Zilqad 1429   ||   November 2008

দ্বীনের কাজ কেউ করতে পারে না!

আল্লাহ যার প্রতি দয়া করেন, তাকে দিয়ে তিনি দ্বীনের কাজ করান। ইচ্ছা করলেই কেউ তার শক্তিতে বা যোগ্যতা বলে দ্বীনের কাজ করতে পারে না। এ কথাটি হযরত পাহাড়পুরী হুজুর দামাত বারাকাতুহুম সুন্দর একটি উপমা দিয়ে বুঝিয়েছেন। তিনি বলেন, লেখতে কলম লাগে। লিখার কাজটিই কলমের এবং কলমই তা আঞ্জাম দেয়। কিন্তু কলম ততক্ষণই তার কাজ করতে পারে যতক্ষণ তার পেছনে একটি মানুষের শক্তি সক্রিয় থাকে। যখন পেছন থেকে সেই শক্তি নিস্ক্রিয় হয়ে যায় তখন কলমের পক্ষে লেখা জন্ম দেওয়া দূরে থাক, সোজা হয়ে দাঁড়ানোই অসম্ভব হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে যে মানুষের সাহায্যে কলম লেখা তৈরি করে সে মানুষ কিন্তু এই কলম ফেলে দিয়ে শুধু কয়লা দিয়েও লিখতে পারে।

তাই কারো দ্বীনের কাজের তাওফীক হলে তার মূল্যায়ণ করা উচিত এবং একথা ভেবে শুকরিয়া আদায় করা উচিত যে, আল্লাহ তাআলা আমাকে এ কাজের জন্য কবুল করেছেন। আমি ধন্য। এ রকম মনে করার কোনো অবকাশ নেই যে, আমি যোগ্যতার বলে এ কাজ করেছি। আমি তো আরো অনেক বড় কাজেরও যোগ্যতা রাখি। কারণ আল্লাহ এমন অহংকারীকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যে কোনো একজন শূন্যযোগ্যতার লোক দিয়েও এ কাজ করিয়ে নিতে পারেন। এমনকি কোন জড়বস্ত্তর মাধ্যমে বা কোনো মাধ্যম ছাড়াও তিনি করতে পারেন। পক্ষান্তরে পৃথিবীর সবচে যোগ্য সবচে শক্তিধর সৃষ্টিও তার শক্তি ছাড়া কোনো কাজ করতে পারে না।

সুতরাং আমি করেছি এটা ভাবার কোনোই কারণ নেই; বরং ভাবতে হবে আমাকে দিয়ে করানো হয়েছে।

৪৪ হিজরীর শাওয়াল মাসে মাওলানা মুহাম্মাদ ইলয়াস রাহ. হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ ছাহেবের সঙ্গে হজের সফরে রওয়ানা হলেন। মদীনা মুনাওয়ারার অবস্থান শেষে সফরসঙ্গীদের যখন যাত্রার প্রস্ত্ততি চলছে তখন মাওলানা ইলয়াস রাহ.-এর মাঝে এক অভূতপূর্ব ভাবব্যকুলতা দেখা দিল। কোনোভাবেই তিনি মদীনা মুনাওয়ারার বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারছিলেন না। কিছুদিন অপেক্ষার পর সফরসঙ্গীরা মাওলানা খলীল আহমাদ রাহ.কে বিষয়টি জানালেন। তিনি মাওলানার অবস্থা দেখে তাদেরকে বললেন, তোমরা পীড়াপীড়ি করো না। এখন তিনি এক বিশেষ আধ্যাত্মিক ভাবে আচ্ছন্ন। সুতরাং তিনি স্বেচ্ছায় রওয়ানা হওয়া পর্যন্ত তোমরা অপেক্ষা কর। কিংবা তোমরা চলে যাও; ইনি পরে আসবেন। সফরসঙ্গীরা তখন থেকেই গেলেন।

মাওলানা বলতেন, মদীনা মুনাওয়ারায় অবস্থানকালে আমি এ কাজে আদিষ্ট হলাম। আমাকে বলা হল, আমি তোমার দ্বারা কাজ নেব। কিছুদিন আমার দিন-রাত এ অস্থিরতায় কাটল যে, আমার মতো দুর্বল অক্ষম কী কাজ করতে পারে? মারেফাতপ্রাপ্ত জনৈক বুযুর্গ ঘটনা শুনে অভয় দিয়ে বললেন, চিন্তার কী আছে! কাজ করার কথা তো বলা হয়নি; কাজ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং যিনি কাজ নেয়ার তিনি কাজ নিয়ে নিবেন। &

এ অভয়বাণীতে মন বেশ আশ্বস্ত হল এবং তিনি মদীনা  মুনাওয়ারা হতে রওয়ানা হলেন। তারপর তিনি দেশে এসে এই কাজের সূচনা করলেন।

আজ যেভাবে তাঁর সূচিত এ কাজ বিশ্বজুড়ে সুবিস্তৃত হয়েছে এবং হয়ে চলছে আর তিনি কবরে শুয়ে শুয়ে এর যে পরিমাণ সুফল পাচ্ছেন তা ভাবলে সত্যিই অবাক হতে হয় যে, একজন মানুষের পক্ষেও কি  করে সম্ভব হল এত নেক অর্জনের। এখান থেকেও একথাই প্রতিভাত হয় যে, দ্বীনের কাজ কেউ করতে পারে না। করানো হয়। # মাওলানা মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ

 

 

 

advertisement