মূর্তি ও ভাস্কর্য : পশ্চাৎপদতা ও ইসলাম বিরোধী সাম্প্রদায়িকতার মূর্তিমান প্রতিভূ
জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের সামনে কেন লালনমূর্তি স্থাপন করা হল না, কেন সরকার এই প্রকল্প স্থগিত করল-এ নিয়ে কিছু মানুষের বাক্য-চালনা ও কলম-চালনার বিরাম নেই। দেখা যাচ্ছে যে, এই বিষয়কে ইস্যু বানিয়ে বিধর্মী ও নাস্তিক্যবাদী শক্তি একজোট হয়ে গিয়েছে। কিছু দৈনিক পত্রিকা দেশ ও জাতির অন্য সব সমস্যা শিকেয় তুলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা এই বিষয়ে বরাদ্দ করে চলেছে। বলা হচ্ছে যে, ‘এই সিদ্ধান্ত শিল্পচর্চার উপর একটা আঘাত।’
‘বিষয়টাকে মূর্তি নির্মাণ বলা ঠিক নয়, এটা ভাস্কর্য নির্মাণ।’
‘এই সিদ্ধান্ত অনগ্রসরতা ও অন্ধকারের দিকে পশ্চাদপসরণ।’
‘কিছু মুষ্টিমেয় অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষ ছাড়া মূর্তি-স্থাপনের বিরোধিতায় আর কেউ নেই।’ ইত্যাদি।
বলাবাহুল্য, মূর্তিকেন্দ্রিক শিল্প আর নাচ-গানকেন্দ্রিক সংস্কৃতি আর যাই হোক মুসলমানের শিল্প-সংস্কৃতি হতে পারে না। শিল্প ও সংস্কৃতির মতো এত ব্যাপক বিষয়কে কেন একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী এত সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞায় সীমাবদ্ধ করে দেন তা খুব সচেতনভাবে ভেবে দেখা দরকার। যে ভূখন্ডের মানুষ এক লা-শরীক আল্লাহর প্রতি গভীরভাবে বিশ্বাসী এবং শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা ও আদর্শের প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল তাদের শিল্প-সংস্কৃতির উপর এই আরোপিত সংজ্ঞা শুধু কলমের জোরে চাপিয়ে দেওয়া হলে তা হবে খুবই দুঃখজনক।
শিল্প ও সংস্কৃতিকে আলোকিত ও অন্ধকার এই দুই ভাগে ভাগ করা হলে মূর্তি হচ্ছে অন্ধকার সংস্কৃতির প্রতিভূ। মূর্তিকে কেন্দ্র করে যে জঘন্যতম কুসংস্কার এবং যে সীমাহীন অনাচারের সূচনা ও বিকাশ ঘটেছে তা মানব-ইতিহাসের অন্ধকারতম অধ্যায়। এ প্রসঙ্গে কিছু তথ্য পেশ করছি।
১. শুধু পূজার জন্য নয়, মৃত ব্যক্তির স্মারক হিসেবেও মূর্তি নির্মাণ আরব জাহেলী সংস্কৃতির একটা অংশ ছিল। মৃত ব্যক্তির কবরের উপর তারা স্মারক স্তম্ভ নির্মাণ করত। কোনো কোনোটাতে মৃত ব্যক্তির ছবিও অঙ্কন করা হত। আবার কিছু কিছু স্মারক ভাস্কর্য আকারেও তৈরি করা হত। সেই সব স্তম্ভের গায়ে মৃতের নামধাম ইত্যাদি লিখিত থাকত। আধুনিক প্রত্নতাত্বিক অনুসন্ধানে যে নিদর্শনগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে তাতে দেখা যায়, কোনো কোনো স্মারকের গায়ে ‘ছলম’ বা ‘ছনম’ শব্দও খোদিত থাকত। -ড. জাওয়াদ আলী, আল মুফাসসাল ফী তারীখিল আরব দ্বিতীয় সংস্করণ খন্ড : ৮ পৃষ্ঠা : ৫৪
২. আরবের অন্ধকার যুগের বিখ্যাত একটি মূর্তি হল ‘লাত’। এই মূর্তি ও তার মন্দির তায়েফ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত ছিল। বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিবরণ থেকে জানা যায় যে, যে স্থানে মূর্তি ও মন্দির স্থাপিত হয় সেটা মূলত এক ব্যক্তির সমাধি। ধর্মীয়ভাবে তার গুরুত্ব ছিল। ‘লাত’ তারই উপাধী। মৃত্যুর পর তার সমাধির উপর ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয় এবং ধীরে ধীরে সেখানে মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। - আদ্দুররুল মানছূর : ৬/১২৬; তাফসীরে আবুস সাউদ : ৬/১৫৫; রূহুল মাআনী : ২৭/৫৫
৩. ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসর নামক পাঁচটি মূর্তি কওমে নূহ-এর মধ্যে বিদ্যমান ছিল। এগুলোর প্রাচীন ইতিহাস এই যে, এরা ছিল নূহ আ.-এর সম্প্রদায়ের কিছু পুণ্যবান লোক। এদের মৃত্যুর পর তাদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানে ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। ভক্তিপ্রবণ লোকেরা ওই ভাস্কর্যগুলোতেই তাদের ভক্তি নিবেদন করতে থাকে। একপর্যায়ে তা পূজার রূপ ধারণ করে এবং দ্রুত বিকশিত হয়ে যায়। -সহীহ বুখারী হা. ৪৯২০
৪. মূর্তি সম্পর্কে জাহেলী কুসংস্কার এত ব্যাপক ও গভীর ছিল যে, তাদের চেতনা-বিশ্বাস এবং কর্ম ও উপাসনা সব কিছু একে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হত। এই মূর্তিগুলোকে বিভিন্ন অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী মনে করা হত। আয়ু, সুস্থতা, বিপদাপদ থেকে মুক্তি, বৃষ্টি, ফলফসল ইত্যাদি তাদের কাছে প্রার্থনা করা হত। এদের নামে মান্নত করা হত এবং পশুবলি দেওয়া হত।
এমনকি মূর্তির নামে মানব-বলির রেওয়াজও ওই সংস্কৃতির অংশ ছিল। হিরা অঞ্চলের শাসকরা মূর্তির নামে মানুষ জবাই করত। ইতিহাসে এসেছে, আরবের বিখ্যাত মূর্তি ‘ওয্যা’র নামে মুনযির ইবনে মাউস সামা চারশো পাদ্রীকে জবাই করেছিল। -আল মুফাসসাল : ৬/২২৮, ২৩৭, ২৩৮, ২৪৭
আমরা জানি না মূর্তি ও ভাস্কর্যকেন্দ্রিক এই সংস্কৃতিকে ভাস্কর্যপ্রেমী বন্ধুরা আলোকিত সংস্কৃতি বলে গ্রহণ করে থাকেন কি না। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো অন্ধকার সংস্কৃতি। মুসলিম জাতিকে ওই কলুষিত ও অন্ধকার অবস্থায় প্রত্যাবর্তন থেকে মুক্ত রাখার জন্য মিথ্যার ওই উৎসকেই অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। তাই ভাস্কর্য নির্মাণ, ভাস্কর্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, ভাস্কর্যের বেচাকেনা এবং ভাস্কর্যকেন্দ্রিক সকল কর্মকান্ড ইসলামে অবৈধ ও পরিত্যাজ্য। পবিত্র কুরআনে ভাস্কর্যকে অভিহিত করা হয়েছে ‘রিজ্স’ নামে। অর্থাৎ অপবিত্র, কলুষিত ও পরিত্যাজ্য বস্ত্ত।
দুই.
মূর্তির সঙ্গে মিথ্যার সম্পর্কটা অত্যন্ত গভীর। বিগত হাজার বছরে এই সত্য অসংখ্যবার প্রমাণিত হয়েছে। মূর্তিপূজক সম্প্রদায় সম্পর্কে কুরআন মজীদ যে স্পষ্ট ও পরিস্কার ধারণা দান করেছে তাতে এই সত্যই প্রতিভাত হয়।
আরবের মূর্তিপূজারী সম্প্রদায় তাদের মূর্তিপূজার যৌক্তিক ভিত্তি অন্বেষণ করতে গিয়ে বলত, ‘আমরা এদের উপাসনা শুধু এজন্যই করি যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে।’ অর্থাৎ মূর্তির প্রতি ভক্তি নিবেদনের পিছনে আমাদের উদ্দেশ্য অত্যন্ত মহৎ। তা হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য অন্বেষণ। বলাবাহুল্য, এটা এক নির্জলা মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন কুসংস্কার। কেননা, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য অন্য কোনো কিছুর মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই। এটা এক অসার যুক্তি, যা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য নয়; বরং মূর্তিপূজার যৌক্তিক বৈধতা অন্বেষণের জন্যই তৈরী করা হয়েছে।
তদ্রূপ মূর্তিপূজার দিকে যারা অন্যদের আহবান করেছে দেখা যায়, তারাও মিথ্যারই আশ্রয় নিয়েছে। কুরআন মজীদে হযরত মূসা আ.-এর ঘটনা উল্লেখিত হয়েছে যে, তিনি যখন ‘তাওরাত’ গ্রহণের জন্য তূর পাহাড়ে গেলেন তখন ছামেরী একটা স্বর্ণের গোবৎস প্রস্ত্তত করল এবং মূসা আ.-এর কওমকে আহবান করে বলল- ‘এটাই হচ্ছে তোমাদের এবং মূসার উপাস্য, কিন্তু মূসা তাকে বিস্মৃত হয়ে অন্যত্র অন্বেষণ করে চলেছেন।’
ইসলামপূর্ব আরবের অন্ধকার যুগে বিভিন্ন মূর্তি ও সেগুলোর পূজা-অর্চনার যে ইতিহাস পাওয়া যায় তাতেও দেখা যায় যে, এগুলোর প্রতিষ্ঠা ও প্রচলনের ক্ষেত্রে মিথ্যারই আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
মোটকথা, মূর্তিভিত্তিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা ও বিকাশের ক্ষেত্রে মিথ্যা ও প্রতারণা এবং বিভ্রান্তি ও কুসংস্কারই হচ্ছে প্রধান নিয়ামক।
মুসলিমসমাজে ভাস্কর্য-প্রীতির আবহ সৃষ্টির যে অপপ্রয়াস পরিচালিত হচ্ছে তাতেও অপরিহার্যভাবেই মিথ্যাচার ও কপটতা চর্চাই প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। অন্যথায় কে না জানে যে, শিল্পচর্চার পক্ষে মূর্তি ও ভাস্কর্য কোনো অপরিহার্য উপাদান নয়? অথচ একথাটাই খুব জোরেসোরে প্রচার করা হচ্ছে এবং এই ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে যে, মূর্তির প্রতি নমনীয় হওয়া ছাড়া শিল্পচর্চাই সম্ভব নয় এবং মূর্তি ও শিল্প এ দুটো অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত! বলাবাহুল্য, এটা এক জঘন্য মিথ্যাচার। আর এ মিথ্যাচারও কপটতাপূর্ণ। শিল্পের প্রতি প্রেম নয়; বরং একটি বিশেষ সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকেই এর উৎপত্তি।
তিন.
এখানে সচেতন হওয়ার মতো একটা বিষয় রয়েছে। পবিত্র কুরআনে মু‘মিনদেরকে এ বিষয়ে সজাগ করা হয়েছে। মূর্তির প্রতি পক্ষপাত প্রদর্শনকারী সম্প্রদায়ের ‘মূর্তিপ্রেমের’ স্বরূপ উন্মোচন করে কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : (তরজমা) তোমরা তো মূর্তিসমূহকে আল্লাহর পরিবর্তে গ্রহণ করেছ কেবল পার্থিব জীবনে তোমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব বজায় রাখার জন্য। কিন্তু কেয়ামতের দিন তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং একে অপরকে অভিসম্পাত দিবে। তোমাদের আবাস হবে জাহান্নাম এবং তোমাদের কোনো সাহায্যকারী থাকবে না। -সূরা আনকাবূত : ২৫
অর্থাৎ এই বন্ধুত্ব আদর্শ ভিত্তিক নয়; এটা উৎসারিত সাম্প্রদায়িক স্বার্থচিন্তা থেকে। এটা এমন এক বন্ধুত্ব, যা কিয়ামতদিবসে শক্রতায় পর্যবসিত হবে।
কুরআন মজীদের উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহবিমুখ সম্প্রদায়ের মূর্তিপ্রেমের অন্যতম প্রধান কারণটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ইসলামী আদর্শের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধতা সৃষ্টি এবং তা অক্ষুণ্ণ রাখার পক্ষে মূর্তি হল অন্যতম প্রধান উপকরণ। অতএব এক্ষেত্রে বাহ্যত শিল্প রক্ষা, প্রগতিশীলতা রক্ষা, ইত্যাদি যতকিছুই বলা হোক প্রকৃত বিষয়টা ইসলামী আদর্শের প্রতি অনীহা ও ইসলামী আদর্শের বিরোধিতা থেকেই উৎসারিত। এজন্য ইসলামী আদর্শের প্রতি যারা আস্থাশীল এই বিষয়ে তাদের কোনো বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয়।
আলোচিত প্রসঙ্গে এ পর্যন্ত যেসব প্রচার-প্রচারণা হয়েছে তাতে দুধরনের প্রয়াস লক্ষ করা গেছে : ১. শিল্পকলার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ ২. ভাস্কর্য নির্মাণ ইসলাম বিরোধী নয় বলে ধারণা দানের অপচেষ্টা। এই দুটো প্রয়াসের সততা পরীক্ষা করা কঠিন কিছু নয়। শিল্পকলার প্রতি সহানুভূতিই যদি সরকারের ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার মূল কারণ হয়ে থাকে তবে সরকার ওই স্থানে এমন কিছু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যা হবে এদেশের সাধারণ জনগণের ঈমান আকীদা এবং বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং একই সঙ্গে নির্মাণশিল্পেরও সুন্দর দৃষ্টান্ত। এরপরও যদি তারা বিরোধিতা করেন তবে বুঝতে হবে, শিল্পকলার কথাটা বাহ্যিক আচরণ মাত্র। আসলে এইদেশকে মুসলমানের দেশ হিসেবে পরিচয় দিতেই তারা অনাগ্রহী।
দ্বিতীয় বিষয়টা অর্থাৎ ভাস্কর্য ইসলামী আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় বলে যে ধারণা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে -এ বিষয়ে তারা কতটুকু সততা রক্ষা করছেন তা বোঝার জন্য শুধু এটা দেখাই যথেষ্ট হবে যে, তারা এ প্রসঙ্গে যে তথ্যগুলো উদ্ধৃত করছেন তা কি ইসলামের আকীদা-বিশ্বাস ও হালাল-হারামের মূল সূত্র- কুরআন ও সুন্নাহ থেকে এবং হাদীসের গ্রহণযোগ্য গ্রন্থাদি থেকে আহরিত, না ওই নির্ভরযোগ্য উৎসগুলো তারা এড়িয়ে যাচ্ছেন। যদি দুর্ভাগ্যক্রমে শেষোক্ত বিষয়টা প্রমাণিত হয়- এবং তা প্রমাণিতও হয়েছে, কেননা, দেখা যাচ্ছে যে, এ প্রসঙ্গে কুরআন ও সুন্নাহর সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও তারা বিভিন্ন অসত্য ও অপ্রাসঙ্গিক তথ্যের দ্বারা মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছেন- তাহলে বোঝা যাবে যে, উপরোক্ত দাবিটাও কেবলমাত্র সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। প্রকৃত উদ্দেশ্য তা-ই যা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
চার.
এই বিষয়টা আমরা সবাই জানি যে, শরীয়তে যে বিষয়গুলো হারাম করা হয়েছে সেগুলো পরিহার করা ফরয এবং ওই হারামকে হারাম বলে বিশ্বাস করা হল আরো গুরুত্বপূর্ণ ফরয। হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার ফলে মানুষ অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু ইসলামের গন্ডি থেকে সে খারিজ হয়ে যায় না। কিন্তু হারামকে হালাল মনে করলে, কিংবা শরীয়তের কোনো বিধানের প্রতি কটাক্ষ করলে সে কাফের হয়ে যায়। বর্তমান সময়ে শরীয়তের বিধি বিধানের প্রতি এই কুফরী মনোভাব সৃষ্টি করার অপচেষ্টা অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। তাই মুমিনের প্রথম কর্তব্য হল নিজের ঈমান রক্ষায় সচেষ্ট হওয়া এবং দ্বিতীয় কর্তব্য হল এই সব অপপ্রয়াসের প্রতিবাদ প্রতিরোধ করা। ইসলামে প্রত্যেক ব্যক্তির উপর তার সামর্থ্যের মধ্যে আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার অর্থাৎ করণীয় বিষয়ে আদেশ এবং বর্জনীয় বিষয়ে নিষেধ করা ফরয করা হয়েছে। আর অন্তর থেকে হারামকে হারাম মনে করাকে বলা হয়েছে ঈমানের সর্বনিম্ন পর্যায়।
ইমাম ইবনে রজব রহ. এ বিষয়ক বহু হাদীস ও আছার আলোচনা করে বলেন : ‘উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে, সামর্থ্য অনুযায়ী মুনকারের (শরীয়ত পরিপন্থী বিষয়ের) প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করা প্রত্যেকের উপর ওয়াজিব। আর অন্তরে ওই বিষয়কে শরীয়ত পরিপন্থী ও গর্হিত বলে বিশ্বাস করা তো অপরিহার্য।’ এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি লেখেন, ‘গুনাহর কাজে সন্তুষ্ট থাকা নিকৃষ্টতম হারামের অন্তর্ভুক্ত। কেননা, এর মাধ্যমে এমন একটা ফরয লঙ্ঘিত হয় যা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই অবশ্য করণীয় এবং যা কোনো অবস্থাতেই রহিত হয় না। ফরযটি হল গুনাহকে গুনাহ মনে করা এবং অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা পোষণ করা।’ -জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম, হা. ৩৪ পৃ. ২৮১
অতএব মুমিনের জন্য প্রচলিত প্রচার প্রচারণায় প্রভাবিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কুরআন সুন্নাহয় যা হারাম করা হয়েছে তা অবশ্যই হারাম। অন্যরা যা খুশি বলুক, আমার পক্ষে আমার বিশ্বাস পরিবর্তন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়-এটাই মুমিনের মানসিকতা হওয়া অপরিহার্য। এই অটল অবস্থান গ্রহণ করা ছাড়া বর্তমান যুগে ঈমান রক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন।
এরপর প্রত্যেকের কর্তব্য হল নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী শরীয়ত-বিরোধী অপতৎপরতা প্রতিরোধে সচেষ্ট হওয়া, অন্তত মৌখিকভাবে বা লেখনীর মাধ্যমে তার প্রতিবাদ জানানো। যদি এদেশের এক দশমাংশ ঈমানদারও ইসলাম-বিরোধী কাজকর্মের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ-প্রতিরোধে কৃতসংকল্প হন তাহলেই প্রমাণ হয়ে যাবে যে, ইসলাম-বিরোধী সাম্প্রদায়িকতা পোষণকারী লোকগুলো সংখ্যায় কত নগণ্য। প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে এবং দেশের নীতিনির্ধারণী স্থানগুলোতেও অনেক ঈমানদার মানুষ রয়েছেন। তাদের কর্তব্য সচেতনভাবে এই ইসলাম বিরোধী অপতৎপরতাগুলো প্রতিরোধ করা। হতে পারে এ প্রসঙ্গে কোনো একটি পদক্ষেপ নাজাতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর দেশের শিক্ষিত ও উদ্যোগী শ্রেণীর পক্ষে প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়া কঠিন কিছু নয়। প্রয়োজন শুধু সচেতনতা, আন্তরিকতা এবং উদ্যোগ। -ইবনে নসীব