হজের বিধি বিধান সম্পর্কে চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার
হজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুকন। সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিমের ওপর হজ্ব পালন করা ফরয। হজ্ব একটি শারীরিক, আর্থিক ও আত্নিক ইবাদত। এ ইবাদতের মাঝে রূহ ও গভীর তাৎপর্যের বিষয় যেমন রয়েছে, তেমনি এতে দীর্ঘ সফর, হিজাযের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন আমল, আমলের নির্ধারিত সময়, ভীড় ও নিত্যনতুন ব্যবস্থাপনার বিষয়ও রয়েছে। এসব বিষয়গুলোকে সামনে রেখে ‘মাসিক আলকাউসার’-এর পক্ষ থেকে এবার হজের রূহ ও তাৎপর্য, নতুন ও পরিবর্তিত অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনার মাঝে হজ্ব পালনের প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান, নতুন ও আধুনিক ইন্তেজামে সুষ্ঠুভাবে হজ্ব পালনের অভিজ্ঞতাজাত বর্ণনা এবং আজকের পরিস্থিতিতে সমস্যা ও জটিলতা এড়িয়ে যথার্থভাবে হজ্ব পালনের জরুরী মাসায়েল সম্পর্কে চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষাৎকার দিয়েছেন যথাক্রমে প্রবীণ শায়খুল হাদীস, হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর অন্যতম প্রিয় খলীফা ও মাসিক আলকাউসার-এর উপদেষ্ঠা হযরত মাওলানা আবদুল হাই পাহাড়পুরী ছাহেব, হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. ও হযরত হরদুঈ রহ.-এর প্রিয় খলীফা, বুয়েটের সাবেক প্রফেসর বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব হযরত প্রফেসর মুহাম্মদ হামীদুর রহমান ছাহেব,প্রখ্যাত মুফতী, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা-এর মুদীর ও মাসিক আলকাসার সম্পাদক মুফতী মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ ছাহেব এবং মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা-এর শিক্ষা বিভাগীয় প্রধান, মাসিক আল কাউসার -এর তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব।
অন্যান্য বারের মতো হজ্ব বিষয়ক নিবন্ধ কিংবা মাসায়েলের ধারাবাহিক আলোচনার পরিবর্তে হজ্বের রূহ এবং হজ্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিবিধ বিষয়ের ওপর এই সাক্ষাৎকার ভিত্তিক উপস্থাপনা আশা করি হজ্ব পালনেচ্ছু হাজিয়ানে কেরামসহ সকল পর্যায়ের পাঠকের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ।
হজ আল্লাহ পাকের ইশক ও মুহাববতের পরিচায়ক একটি ইবাদত
হযরত মাওলানা আবদুল হাই পাহাড়পুরী
ইবাদত হিসেবে হজের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
আল্লাহ পাকের ইবাদত অনেক। কোনো ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ পাকের গোলামী প্রকাশ করা মাকছুদ, কোনো ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ পাকের প্রতি বান্দার ইশক ও মুহাববত প্রকাশ করা মাকছুদ। নামাযের দ্বারা পুরোপুরি আল্লাহ পাকের দাসত্ব ও গোলামী প্রকাশ করা মাকছুদ। আর হজ দ্বারা মকছুদ হল বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহ পাকের প্রতি ইশক ও মুহাববত প্রকাশ করা।
বান্দা যখন মুমিন হয়, কালিমায়ে তাইয়্যেবা পাঠ করে তখন কালিমার প্রথম অংশে দু’টি স্বীকারোক্তি তার পক্ষ থেকে করা হয়ে যায়। একটি হচ্ছে, মাওলা! আমি তোমার বান্দা, তোমার দাস। অপরটি হচ্ছে, মাওলা! তুমি আমার মাহবুব। আমি তোমার আশেক। কালিমার এ দু’টি দাবির মধ্য থেকে একটির প্রমাণ পেশ করে নামায। নামায আবদিয়্যাত বা দাসত্বের প্রমাণ পেশ করে। আর অপরটি অর্থাৎ ইশক ও মুহাববতের প্রমাণ পেশ করে হজ।
হজের আমলগুলোর মধ্যে দাসত্ব কিংবা ইশক -কোনটার প্রভাব বেশি?
হজের আমলগুলো ইশক ও মুহাববতে ভরপুর। একজন আশেক বা প্রেমিক তার মা’শুক বা প্রেমাষ্পদের জন্য যা যা করে বা করতে পারে হজে সবই করা হয়। বাড়ি থেকে হাজী তালবিয়া পড়তে পড়তে রওয়ানা হন। নিজের সাধারণ পোশাক ত্যাগ করে ইহরামের কাপড় পরেন, ইহরাম বাধেন। এভাবে মা’শুক-আল্লাহ পাকের ঘর পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে অনেক কিছুই করেন। পায়ে জুতা থাকে না, গায়ে সেলাই করা কাপড়ও থাকে না, খোশবু লাগানো হয় না ইত্যাদি। আশেক যেভাবে মা’শুকের বাড়ির চারপাশে ঘুরতে থাকে সেখানে গিয়েও বান্দা সেভাবে ঘুরতে থাকে। হজ হল মুহাববতের প্রকাশক্ষেত্র। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হজের সব আমলে মুহাববতেরই প্রকাশ করা হয়। নামায দ্বারা বান্দার বন্দেগীর দাবি আর হজ দ্বারা আশেকের ইশকের দাবি পূরণ করা হয়।
হজে যাওয়ার আগে একজন হজযাত্রীর কিভাবে প্রস্ত্তত হওয়া দরকার?
হজে যাওয়ার আগে দিলকে ভালো করে প্রস্ত্তত করে নিতে হবে। আল্লাহ পাকের ইশক ও মুহাববতে দিলকে পরিপূর্ণ করতে হবে। হজের মাসায়েল ভালোভাবে শিখে নিতে হবে। তারপর হজে রওয়ানা হতে হবে। প্রস্ত্ততি নিতে হবে এমনভাবে, যেন হজের প্রত্যেকটি আমল আল্লাহ পাকের মুহাববত ও ইশকের পরিচায়ক হয়। অনেকের জিন্দেগীতে হজ একবার আসে, বার বার আসে না। এজন্য প্রস্ত্ততিটাকে পূর্ণাঙ্গ করতে হবে। মোটামুটিভাবে হজের রূহ হল, আল্লাহ পাকের পূর্ণ মুহাববত অর্জন এবং আল্লাহর রাহে কুরবানীর প্রশিক্ষণ। নামাযের মধ্য দিয়ে বন্দেগী আর হজের মধ্য দিয়ে মুহাববতের নযরানা আল্লাহ পাকের দরবারে পেশ করে বান্দা। #
হজ্বের ইমেত্মজামী বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসআলা
হযরত প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান
হজের মাসায়েল সহজে জানতে হলে সাধারণ মানুষ কোন বইটি পড়বে?
সাহারানপুর মাজাহেরুল উলুমের মুফতী সাঈদ আহমাদকৃত ‘‘মুআল্লিমুল হুজ্জাজ’’ উলামায়ে কেরামের নিকট গ্রহণযোগ্য কিতাব। তার বাংলা অনুবাদ ‘‘হজ্জ ও মাসায়েল’’ নামে পাওয়া যায়। তারই আলোকে ডা : নূরুল ইসলাম মিয়া ‘‘মুঈনুল হুজ্জাজ’’ নামে সংক্ষিপ্ত পুস্তিকা প্রস্ত্তত করেছেন, যা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব সম্পাদনা করে দিয়েছেন। দুটো বইই পড়া যেতে পারে।
এটা সবারই জানা যে, দশ তারীখের ‘‘রমি’’ (কংকর নিক্ষেপ) বিনা ওযরে রাত পর্যন্ত বিলম্বিত করা মাকরূহ। শুনেছি ভিড় এড়ানোর জন্য আপনারা এই দিনের রমি রাত্রে করে থাকেন। কিন্তু এখন তো রমির ব্যবস্থাপনা খুবই উন্নত হয়েছে। আসা-যাওয়ার রাস্তাও ভিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।
নতুন ব্যবস্থাপনার আগেও প্রায় সময় আমরা মাগরিবের আগেই রমি করে ফেলতাম। কোনো ওযরের কারণেই কখনো দেরী হয়েছে। এখন তো বিষয়টি আরো সহজ।
মক্কা থেকে মিনার দিকে রওনা হওয়ার মাসনূন সময় ৮ই জিলহজ্ব ফজরের পর। তদ্রূপ মিনা থেকে আরাফা রওয়ানা হওয়ার মাসনূন সময় ৯ তারিখ সূর্যোদয়ের পর। কিন্তু মুআল্লিমগণ উভয় ক্ষেত্রেই রাত্রেই নিয়ে যান। এক্ষেত্রে আপনারা কী করেন?
আমরা মাসনূন সময়েই যাওয়ার চেষ্টা করি। আল্লাহ তায়ালা ব্যবস্থাও করে দেন। অবশ্য বড় কাফেলাতে সব সময় তা পারা যায় না। গত হজ্বের আগের হজ্বে ৮ তারিখে মিনা গিয়ে আমরা দেখি তাবুতে প্রায় পূর্ণ জায়গা দখল ! সাথীদের অনেক কষ্ট হয়েছে। এজন্য গত হজ্বে আমরা কিছু লোককে রাত্রেই পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা জায়গা সংরক্ষিত রেখেছে। এতে সহজ হয়েছে।
মিনা থেকে আরাফা যাওয়ার সময় মাসনূন সময়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু গত বছর কঠিন পরীক্ষায় পড়েছি। সূর্য উঠার পর রওনা হব তাই রাত্রে যাওয়া হয়নি। সকালে গাড়ির অপেক্ষায় বসে আছি কিন্তু গাড়ি আসছে না। আসছে না তো আসছেই না। এমনকি মিনায় যোহরের সময় হয়ে গেল। অনেকবার ছালাতুল হাজত পড়লাম, একপর্যায়ে এক আরব পশু বহনের একটি ট্রাক নিয়ে আসল কিন্তু আমরা তাতে উঠতে সম্মত হলাম না। কাফেলাতে অনেক মহিলা, কীভাবে উঠি। সে আরব, কিন্তু আমাকে ইংরেজীতে বলল, ‘যেতে চাইলে এই গাড়িতেই উঠে পড়।’
আমি বললাম, ‘ওয়াল্লাহুল মুস্তা‘আন’ (আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাই)
আল্লাহর রহমত, কিছুক্ষণ পর দুটি নতুন গাড়ি এসে পড়ল, সবাই আরামে বসতে পারল। মাত্র দশ মিনিটে আরাফায় পৌঁছে গেলাম। যাই হোক, এভাবে সব সময় সম্ভব না-ও হতে পারে। আল্লাহ সহজ করেছেন। উপরোল্লেখিত নির্ধারিত সময়ে রওনা হওয়া সুন্নত, ফরজ বা ওয়াজিব নয়।
আরাফা থেকে মুযদালিফায় আসার সময়ওতো এই একই সমস্যা দেখা দেয়। সবাই জানে যে, ৯ তারিখ সূর্যাস্তের আগে আরাফার সীমানা ত্যাগ করা যায় না। কিন্তু গাড়িগুলোতো আরাফার সীমানায়ই থাকে। তাই আছরের সময় হওয়ার আগেই অনেকে গাড়িতে গিয়ে বসে থাকে। এক্ষেত্রে তুমি সূর্যাস্তের পর পর রওয়ানা হতে চাইলেও কীভাবে হবে? গাড়িতো আগে থেকেই ভরা। আমরা বসে থাকি। রাত দশটা, এগারটা। যখন গাড়ি পাওয়া যায় রওয়ানা হই। জ্যামের কারণে দেরী হয়। কোনো সময় অনেক আগেই নামিয়ে দেয়, অনেকদূর হেটে যেতে হয়।
হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর সঙ্গে হজ্বের কোনো বিশেষ স্মৃতি বলবেন কি?
দীর্ঘ সফর ছিল, আমি হুজুরের খাদেম ছিলাম। এ দীর্ঘ সফরে হুজুরের অনেক বিষয়ই দেখার ও উপলব্ধি করার সুযোগ হয়েছে। পুরা সফরে হুজুরকে নফল নামায খুব বেশী বেশী পড়তে দেখেছি। সময় পেলেই জায়নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন ও দীর্ঘক্ষণ ধরে নামায পড়তেন। তাহাজ্জুদের সময় হুজুর যখনই উঠতেন আল্লাহর রহমতে তার আগেই আমি উঠে যেতাম এবং প্রস্ত্তত থাকতাম। এতে হুজুর খুব খুশি হতেন ও দোয়া দিতেন। আমি সময়মতো উঠতে পারাটা আসলে ছিল হুজুরের কারামত।
হুজুরের সাথে হজ্বের সফরে আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ করেছি যে, যে আমলই হুজুরের সাথে থেকে করেছি তা আসানীর সাথে করতে পেরেছি। আমরা নিজেরা যখন আলাদাভাবে তাওয়াফে যেতাম তখন ভিড়ে কষ্ট হত। কিন্তু হুজুরের সঙ্গে যখন যেতাম তখন যতই ভিড় থাক ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যেত। এমনকি সবচেয়ে ভিড়ের স্থান মুলতাযামেও হুজুরের সঙ্গে যাওয়াতে কিছুক্ষণ অবস্থান করার ও কান্নাকাটি করার সুযোগ হয়েছে।
একদিনের ঘটনা, মসজিদে হারামে হযরতকে নিয়ে এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে চাইলাম। পুলিশ বাধা দিল, বলল ‘‘রুহ্’’ অর্থাৎ এদিক দিয়ে নয়, অন্য দিক দিয়ে যাও। আমি অনুরোধ করে বললাম- ‘লিশাইখিন কাবিরিন জিদ্দান’ এ শব্দ আমি কুরআন মজিদ থেকে নিয়েছি। ‘ওয়া আবূনা শাইখুন কাবীর’। কিন্তু সে বলল, ‘আল্লাহু কাবীর, ‘রুহ’। পরে পাশেই আরেক দরজার দিকে অগ্রসর হলাম। সেখানেও বাধা দিলে অনুরোধ করে বললাম, ‘লিশাইখিন জয়ীফিন জিদ্দান।’ আল্লাহর শোকর এবার যেতে দিল।
আমরা আড়াইটা-পৌনে তিনটার দিকে কংকর মারতে গেলাম হযরতের সঙ্গে। এক পাঞ্জাবী বলছিল, ‘‘ইয়ে বুড্ডা কো লেকে মাত যাও, মর জায়েগা, মর জায়েগা’’, হযরতকে আমরা বললাম যে, ওরা বলছে আপনাকে নিয়ে না যেতে। হযরত বললেন, ‘‘চলেন, আল্লাহ ভরসা’’। হযরতের সঙ্গে গেলে কাজ কাম অনেক সোজা। আড়াইটায় কংকর মেরে ফেললাম।
মদীনা শরীফে হযরত প্রথম কাতারে বা দ্বিতীয় কাতারে বসতেন। আমি সব সময় পিছনে বসে থাকতাম। অবিরাম দৃষ্টি ঐ দিকে। জামাত শুরু হওয়ার একটু আগে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালেন। কাছে গেলাম। বললেন, আহ্! জরুরত সারার দরকার হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি উঠলাম। জামাত দাড়ানোর দেরী আছে মাত্র কয়েক মিনিট। এসময় দ্বিতীয় কাতার ছেড়ে বাসায় আসলাম। বাসা ছিল মসজিদের দক্ষিণে, আবার তিন তলার উপরে। উঠলাম, হযরত জরুরত সারলেন। কাপড় বদলালেন। আমি ভাবলাম জামাত তো গেছেই, কিন্তু পুরা জামাত পেলেন। বিস্ময়কর, সময় কিভাবে বেড়ে গেল! #
নতুন ব্যবস্থাপনা ও পরিস্থিতিতে হজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা
মুফতী আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ
কুরবানীর জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া কি হাজীদের জন্য নিরাপদ?
হানাফী ফিকহ অনুযায়ী দশই জিলহজের আমলগুলোর মাঝে তারতীব বা ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব। যেমন: যথাক্রমে রমি, কুরবানী (তামাত্তু ও কেরান আদায়কারী হাজীদের জন্য দমে শুকর) ও হলক করা বা মাথা কামানো। এ আমলগুলোর ধারাবাহিকতা ভঙ্গ হলে দম দিতে হবে। ব্যাংকে টাকা জমা দিলে দু’টি সমস্যার উদ্ভব ঘটতে পারে। এক, যারা ব্যাংক ব্যবস্থাপনা বা ব্যাংকের কুরবানী ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত তাদের কাছে এ আমলগুলোর তারতীব জরুরী নয়, যদি এমন হয় যে, হজ আদায়কারী হলক করে ফেলেছে অথচ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এখনও তার কুরবানী করেনি। তাহলে তার ভেঙ্গে যাবে। আমাদের মাযহাব অনুযায়ী দম লাগবে, যদিও তাদের দৃষ্টিতে এটা দোষনীয় নয়। দুই, কুরবানীর জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি সময় উল্লেখ করে স্লিপ দিয়ে দেয়। বাস্তবে কুরবানী হতে হতে লিখে দেওয়া সময়ের চেয়ে দেরি হয়ে যায়। এদিকে হাজীরা হলক করে ফেলেন আগে। এ সকল দিক বিবেচনা করে পরামর্শ দেওয়া হয় যে. নির্ভরযোগ্য কোনো ব্যবস্থা সূত্র থাকলে ব্যাংকে টাকা না জমা দেওয়া উচিত। তবে যে ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য কোনো ব্যবস্থা থাকবে না সে ক্ষেত্রে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে দেওয়ারও অবকাশ আছে। অবশ্য সতর্কতামূলক ব্যাংকের দেয়া সময় থেকে একবেলা বা ৬ ঘন্টা সময় দেরি করে হলক করা উচিত। এখানে লক্ষযোগ্য যে, এদেশীয় অনেক কাফেলাপ্রধানের ব্যাপারে কুরবানীর টাকা খেয়ানত করার মারাত্মক অভিযোগ ওঠে থাকে। সেজন্য এ বিষয়ে আসলেই নির্ভরযোগ্য কোনো ব্যবস্থাপনা না পেলে বা নিজের উদ্যোগে করার সামর্থ না থাকলে ব্যাংকে টাকা জমা করে দেওয়াই নিরাপদ।
কাফেলার পরিচালকদের কথায় (কুরবানী সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে) হালাল হয়ে যাওয়া কতটা সঙ্গত?
কাফেলা পরিচালকদের নির্ভরযোগ্য মনে হলে হাজীগণ হালাল হয়ে যেতে পারেন। কারণ, হজ চলাকালে অনেক ক্ষেত্রেই নিজে গিয়ে প্রত্যক্ষভাবে যাচাই করা অত্যন্ত কঠিন।
মিনায় বর্তমানে যতগুলো তাবুর ব্যবস্থা করা হয়, সে তাবুগুলোর বিরাট একটি অংশ মুযদালিফায় ছড়িয়ে পড়ে। উপমহাদেশের বহু হাজী মুযদালিফায় ছড়িয়ে পড়া সেসব তাবুতেই অবস্থান করেন। এতে কি তারা মিনায় অবস্থানের ফযীলত লাভ করতে পারেন? মুযদালিফায় যাদের তাবু পড়ে তাদের কেউ কেউ আবার এ কারনে মক্কায় চলে আসেন যে, মিনাতেই যখন থাকতে পারলাম না, তখন ফযীলত তো আর পাবো না, সুতরাং মক্কাতেই চলে যাই। এ রকম করা কি উচিত হবে?
বর্তমানে উযরের কারণে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাজীদের সংখ্যাধিক্যের কারণে এটা সৌদি সরকারের ব্যবস্থাপনা। এখানে নিজ থেকে একজন হাজীর পক্ষে মূল মিনায় অবস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। মুআল্লিমের পক্ষ থেকে এটা করা হয়। তাই আশা করা যায়, মিনার সঙ্গে যুক্ত তাবু যখন মুযদালিফায় ছাড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে যারা অবস্থান করেন তারাও মিনায় অবস্থানের ফযীলত পেয়ে যাবেন। অবশ্য সক্ষম পুরুষরা মিনার রাতগুলোর বড় অংশ মসজিদে খাইফ ও তার আশেপাশে অবস্থান করেও মিনার ফযীলত হাসিল করতে পারেন। তবে, এখন সময় এসেছে সরকারী উদ্যোগে মিনায় অনেকগুলো বহুতল ভবন নির্মাণ করার। এতে হাজীরা মূল মিনাতেই অবস্থান করতে পারবেন। যারা মিনায় না থাকতে পেরে ফযীলত হাসিল করতে পারছেন না মনে করে মক্কায় চলে যান, বিশেষ উযর ছাড়া তখন তাদের মক্কায় চলে যাওয়া উচিত নয়। কারণ তাবুতে থাকলে (মিনার ভেতরে সে তাবু না পড়লেও) ইচ্ছা করলেই মিনার ভেতরে গিয়ে হেঁটে চলে আসা যায়। এবং তাবুগুলো মিনার তাবুগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত থাকাটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
হাজীদের কুরবাণী দেশে দিতে হবে কিনা?
হাজীরা সাধারনত মুসাফির অবস্থায় থাকেন। মুসাফিরের ওপর কুরবানী ওয়জিব হয় না। তাই হজের ‘দমে শুকর’ ছাড়া সৌদিতে বা দেশে হাজীদের জন্য কুরবানী করার প্রয়োজন নেই। তামাত্তু ও কেরান হজ আদায়কারীরা যে পশু যবেহ করেন, তা কুরবানী হিসেবে পরিচিত হলেও মূলত সেটা হচ্ছে দমে শুকর। অবশ্য এটিও কুরবানীর একটি প্রকার।
তামাত্তু হজ আদায়কারীগণ মদীনা থেকে ফিরে দ্বীতিয় যে উমরা করেন, তার মীকাত কোথায় ধরা হবে? তার হুকুম কি?
তামাত্তু হজ আদায় কারীরা প্রথমেই মক্কায় গিয়ে একটি উমরা করেন। এরপর মদীনায় চলে যান। মদীনা থেকে ফিরে যে দ্বিতীয় উমরা করেন এটার ইহরাম মদীনা থেকে ফিরার পথে যুলহুলাইফাতে বাধা হয়।
রমিয়ে জামারাতের জন্য বহুতল বিশিষ্ট যে ভবন বানানো হয়েছে তাতে উঠে রমি করলে তা আদায় হবে কি?
আদায় হয়ে যাবে। তবে, যাদের দ্বারা সম্ভব তাদের জন্য নিচতলায় থেকেই রমি করা উত্তম।
হালাল হওয়ার সময় এক হাজী অন্য হাজীর মাথা কামিয়ে দেওয়া জায়েয আছে কি?
যদি মাথা কামানোর আগ পর্যন্তের সবগুলো কাজ সম্পন্ন করা হয়ে গিয়ে থাকে, শুধু মাথা কামানোই বাকী থাকে তাহলে সে হাজীর পক্ষে অন্যের মাথা কামিয়ে দেওয়া জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই।
নতুন সাঈর জায়গা নির্মাণ হয়েছে। আগের সাঈর জায়গার পাশেই, এতে সাঈ করলে সাঈ আদায় হবে কি?
এব্যাপারে প্রথম কথা হচ্ছে, সাঈ করা উচিত মূল জায়গাতেই, অর্থাৎ আগের জায়গাতেই, যে জায়গাটি সাফা ও মারওয়ার সোজাসুজি। যদি কোনো ক্রমেই তা সম্ভব না হয়ে ওঠে, বিশেষত বৃদ্ধ ও অসুস্থদের ক্ষেত্রে, তাহলে নতুন জায়গাতেও সাঈ করতে পারবে।
এ বিষয়ে আলকাউসারের তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা আবদুল মালেক হযরত মুফতী তকী উছমানী সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ ধরনেরই উত্তর প্রদান করেছেন।
নতুন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কি ওখানকার প্রশাসন স্থানীয় ফকীহদের মতামত ও সিদ্ধান্ত সংগ্রহ করেন না? ফকীহদের দৃষ্টিভঙ্গি এসব ক্ষেত্রে কী?
এসব ক্ষেত্রে প্রশাসন অবশ্যই তাদের মতামত সংগ্রহ করেন। তবে যতটুকু দেখা যায়, তাতে অনুমিত হয় যে, এসব নতুন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ওখানকার ফকীহগনের সিদ্ধান্তে কিছু শৈথিল্য রয়েছে। হয়তো তারা হাজীদের সংখ্যাধিক্য ও ব্যবস্থাপনার সুবিধার জন্যই এমনটি করেন। কিন্তু হজ যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত, তাই যতদূর সম্ভব মৌলিক অবস্থার ওপর থাকার চেষ্টা করা উচিত।
অনেকে মনে করেন, বার বার নফল হজকে নিরুৎসাহিত করে সে টাকা দরিদ্রদের মাঝে বিতরন করে দেওয়া যায়, এতে দরিদ্রদের উপকার হয় কিংবা অর্থের সাশ্রয় হয়। এ ব্যাপারে আপনার মতমত কি?
আমি এ ধরনের মতের সঙ্গে একমত হতে পারি না। সাধারণত বারবার হজে যান বিত্তবানরা। তারা বছরের গোটা সময়টাতেই এমন ভাবে দুনিয়ার কাজে ডুবে থাকেন যে, আল্লাহকে একান্তভাবে ডাকার মতো পরিবেশই পান না। হজে কিংবা উমরায় গিয়ে বছরে তাদের কিছুদিন একান্তভাবে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেওয়ার এ সুযোগটা বন্ধ হওয়া উচিত নয়। যারা দান করেন এমনিতেই করেন, হজের টাকা বাঁচিয়ে দান করার উদাহরণ নেই। এ সমাজে বহু বিত্তবান মানুষ সম্পূর্ণ বিলাসী ও গুনাহমূলক খাতে ব্যক্তিগতভাবে মাসে লাখ লাখ টাকা খরচ করেন। সেদিকে নজর না দিয়ে বছরে নফল হজ বা উমরার কয়েক লাখ টাকার খরচ নিয়ে চিন্তিত হওয়া ইতিবাচক মানসিকতা নয়। আর এ খাতের খরচকে অপচয় মনে করাতো ধৃষ্টতা। দ্বীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিআরের প্রতি অবমাননা। দরিদ্রদের জন্য অর্থ দান একটি দরকারী ও মহান বিষয়। তার জন্য নফল হজ কিংবা কুরবানী কমানোর চিন্তার প্রয়োজন নেই। এদেশের অপরাধ-গুনাহ ও বিনোদনমূলক বিলাসী খাতের সম্মিলিত খরচ বন্ধ করলে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বাচঁতে পারে। সেটা দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দিলে এক-দু’ বছরেই এ দেশের দারিদ্র শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। তবে, কোনো বিত্তবান যদি নফল হজও করেন, নফল উমরাও করেন আবার নিন্দনীয় কাজও করেন তাহলে আমরা তার নিন্দনীয় কাজ থেকে তাকে সাবধান করতে পারি এবং তা বন্ধের বিভিন্ন উদ্যোগও নিতে পারি। কিন্তু তার ভালো কাজটিকেও বাঁকা চোখে দেখারতো দরকার নেই।#
হজ পালনে জটিলতা এড়ানোর কিছু পন্থা
মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক
কুরবানীর জন্য ব্যাংকে টাকা জমা না দেওয়ার মশওয়ারা বিভিন্ন করণে উলামায়ে কেরাম দিয়ে থাকেন। কিন্তু ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প ব্যবস্থা কি আছে?
কেন ব্যবস্থা থাকবে না? ইচ্ছা করলেই বিভিন্ন রাস্তা খোলা আছে। মিনার মাযবাহ যদিও এখন ৯/১০ কিলোমিটার উত্তর দিকে নিয়ে গেছে, কিন্তু সেখানে যাওয়াতো যায়। সেখানে গিয়ে নিজের কুরবানী নিজে করার ব্যবস্থা আছে। কোনো কোনো সময় কাফেলার আমীরগণ তাই করেন। এরকমভাবে মক্কা মুকাররমার ‘হালাকাতু কা’কিয়া’ নামক জায়গাতে পশু কেনার ও যবেহ করার ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও ‘নাক্কাসা’ থেকে ২ কিলোমিটার দক্ষিণে পশুর বিশাল হাট রয়েছে। সেখানে যদিও পশু যবেহ করার ব্যবস্থা নেই, কিন্তু সেখান থেকে দূরে গিয়ে যবেহ করা যায়। এছাড়াও বাঙ্গালী যারা মুকীম আছেন সেখানে তাদের বাসাতেও গিয়ে যবেহ করে আসা যায়। এরকমভাবে ফিকির থাকলে আরো কত রাস্তা বের হয়ে আসতে পারে।
না জানার কারণে হাজীদের কি কি ভুল হয়ে থাকে? এথেকে উত্তরণের উপায় কী?
না জানার কারণে হজে যেসব ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে তার তালিকা বেশ দীর্ঘ। এ বিষয়ে বিগত ২০০৫ ডিসেম্বর সংখ্যায় হযরত প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান সাহেবের স্বতন্ত্র সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে। গত ২০০৬ এর ডিসেম্বর সংখ্যায় মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়ার একটি প্রবন্ধও এ বিষয়ে ছাপা হয়েছে। প্রবন্ধটির শিরোনাম : আমরা হজ আদায়ে যেসব ভুল-ভ্রান্তির শিকার হই।’ এই লেখকেরই আরেকটি প্রবন্ধ ‘হজের সংক্ষিপ্ত নিয়ম ও জরুরি মাসাইল।’ এগুলো পড়ে নিলে এ বিষয়ক ভুলভ্রান্তি দূর হবে এবং হজের মাসায়িল সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জিত হবে।
শোনা যায়, কোনো কোনো আলেম এখন অভিমত দিচ্ছেন যে, বর্তমানে হজের সময় ভীড়ের কারণে বিশেষত তওয়াফের সময় যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাতে মহিলাদের আর হজে যাওয়া উচিত নয়। তাদের উপর হজ ফরয হলে বদলি হজ করিয়ে নেওয়া উচিত। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। ইসলামের শিআর। তাই যার উপর হজ ফরয তাকে সরাসরি হজ করতে হবে। উক্ত বাহানায় ফরয হজ থেকেবিরত থাকা বা বদলি করানো কখনও জায়েয হবে না। বুদ্ধি খরচ করে, পরিস্থিতি বুঝে ও সতর্কতার সঙ্গে হজের আমলগুলো আঞ্জাম দিলে কখনও পর্দার বিধান লংঘিত হয় না। মহিলাদের হজের মধ্যে শরীয়ত মাহরামের উপস্থিতির শর্ত তো এজন্যই লাগিয়েছে যে, তার জন্য একাকী সব কাজ পর্দার সঙ্গে করা মুশকিল হবে। হজকারীনি এবং তার মাহরাম উভয়ের সতর্কতা অবলম্বন সত্ত্বেও যদি পর্দার কোনো ক্ষতি হয়ে যায়, তা আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন। তার জন্য আল্লাহর দরবারে ইস্তেগফার করবে, কিন্তু এটাকে বাহানা বানিয়ে হজ থেকে বিরত থাকবে না। ইসলামের এমন একটি মৌলিক বিধানের ব্যাপারে কোনো দলীল ছাড়া এ ধরনের উক্তি যারা করে থাকে তারা নিতান্তই ভুল করছেন।
তবে আমি মনে করি, এই সব ভুল-ত্রুটি ও অনিয়ম শুধু মাসআলা জানা না থাকার কারণে হয় না; বরং অনেক সময় অসতর্কতা এবং পরোয়াহীনতা থেকেও হয়ে থাকে। এজন্য প্রয়োজন এই যে, প্রত্যেকে তার বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহার করবেন এবং পূর্ণ সতর্কতার সাথে এই মোবারক সফর সম্পন্ন করবেন। একটি গর্হিত কাজ যা ব্যাপকভাবে হয়ে থাকে তা হল ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া। বিষয়টা সব সময়ের জন্যই নিষিদ্ধ, তবে এহরামের হালতে এটা আরও বেশী নিষিদ্ধ হয়ে যায়। নিঃসন্দেহে হজ্বের সফরে এমন অনেক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন ধৈর্য্যধারণ করা কঠিন হয়। তবে ওই সময়টাই হল ধৈর্য্যধারণের প্রকৃত সময়। মোটকথা, এ বিষয়ে বড় অসতর্কতা হতে দেখা যায়। অনেক হাজী সাহেব একে অপরের একরামের প্রতি লক্ষ রাখেন না, অথচ সেখান থেকে পারস্পরিক সম্মান-সহানুভূতির শিক্ষা অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরেকটা বিষয় দেখা যায়, অনেকে তাহকীক ছাড়া বিভিন্ন কথা বলে থাকেন। মীনাতে দেখবেন যেন প্রত্যেকেই মুফতী, নির্দ্বিধায় মাসআলা বলে চলেছেন। অথচ মাসআলার প্রসঙ্গটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছেই সোপর্দ করা উচিত, অন্যদের এখানে প্রবেশ করা উচিত নয়।
অর্থহীন আলোচনা-সমালোচনাতেও মূল্যবান সময় নষ্ট করা হয়ে থাকে। এই পুণ্যভূমিতে, বরকতময় দিনগুলোতে ও আখেরাতের সঞ্চয়ের সুবর্ণ সময়গুলোতেও যদি আমরা সচেতন না হই তবে আর কখন সচেতন হব।
পাকী-নাপাকীর মাসআলা আমাদের সবারই জানা আছে। কিন্তু মীনা ও আরাফাতে হাম্মামের (টয়লেট) স্বল্পতার কারনে এখানে অনেক ভিড় হয়ে থাকে। দুই হাম্মামের মাঝের পর্দার নীচে ফাঁকা থাকার কারণে পানি ইত্যাদির ছিটা অন্য পার্শ্বেও চলে যায়। কিন্তু এরপরও কেউ কেউ এতো জোরে কল ছাড়ে যে, ওই নাপাকীর ছিটা এসে পাশ্ববর্তী ব্যাক্তির কাপড়-চোপড় নষ্ট করে দেয়।
মীনায় প্রত্যেক তাবুতে জামাত হয়। যোহর যোহরের সময়, আসর আসরের সময়। মসজিদে হারামে থাকা অবস্থায় সেখানের জামাতে শরীক হয়ে আমরা আসরের নামায আগে আদায় করে থাকি। কিন্তু মীনাতে এ বিষয়টা নেই। তবুও দেখা যায়, অনেকে ‘‘মিছলে ছানী’’র পূর্বেই আসরের জামাত পড়ে থাকে। এটা ভুল।
মোটকথা ভুলের কোনো অন্ত নেই এবং সহীহ ইলম অর্জন করা ছাড়া এবং বিচার-বুদ্ধি ব্যবহার করা ছাড়া এর প্রতিকারেরও কোনো পথ নেই। আল্লাহ তাআলাই তৌফিক দানকারী।
গত সংখ্যায় হজ্ব সফরনামায় লেখা হয়েছে; ‘তাই আরাফার দিনে কোন মূর্খ যদি আছরের সময় আছর এবং মাগরিবের সময় মাগরিব পড়ে তাহলে সে হবে মহাপাপী।’ অথচ আরাফার ময়দানে আমরা দেখে থাকি, তাবুতে নামায আদায়কারীদেরকে উলামায়ে কেরাম যোহরের সময় যোহর এবং আসরের সময় আসরের নামায আদায় করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আপনি ঠিক বলেছেন। ফিকহে হানাফী অনুযায়ী দুই নামায একত্রে আদায় করার শর্ত হল, আমীরে হজ্বের ইমামতিতে নামায আদায় করা। মসজিদে নামিরাতে যারা আমীরে হজ্বের ইমামতিতে নামায আদায় করেন তারা এভাবেই আদায় করে থাকেন। কিন্তু কেউ একাকী নামায আদায় করলে অথবা ভিন্ন জামাতে আদায় করলে যোহর-আসর অন্য সময়ের মতোই আলাদা আলাদা সময়ে আদায় করবে। ফিকহে হানাফী অনুযায়ী এটাই ফতোয়া। মুযদালিফার বিষয়টি ভিন্ন। সেখানে মাগরিব-এশা এশার ওয়াক্তে একত্রে আদায় করার জন্য উপরোক্ত শর্ত নেই। সর্বাবস্থাতেই তা একত্রে আদায় করতে হবে। আমীরে হজ্বের ইমামতিতে নামায আদায় করা হোক কিংবা একাকী। হজ সফরনামায় মাসআলার বিস্তারিত বিবরণ পেশ করা উদ্দেশ্য থাকে না। ওখানে মূলত ওই বিষয়ের শিক্ষা ও তাৎপর্য বয়ান করা উদ্দেশ্য । এজন্য মাসআলার বিবরণে সেখানে যে সংক্ষিপ্ততা আছে তা কোনো প্রশ্নের কারণ হওয়া উচিত নয়।
হজ্বের মধ্যে রূহানিয়াত পয়দা করার জন্য আকাবির পূর্ব থেকেই মানসিক প্রস্ত্ততি গ্রহণের আদেশ করে থাকেন। এর জন্য কী করার এবং কী পড়ার পরামর্শ তারা দিয়ে থাকেন?
করণীয় বিষয়গুলো আকাবির বলেছেন। বিষয়টা পরিস্কার। অন্তর থেকে তওবা-ইস্তিগফার করবে। যাদের কোনো হক পাওনা আছে তাদের হকসমূহ আদায় করে দিবে এবং অধিক পরিমাণে দরূদ শরীফ পাঠ করে কিছু অধ্যয়নের আগ্রহ থাকলে মাওলানা মুহাম্মাদ মনয়ুর নুমানী রাহ.-এর পুস্তিকা ‘আপ হজ্ব ক্যায়সে করে’ পড়া যেতে পারে। মাসিক আলকাউসারে ধারাবাহিক ভাবে ‘হজ সফরনামা’ প্রকাশিত হচ্ছে, তা তো পাঠকবৃন্দের সামনেই রয়েছে।#