অজুহাত : হায়! ইসরাইলও তালিকা করছে সন্ত্রাসীর
মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার মাসখানেকের মধ্যেই নাকি ‘সন্ত্রাস দমনে’ কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে ইসরাইল। ২ জানুয়ারি ’০৯ এর ঢাকার একটি দৈনিক সংবাদপত্রের আন্তর্জাতিক পাতায় ইন্টারনেটের সূত্রে এ ধরনের একটি খবর পরিবেশিত হয়েছে। সে খবরে দেখা যাচ্ছে, আল কায়েদা ও তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে দাবি করে ৩৫ টি সংগঠনকে সন্ত্রাসবাদী বলে ঘোষণা করেছে তারা। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস নিয়ে সম্প্রতি একটি ক্যাবিনেট বৈঠকে ইসরাইল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা জানিয়েছে, এই সংগঠনগুলো মূলত পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে সক্রিয়। এই ৩৫টি সংগঠনের কার্যকলাপের ওপর নাকি এবার থেকে কড়া নজার রাখা হবে। খবরে আরো বলা হয়েছে, ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে এই সংগঠনগুলোর গতিবিধির ওপর নজর রেখেছিল। আর তারপরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কোনো একটি গ্রামের সবচেয়ে বড় ডাকাত ও খুনী যখন অপরাধীদের তালিকা তৈরি করে এবং অভিযানে নামে তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, গ্রামের সবচেয়ে নিরীহ ও ভদ্রলোকদের সর্বনাশ ঘটিয়ে চোর-বাটপার ও লম্পটদের সুদিনের যাত্রা শুরু হচ্ছে। গ্লোবাল ভিলেজের এ যুগেও দুনিয়ার শক্তিমদমত্ত অবৈধ ও শান্তিবিনাশী কোনো দেশ যখন ‘সন্ত্রাসী’ অনুসন্ধান ও ‘সন্ত্রাস দমনে’ ব্যস্ত হয় তখন বোঝা যায়, শান্তিপ্রিয় বিশ্বাসী মানুষদের ঘাড়ে ষড়যন্ত্রের বোঝা চাপানোর কসরত চলছে। কিছু সংগঠনকে সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ইসরাইল সেগুলোর নাম যখন মিডিয়াতে ছড়িয়ে দিয়েছে তখন বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, এসব সংগঠনে কাজ করছেন নিরীহ, শান্তিপ্রিয় বিশ্বাসী মানুষরা। ইসরাইল যাদের খারাপ বলছে, তাদের চেয়ে ভালো মানুষ দুনিয়াতে থাকা অসম্ভব। শয়তানের যে শত্রু, বিশ্বাসীর সে বন্ধু-এই শাশ্বত নীতির আলোকেই আমরা বলতে পারি, ‘সন্ত্রাস’ ও ‘জঙ্গিবাদ’ ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রতিটি মুসলিম দেশের প্রশাসন ও মিডিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি অপ্রভাবিত, স্বাধীন ও স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। পুঁজিবাদী ও সমাজবাদী বৃহৎ রাষ্ট্রশক্তির মাঝে স্নায়ুযুদ্ধের যুগ শেষ হওয়ার পর ইসলামী সশস্ত্র সংগ্রামীদের প্রথম সন্ত্রাসী বলে চিৎকার করার কাজটি করা হয় ২০০১ এর ১১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে। কিছুদিনের মধ্যে আলকায়েদা, তালেবান, বিন লাদেন, মোল্লা ওমর প্রমুখকে শায়েস্তা করার নামে আফগানিস্তান নামক দেশটিকে দখলে নিয়ে যায় আমেরিকা। সব করা হয় সন্ত্রাসের অজুহাতে। ‘সন্ত্রাসী’ নাম দিয়ে উপমহাদেশের অনেক ত্যাগী মুসলিমকে অন্ধকার গুয়ানতানামোতে নিক্ষেপ করা হয়। পৃথিবীর বহু দেশ থেকে সন্ত্রাসের অজুহাতে মুসলিম তরুণদের ধরে এনে বন্দী করা হয় সেখানে। অথচ বহু দেশেই মুসলিম ছাড়াও সশস্ত্র সংগ্রামী বা আন্দোলনকারী রয়েছে। যারা রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থেকে সশস্ত্র পথে দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য লড়ছে। ভারত, নেপাল, শ্রীলংকার মতো দেশে যেমন এসব গ্রুপের অস্তিত্ব রয়েছে তেমনি বহু উন্নত দেশেও এ ধরনের সশস্ত্র গ্রুপ বিদ্যমান। আঞ্চলিক, রাজনৈতিক কিংবা বর্ণগত চেতনা থেকে এসব উগ্র গ্রুপ সক্রিয় আছে। তাদেরকে কিন্তু ‘সন্ত্রাসী’ বলে গালি দেওয়া হয় না। সন্ত্রাসীদের কোনো তালিকায় তাদের নামও ছাপা হয় না। অপরদিকে আইন-কানূনের কোনো তোয়াক্কা না করে, যেসব রাষ্ট্র অপর কোনো রাষ্ট্রের ওপর বোমা, বন্দুক, কামান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাজার হাজার নারী, শিশু, বৃদ্ধকে হত্যা করার মতো বর্বরতা করে, দেখা যায়, তাদেরকেও কোনো মিডিয়া বা দেশ সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার মতো সাহস রাখে না। ‘সন্ত্রাস’ বিষয়টার মতো জটিল, দ্ব্যর্থবোধক এবং শক্তিমানের পক্ষে ব্যবহারযোগ্য ‘মোক্ষম অজুহাত’ সম্ভবত দ্বিতীয়টি আর এ দুনিয়ায় নেই।
সাম্রাজ্যবাদী শাসক ও মিডিয়ার মুখে ‘সন্ত্রাস’ শব্দটির প্রয়োগের প্রতিটি মাত্রা এখন থেকে পরখ করে দেখা দরকার সচেতন সবার। কে সন্ত্রাসের পক্ষ-বিপক্ষ, কে কাকে সন্ত্রাসী বলছে, সন্ত্রাস-এর অজুহাতে কোথায় কতজন শিশু ও নারীকে কে কেন হত্যা করছে-এসব প্রশ্নের উত্তর না খুঁজতে চাইলে কেবল ৩৫টি সংগঠনকে নয়, ইসরাইল অচিরেই কোটি কোটি বিশ্বাসী মুসলমানের প্রধান প্রতীক, বিশ্বাস ও অবলম্বনগুলোকেই সন্ত্রাসের উপলক্ষ ও উৎস বলে দুনিয়ায় চাউর করে দিতে পারে। #