম্ভব এই পন্থায়। খবর ও প্রচারণার বিপরীতে নিকট ইতিহাসের কিছু আলোকপাত ও সংযোজন তৈরিকৃত বিভ্রান্তি নাশে অব্যাহত বড় সহায়ক হতে পারে। যেমন : কোনো একটি নেতিবাচক ঘটনার জন্য অব্যাহত প্রচারণা চালানো হতে থাকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে। তখন অপর পক্ষের নেতিবাচক ভয়াবহ কিছু ঘটনার ছোট্ট ফিরিস্তি তুলে ধরা যায়। সব ক্ষেত্রে উপযোগী না হলেও প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রগুলোতে এ প্রক্রিয়াটি বড় রকম সুফলদায়ক সাব্যস্ত হতে পারে।
চতুর্থ বিষয়টি হচ্ছে সামগ্রিক ও সাধারণ। বিদেশীদের গণমাধ্যমে পরিবেশিত ঘটনার অনুবাদে (যদি ঘটনার সঙ্গে ইসলাম ও মুসলমানের কোনো রকম সম্পৃক্ততা থাকে) পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য ও শুদ্ধি বজায় রাখা। তাদের ভাষ্য, পরিভাষার ফাঁদ ও নষ্ট প্রবণতা থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করে সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন নির্লিপ্ত ও শুদ্ধিবাদী একটি মনকে সক্রিয় করে কাজ করা। এতেও অনেক পাতানো ও সাজানো সমস্যার নিষ্পত্তি হয়ে যেতে পারে।
পঞ্চমত পশ্চিমা গণমাধ্যমের ভুল প্রবণতাগুলো সম্পর্কে সজাগ ও প্রশ্নশীল থাকা। এবং অন্যদের মাঝেও প্রশ্ন জাগিয়ে তোলা। কারণ, ইসলামী মূল্যবোধ বিরোধী কিংবা মুসলিমবিরোধী খবর পশ্চিমা গণমাধ্যমের মজাদার উপাত্ত। এটা তারা যতটুকু সংগ্রহ করতে পারে তার চেয়ে বেশি অলঙ্কৃত করে গড়ে তোলে। এজন্য পশ্চিমা মিডিয়ার সরবরাহ করা ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কিত নেতিবাচক কোনো খবর বা বিশ্লেষণ পেলেই ভিন্ন দিকের যুক্তি ও সম্ভাবনা তলিয়ে দেখার চেষ্টা করা। নিরেট তথ্যের আগ্রাসন কিংবা তথ্যের মাধ্যমে ধারণা ও মনস্তত্তে¡র আগ্রাসন রুখে দিতে নিজের এবং নিজের পাঠক-শ্রোতাদের মাঝে প্রশ্নশীলতা ও সতর্কতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। ইসলাম-মুসলিম বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতিবাচক প্রচারনার বিপরীত যুক্তি, অসঙ্গতি কিংবা আগের-পরের তথ্যের ঘাটতিগুলো সামনে নিয়ে আসতে পারলে বিষাক্ত পরানুকরণের সংকট কাটতে শুরু করবে ইনশাআল্লাহ।
ষষ্ঠত স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলোর ওপর অন্ধ নির্ভরতা কমিয়ে দেয়া। এবং ইন্টারনেটের সাহায্যে সংশ্লিষ্ট দেশের পত্রপত্রিকা বা সংস্থার ওয়েবসাইট থেকেই সরাসরি খবরের ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করা। বিকল্প মাধ্যম কিংবা অনলাইনের অন্যান্য সূত্র থেকে ঘটনার প্রকৃত চেহারা সামনে নিয়ে আসা।
। পাঁচ।
বিদেশী গণমাধ্যমের সার্থক অনুবাদ কিংবা লিখিত কপি তৈরিই এ লেখার চ‚ড়ান্ত প্রতিপাদ্য নয়। তাদের যে কোনো পরিবেশনা নিয়ে সতর্কতা ও সচেতনতার ফল আসলে সুদূর প্রসারী। নিজে বুঝতে যেমন, তেমনি মৌখিকভাবে হলেও অন্যকে বুঝাতেও এর কার্যকারিতা ছোট নয়। বিদেশী গণমাধ্যম এবং তাদের অনুকরণবাদী দেশী গণমাধ্যমের চেহারাটা একটু একটু করে মেকাপমুক্ত করার চেষ্টা তো সুস্থ বোধ রক্ষারই চেষ্টা। সে চেষ্টা নিজের অনুধাবনে, নিজের লেখায়, নিজের বলায় এবং সমাজের অগণন মানুষের বোধ নির্মাণে কাজে লাগাতে পারলে বহু মানুষের কল্যাণ হতে পারে। আসুন প্রয়োজনীয় সতর্কতার সঙ্গে বিদেশি ভাষার তথ্য গ্রহণ করার চেষ্টা করি।