বড়দের উজ্জ্বল পথনির্দেশ
কিছুদিন আগে আবুল হাসান আলী নদবী রাহ. রচিত ‘কারওয়ানে মদীনা’র অনুবাদ ‘মদীনার স্মৃতি’ বইটি হাতে নিলাম। ‘পূর্বাভাস’ শিরোনামে নদবী রাহ.-এর কথা পড়ছিলাম। এর এক পর্যায়ে তিনি লিখেছেন, “পাশ্চাত্য জ্ঞান, জড়বাদী দর্শন, আধুনিক শিক্ষা ও জাতিপূজার ছদ্মাবরণে যে শত্রæবাহিনী সম্প্রতি আজম ছেড়ে আরব জাহানে এবং দূর দূরান্তের ইসলামী রাজ্য বাদ দিয়ে পবিত্র হারাম অঞ্চলে প্রবেশ করেছে, এর মুকাবেলা এবং এর কুপ্রভাব প্রতিহত করার এই পন্থাই যথার্থ মনে হয় যে, প্রেম ও মহব্বতের জগৎ থেকে নতুন এক সৈন্যবাহিনী তৈরি করা হবে, যারা জড়বাদের লশকরের মুকাবিলায় কাতারবন্দী হবে।...”
বড়দের, বিশেষ করে আমাদের কালের ও নিকট অতীতের বড়রা আমাদের কী কী পথনির্দেশ করে গেছেন, কারা ও কোন্ কোন্ বিষয় ইসলাম ও মুসলিমের শত্রæÑ চিহ্নিত করে দিয়ে গেছেন। কোন্ কোন্ পথে কাজ করতে হবে, কোন্ পন্থায় করতে হবেÑ তা বাতলে দিয়ে গেছেন। তা না জানলে আমরা পথ চলব কীভাবে। পথ হয়ত চলব, কিন্তু ভুল পথে। এজন্য আমরা যারা কাজ করতে চাই তাদের অবশ্যই পূর্বসূরি বড়দের নির্দেশনা জানতে হবে এবং কালের বড়দের নির্দেশনা নিয়ে এগুতে হবে। মনে রাখি, বড়দের তত্ত¡াবধান ও নির্দেশনা ছাড়া কাজ যদিও হয়, কিন্তু কাজের কাজ হয় না।
আমি হয়ত কোনো একটি কাজ করতে চাচ্ছি এবং সে উদ্দেশ্যে মেহনত শুরু করেছি। অনেক মেহনত করে একটি পর্যায়ে পৌঁছলাম। তারপর দেখি, আমার নিকট অতীতের কোনো পূর্বসূরি সে কাজটি করে রেখেছেন বা পথনির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন; এ পথের সমস্যা চিহ্নিত করে গেছেন, সমাধানের পথ বাতলে গেছেন ।
এইযে জাতিপূজার ছদ্মাবরণে যে শত্রæ, তা আজ আমাদের এই দেশে এতটাই প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে, যার মোকাবেলা সুকঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুসলিম হয়েও ইসলামকে বিসর্জন দিয়ে কথিত বাঙালিত্ব বরণ করছে; বাঙালিত্বের নামে ইসলামবিরোধী বিজাতীয় কৃষ্টি গ্রহণ করতেও কুণ্ঠাবোধ করছে না। ইসলামকে দাঁড় করানো হচ্ছে বাঙালিত্বের প্রতিপক্ষ হিসেবে। ‘মুসলিম না বাঙালি’ দর্শন আবিষ্কার হচ্ছে।
তেমনি কয়েকদিন আগে আবুল হাসান আলী নদভী রাহ.-এরই আরেকটি রিসালা ردة...ولا أبا بكر لها পড়ছিলাম। প্রায় ২৫ বছর আগে ছাপা। নাস্তিকতা, ধর্মহীনতা, ধর্মবিদ্বেষ ও ধর্মত্যাগ (ইরতিদাদ) বিষয়ে আজ এই যুগে আমরা যা দেখছি, আমাদের চারপাশে যা ঘটছে, কত বছর আগে তিনি এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক করে গেছেন, পথনির্দেশনা পেশ করেছেন। আমরা আজ যা প্রত্যক্ষ্য করছি তিনি তাঁর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বহু বছর আগেই তা দেখতে পেয়েছেন। উম্মতের শিরায় হাত রেখে বিজ্ঞ ডাক্তারের মত প্রেসক্রিপশন দিয়ে গেছেন।
মোটকথা, যে যে ময়দানে কাজ করতে চায় তার উচিত সে বিষয়ে বড়দের তত্ত¡াবধান ও পথনির্দেশ অনুসরণ করা। তাহলেই কাজ হবে সুন্দর ও ফলপ্রসূ।