Zilhajj 1429   ||   December 2008

বা জা র : উগ্র মুনাফাখোরির বিরুদ্ধে কঠোর দৃষ্টিদানের এখনই সময়

Abu Tashrif

নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের মূল্য এখন হয়তো নতুন করে চড়ার দিকে যাচ্ছে না। লক্ষণীয়ভাবে জরুরী কোনো পণ্যের দাম না বাড়লেও পাইকারী ও খুচরা মূল্যের তারতম্য বেশি রেখে ভোক্তা ও ক্রেতাদের ঠকানো হচ্ছে। আমদানি করা কিছু পণ্যে বিশ্ববাজারের চেয়ে দ্বিগুণ দাম রাখা হচ্ছে দেশীয় বাজারে। পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, হাতেগোনা কিছু আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীর উগ্র মুনাফাখোরির প্রবণতার ফলেই এটি ঘটে চলেছে। অর্থাৎ বেশ কিছু পণ্যের দাম ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ার যুক্তিসঙ্গত কারণ, উপলক্ষ ও বাস্তবতা থাকলেও নিছক গায়ের জোরে ও সিন্ডিকেটের কারণে ব্যবসায়ীরা তা হতে দিচ্ছে না। সে হিসেবে পণ্যের দাম নতুন করে না বাড়লেও পণ্যের স্বাভাবিক মূল্যহ্রাসকে ঠেকিয়ে দিয়ে ভোক্তাদের ঠকানো হচ্ছে।

ভোজ্যতেলের দাম বছর খানেক আগে যখন বাড়তে শুরু করেছিল তখন হিসেব করে দেখানো হয়েছিল বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য, পরিবহন খরচ সব মিলিয়ে এ বাড়তি মূল্যটাই যৌক্তিক।  ব্যবসায়ী সমাজ ও সরকারের তখন সুর ছিল একই রকম। কিন্তু বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য গত ৪/৫ মাস আগে থেকে প্রায় ২৮-৩০% কমলেও দেশীয় বাজারে এখনও তা আগের মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এক হিসেবে বিশ্ববাজারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দামে ভোজ্যতেল দেশীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে মিল মালিক আর পাইকারী ব্যবসায়ীরা একে অপরকে দায়ী করে কথা বলছেন। দায় নিচ্ছেন না কোনো পক্ষ, কিন্তু লাভ নিচ্ছেন উভয়েই। প্যাকেট করা আটা, আলু, পেঁয়াজ, চাল ও সবজির মূূল্যের ক্ষেত্রেও কৃত্রিম সংকট ও কারসাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরবরাহ আগের চেয়ে অনেক বেশি এবং স্বল্পমূল্যে হলেও খুচরা বাজারে মূল্য না কমিয়ে বরং বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বিষয়টা কেবল খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়। আন্তর্জাতিক বাজারনির্ভর কিংবা আমদানিনির্ভর প্রায় প্রতিটি পণ্যেই এ ধরনের অহেতুক মূল্য বৃদ্ধির সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে আছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে বাসের ভাড়া বাড়ানো হলেও এখন কমানো হচ্ছে না। জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমেছে বলার পর পরিবহন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-আমাদের অধিকাংশ গাড়ী চলে গ্যাসে। তেলের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগটাও নিচ্ছে আবার মূল্যহ্রাসের সময় অন্য অজুহাত শুনিয়ে দিচ্ছে। এতে স্বল্প আয়ের ভোক্তারা হতাশার শিকার হচ্ছেন। সাধ্য ও চাহিদার টানাটানির মধ্যে বেশি সংখ্যক ব্যবসায়ীদের এই কারসাজি মানুষের মন ও চেতনাকে বিষিয়ে তুলছে।

সরকার এখন নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত। এ সময়টিকে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী উগ্র মুনাফার সুবর্ণ মওসুম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। অপরদিকে বর্তমান সরকারের অসততা ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সফলতা-প্রত্যাশী সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপেও মুখ বুঁজে থেকেছেন শেষ পর্যন্ত একটি সুপরিণতি দেখার অপেক্ষায়। সফল নির্বাচন হয়তো তার কিছুটা নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু মানুষের নিত্যকার জীবন-জীবিকার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত একটি প্রধান ইস্যু (দ্রব্যমূল্য) নিয়ে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে মানুষের অন্তরে দানা বেধে উঠা হতাশা থেকেই যেতে পারে। সরকারের ব্যাপক অভিযানের চড়া মূল্য সাধারণ জনগণ পরিশোধ করলেও তার কোনো সুফল তারা ব্যক্তিগত জীবন-জীবিকায় এখনও পাচ্ছেন না।

এজন্যই এ বিষয়ে অন্যসব জরুরি বিষয়ের মতো তাৎক্ষণিক ও ক্ষিপ্র মনোযোগ দান সবারই কাম্য। রাজনৈতিক শক্তি ও মহল ইতোমধ্যেই নির্বাচনে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। তারা এখন তাদের পরস্পরের প্রতি পরস্পরের আচরণ ও লাভ লোকসানের হিসাবে ব্যস্ত থাকবেন। ব্যবসায়ীদের প্রতি সরকারের আচরণ কেমন হচ্ছে এটা নিয়ে ভাবার বা কিছু বলার সময় তারা হয়তো পাবেনই না। বরং বলা যেতে পারে, এ সরকারের বিদায়-মুহূর্তে এক্ষেত্রে কিছু রাশ টানতে পারলে সাধারণ ভোক্তা-দেশবাসীর পাশাপাশি রাজনীতিকরাও কিছুটা খুশীই হয়তো হবেন। কর্তৃপক্ষ উগ্র মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের বিষয়ে কঠোর দৃষ্টিদানের বিষয়টি নিয়ে এ রকম একটি সময়ে সক্রিয়ভাবে ভাবতে পারেন। এই ভাবনাটা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য যেমন দরকার, তেমনি দরকার তাদের সু-ইমেজের জন্যও। তারা যদি যাওয়ার সময়ও দ্রব্যমূল্যের রাশ টেনে ধরে যেতে পারেন, উগ্র মুনাফাখোরির গলা টিপে ধরতে পারেন এবং এ ব্যাপারে একটি সাফল্যজনক নীতি বা পলিসি দাঁড় করিয়ে যেতে পারেন তাহলে সাফল্যের সুনামটাও তারাই পাবেন বহুলাংশে। #

 

advertisement