সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষা : পিতা-মাতার আকুলতা ও ব্যাকুলতা
শিশুরা মানবসমাজের সম্পদ। দেশ ও জাতির ভবিষ্যত। আজকের শিশু আগামীদিনের পরিচালক। যুগ ও সময়ের পথনির্দেশক। মানব ও মানবতার পথপ্রদর্শক। তাদের সঠিক শিক্ষা-দীক্ষা তাই একান্ত প্রয়োজন। শিক্ষার সবচেয়ে উপযোগী সময় শৈশব। গ্রহণ ও ধারণের সর্বোত্তম সময় শৈশব। শিশুরা যেকোনো জিনিস খুব সহজে ধারণ করতে পারে। তাদের স্মৃতি থেকে তা কখনো মুছে যায় না। গবেষকগণ সত্য বলেছেন, ‘শৈশবের শিক্ষা যেন পাথরে অংকিত নকশা।’
একটি উদাহরণ দেখুন। উমর ইবনে আবু সালামা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিপালনে ছিলাম। একবার (বড় পাত্রে) খাবার সময় আমার হাত পাত্রে এদিক-ওদিক ঘুরছিল। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে বাছা! খাবার সময় বিসমিল্লাহ্ পড়বে। ডান হাতে খাবে। নিজের দিক থেকে খাবে। রাবী বলেন, ‘এরপর থেকে এটি আমার স্বভাবে পরিণত হয়ে গিয়েছিল।’ -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৩৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৩৮৮
কারণ শিশুদের ধ্যান-ধারণা পাক-পবিত্র। অনুভব-অনুভ‚তি কোমল ও স্বচ্ছ। তারা যখন দুনিয়াতে আসে, তাদের মধ্যে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনার এবং ন্যায় ও সত্যের দাওয়াত গ্রহণ করার স্বভাব-যোগ্যতা বিদ্যমান থাকে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, প্রতিটি শিশু ফিতরত (সত্য স্বভাব)-এর উপর জন্মগ্রহণ করে। পরে তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি বানায় কিংবা খ্রিস্টান বানায় কিংবা অগ্নিপূজক বানায়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৫৮
সুতরাং শৈশব থেকেই শিশুর আকীদা-বিশ্বাস ও আখলাক-চরিত্রকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করতে হবে। শিশুরা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় পরিবেশ দ্বারা। পরিবেশ তাদের মনে গভীর রেখাপাত করে। এজন্য তাদেরকে ঘরে ও বাইরে দ্বীনী পরিবেশে রাখতে হবে, যাতে তারা ইসলামী আদর্শে বেড়ে উঠতে পারে এবং এটি তাদের স্বভাবে পরিণত হতে পারে। নতুবা ধীরে ধীরে সে বিজাতির বোধ-বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠান গ্রহণ করতে শুরু করবে, বড় হয়ে বিপথগামী হয়ে পড়বে, যা এই নিষ্পাপ শিশুর উপর যেমন অবিচার তেমনি মানবজাতির উপরও।
সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার স্নেহ, মমতা প্রশ্নাতীত। এ পরম করুণাময় আল্লাহর দান। তিনিই তাদের মনে মমতার এ অফুরন্ত ঝরণা উৎসারিত করেছেন। পিতা-মাতার মমতা-সিক্ত হৃদয় সন্তানের কল্যাণ-কামনায় অস্থির থাকে। কিন্তু কাকে বলে কল্যাণ? মহান আল্লাহ যে পিতা-মাতাকে ঈমান ও হিকমত দান করেছেন, তারা সন্তানের কেবল শারীরিক প্রতিপালনই নয়; মন-মস্তিষ্ক, বোধ-বিশ্বাস ও আচার-আচরণ নির্মাণেও অস্থির থাকেন। শুধু ইহকালীন সুখ-সমৃদ্ধিই নয়; পরকালীন শান্তি-সাফল্যের জন্যও ব্যাকুল থাকেন। সুতরাং স্বভাবের মমত্ববোধের সাথে যখন আসমানের আলোর সংযোগ ঘটে তখন সন্তানের উভয় জীবন হয় সর্বাঙ্গীণ সুন্দর।
সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষা পিতা-মাতার দায়িত্বও। এ স্বয়ং আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত। ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা কর সেই আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। -সূরা তাহরীম (৬৬) : ৬
এখানে আগুন শব্দটি প্রণিধানযোগ্য। সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষায় পিতা-মাতার কী পরিমাণ চেষ্টা করতে হয়? তাদেরকে গোনাহ থেকে বাঁচাতে কেমন ব্যাকুল হতে হয়? আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য যেমন ব্যাকুল হন তেমন, আগুন শব্দটি এ ইঙ্গিতই দেয়। ধরা যাক, কোথাও এমন ভায়াবহ আগুন জ্বলছে যে, তাতে কেউ পড়ে গেলে তার জীবিত ফেরা অসম্ভব। কোনো অবুঝ ছেলে যদি সেদিকে পা বাড়ায়, পিতা-মাতা কি শুধু ‘যেয়ো না’, ‘পুড়ে যাবে’ বলে বসে থাকবেন? শুধু মৌখিক উপদেশ দিয়ে ক্ষান্ত হয়ে যাবেন? আর এ সত্তে¡ও সে যদি দগ্ধ হয়ে যায়, তবে তারা কি একথা বলে দায়মুক্ত হবেন যে, আমরা ওকে নিষেধ করেছি, ও শোনেনি, স্বেচ্ছায় দগ্ধ হয়েছে? পিতা-মাতার তো ছেলেকে আগুনের দিকে যেতে দেখলে ঘুম হারাম হয়ে যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত কোলে তুলে তাকে আগুন থেকে দূরে না নিয়ে যেতে পারবেন ততক্ষণ তারা শান্তি পাবেন না।
সঠিক ও কল্যাণকর শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করা কেবল পিতা-মাতাই নয়; শিক্ষক, সমাজ, সরকার সবার দায়িত্ব এবং সকলকেই এ বিষয়ে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। প্রত্যেকে তার অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) জনগণের দায়িত্বশীল। তাকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ পরিবারের দায়িত্বশীল। তাকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। মহিলা তার স্বামীর ঘর ও সন্তানের দায়িত্বশীল। তাকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। গোলাম তার মনিবের সম্পদের দায়িত্বশীল। তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সুতরাং তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকে তার অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৫৫৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮২৮
অপর এক হাদীসে এসেছে, তোমাদের সন্তানদের নামাযের হুকুম কর যখন তাদের বয়স সাত বছর। আর যখন দশ তখন (নামায না পড়লে) প্রহার কর এবং তাদের পরস্পরের বিছানা পৃথক করে দাও। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৫
সন্তানের তালীম-তারবিয়াত পুণ্যকর্মও। সন্তান-সন্ততি কেবল পার্থিব অবলম্বনই নয়; পরকালের সম্বলও বটে। পিতা-মাতা তাদের সৎ, যোগ্য ও নেককাররূপে গড়ে তুললে দুনিয়া-আখেরাত সর্বত্র উপকৃত হবেন। মৃত্যুর পরও তারা এর সাওয়াব পেতে থাকবেন। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, মানুষের মৃত্যুর পর তিনটি ছাড়া আর সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। সদকা জারিয়া। এমন ইলম, যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়। এবং নেককার সন্তান, যে তার জন্য দুআ করে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩১০
ইসলাম মমত্ববোধ, দায়িত্ববোধ ও পরকাল অবলম্বন- তিনভাবে পিতা-মাতাকে সন্তানের সহীহ তালীম-তারবিয়াতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে, যাতে কোনো একটি যদি তাদের জাগিয়ে তুলতে না পারে অন্যটি যেন পারে। এবং এই মানবসম্পদ কোনো অবস্থাতেই যেন সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। আর পিতা-মাতার মনে যদি এ তিন চিন্তার সম্মিলন ঘটে তাহলে তো সন্তানের জীবন হবে অতুলনীয়- শারীরিক, মানসিক, চারিত্রিক ও ঈমানিক সবদিক থেকে।
মানবজাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআন নাযিল করেছেন। তাতে সন্তানের তালীম-তারবিয়াত বিষয়েও পর্যাপ্ত নির্দেশনা রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে আল্লাহর কিছু বিশিষ্ট বান্দার সন্তান-তারবিয়াতের বিস্ময়কর উদাহরণ। আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহপূর্বক এগুলো বর্ণনা করেছেন, যাতে সন্তানের ঈমান ও চরিত্রের ব্যাপারে তাঁদের মনে যে ব্যাকুলতা ও দায়িত্বসচেতনতা ছিল, সবাই তা উপলব্ধি করতে পারে এবং কলিজার টুকরার জন্য নিজেদের মনেও সেটা ধারণ করতে পারে। কয়েকটি উদাহরণ দেখুন:
এক. হযরত লুকমান অত্যন্ত জ্ঞানী লোক ছিলেন। তিনি তাঁর ছেলেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। কুরআন মাজীদের সূরা লুকমানে সেই উপদেশগুলো বর্ণিত হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) ‘এবং (সেই সময়কে) স্মরণ কর, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশচ্ছলে বলেছিল, ওহে আমার পুত্র! আল্লাহর সাথে শিরক কর না। নিশ্চিত জেন, শিরক চরম যুলুম। হে বাছা! কোনো কিছু যদি সরিষার দানা বরাবরও হয় এবং তা থাকে কোনো পাথরের ভেতর কিংবা আকাশমÐলীতে বা ভূমিতে, তবু আল্লাহ তা উপস্থিত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ অতি সূ²দর্শী, সব কিছুর খবর রাখেন। বাছা! নামায কায়েম কর, মানুষকে সৎকাজের আদেশ কর, মন্দ কাজে বাধা দাও এবং তোমার যে কষ্ট দেখা দেয়, তাতে সবর কর। নিশ্চয় এ অত্যন্ত হিম্মতের কাজ। এবং মানুষের সামনে নিজ গাল ফুলিও না এবং ভ‚মিতে দর্পভরে চলো না। নিশ্চয় আল্লাহ দর্পিত অহংকারীকে পছন্দ করেন না। নিজ পদচারণায় মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর সংযত রাখ। নিশ্চয়ই সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট স্বর গাধাদেরই স্বর।’ -সূরা লুকমান (৩১) : ১৩, ১৬-১৯
দুই. হযরত নূহ আ. প্রায় এক হাজার বছর পর্যন্ত তাঁর কওমকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। আস্তে-জোরে, প্রকাশ্যে-গোপনে, জনতায়-নির্জনতায়- বিভিন্নভাবে তাদের বুঝিয়েছেন। তবু অল্পসংখ্যক ছাড়া কেউ ঈমান আনেনি। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের উপর কঠিন শাস্তি নেমে আসে- মহাপ্লাবন। আল্লাহর হুকুমে ঈমানদার সঙ্গীদের নিয়ে তিনি নৌকায় আরোহণ করলেন। (তরজমা) ‘সে নৌকা পর্বত-প্রমাণ তরঙ্গরাশির মধ্যে তাদের নিয়ে বয়ে চলছিল। নূহ তার ছেলেকে, যে সকলের চেয়ে পৃথক ছিল, বলল, বাছা! তুমি আমাদের সঙ্গে আরোহণ কর এবং কাফেরদের সঙ্গে থেক না। সে বলল, আমি এখনই এমন এক পাহাড়ে আশ্রয় নেব, যা আমাকে পানি থেকে রক্ষা করবে। নূহ বলল, আজ আল্লাহর হুকুম থেকে কাউকে রক্ষা করার কেউ নেই, কেবল সেই ছাড়া যার প্রতি আল্লাহ দয়া করেন। অতঃপর ঢেউ তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিল এবং সেও নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’ -সূরা হুদ (১১) : ৪১-৪২
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) ‘নূহ তার প্রতিপালককে ডাক দিয়ে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার পুত্র তো আমার পরিবারেরই একজন! এবং নিশ্চয় তোমার ওয়াদা সত্য এবং তুমি সকল বিচারকের শ্রেষ্ঠ বিচারক। আল্লাহ বললেন, হে নূহ! তুমি নিশ্চিত জেনে রেখ, সে তোমার পরিবারবর্গের অন্তর্ভুক্ত নয়। সে তো অপবিত্র কর্মে কলুষিত। সুতরাং তুমি আমার কাছে এমন জিনিস চেয়ো না যে সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি তুমি অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।’ -সূরা হুদ (১১) : ৪৫-৪৬
ছেলেকে মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত করার কী ঐকান্তিক চেষ্টা! অথচ তাঁকে ওহীর মাধ্যমে আগেই জানানো হয়েছিল যে, এ পর্যন্ত যারা ঈমান এনেছে তারা ছাড়া তোমার কওমের আর কেউ ঈমান আনবে না। তবু শেষ চেষ্টাটা তিনি করেছেন। কেননা তাঁর নিশ্চিত জানা ছিল, এ আযাবে যে ধ্বংস হবে তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত। তাকে চিরকাল সেখানে থাকতে হবে। কোনো পিতা-মাতার পক্ষে কি সন্তানের এ দুঃসংবাদ সহ্য করা সম্ভব? এ শোনার পর কি তারা হাত-পা জমিয়ে বসে থাকতে পারে?
তিন. ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) ‘যখন তার (ইবরাহীম আ.-এর) প্রতিপালক তাকে বললেন, আনুগত্যে নতশীর হও। তখন সে বলল, আমি রাব্বুল আলামীনের সামনে মাথা নত করলাম। ইবরাহীম তার সন্তানদেরকে একথারই অসিয়ত করল এবং ইয়াকুবও (তার সন্তানদেরকে) যে, হে আমার পুত্রগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দ্বীন মনোনীত করেছেন। সুতরাং তোমাদের মৃত্যু যেন এ অবস্থায় আসে যে, তোমরা মুসলিম। তোমরা কি সেসময় উপস্থিত ছিলে যখন ইয়াকুবের মৃত্যুক্ষণ এসে গিয়েছিল। যখন সে তার পুত্রদেরকে বলেছিল, আমার পর তোমরা কার ইবাদত করবে? তারা সকলে বলেছিল, আমরা সেই এক আল্লাহরই ইবাদত করব, যিনি আপনার মাবুদ এবং আপনার বাপ-দাদা ইবরাহীম, ইসমাইল ও ইসহাকেরও মাবুদ। আমরা সকলে কেবল তাঁরই অনুগত।’ -সূরা বাকারা (২) : ১৩১-১৩৩
ইয়াকুব আ. নিজেও নবী। তাঁর পিতা হযরত ইসহাক আ.। চাচা হযরত ইসমাইল আ.। দাদা হযরত ইবরাহীম আ.। এটি নবী পরিবার এবং সকলেই বড় বড় নবী। এ থেকেই অনুমান করা যায়, তাঁর ছেলেদের ঈমান কী শক্তিশালী ছিল এবং জীবনাচরণে সেটার কী গভীর প্রভাব পড়েছিল। এ সত্তে¡ও তিনি তাদের থেকে তাঁর মৃত্যুর পর ঈমানে অবিচল থাকার অঙ্গীকার নিয়েছেন। আর এ তিনি কখন করেছেন? মৃত্যুক্ষণে যখন সাধারণ মানুষ হুঁশ-জ্ঞান হারিয়ে ফেলে কিংবা পার্থিব বিষয়াদি নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সেসময় তিনি ছেলেদের ভবিষ্যত-ঈমান নিয়ে ব্যস্ত। কারণ তাঁর কাছে ঈমানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যাদেরকে সারা জীবন আগলে রাখা হয়েছে তারা যদি কখনো ঈমান থেকে দূরে সরে যায়? গোনাহ বা শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ে? তাই মৃত্যুর আগে (নিজের সাধ্য অনুযায়ী) আবারো তাকীদ করছেন।
ইয়াকুব আ.-এর মনকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছিল কোন প্রেরণাটি; দায়িত্ববোধ না মমত্ববোধ? নিঃসন্দেহে দুটোই। কারণ নবীর মমত্ববোধ ও দায়িত্ববোধ আলাদা ধারায় প্রবাহিত হয় না। সুতরাং পিতা-মাতার মনে সন্তানের শারীরিক প্রতিপালনের জন্য যে মমত্ব জাগে, চারিত্রিক ও ঈমানিক প্রতিপালনের জন্যও সেরকম মমত্ব জাগুক। সন্তানকে আগুন থেকে বাঁচাতে তারা যেমন ব্যাকুল হন, অন্যায় ও গোনাহ থেকে বিরত রাখতেও তেমনি ব্যাকুল হোক।