সাম্প্রতিক ঔদ্ধত্য : তবুও যেখানে ওদের পরাজয়
এ মাসটি শাওয়াল মাস। পয়লা শাওয়ালে আমরা উদযাপন করেছি ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ এক মাসের রোযা ও সওমের পর ঈদুল ফিতর। মাহে রমযানে ছিল সওম ও তারাবীর আনন্দ আর ঈদুল ফিতরে আল্লাহর আদেশে সওম-সমাপ্তির আনন্দ। তিনি যে একমাস রোযা রাখার, তারাবী পড়ার তাওফীক দান করেছেন, সেজন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শোকরগোযারীর আনন্দ। এই শোকরগোযারীই আমরা আদায় করেছি ঈদের দিন দুই রাকাত নামাযের মাধ্যমে।
যদিও আমরা অস্থির ও বিচলিত হয়েছি নানা কষ্ট ও মনস্তাপে। প্রথম কষ্ট তো নিজের প্রতি নিজের কারণে। নিজের প্রতি কর্তব্য পালনে অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে। মাহে রমযানের সিয়াম ও কিয়াম আমাদের দান করেছে নিজের প্রতি কর্তব্য পরায়ণতার শিক্ষা।
কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে বাঁচা ও বাঁচানোর যে আদেশ করেছেন তাতে প্রথম আদেশ নিজেকে রক্ষা করার। সুতরাং প্রথম কর্তব্য, ব্যক্তি পর্যায়ে নিজ নিজ পরিশুদ্ধি।
আমরা আরো বিচলিত হয়েছি আমাদের চারপাশের মানুষের নানা আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডে। মানুষ যখন কোনো পাপ করে তখন তো সবার আগে সে নিজের উপরই যুলুম করে। নিজ সত্তাকে ধ্বংসের মুখোমুখী করে। আমাদের এই সমাজে দ্বীন-ধর্মের বিরোধিতায় কিছু মানুষের যে হিস্টিরিয়া গ্রস্ততা; নিজ খালিক ও মালিকের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশের, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অমর্যাদার ও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রোকনসমূহের অবমাননার যে নাপাক প্রবণতা, এর চেয়ে লজ্জাজনক ও দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে? এই সকল ঘটনা ঐ বিকারগ্রস্ত লোকগুলোর জন্যই শুধু আত্মঘাতী নয়, গোটা জাতির জন্যও লজ্জা ও অবমাননার। প্রত্যেক মুসলিমের প্রথম কর্তব্য, এই সকল বেঈমানী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আল্লাহর দরবারে নিজের বারাআত ও সম্পর্কহীনতা নিবেদন করা। এরপর নিজ নিজ সামর্থ্য ও দায়িত্ব অনুযায়ী এই চরম মুনকারের প্রতিরোধে সচেষ্ট হওয়া।
সওম ও ঈদের আনন্দের মাসে আমাদের অস্থির করেছে দেশে দেশে মুসলিম ভাই-বোনের অশ্রæ ও রক্তের কাহিনী। মিসর-সিরিয়ায় মুসলমানের দ্বারা পরিকল্পিত মুসলিম-নিধন, ফিলিস্তিনে চরম ইহুদী-নির্মমতা, মিয়ানমারে ব্যাপক মুসলিম হত্যা, পৃথিবীর বিভিন্ন ভ‚খণ্ডে লক্ষ লক্ষ মুসলিমের উদ্বাস্তু জীবন-যাপন- এই সব কিছুর মধ্যে আমাদের সওমের মাস অতিবাহিত হয়েছে এবং দেশে দেশে ঈদ উদযাপিত হয়েছে।
এই অশ্রæ ও রক্তের মাসেই শুরু হয়েছে ইসলামের আরেক রোকন হজ্বের প্রস্তুতি। কারণ শাওয়াল মাসের মধ্য দিয়ে সূচনা হয়েছে আশহুরে হজ্ব বা হজ্বের মাসসমূহের। আঁসু ও খুনের এই যিন্দানখানা থেকেই অযুত কণ্ঠে উচ্চারিত হবে তালবিয়া-ধ্বনি ‘লাব্বাইকাল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারীকা লাক’। আমি হাযির ইয়া আল্লাহ, আমি হাযির, আমি হাযির তোমার কোনো শরীক নেই, আমি হাযির, নিঃসন্দেহে প্রশংসা তোমার, দান তোমার, রাজত্ব তোমার, তোমার কোনো শরীক নেই।
এই তালবিয়াই তো আমাদের পরিচয়, মরুভূমির তপ্ত বালুতে বুকে পাথর নিয়ে ‘আহাদ’ ধ্বনি- এই তো আমাদের ইতিহাস। এই ইতিহাসই ঘুরে ঘুরে আসে। ব্যষ্টি থেকে সমষ্টিতে এরই প্রতিফলন ঘটে। এখানেই জয় ইসলামের; এখানেই জিত মুসলিমের। ইসলামের সত্য-ন্যায়ের ধ্বনি কেউ কখনো রোধ করতে পারেনি, কিয়ামত পর্যন্ত পারবেও না ইনশাআল্লাহ।
এই যে দেশে দেশে সিয়াম পালন, ঈদ উদযাপন, এই যে দিকে দিকে তাকবীর ধ্বনি, তালবিয়া ধ্বনি, এর প্রত্যেকটি একেকটি চপেটাঘাত ঐসব বিপথগামী বিকারগ্রস্ত পুরুষের গালে এবং ওদেরও গালে, যাদের সম্পর্কে জানেন শুধু আল্লাহ, আমরা জানি না।