Rabiul Akhir 1430   ||   April 2009

সুস্থতা ও দৈহিক শক্তি

আবিদা

সন্তানের সুস্থতা ও দৈহিক শক্তির বিষয়ে মনোযোগী হোন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষার কৌশল সম্পর্কেও তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিন। তবে সচেতন থাকুন যেন এই প্রশিক্ষণের ভুল ব্যবহার না হয়, শুধু আত্মরক্ষার কাজেই ব্যবহার করা হয়।

বিষয়টা বার বার ঘটতে লাগল। ছোট্ট মেয়েটি যখন স্কুল থেকে বাসায় ফেরে তখন প্রতিবেশীদের এক মেয়ে তার ছোট ভাইকে উসকে দেয় যে, ওকে ঢিল ছুরে মার্। ছেলেটি তা-ই করত। সে শুধু পাথরই ছুড়ত না, সঙ্গে কতগুলো অশালীন গালিও মেয়েটির দিকে ছুড়ে দিত। মেয়েটি প্রথম প্রথম ভ্রূক্ষেপ না করার মতো করে হেঁটে চলে যেত এবং কখনো এই বলে ধমক দিত যে, বার বার এমন হলে পরিণতি ভালো হবে না। কিন্তু এতে কোনো কাজ হল না। দুষ্ট মেয়েটি এতে মজা পেয়ে গেল এবং প্রতিপক্ষকে ভীত ও দুর্বল ননির পুতুল বলেই ধরে নিল। তার  জ্বালাতন আরো বেড়ে গেল এবং কথাবার্তা আরো মারমুখী হয়ে উঠল। মেয়েটি তখন ভাবল, নাহ, একে কিছু শিক্ষা দেওয়া দরকার।

এরপর একদিন সে শক্ত হয়ে দাড়াল এবং যেভাবে তার পিতা তাকে শিখিয়েছেন ঠিক সেভাবে শত্রুর পেটে বিরাশি সিক্কার একটা ঘুষি বসিয়ে দিল। দুষ্ট মেয়েটি প্রচন্ড ব্যাথায় বাঁকা হয়ে গেল আর সে বিজয়ীর বেশে মাথা উঁচু করে ঘরে ফিরে এল।

বলাবাহুল্য যে, সেদিন থেকে ওই দুই ভাই-বোনের শয়তানীরও সমাপ্তি ঘটে গেল।

সেদিনের স্কুল-ফেরত ছোট্ট মেয়েটি ছিলেন আমার মা। আর তার পিতা, যিনি তাকে আত্মরক্ষার কলাকৌশল শিখিয়েছিলেন এবং সে শিক্ষার যথার্থ প্রয়োগে আনন্দিত  হয়ে কন্যাকে বাহবা দিয়েছিলেন তিনি আমার নানাজী : আলী তানতাবী। তাঁর তরবিয়তের অন্যতম নীতি ছিল, দুর্বলের সঙ্গে ক্ষমার আচরণ কর আর যখন শক্তি প্রয়োগ ছাড়া অন্য কোনো পন্থা ফলপ্রসূ হয় না তখন শক্তি প্রয়োগ কর।

* * *

অনেক সময় আমাদের আত্মরক্ষার প্রয়োজন দেখা দেয়, বিশেষত ওইসব লোকদের সঙ্গে, যারা ভদ্রতা ও দুর্বলতার মধ্যে প্রভেদ করতে পারে না। এজন্য নানাজী অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে তার কন্যাদেরকে শেখিয়েছেন কীভাবে তারা প্রয়োজনের মুহূর্তে আত্মরক্ষা করবে। তিনি তাদেরকে শিখাতেন, কীভাবে শত্রুকে ধরতে হবে এবং শরীরের কোথায় আঘাত করতে হবে। কেননা এই কৌশলগুলো জানা না থাকলে শত্রুর বদলে আঘাতকারীই ব্যাথা পেয়ে যাবে বেশি।

তিনি নিজেও নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন। ব্যায়াম ও শরীরচর্চার যেসব উপকরণ তখন প্রচলিত ছিল তার অনেকগুলোই তিনি সংগ্রহ করেছিলেন। ...

তিনি হাঁটতেন সটান সোজা হয়ে এ্যাথলেটের মতো এবং আমাদেরকেও তা শিক্ষা দিতেন। কেননা সঠিক কায়দা কানূন অনুসরণ না করলে মানুষের শিরদাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

* * *

তিনি পুষ্টিকর খাবারের দিকে মনোযোগ দিতেন এবং আমাদেরকেও এ বিষয়ে সচেতন করতেন। কেননা, সবল ও কর্মক্ষম দেহের জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গোসত, ডিম ও দুধ আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় অপরিহার্য ছিল। নানাবাড়িতে আমার আম্মা ও খালাদের জন্য এক চরম বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা এই ছিল যে, তাদেরকে প্রতিদিন সকালে কাঁচা ডিম খেতে হত। আর খেতে হত বিভিন্ন ভিটামিন ট্যাবলেট ও অত্যন্ত কটুগন্ধী কটুস্বাদী কডলিভার ওয়েল। কন্যাদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য নানাজী এই নিয়মগুলো জারি করেছিলেন।

* * *

তিনি মনে করতেন, সুস্থতা রক্ষার জন্য ভালো ঘুম অপরিহার্য। নানাজী তার মেয়েদেরকে প্রতিদিন আট ঘন্টা ঘুমুতে বলতেন। কখনও যদি নির্ধারিত পরিমাণ থেকে তাদের ঘুম কম হত তাহলে তিনি তা পূর্ণ করতে বাধ্য করতেন, এমনকি এতে তাদের স্কুলে যাওয়া বিলম্বিত হলেও, কিংবা বাড়ির বা স্কুলের কোনো কাজে ব্যাঘাত ঘটলেও! তাঁর মেয়েরা যখন মা হয়েছেন, এমনকি যখন তারা নানী হতে চলেছেন তখনও ওই নিয়মে ব্যতিক্রম ঘটেনি। তাঁর কোনো মেয়ে যদি ক্লান্ত হয়ে পড়ত কিংবা তার মধ্যে তিনি অবসন্নতা লক্ষ করতেন তাহলে তাকে বিশ্রাম নিতে বলতেন। তার কোনো ওজর-আপত্তিই তিনি শুনতেন না যদিও তিনি এসেছেন নানাজীর সঙ্গেই সাক্ষাত করতে। তাঁদের কারো কারো এমনও হত যে, বেড়াতে এসে অধিকাংশ সময় ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন।

* * *

সুস্থতা ও কর্মক্ষমতা ছিল নানাজীর সব সময়ের মনোযোগের বিষয়। তিনি যেমন তরবিয়তের ক্ষেত্রে সঠিক বিশ্বাস, সুন্দর চরিত্র এবং মুক্ত বুদ্ধির বিকাশে মনোযোগী ছিলেন তেমনি সুস্বাস্থ্য ও দৈহিক কর্মক্ষমতাও তার মনোযোগের বিষয় ছিল।

তিনি ছিলেন একজন আদর্শ মুরববী, যার তরবিয়তের মধ্যে কোনো একটি দিক অন্য সকল দিকের চেয়ে প্রাধান্য পেয়ে যেত না।#

অনুবাদে : ইবনে নসীব

 

advertisement