ভ্রা তৃ ত্ব : ঈদের দিনে দেখতে চাই ইসলামী ভ্রাতৃত্বের চেহারা
মুসলমানদের ঈদ দু’টি। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। রমযানুল মুবারকের পরেই আসে শাওয়াল মাস। শাওয়ালের পয়লা তারিখেই ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হয়। ২৯ তম রমযানের সন্ধ্যায় নতুন চাঁদ দেখা গেলে বা পরের দিনই অনুষ্ঠিত হয় ঈদুল ফিতর। তা না হলে রমযানের ৩০ তম দিন পার করেই আসে ঈদুল ফিতর।
ঈদ আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। এটা যেমন দ্বীনীভাবে, তেমনি পার্থিব ও জাগতিক দিক থেকেও। যারা হক আদায় করে, যথার্থ সুনিয়ত ও সদাচারের সঙ্গে গুনাহমুক্ত থেকে সারা মাস রোযা রেখেছেন ঈদের দিনটি তাদের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও পুরস্কারপ্রাপ্তির দিন। অপর দিকে টানা এক মাস দিনের বেলায় ক্ষুধার্ত, পিপাসার্ত ও সংযত থেকে রোযা রাখার পর প্রথম এ দিনটিতে দিনের বেলায় খানাপিনার সুন্দর সুযোগ থাকে। অনুমোদিত পর্যায় পর্যন্ত আনন্দ করা, ভালো পোশাক পরা, সুগন্ধির ব্যবহার, ভালো খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকে। এ ছাড়া এদিনটির সামাজিক আবেদনের একটি বিরাট দিগন্তও বিদ্যমান। এদিনে প্রতিটি মুসলিম দেশ ও সমাজেই উৎসবের একটি আমেজ বিরাজ করে। বাচ্চা-কাচ্চারা নতুন পোশাক ও ভালো খাবারের বিষয়টি উপভোগ করে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বিত্তহীনতা, দারিদ্র, সংকট ও অভাব অন্য বহু সময় ও পরিস্থিতির মতো এ দিনেও একটি বেদনাঘন চিত্রের জন্ম দেয়। গরিব মানুষেরা ঈদের আনন্দে নিজেরাও শরীক হতে পারে না, শরীক করতে পারে না নিজেদের শিশু সন্তানদেরও। এ কারণে আনন্দের এ দিনটিতেও বিরাট সংখ্যক মানুষের জীবন কেটে যায় কিছুটা নিরানন্দে। অথচ স্বচ্ছল, বিত্তবান প্রতিবেশী মুসলমানরা তাদের দিকে খেয়াল রাখলে পরিস্থিতি এমন হত না। সদকাতুল ফিতর, যাকাতসহ সাধারণ দান, হাদিয়া ও উপহারের চর্চা দরিদ্র মুসলমানদের প্রতি ব্যাপক হলে ঈদের দিনের আনন্দের চিত্রটি অনেক বেশি সুন্দর হত, সুখের হত, ছওয়াবেরও হত।
একথা সত্য যে, এদেশে বিত্তবান ব্যবসায়ী, রাজনীতিকসহ স্বচ্ছল মানুষের বিরাট একটি সংখ্যা যথার্থ কিংবা অযথার্থ নিয়তে হলেও গরিব মানুষদের হাতে ঈদ উপলক্ষ্যে কিছু উপহার কিংবা অর্থকড়ি তুলে দিয়ে থাকেন। বাহ্যিকভাবে এর কিছু সুফলও লক্ষ করা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অর্থকড়ির নগদ প্রবাহে ভাটা, সংকোচন, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি এবং রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের সমস্যাপূর্ণ পরিস্থিতি গরিবদের প্রতি এ ধরনের দান-খয়রাতের ব্যাপকতা ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছে। গত দুই ঈদ, বন্যা ও সিডরের সময় এটা অনুভব করা গেছে। এতে গরিব মানুষেরা অনেক বিপন্ন ও নিঃসঙ্গ বোধ করেছেন। আমাদের সামনে আবারো ঈদুল ফিতর। এ সময়ে এ দিকটির প্রতি সামর্থ্য ও স্বচ্ছলতা অনুযায়ী প্রত্যেকেরই খেয়াল রাখা উচিত। এ ক্ষেত্রে কেবল অধিক বিত্তবানদের কিছু করার জন্য অপেক্ষা না করে বিত্তবান, মধ্যবিত্ত ও স্বল্পবিত্ত সবারই কিছু না কিছু পদক্ষেপ থাকলে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের একটি উজ্জ্বল চেহারা আমরা দেখতে পাব। সংযম ও তাকওয়ার দীক্ষা গ্রহণের মাসের শেষে আনন্দের দিনটিতে একটি মুসলিম সমাজ ও দেশে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের উজ্জ্বল একটি চেহারা প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনাটিকেই আমরা বড় করে দেখতে চাই। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন।