একটি মারাত্মক ভ্রান্ত চিন্তা : কর্মই ধর্ম
সেদিন এক ভাইকে কথা প্রসঙ্গে বলতে শুনলাম- কর্মই ধর্ম; কে কোন ধর্মের তা কোনো বিষয় নয়, কে কেমন আমল করছে সেটাই আসল বিষয়। অর্থাৎ, ব্যক্তি যে ধর্মেরই হোক, ভালো কাজ করলে মুক্তি পাবে!
লোকটি শিক্ষিত এবং মসজিদের মুসল্লি। শুনে অবাক হলাম। অবাক হওয়ারই কথা। একজন শিক্ষিত মানুষ আবার মসজিদের মুসল্লি, তার মুখ থেকে এমন কথা!
আরো মানুষকে এমন কথা বলতে শুনেছি। আসলে প্রয়োজনীয় দ্বীনী ইলম না থাকায় মানুষ এ ধরনের কথা বলে থাকে।
হয়ত তাদের ধারণা, সব ধর্মের মানুষের সাথে যেহেতু ভালো আচরণ করতে হবে, তাই সকলের ধর্ম ও আদর্শের বিষয়েও উদার (?) হতে হবে। তার ধর্ম ও বিশ্বাসকেও সঠিক বলতে হবে।
একটু ভেবে দেখি, আদর্শের ক্ষেত্রে কি কোনো উদারতা চলে। শিরকের সাথে কি কোনো আপস চলে?
এটা কি সম্ভব, যে আল্লাহর সাথে কাউকে (বা হাজার দেবতাকে) শরীক করে তাকেও সঠিক বলব!!
আচ্ছা, বিষয়টি যদি এমনই হয় যে, কে কী আমল করছে সেটাই আসল বিষয়। তাহলেও একজন অমুসলিম কখনোই নাযাত পেতে পারে না। কারণ, সে সবচেয়ে বড় আমলেই তো ত্রæটি করছে। সে তো আল্লাহর সাথে শরীক করছে। আর আল্লাহ তাআলার স্পষ্ট ঘোষণা-
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءوَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا.
“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরীক করাকে ক্ষমা করবেন না। এর নিচের যে কোনোও গুনাহ যার ক্ষেত্রে চান ক্ষমা করে দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করে সে সঠিক পথ থেকে বহু দূরে সরে যায়। -সূরা নিসা ৪ : ১১৬
আচ্ছা, আল্লাহর সাথে শরীক করা, আল্লাহর দ্বীনকে প্রত্যাখ্যান করা, আল্লাহর কিতাবকে প্রত্যাখ্যান করা কি সবচেয়ে বড় অন্যায় নয়! আল্লাহর সৃষ্টি হয়ে, আল্লাহর যমিনে বসবাস করে, তার দেওয়া রিযিক ভক্ষণ করে যে আল্লাহকে অস্বীকার করে, সে কি সবচেয়ে বড় অপরাধী নয়! এত বড় বড় অন্যায় কাজ কেন আমাদের দৃষ্টির আড়ালে থেকে যায়?
হাঁ, অমুসলিমের যত অধিকার আছে আমি তা আদায় করব। তার সাথে ভালো আচরণ করব। প্রতিবেশি হলে প্রতিবেশির হক আদায় করব। তার প্রতি জুলুম করব না। কিন্তু এর অর্থ তো এই নয় যে, তার শিরকি-কুফরিকেও সঠিক বলব। যে কোনো ধর্মের অনুসরণকে বৈধ বলব। তাদের শিরকি-কুফরি আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করব। তাদের বিশ্বাস ও দর্শনকে ভালো চোখে দেখব! (নাউযুবিল্লাহ)
আল্লাহ আমাদের সকল প্রকার ভ্রান্ত চিন্তা থেকে হেফাযত করুন। আল্লাহ তাআলার এ সুস্পষ্ট ঘোষণা স্মরণ রাখার তাওফিক দিন-
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ
নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট (গ্রহণযোগ্য) দ্বীন কেবল ইসলামই।... -সূরা আলে ইমরান ৩ : ১৯
স্মরণ রাখি এই আয়াতও-
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
তরজমা : যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনোও দ্বীন অবলম্বন করতে চাবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না এবং আখেরাতে যারা মহাক্ষতিগ্রস্ত সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। -সূরা আলে ইমরান ৩ : ৮৫
আরো স্মরণ রাখি রাসূলের এই বাণীও-
وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُودِيٌّ، وَلَا نَصْرَانِيٌّ، ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ، إِلَّا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ
ঐ সত্তার কসম যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ। এই উম্মতের যে কেউ -সে ইহুদী হোক বা নাসার- আমার রিসালাতের সংবাদ পাওয়ার পরও আমার প্রতি ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪০
পাঠকদের প্রতি দরখাস্ত, তারা যেন মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেব রচিত “ঈমান সবার আগে’ কিতাবটি অবশ্যই অধ্যয়ন করেন। ইতিমধ্যে যার দ্বিতীয় সংস্করণও প্রকাশিত হয়েছে।