Jumadal Ula 1429   ||   May 2008

শ্র ম : প্রত্যেককেই অপরের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে

Waris Rabbani

অন্যের অধীনে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে যে সেই শ্রমিক। এ কাজের ধরন অনেক রকম হতে পারে, কিন্তু তার কাজের জন্য নির্ধারিত বা বাজার চলতি একটি পারিশ্রমিক ধার্য থাকে। ধার্য থাকে একটি সময় ও কিছু সুবিধা-সীমাবদ্ধতা। শ্রমিক যেহেতু তার শ্রমের বিনিময়ে অপর পক্ষ থেকে পেয়ে থাকে পারিশ্রমিক বা মূল্য, তাই স্বাভাবিক হিসেবে ও দৃষ্টিতে তার অবস্থান থাকে একটু নীচে। সুবিধার দিক থেকে এই নীচের শ্রেণী বা দুর্বল শ্রেণীর প্রতি যেন কোনো রকম অন্যায়-অবহেলা না হয় ইসলামী জীবনদর্শনে সে নির্দেশনা এসেছে বহুভাবে।

শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে তার পারিশ্রমিক পরিশোধ করার নির্দেশ এসেছে। একইভাবে ধনী স্বচ্ছল মালিক কর্তৃক শ্রমিকের পাওনা পরিশোধে টালবাহানা বা বিলম্ব করাকে বলা হয়েছে জুলুম। নিজে যা খাবে-পরবে শ্রমিককে তাই খেতে-পরতে দেওয়ার প্রেরণা উচ্চারিত হয়েছে। শ্রম ও শ্রমিক সম্পর্কিত ইসলামের এসব নির্দেশনা দেখলে বুঝা যায়- শ্রমিককে ঠকানো বা কষ্ট দেওয়ার কোনো চোরাপথ যেন খোলা না থাকে। শ্রমিককে যেন মালিকের মতোই একজন মানুষ মনে করা হয় এবং মালিক-শ্রমিকের মধ্যে যেন মানুষ হিসেবে কোনো ব্যবধানের প্রাচীর না থাকে।

ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকেই শ্রম ও শ্রমিক সম্পর্কে ইসলামের এ দর্শন। ইসলামী আদর্শ থেকে দূরে সরে থাকার কারণে এ আদর্শের নীতিমালা থেকে আধুনিক পৃথিবী বঞ্চিত ছিল। ফলে অব্যাহত শ্রমিক নিযানের এক পর্যায়ে আমেরিকার শিকাগো শহরে ১৮৮৬ সালের ১ মে শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয়। পরবর্তীতে রক্ত পিচ্ছিল পথ বেয়ে ১৮৮৯ সাল থেকে ১ মে দিনটিকে শ্রম দিবস মে দিবস নাম দিয়ে ছুটি কাটানো হয়, কিছু দাবি আদায় করা হয় এবং শ্রমিকের মুক্তির জন্য এ তারিখটির সঙ্গে জড়িত ইতিহাসের বন্দনা গাওয়া হয়। আসলে শ্রমিকের আওয়াজ ইসলামই সবার আগে তুলে ধরেছে। সবচেয়ে সুন্দর ও ভারসাম্যময় করে পেশ করেছে।

ইসলাম যেহেতু সব মানুষকে স্রষ্টার সৃষ্টি হিসেবে এক নজরে দেখে তাই মালিক-শ্রমিকের দ্বন্দ্ব বা শ্রেণী বিভাজন ইসলামে কাম্য নয়। শ্রমিকের পাওনা পরিশোধে মালিকের প্রতি যেমন সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হযেছে তেমনি মালিকের কাজে গাফলতি ও দায়িত্বহীনতাকেও শ্রমিকের জন্য অপরাধ সাব্যস্ত করেছে। বিষয়টি এমন যে, এক ভাইয়ের সঙ্গে আরেক ভাইয়ের মুআমালায় প্রত্যেককে অপরের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। এখানে এক শ্রেণীর সঙ্গে আরেক শ্রেণীর বিরোধ ও দ্বন্দ্বের বিষয়টি মুখ্য হতে পারে না। এরপরও যেহেতু মালিক নামক শ্রেণীটির হাতে আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত সুবিধা ও কর্তত্বের ভাগটা বেশি থাকে তাই চড়া মূল্যের এই সংকটকালে শ্রমিকের পাওনা যথাযথ পরিমাণেও যথাসময়ে আদায় করে দেওয়াই সব বিবেচনায় কাম্য। পাওনা ১০০ টাকা হ্রাস আর দুদিনের বিলম্বও নিম্নবিত্ত একজন শ্রমিকের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। বরং বলা তো যায়, ইসলাম যে রহম ও করমের সর্বজনীন সবক আমাদেরকে দেয় তাতে সক্ষম ও স্বচ্ছল মালিকেরা এ ধরনের অভাবী মুহূর্তে শ্রমিকের পাশে আরেকটি কোমল স্পর্শ দিলে সেটি দ্বীনি ভ্রাতৃত্বের নিদর্শন স্থাপন করবে, যা থেকে বহু সওয়াবও পাওয়া যাবে।

 

advertisement