দরজা বন্ধ কর
তুমি ভেবেছ তোমার ঘরের দরজা বন্ধ করতে বলছি। এটা আবার কাউকে বলে দেওয়া লাগে। আমি যদি তোমার ঘরের দরজা খোলা রেখেই ঘুমাতে চাই তুমি তা দিবে না। বরং আমি না চাইলেও তুমি নিজেই তা বন্ধ করে দিবে। আমাকে বুঝাবে- ঘরের দরজা খোলা রাখলে এই এই ক্ষতি হয়। তাহলে তোমাকে কোন্ দরজা বন্ধ করতে বলা হচ্ছে?
আল্লাহর প্রিয় হতে হলে গোনাহ ছাড়তে হবে। দ্বীনের খাদেম হতে হলে গোনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে। জান্নাতে যেতে হলে গোনাহ-মুক্ত হতে হবে- একথা সবাই জানে। আমরা সবাই গোনাহ ছাড়তে চাই, কিন্তু কখনো কখনো অনাকাক্সিক্ষতভাবে গোনাহে জড়িয়ে পড়ি। আমার অবহেল বা অসতর্কতার কারণে গোনাহ আমার ঘরে ঢুকে পড়ে। গোনাহ যাতে আমার ঘরে ঢুকতে না পারে। আমার আমলের খাতাকে কলুষিত করতে না পারে; এজন্যই আমাদের গোনাহের দরজা বন্ধ করতে হবে। সুতরাং ‘দরজা বন্ধ কর’ দ্বারা উদ্দেশ্য, গোনাহের দরজা বন্ধ কর।
একটু ভেবে দেখ, কোন্ কোন্ পথে গোনাহ হয়ে যাচ্ছে। কোন্ কোন্ দরজা দিয়ে গোনাহ প্রবেশ করছে। ঘরের দরজা বন্ধ না করলে যেমন চোর ঢুকবে, তেমনি গোনাহের দরজা বন্ধ না করলেও অনিচ্ছায় তুমি গোনাহে জড়িয়ে পড়বে। সুতরাং গোনাহের দরজা যদি বন্ধ করতে পারো, তাহলে গোনাহ থেকে বাঁচা সহজ হয়ে যাবে।
তো যেসমস্ত পথে গোনাহ হয়ে যায় সেগুলো নিয়ে ভাবলে দেখবে তালিকার প্রথমেই আসবে অসৎ সংগ বা খারাপ বন্ধু। তুমি নিজেই যদি ভাবো, তাহলে দেখবে, তোমার জীবনে অনেক গোনাহই হয়ে গেছে খারাপ বন্ধুর সাথে মেশার কারণে। সুতরাং কারো সাথে মিশতে হলে আগে বুঝতে হবে, সে কেমন ছেলে। যখনই বুঝতে পারব, তার সাথে মিশলে গোনাহে জড়িয়ে পড়ার আশংকা আছে, তখনই আমি তাকে ‘সালাম’ জানাবো। সরাসরি বলতে না পারলে কৌশলে তার থেকে দূরে থাকব। সে যদি তোমার মামাতো-চাচাতো ভাই হয় এবং তোমার সমবয়সী হয়, তাহলে প্রথমে তুমি চেষ্টা করো তাদেরকে তোমার ভাল কাজের দিকে নিয়ে যেতে। একসাথে চলছ, তো নামাযের সময় চেষ্টা কর, তাদেরকে নামাযে নিয়ে যেতে। যদি দেখ, তাদেরকে তুমি নামাযে নিয়ে যেতে পারছ না, উল্টা তাদের কারণে তুমি জামাত ছাড়ছ, নামায কাযা করছ, তাহলে নিজেই সিদ্ধান্ত নাও, নাহ্ এদের সাথে আর নয়। আর যদি এমন হয়, এদের সাথে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় তোমাকে মিশতেই হবে, তাহলে তুমি সবসময়ই তাদেরকে নামাযের ও ভালো কাজের দাওয়াত দাও, খারাপ কাজ করতে দেখলে প্রতিবাদ কর। এর দ্বারা তারা যদি ঠিক না-ও হয় তুমি কিন্তু এ দাওয়াতের কারণে নিজে বেঁচে যাবে। কারণ, তাদেরকে নামাযের দাওয়াত দিলে তুমি নিজে নামায ছাড়তে পারবে না। তেমনি তাদের খারাপ কাজের প্রতিবাদ করলে অন্তত তুমি তাদের খারাপ কাজে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। মোটকথা যে কোনো মূল্যে তোমাকে অসৎ সংগ থেকে বাঁচতে হবে। নইলে তারা তোমাকে গোনাহে জড়িয়েই ছাড়বে। এজন্যই তো মানুষ বলে, সৎ সঙ্গে সর্গবাস, অসৎ সংগে সর্বনাশ।
আর এই অসৎ সংগের কাছাকাছি আরেকটি বিষয় হল, খারাপ পরিবেশ। পরিবেশ দ্বারা মানুষ সবচে বেশি প্রভাবিত হয়। যখন একটা পরিবেশে সবাই কোনো গোনাহে লিপ্ত হয়, তখন যে ব্যক্তি এই গোনাহকে আগে ঘৃণা করত তার কাছেও গোনাহটিকে হালকা মনে হয়। ফলে তালে তালে সেও ওই গোনাহে জড়িয়ে পড়ে। সুতরাং তোমাকে পরিবেশের ভালো-খারাপ নিয়েও ভাবতে হবে। বিবাহ অনুষ্ঠান বা এমন কোনো পরিবেশের বিষয়ে যখন তুমি জানবে- সেটা গোনাহের পরিবেশ, নাচ-গান ও বেহায়াপনার পরিবেশ, তখন আগ থেকেই তুমি সেখান থেকে বাঁচতে চেষ্টা করবে। যদি তোমাকে সেখানে যেতেই হয় তাহলে অন্তত কীভাবে গোনাহ থেকে বাঁচবে সে পথ তোমাকেই বের করতে হবে। দুর্গন্ধময় এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় নাকে রুমাল চেপে ধরার কথা কি তোমাকে কারো বলে দেয়া লাগে?
গোনাহের আরেকটি দরজা হল, মোবাইল ও কম্পিউটার। এর সাথে সাথে ইন্টারনেট। প্রথম কথা হল, প্রযুক্তির নামে হোক আর প্রয়োজন, যে ছুঁতোয় তা তোমার হাতে আসুক, প্রথমে ভাবতে হবে, তোমার কি এগুলো হাতে নেওয়ার বয়স হয়েছে? তুমি কি এগুলোর নিরাপদ ব্যবহার করতে পারবে? সুতরাং যে ছুঁতোয়ই হোক তোমার জন্য এগুলোর আবদার করার অর্থ চোরের জন্য ঘরের দরজা খোলা রাখার আবদার করা।
এগুলো ভাল কাজেও ব্যবহার করা যায়, আবার এগুলো দিয়ে গোনাহও হয়ে যায়। এগুলোর ব্যাপারে বিজ্ঞজনের মন্তব্য হল, ‘খিড়কি পথে ডাকাতের প্রবেশ’। প্রযুক্তির কথা বলে তা হাতে আসে, আর তা দিয়ে প্রযুক্তির তুলনায় গোনাহই বেশি প্রবেশ করে। সুতরাং কখনো বাস্তবেই মোবাইলের প্রয়োজন হলে, ক্যামেরাওয়ালা বা ভিডিও দেখা যায় এমন মোবাইল কখনো হাতে নেবে না বা সবসময় মোবাইল তোমার কাছে রাখবে না; বাইরে যাওয়ার সময় নিবে কাজ শেষে বাসায় এসে তা আবার অব্বু-আম্মুর কাছে রাখবে। তেমনি কম্পিউটারের বাস্তব প্রয়োজন হলে সেটা বাড়ির এমন স্থানে স্থাপন করবে যেন সকলের নযরে পড়ে, আর তুমি গোনাহ থেকে বাঁচতে পারো।
আর সবসময় মনে রাখো, তুমি সারা পৃথিবীর মানুষের চোখকে ফাঁকি দিয়ে যা কিছু করছ গোপনে, তোমার সব কাজ দেখছেন, যিনি আছেন আসমানে।