Shawal 1430   ||   October 2009

নব শিক্ষাবর্ষ : তালিবে ইলম ভাইদের প্রতি কিছু অনুরোধ

Mawlana Muhammad Abdul Malek

আলহামদুলিল্লাহ ওয়াসালামুন আলা ইবাদিহিল্লাযি নাসতাফা আম্মা বা’দ। কিছুদিন পরই আমাদের মাদরাসাসমূহে আরেকটি শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে যাচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ। এ মুহূর্তে দিল ও যবান যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শোকরে সারশাদ হওয়া দরকার তেমনি পিছনের জীবনের মুহাসাবা করাও জরুরি এবং পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে সবক হাসিল করে আগামী শিক্ষাবর্ষটিকে ইলম, আমল, আদাব-আখলাক এবং যিকর ও ফিকর সব দিক থেকেই উন্নত বানানোর একান- প্রচেষ্টা চালানো জরুরি। এ প্রসঙ্গে আমার সর্বপ্রথম দরখাস- হল আসসানাতাল আতিয়া-এর ধোঁকা থেকে নিজেকে হিফাযত করা বা কমপক্ষে এই ধোঁকায় পতিত হওয়ার অনুভূতিটুকু হারিয়ে না ফেলা। শায়খ কাউসারী রাহ. বলেছেন, ‘ইনদানা ফি তুরকিয়া মাছালুন ইয়াকুলু লাও শাকাকতা আন কালবি তালিবি ইলমিন লা ওয়াজাদতা ফিহী মিআতা মাসআলাতিন মাকতুবিন আলাইহা আসসানাতাল আতিয়া।’ (তরজমা) ‘আমাদের তুর্কিস-ানে প্রবাদ আছে যে, তুমি যদি কোনো তালিবে ইলমের কলব বিদীর্ণ কর তাহলে তাতে এক শ’টি মাসাআলার ক্ষেত্রে লেখা পাবে : ‘‘আগামী বছর’’।’ আল্লাহ আমাদের হালত এমন না করুন। দ্বিতীয় দরখাস- হল আমি কিতাব বুঝি কি বুঝি না তা বুঝতে যেন ভুল না করি। অনেককে দেখা যায় নিজের ব্যাপারে নিজেই ফায়সালা করে থাকেন যে, আমি কিতাব বুঝি। অথচ তার বোঝাটা সঠিক কি না সে কোনো উস-ায থেকে যাচাই করে নেয়নি। তাই অনেককে দেখা যায় বুঝার ব্যাপারে ভুল বুঝাবুঝিতে থাকেন। তাই আমার অনুরোধ হল, যে কোনো নতুন কিতাব চাই তা দরসী হোক বা দরসী কিতাবের কোনো শারহ হোক মুতালাআতে আসলে তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বহছ মুতালাআ করে সাথীদের সাথে মুযাকারা করে নেওয়া এবং উস-াযকে শুনিয়ে নিজের ফাহম-এর জায়েযা নিয়ে নেওয়া। এ মূলনীতিটি ঐ সব কিতাব বা শারহের ব্যাপারে বেশি প্রযোজ্য যেগুলোতে ফন্নী উসলূব গালেব। যেগুলোতে শুধু তারকীব বা তরজমা বোঝা বিষয়টিকে যথাযথ অনুধাবন করার জন্য যথেষ্ট নয়। মুখতাছারুল মাআনী, হেদায়া, জালালাইন, ফাতহুল কাদীর, ফাতহুল বারী, ফাতহুল মুলহিম, ফয়যুল বারী, মাআরিফুস সুনানসহ এ ধরনের আরো অনেক কিতাবের ব্যাপারে এই মূলনীতিটি খুব গুরুত্বের সাথে আমলে আনা জরুরি। তৃতীয় দরখাস- হল আমরা যেন কিতাবি ইসতি’দাদের অর্থ বুঝতে ভুল না করি। কিতাবি ইসতি’দাদের সঠিক অর্থ হল ইবারত বিশুদ্ধ পড়তে পারা, নাহবী তারকীব বোঝা, শব্দগুলোর ছরফী রূপ এবং লুগাবি মাফহুম বুঝতে পারা। অতঃপর ইবারত থেকেই তার মতলব এবং আলোচিত বিষয়ের পেশকৃত সমাধান বুঝতে পারা। কোনো আরবী ইলমী শারহের সাহায্যে এই বোঝ অর্জন হওয়া দোষনীয় নয়। এমনকি প্রয়োজনে কারো সঙ্গে মুযাকারা করে বা নির্ভরযোগ্য কোনো উর্দূ অথবা বাংলা শারহের সাহায্য নেওয়ার পর যদি মতলব ও মাফহুম ইবারতের উপর মুনতাবিক করে নেওয়া যায় তাও এক পর্যায়ে তা ইসতি’দাদে পরিণত হতে পারে। কিন' শুধু দরসী তাকরীর শুনে বা কোনো শারহের সাহায্য নিয়ে মতলব ও মাফহুম বা তার খুলাসা বুঝতে পারা কিন' ইবারতের সাথে তার যোগসূত্র সৃষ্টি করতে না পারা এটা কিতাবি ইসতি’দাদের কোনো স-রেই পড়ে না। তাই আমরা হাওয়াই বোঝাকে কিতাবি ইসতি’দাদের বা কিতাব বোঝার সমর্থক মনে করে ধোঁকায় না থাকি। চতূর্থ দরখাস- হল ইবারত হল্ করতে পারাকে ফন্নী ইসতি’দাদ হাসিল হয়েছে মনে করে ধোঁকায় না পড়ি। এ বিষয়ে নিজের সমঝ-এর জায়েযা দুই ভাবে নেওয়া যেতে পারে। এক. যে ফনের যে কিতাবটি আমি পড়ছি সে ফনের ঐ স-রের আরেকটি কিতাব যাতে বাস-বমুখী প্রয়োগ ও অনুশীলনের প্রতি যত্ন দেওয়া হয়েছে তা মুতালাআ করে দেখা। যদি তা সহজে বুঝতে না পারি তাহলে বুঝতে হবে কিতাবি ইসতি’দাদের সাথে ফন্নী ইসতি’দাদ পয়দা হচ্ছে না। দুই. দরসী কিতাবের কোনো এমন শারহ মুতালাআ করা, যাতে ফন্নী উসলূব গালেব। যদি তা মুতালাআ করতে আগ্রহ না হয় বা শুধু লফযী তরজমা বুঝেই ক্ষান- থাকি তাও বুঝতে হবে ফন্নী ইসতি’দাদ পয়দা হচ্ছে না। তবে এসকল মুহাসাবা ও জায়েযাও নিজের তা’লীমী মুরব্বীর হেদায়েত মোতাবেক এবং তাঁর নেগরানীতে হওয়া জরুরি। পঞ্চম দরখাস- হল শুধু ইমতিহানের ফলাফলের ভিত্তিতে নিজেকে ভালো ছাত্র মনে না করি। অন্যেরা যতই বলুক না কেন। অন্যের ধারণা বা বলাবলির কারণে নিজের হাকীকত থেকে গাফেল থাকা বহুত বড় হামাকত বা বোকামী। তাই চেষ্টা করব শুধু ভালো ছাত্র নয়; বরং একজন আদর্শ ছাত্র হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে। আদর্শ ছাত্রের পরিচয় সম্পর্কে এই বিভাগে অনেক কিছু লেখা হয়েছে আল্লাহ তাআলা সে অনুযায়ী আমাকে, আমাদের সকলকে আমল করার তাওফীক নসীব করুন। ষষ্ঠ দরখাস- হল শুধু ফাহমুন নুসূস-এ তুষ্ট না থেকে হেফযুন নসূসের ইহতিমাম করার চেষ্টা করি। বিষয়ভিত্তিক কুরআন মজীদের আয়াত, জামে অর্থবহ হাদীসসমূহ, আদইয়ায়ে মা’ছূরা অতঃপর দ্বীনের উসূল ও কাওয়ায়েদ সম্পর্কিয় সালফে সালেহীনের ঐসব বাণীসমূহ যা হাওয়ালার মর্যাদা রাখে সবই কিছু কিছু হিফয করা, মুযাককিরা (ইয়াদ দাশত) এ লিপিবদ্ধ করার পাশাপাশি স্মৃতিতেও আবদ্ধ করার চেষ্টা শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই চালিয়ে যেতে হবে। সালাফের মতো প্রত্যেক ফনের কমপক্ষে একেকটি মুখতাছার রিসালা হিফয করা সম্ভব না হলেও উপরোক্ত পদ্ধতিতে কিছু কিছু নাছ্ হিফয করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সপ্তম দরখাস- হল হযরত নূ’মানী রাহ. এর নসীহত মোতাবেক দৈনিক তাজদীদে নিয়তের চেষ্টা করি এবং শায়খ আবদুল ফাত্তাহ রাহ.-এর ‘কিমাতুয যামান ইনদাল উলামা’-এ পেশকৃত হেদায়েত মোতাবেক সময়ের শুধু হিফাযত নয়, কাসব করারও চেষ্টা করি। অর্থাৎ অল্প সময় থেকেও বেশি বেশি ফায়দা হাসিল করার চেষ্টা করি। আখেরি দরখাস- হল মিন আদাবিল ইসলাম বা আদাবে মুআশারা মুতালাআ করে নিজের আচার ও উচ্চারণ বা-আদব করার চেষ্টা করি। ওয়াল্লাহুল মুআফফিক ওয়াহুয়াল মুসতাআন।

 

advertisement