Muharram 1430   ||   January 2009

সাক্ষাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ আদব

Mawlana Muhammad Abdul Malek

কয়েকদিন আগে একটি উর্দু পুস্তিকা নজরে পড়ল। মুলাকাত আওর টেলিফোন কে আদাব (সাক্ষাত ও টেলিফোনের আদব-কায়দা) নাম ও বিষয়বস্ত্ত দুটোই ছিল আমার জন্য আকর্ষণীয়। এটা হযরত মাওলানা মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়ানবী রাহ.(আহসানুল ফাতাওয়া যার ফতোয়ার সংকলন)-এর একটি বয়ান, যা পুস্তিকাকারে কিতাব ঘর নাজেমাবাদ করাচী থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় পুস্তিকাটির বিষয়বস্ত্ত তুলে ধরা হয়েছে এভাবে-

১. সাক্ষাতের জন্য আগে থেকে সময় নিন।

২. সাক্ষাতের কাজ ফোনে সেরে নিন।

৩. ফোনের কাজ চিঠির মাধ্যমে সারুন।

৪. ফোনে স্পষ্টভাবে নিজের পরিচয় দিন।

৫. যথাসময়ে ফোন করুন।

৬. শুধু প্রয়োজনেই ফোন করুন।

৭. ফোনে হ্যালো না বলে সালাম করুন।

৮. সালামের মাধ্যমে কথা শেষ করুন।

খুতবায়ে মাসূরার পর মুফতী সাহেব বলেন, আজকাল আমাদের অনেকেরই আদাবুল মুআশারা সম্পর্কে জ্ঞান নেই। আদাবুল মুআশারা বলতে বোঝায়, জীবন-যাপনের পদ্ধতি। অর্থাৎ সমাজবদ্ধ জীবনে পরস্পর মেলামেশা, আচার-আচরণ এবং সকল শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখার নিয়ম-নীতি।

প্রথমে দুটি মৌলিক নীতি বুঝে নেওয়া দরকার-

১. একজন মানুষের ওঠা-বসা, চলাফেরা এবং অন্যের সঙ্গে তার আচার-আচরণ এমন হওয়া চাই, যেন তার নিজেরও কষ্ট না হয় এবং অন্যেরও কষ্ট না হয়।

২. নিজের এবং অন্যের কারো সময় যেন নষ্ট না হয়।

কথাগুলো সংক্ষেপে মূলনীতি আকারে বলা হলেও এর প্রয়োগের ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত। আদাবুল মুআশারা নামে হযরত থানবী রাহ.-এর একটি পুস্তিকা আছে। তাতে অনেক উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। এটা পাঠকের প্রজ্ঞা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। তারপরও জীবনের সকল অবস্থা ও  পরিস্থিতি যেহেতু নির্দিষ্ট করে কোনো গ্রন্থে উল্লেখ করা সম্ভব নয় তাই সাধারণ বিচার-বুদ্ধি কাজে লাগানো অপরিহার্য। আল্লাহ যাকে প্রজ্ঞা দান করেন তিনি বুঝতে পারেন কোন কাজটি কখন ও কীভাবে করতে  হবে।

এরপর তিনি বলেন, আমি এখানে দুটি নীতি উল্লেখ করেছি কিন্তু প্রকৃত সত্য এই যে, নিজের আচার-আচরণ সম্পর্কে   চিন্তা-ভাবনা করা ছাড়া এবং বাস্তব ক্ষেত্রে তা অনুসরণের চেষ্টা করা ছাড়া এটুকু উপলব্ধিও করা কঠিন যে, আমি এ নীতির অনুসরণ করছি কি না।

তারপর তিনি সাক্ষাত ও টেলিফোনের গুরুত্বপূর্ণ আদবগুলোর উপর আলোকপাত করেছেন।  যার শিরোনামগুলো উপরে উল্লেখিত হয়েছে।

এ বয়ানে তিনি এ বিষয়টি অত্যন্ত বিশদভাবে আলোচনা করেছেন যে, কারো কোনো কাজ যদি অন্য লোকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তাহলে টেলিফোনে কাজ সারা গেলে সাক্ষাতের চিন্তা না করা উচিত। তদ্রূপ চিঠিতে সমাধা করা সম্ভব হলে ফোনের চিন্তা করা ঠিক নয়। চিঠির মাধ্যমেই তা সমাধা করা উচিত।

এরপর ফোনের ক্ষতিকর বিষয়গুলো  বিস্তারিত আলোচনা করে বলেন, তাৎক্ষণিক প্রয়োজন ছাড়া ফোন করা উচিত নয়।  যে প্রয়োজন তাৎক্ষণিক নয় তা যেন চিঠির মাধ্যমে সারা হয়। ফোন ও চিঠির মধ্যে ছয়টি পার্থক্য উল্লেখ করে দেখিয়েছেন যে, ফোনের পরিবর্তে চিঠি-পত্রের আদান-প্রদানই উত্তম ও নিরাপদ। কিন্তু আজকাল এ নসীহতের উপর আমল করার লোক হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ মোবাইল ফোন মানুষের ধৈর্য্য ও চিন্তা-ভাবনার মানসিকতা বিদায় করে দিয়েছে। নিজের ও অন্যের সময়ের মূল্য সম্পর্কেও অনুভূতিহীন করে দিয়েছে।

এখানে মুফতী সাহেব খুবই শিক্ষণীয় এবং অবিশ্বাস্য একটি ঘটনাও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, হযরত মাওলানা শাববীর আলী রাহ. নাজেমাবাদ-৪-এ বসবাস করতেন এবং তার বাসায় ফোনও ছিল, কিন্তু আমার কাছে ফোন করার প্রয়োজন হলে তিনি ফোন না করে চিঠি লিখতেন। আমিও তার চিঠির উত্তর চিঠির মাধ্যমেই দিতাম। অথচ দুইজনের ঠিকানা কত কাছাকাছি। আমারও নাজেমাবাদ-৪, তারও নাজেমাবাদ-৪। মাওলানা শাববীর আলী রাহ. বলতেন, আমি ফোন করলাম, আপনি তখন কোনো কাজে ব্যস্ত আপনাকে তাহলে কাজ ছেড়ে ফোন ধরতে হবে। অথবা আমি ফোনে বাসায় সংবাদ দিয়ে রাখলাম। পরে সংবাদ পেয়ে আপনি ফোন করবেন কিন্তু তখন আমি বাসায় নেই বা কোনো কাজে ব্যস্ত। সুতরাং আল্লাহ যখন চিঠি-পত্র আদান-প্রদানের ব্যবস্থা রেখেছেন তো সুবিধামতো এটাই অবলম্বন করা ভালো। অবসর সময়ে ধীরস্থিরভাবে চিঠি লিখব এবং আপনিও সুবিধামতো এর জবাব দেবেন। কাজ একটু দেরিতে হলেও ধীর স্থির এবং শান্তভাবে হবে।

মুফতী সাহেব এ বয়ানে যে আদবগুলোর কথা আলোচনা করেছেন এ মুহূর্তে আমি সেগুলোর মধ্য দুটি বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে পাঠকবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি।

১. সাক্ষাতের জন্য আগে থেকে সময় নেওয়া।

২. উপযুক্ত সময়ে ফোন করা।

সাক্ষাতের জন্য, বিশেষত যখন নির্দিষ্ট কোনো কাজ বা  উদ্দেশ্য থাকে তখন আগে সময় নেওয়া দুপক্ষের জন্যই ভালো। বিশেষ করে ব্যস্ত লোকদের জন্য এতে অনেক সুবিধা রয়েছে এবং ব্যস্ত লোকদের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে লক্ষ রাখাও অনেক বেশি জরুরি। আর যদি এমন লোকের সঙ্গে সাক্ষাত হয় যার সময় নিজস্ব এখতিয়ারে নয়; বরং এ সময়ে সে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোনো সম্মিলিত কাজ কিংবা কোনো সুনির্দিষ্ট দায়িত্বে আবদ্ধ তাহলে তো সে সময়  যথাস্থানে ব্যয় করা তার নিজের উপরও ওয়াজিব এবং অন্যদের জন্য তাকে এর সুযোগ করে দেওয়া জরুরি। অন্যথায় তাকে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অবশ্যই দায়িত্বে অবহেলার গোনাহয় পড়ে যেতে হয়।

হযরত হাকীমুল উম্মত রাহ.-এর ওখানে এ নীতির কঠিন পাবন্দী ছিল। কেউ সাক্ষাত করতে চাইলে আগে বিস্তারিত লিখে সব ঠিক করে নিতে হতো। কোনো সন্দেহ নেই যে, এভাবে নিয়ম কানুনের পাবন্দীর মাধ্যমেই পরস্পরের হকের প্রতি লক্ষ  রাখা যায় এবং অন্যকে  কষ্টের হওয়া থেকে বেঁচে থাকা যায়।

সাক্ষাতের জন্য পূর্ব অনুমতির একটা বড় ফায়দা এই যে, এতে দ্বিতীয় পক্ষ মানসিকভাবে প্রস্ত্তত থাকে এবং স্বতস্ফূর্ততা ও মনোযোগ সহকারে কাজটি সম্পন্ন হয়।  পূর্ব অনুমতি না থাকলে যা অনেক ক্ষেত্রেই হয় না।

আরেকটি বড় ফায়দা এই যে, আগে থেকেই সাক্ষাতের উদ্দেশ্য জানা যায়। ফলে সাক্ষাতে এ উদ্দেশ্য সাধিত হবে কি না তাও বোঝা যায়। অনেক সময় দেখা যায় যে, নিছক অনুমান করে বা ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আমরা কারো সম্পর্কে ধারণা করি যে, তার দ্বারা আমার অমুক কাজটি হতে পারে, বা অমুক কাজে সহযোগিতা হতে পারে। এই অনুমানের ভিত্তিতেই তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে চলে যাই। অথচ এমনও হতে পারে যে, এ কাজ আদৌ তার দ্বারা সম্পন্ন হবে না। পূর্ব যোগাযোগ হলেই তা জানা যেত এবং সাক্ষাতের কষ্ট পোহাতে হত না এবং উভয়ের সময় বেঁচে যেত।

এ বিষয়ে উস্তাদে মুহতারাম মাওলানা তাকী উছমানী দামাত বারাকাতুহুম-এর নীতি তাঁরই কলমে পাঠকের সামনে পেশ করা ফায়েদাজনক মনে করছি। তিনি তার সাক্ষাতপ্রার্থীদের উদ্দেশ্যে লিখে রেখেছেন।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

অধমের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে আগমনকারীদেরকে ধন্যবাদ জানাই।  আপনি কষ্ট করে যে সাক্ষাতের সুযোগ দান করেছেন এজন্য আপনার শোকর আদায় করি। আল্লাহ আপনাকে উভয় জাহানের কল্যাণ দান করুন। আমীন।

অবশ্য সাক্ষাতের আগে আমার কিছু আবেদন রয়েছে। যাতে আপনারও সময় নষ্ট না হয় এবং আমারও সময় নষ্ট না হয়।

১. তাবিয-তুমার, স্বপ্নের তাবীর (ব্যাখ্যা) ইত্যাদি আমার জানা নেই। সুতরাং এসব বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে অন্য কারো সঙ্গে যোগাযোগ করুন। অধম এ ব্যাপারে একেবারেই অপারগ।

২. নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আমি অভিজ্ঞতার পর ছেড়ে দিয়েছি। তাই দয়া করে এ বিষয়ে আমাকে অনুরোধ করবেন না।

ক) চাঁদা সংগ্রহের জন্য কোনো মাদরাসা বা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়ন।

খ) কোনো কিতাবের উপর অভিমত লেখা।

গ) সংবাদপত্রে বিবৃতি দেওয়া।

ঘ) উদ্বোধন, বিয়ে অনুষ্ঠান, সমাপনি অনুষ্ঠান, সাধারণ মাহফিল বা বার্ষিক মাহফিল ইত্যাদিতে উপস্থিত হওয়া। অবশ্য বিয়ে যদি দারুল উলূমে বা শুক্রবারে বাইতুল মোকাররমে হয় তাহলে আমি খেদমতের জন্য প্রস্ত্তত।

৩. নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আমার স্বভাব ও নীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে অক্ষমও বটে। অনেক সময় তা অসহনীয় বলে মনে হয়। অনুগ্রহ করে এ দায়িত্ব আমার উপর না চাপালে কৃতজ্ঞ হব।

ক) প্রশাসনের কারো কাছে সুপারিশ করা।

খ) কারো কাছে চাঁদার জন্য সুপারিশ করা।

৪. ফতোয়া সংগ্রহ বা মাসআলা জানার জন্য আমাদের এখানে স্বতন্ত্র ফতোয়া বিভাগ আছে, যা আমাদেরই তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। তাই দয়া করে এ বিষয়ে ফতোয়া বিভাগের শরণাপণ্ণ হোন। কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে সম্মানিত দায়িত্বশীলরাই অধমের সঙ্গে পরামর্শ করেন।

বান্দা তাকী উছমানী

সুতরাং কারো সঙ্গে বিশেষ কোনো প্রয়োজনে সাক্ষাত করতে হলে এটাও জেনে নেওয়া চাই যে, এ কাজ তার নীতি ও মানসিকতার পরিপন্থী কি না? কেউ কেউ এতে অসন্তুষ্ট হয়। অথচ এতে অসন্তুষ্ট হওয়ার কিছুই নেই। ব্যস্ত মানুষকে তো দ্বীনী এবং সামাজিক প্রয়োজনেই এমন নিয়ম-নীতির পাবন্দী করতে হয়। আর শরীয়ত জায়েয বিষয়ে মানুষকে এখতিয়ার দিয়েছে যে, সে অবস্থা ও সময়ের প্রেক্ষিতে নিজের কাজ-কর্মের রুটিন তৈরি করে নিবে এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তা পালন করবে।

নুকূশে রফতেগা-এ মাওলানা তাকী উছমানী হযরত মুফতী অলী হাসান রাহ. (১৪১৫ হি.) সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলেন-

হযরত মুফতী সাহেবের অসাধারণ মেধা ও যোগ্যতার কারণে সব সময় আমার এই তামান্না  হত যে, তার সময়ের উল্লেযোগ্য একটি অংশ যদি রচনার কাজে ব্যয় হত, এতে তার ইলম ও পান্ডিত্য দ্বারা আরো অনেক মানুষ দীর্ঘদিন উপকৃত হতে পারত। আমি অনেকবার হযরতের কাছে ফাতহুল মুলহিম-এর তাকমিলা লেখার অনুরোধ করেছি এবং হযরত ইউসুফ বানূরী রাহ.-এর ইন্তেকালের পর মাআরিফুস সুনান-এর তাকমিলা লেখার অনুরোধ করেছি। এ দুটো কাজের জন্য তার মতো ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু মুফতী সাহেবের স্বভাবগত সরলতা এবং ভদ্রতা ও নম্রতা অনেকটা এমন ছিল যে, তার অধিকাংশ সময়ই সাময়িক প্রয়োজন পূরণে এবং আবেদনকারীদের মন রক্ষায় ব্যয় হয়ে যেত। আফসোসের বিষয় এই যে, আমাদের সমাজে এই পরিবেশ নেই যে, প্রত্যেক ব্যক্তি থেকে তার স্বভাব ও যোগ্যতার সর্বোচ্চ ব্যবহার হবে। রসম ও গতানুগতিকতার পেছনে অনেক সময় নষ্ট করা হয়। হযরত মুফতী সাহেব একজন ইলমী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি কখনও সাংগঠনিক লোক ছিলেন না। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে কিংবা যোগ্যতার অবমূল্যায়ন বলুন, তার মূল্যবান সময়ের অনেক বড় অংশ এসব কাজেও খরচ হয়েছে। বিয়ে, উদ্বোধন, সভাপতিত্ব ইত্যাদির মতো রেওয়াজী কাজেও তার সময় নেওয়া হয়েছে।  কিন্তু তার বিস্তৃত অধ্যয়ন, গভীর পান্ডিত্য ও ইলমের ফসলকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে সংরক্ষিত করার দিকে যথাযথ দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। এজন্য যেসব কাজে শুধু তার প্রতিই দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকত সেসব কাজ অপূর্ণই থেকে গেছে। -নুকূশে রাফতেগাঁ পৃ. ৩৮০-৩৮১

আলোচিত বয়ানের দ্বিতীয় যে বিষয়টি আমার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে তা হল ফোন (বিশেষত যখন মোবাইলে হয়) উপযুক্ত সময়ে করা। কেউ যদি তার ব্যস্ততার কারণে ফোনের জন্য সময় নির্ধারিত করে  তাহলে তার প্রতি লক্ষ রাখা জরুরি। এজন্য নিয়ম হল, কারো ফোন নম্বর নেওয়ার সময়ই ফোন করার সময় জেনে নেওয়া। নামাযের জামাতের সময়, আরামের সময়, পানাহারের সময়, যিকির-আযকার, অজিফা ইত্যাদি আদায়ের সময় কাউকে ফোন করা ঠিক নয়। একান্ত প্রয়োজন বা ওজরের কথা ভিন্ন। মসজিদে জামাত চলাকালীন যারা ফোন করে তাদের ব্যাপারে কি সুধারণা সৃষ্টি হয়? আর এটা কি শুধু এজন্যই নয় যে, ফোন করার আগে ভাবা হয় না, এটা ফোনের উপযোগী সময় কি না?

আমাদের মধ্যে শত শত লোক এমন আছেন যারা শুধু নিজের প্রয়োজন ও সুবিধার কথাই ভাবেন, অন্যের সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা করেন না। অনেকে ফোন করার জন্য ঐ সময়ের অপেক্ষা করে যখন টাকা সবচে কম খরচ হবে। এটা চিন্তা করে না যে, যাকে ফোন করা হচ্ছে তার জন্যও এ সময়টা উপযোগী কি না? আমার জানা আছে যে, এটা তার অজিফা আদায়ের সময় বা আরামের সময়। তবুও শুধু পয়সা বাঁচানোর জন্য ওই সময় ফোন করা কীভাবে সমীচীন হতে পারে?

কারো কারো মুখে শোনা যায় যে, মোবাইল খোলা থাকার অর্থই হল এখন ফোন করতে অসুবিধা নেই, কিন্তু এই ব্যাখ্যা এই জন্য ঠিক নয় যে, মানুষ কখনও কখনও মোবাইল বন্ধ করতে ভুলে যায়। কখনও বিশেষ কোনো প্রয়োজনে মোবাইল খোলা রাখে। আবার কখনও ভদ্রতার কারণে কিংবা কোনো প্রয়োজনীয় ফোন আসতে পারে এজন্য খোলা রাখে। ভদ্রলোকদের সঙ্গে ভদ্র আচরণই করা চাই। তাদের ভদ্রতার সুযোগ গ্রহণ করা উচিত নয়।

সবশেষে এ কথাও বলে দেওয়া উচিত মনে করছি যে, অবস্থার প্রেক্ষিতে কেউ যদি সময়ের রুটিন বানিয়ে নেয় তবে তা তাকাববুরীর অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং তা হক আদায়ে যত্নশীলতা ও সময়ের গুরুত্বের পরিচায়ক। তদ্রূপ কারো সঙ্গে মেলামেশার সময় তার নীতি ও নেজামের প্রতি লক্ষ্য রাখার মধ্যেও অপমানের কিছু নেই; বরং তা ভদ্রতা ও শরাফতের প্রমাণ বহন করে।

আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হল অন্যের সঙ্গে মেলামেশার সময় তার নেজাম ও নীতি কঠিনভাবে পালন করা চাই। আর নিজের সঙ্গে কেউ অনিয়ম করলে যথাসম্ভব ধৈর্য্য ধারণ করা চাই। আদব ও ভদ্রতার সঙ্গে নিজের নেজামের কথা বলে দিতেও কোনো অসুবিধা নেই; বরং এটিই উত্তম। কেউ কেউ নেজামের কথা বলতে লজ্জাবোধ করে। স্বভাবজাত লজ্জার উপর যুক্তি ও ইনসাফের সিদ্ধান্তকে অগ্রাধিকার দেওয়া চাই। এমনিভাবে নেজামের কথা বলে দিলে কেউ কেউ এটাকে তার জন্য মার্যাদাহানিকর বলে মনে করে। অথচ এতে অমর্যাদার কিছুই নেই; এটা উভয় পক্ষের হকের প্রতি লক্ষ রাখারই শামিল। 

 

advertisement