Shaban-Ramadan 1437   ||   June-July 2015

ইলমের কাফেলা চলে,নূরের ঝর্ণা ঝরে

মাওলানা আবু সাবের আবদুল্লাহ

প্রায় ৩০ বছর আগের কথা।

দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ফেরার সময় মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন ও আসাতিযায়ে কেরামের পক্ষ হতে আমাকে প্রথম বুকে তুলে নিয়েছিল সাতক্ষীরা জেলার স্নেহময় মাটি। সেদিন অবুঝ শিশুর মতোই এ মাটির বুকে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলাম এবং এর উষ্ণ পরশে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম। বহুদিন পর একটি মাহফিল উপলক্ষে আজ (৭/৩/১৫) সেই মাটির স্পর্শ নিতে বের হয়েছি।

بِسْمِ اللهِ، تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ، لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ

 আল্লাহর নামে সফর শুরু, আল্লাহর উপর ভরসা। আল্লাহর তাওফীক ছাড়া কোনো নেক কাজ হয় না, বদকাজ থেকেও বাঁচা যায় না। -সুনানে তিরমিযী, হাদীস ৩৪২৬

আসমানের দিকে চোখ তুলে দোয়া পড়লাম, যেমনটা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়তেন,

اللَّهُمَّ إنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ أَوْ أُضَلَّ، أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ، أَوْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ، أَوْ أَجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ عليَّ

হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে নিজে গোমরাহ্ হওয়া বা অন্যের দ্বারা গোমরাহির শিকার হওয়া থেকে পানাহ চাই। তেমনি পদস্খলিত হওয়া কিংবা অন্যের দ্বারা পদস্খলনের শিকার হওয়া, অথবা কারো প্রতি জুলুম করা কিংবা কারো জুলুমের শিকার হওয়া বা নিজে বেওকুফি করা কিংবা কারো বেওকুফি দ্বারা পর্যদুস্ত হওয়া থেকে পানাহ চাই। -সুনানে আবু-দাউদ, হাদীস ৫০৯৪)

ঘর ছেড়ে বের হওয়া মানুষ যত অঘটনের সম্মুখীন হতে পারে, যত শংকায় তার মন দোদুল্যমান হতে পারে, এ দোয়ার মাধ্যমে তার সব থেকে আল্লাহর আশ্রয় নেওয়ার পদ্ধতি নবীজী আমাদের শিখিয়ে দিলেন। দুশ্চিন্তা দূর করে আকাশচুম্বী মনোবল হাসিলের পন্থা শিখিয়ে দিলেন। এর মাধ্যমে নবীজী আমাদেরকে সফরের মৌলিক আদবও শিখিয়ে দিলেন। আমরা যেন আল্লাহর উপর ভরসা করে বের হই। সব ধরনের গোমরাহী এবং বেশরা কথা-কাজ থেকে বেঁচে থাকি। নিজের উপর কোনো ক্ষতি ডেকে না আনি। কারো প্রতি সামান্য জুলুমও যেন না করি। এমনকি সামান্য মুর্খোচিত আচরণও যেন প্রকাশ না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখি। الأحوال المتواردة- (বিভিন্ন সময় ও অবস্থা)-এর দোয়াগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের আদব উল্লেখ থাকে। কী মানসিকতা নিয়ে কাজটি করতে হবে, আল্লাহর প্রতি কেমন আশা-ভরসা রাখতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে নবীজীর নসীহত বিদ্যমান থাকে। তাছাড়া নবীজীর শেখানো দোয়াগুলো হল আল্লাহ তাআলার নূর ও মারেফতের অশেষ ভাণ্ডার, অনিঃশেষ খাজানা, এই উম্মতের প্রতি নবীজীর শ্রেষ্ঠ অনিন্দ্য উপহার, মাহাসিনে ইসলামের (ইসলামের সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্বের) এক বিশাল দিগন্ত, নবুওতের অন্যতম দলিল ও মুজিযা।

নবীজী সফরের প্রাক্কালে আরও একটি দোয়া পাঠ করতেন-

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ فِي سَفَرِنَا هَذَا البِرَّ وَالتَقْوَى، وَمِنَ العَمَلِ مَا تَرْضَى، اللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا، وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ، اللَّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ وَالخَلِيفَةُ فِي الأَهْلِ، اللَّهُمَّ إنِّي أَعُوذ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ، وَكَآبَةِ المَنْظَرِ، وَسُوءِ المُنْقَلَبِ فِي المَالِ وَالأَهْلِ

হে আল্লাহ! তোমার কাছে প্রার্থনা, আমি যেন এ সফরে নেক কাজ করতে পারি। বদকাজ থেকে বাঁচতে পারি এবং তোমার সন্তুষজনক আমলে সফর কাজে লাগাতে পারি। হে আল্লাহ! আমার জন্য এ সফর সহজ করে দাও। পথের দূরত্ব ঘুঁচিয়ে দাও। হে আল্লাহ! সফরে তুমিই সাথী, রেখে আসা পরিবারে তুমিই প্রতিনিধি। হে আল্লাহ! আমি সফরের কষ্ট, দুঃখজনক দৃশ্য এবং ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের মাঝে বেদনাদায়ক পরিবর্তন থেকে তোমার কাছে পানাহ চাই। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪২   পৃথিবীর কোনো ধর্ম-দর্শনে এমন আর একটি দোয়া নেই, যা পাঠ করে তাদের কেউ কোনো মর্দে-মুমিনের মতো প্রশান্তি আর অভয় নিয়ে গন্তব্যের পথে পা বাড়াতে পারে। সুতরাং,

رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا

অর্থাৎ, আমরা খুশী আল্লাহ তাআলাকে রব হিসাবে পেয়ে, আমরা আনন্দিত ইসলামকে ধর্ম হিসাবে পেয়ে, আমরা পরম পরিতুষ্ট মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসাবে পেয়ে। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ২৯২৮১

বাস ছুটছে সাভার-নবীনগর হয়ে আরিচা ঘাটের দিকে। ভাবছি, সফরের দোয়া পাঠের সুযোগ কি হয়েছে অন্য যাত্রীদের? তারা কি হিসনুল-মুসলিম বা হিসনে হাসীন-এর সন্ধান পেয়েছে? আল্লাহই ভলো জানেন। বাস্তবতা হল, ঈমানী গায়রতহীন নেতৃবৃন্দ এবং ইসলামী মূল্যবোধ-বিরোধী স্বৈরাচারীরা আমাদের উপর সেক্যুলার শিক্ষানীতি চাপিয়ে দিয়েছে, যা আমাদের দেশ ও জাতিকে ঈমান ও ইসলামের সমুদয় ঐশ্বর্য থেকে বঞ্চিত করে দিচ্ছে। এমতাবস্থায় কর্তব্য হল, যার যার পরিবেশে নবীজীর দোয়া ও যিকিরের বিষয়ে বিশেষ যত্নবান হওয়া, পারিবারিক পরিবেশে মাসনূন দোয়া চর্চায় সচেষ্ট হওয়া। দোয়া মুখস্ত করা এবং দোয়া পাঠে অভ্যস্ত করার জন্য তালেবে ইলমদেরকে বিশেষ নেসাব ও নেজাম তৈরি করে দেওয়া।

এই দোয়াগুলোর নূর ও বরকত অপরিসীম। এগুলোর মাধ্যমে দ্রুত তাসাউফ ও তাযকিয়ার উদ্দেশ্য হাসিল হয়, আত্মশুদ্ধি ও তাআল্লুক মাআল্লাহ পয়দা হয়, সার্বক্ষণিক রুজু ইলাল্লাহ-এর দৌলত নসিব হয়। এগুলোতে যে তাওহীদ ও ইখলাস, ঈমান ও ইহসানের কথা আছে; আল্লাহর প্রতি বিনীত ও সমর্পিত হওয়ার যে শিক্ষা আছে, আল্লাহ তাআলার কুদরতি নেজামকে নিজের পক্ষে নেওয়ার যে রহস্য নিহিত আছে, তা-ই  একজন মুমিনের সবচে বড় সম্বল, সর্বোচ্চ হাতিয়ার। সুতরাং নবীজীর শেখানো দোয়া ও যিকিরের বিষয়ে আমাদের আরও বেশী সচেতন হতে হবে।

বেলা এগারটায় আমরা ফেরীতে উঠলাম,

سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ  وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُون

পবিত্র সেই মহান সত্তা, যিনি এ বাহন আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছেন। অন্যথায় আমরা একে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হতাম না। আর আমরা সবাই আমাদের সেই রবের কাছেই প্রত্যানীত হব। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৬০২ (সংক্ষেপিত)

জলযানটির নাম ফেরী শাহ-মাখদুম। ভেতরে কেমন একটা শিহরণ জেগে উঠল। এককালে ঈমানের মশাল হাতে আমাদের দেশে কত দাঈ ইলাল্লাহর আগমন হয়েছে। তারা কুফুর-শিরকের অন্ধকার দূর করে ঈমান ও ইসলামের আলোয় দেশ ও জাতিকে উদ্ভাসিত করেছেন। এতদঞ্চলের মানুষকে আর্য হিন্দু ও ব্রাহ্মণ্যবাদী সম্প্রদায়ের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছেন। আমাদেরকে ইসলামে দীক্ষিত করার মাধ্যমে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন এবং আমাদের মানবিক বিকাশের পথ উন্মুক্ত করেছেন। কিন্তু আমরা আজ অজ্ঞাত কুহকের পিছনে পড়ে আবার ইসলামপূর্ব নিম্নবর্ণের সংস্কৃতিতে ফিরে যেতে মরিয়া। আমাদের জাতিসত্তার বিনাশ সাধনে ওপারের তথাকথিত উচ্চবর্ণরা নদীহত্যা ও সীমান্তহত্যাসহ হেন অপকর্ম নেই যা করছে না। অথচ সেই হন্তারকদের বিকৃত ধর্ম-সংস্কৃতি, যা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে একসময় আমরা আলোর পথে এসেছি, আজ তাতেই আবার সম্মান, স্বকীয়তা ও দেশত্ববোধের গন্ধ পাচ্ছি! এতে আমাদের পরকাল তো বটেই, ইহকালও রসাতলে যাবে। আল্লাহ না করুন, আগের মতো এতদঞ্চলের মানুষ আবার অচ্ছুৎ অস্পৃশ্য ঘোষিত হবে। আমাদের উপর নেমে আসবে উচ্চবর্ণের নির্মম দাসত্ব । হযরত উমর রা. বলেছিলেন-

إِنَّا كُنَّا أَذَلَّ قَوْمٍ فَأَعَزَّنَا اللَّهُ بِالْإِسْلَامِ فَمَهْمَا نَطْلُبُ الْعِزَّةَ بِغَيْرِ مَا أَعَزَّنَا اللَّهُ بِهِ أَذَلَّنَا اللَّهُ

আমরা ছিলাম লাঞ্ছিত জাতি। অতঃপর ইসলামের মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাদের সম্মান দান করেছেন। সুতরাং আল্লাহ্ যার মাধ্যমে আমাদের সম্মান দান করেছেন, আমরা যদি তার বাইরে সম্মান খুঁজি, তবে পুনরায় তিনি আমাদের লাঞ্ছনার মাঝে ফিরিয়ে দেবেন। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২০৭)

ফেরী মাঝ নদীতে। সফেদ জলরাশিতে ভাসছে। বাতাস নেই। পদ্মাকে এখন যতটা শান্ত-সৌম্য দেখাচ্ছে, পদ্মার আসল রূপ কিন্তু তা নয়। পদ্মার আদি-আসল কীর্তিনাশা-রূপ দেখতে হলে আসতে হবে বর্ষায়। পদ্মা হল পাড়ভাঙ্গা কূলহারা নদী। নদীর পাড়ে বাড়ীঘর তেমন নেই। দূর থেকে একটা অপসৃয়মান সবুজ রেখাই শুধু চোখে পড়ে। মনটা কেমন হাহাকার  করে।

আমরা ফেরীর ছাদে যোহর পড়ে নিলাম। নদীর উদার বক্ষে চোখ মেলে দিলাম। বড় পরিবেশে গেলে মনটাও  বড় হয়ে যায়। কারো প্রতি ক্ষোভ থাকে না। সবার প্রতি অন্তর করুণাসিক্ত হয়ে ওঠে। মনে হয়, কী সব ছোটখাট জিনিস নিয়ে আমরা ঝগড়াঝাটি করি, অথচ আল্লাহর দুনিয়া কত বিশাল!

বছর কয়েক আগে স্পীড বোটে মাওয়াঘাট পার হয়েছিলাম। নদীর বুক চিরে দুর্দম গতিতে ছুটল বোট। ক্ষণেক্ষণে ঠাণ্ডা পানির উচ্ছল ছিটা। মনে পড়ে, মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেব সেদিন বেশ কয়েকটি শের আবৃত্তি করেছিলেন। আমিও শুনিয়েছি কয়েকটি...

اچھا ھے دل کے ساتھ رہے پاسبان   عقل

لیکن کبھی کبھی اسے تنہا بھی چھوڑ دے

 দিলের (আবেগের) সাথে থাকা চাই আকলের প্রহরা/ হাঁ, কখনো কখনো দিলকে একলা ছেড়ে দেওয়াও মন্দ নয়!

نہ شادی   داد    سامانے    نہ  غم آورد  نقا نے

بہ  پیش   ہمت   ما   ہرچہ  آمد   بود    مہمانے

দুনিয়ার সাজ-সরঞ্জাম আমার হৃদয়ে সুখ বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট নয়, এর কোনো ক্ষতিও আমার আত্মার প্রশান্তি বিনষ্টের কারণ নয়/ এই ফকিরের কাছে জগতের সুখ-দুঃখ যখন যা, সবই দুদিনের মেহমানের মতো। 

দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরী লাগল। বাস ছুটল মুক্ত বিহঙ্গের মতো। রাজবাড়ি পার হয়ে ফরিদপুর। স্মৃতিপটে ভেসে উঠল ফরিদপুর শহরের শামছুল উলূম খাবাশপুর মাদরাসা। আমার শিক্ষক জীবনের সূচনা যেখানে। দেওবন্দ থেকে বাড়িতে ফিরে সারা রমযান শুধু চোখের পানিতে ভাসলাম, আল্লাহ যেন তাঁর এ গোলামকে কোরআন-সুন্নাহর খেদমতে ব্যবহার করেন -এই দোয়ায় রমযান পার করলাম। ঈদের পর ছদর ছাহেব হুযুর (হযরত মাওলানা নূর হুসাইন কাছেমী দামাত বারাকাতুহুম)-এর খেদমতে হাযির হলাম। হুজুর বললেন, খাবাশপুর ফরিদপুর মাদরাসা থেকে সহীহ বোখারী পড়ানোর জন্য উস্তাদ চাওয়া হয়েছে। আমি তোমাকে পাঠাব সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মুহতামিম সাহেবকে সব কিছু বলে রেখেছি। আল্লাহর উপর ভরসা করে রওয়ানা হয়ে যাও!

আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। এই মহাভার আমি কিভাবে বহন করব! আমার জাহেরী-বাতেনী ক্ষুদ্রতা কিভাবে ঢাকব? ভয়ার্ত কণ্ঠে হুজুরকে কিছু বলার চেষ্টা করলাম। হুজুর বললেন, খোকা! তুমি নিজে যাচ্ছো না, আমি পাঠাচ্ছি। মেহনত কর, দোয়া কর, আল্লাহ মদদ করবেন। হুজুরের আস্থা ছিল, আবু সাবেরকে যেখানে পাঠাব সেখানেই যাবে। এজন্য কোনো মতামত জানতে চাননি। আল্লাহর শোকর, আমার মনেও কোনো দ্বিধা আসেনি।

হুজুর হলেন সাদা দিলের একজন আদর্শ মানুষ। এখলাসের মূর্ত প্রতীক। ছাত্র-গঠনে নিবেদিতপ্রাণ পিতৃপ্রতীম উস্তাদ। হেফাজতে দ্বীনের এক অত্যুজ্জ্বল মিনার। ফারাগাতের পরও ছাত্রদের ব্যাপারে যার ফিকির থাকে অব্যাহত। আল্লাহ পাক আমাদের উপর হুজুরের ছায়া দীর্ঘায়িত করুন। আমীন।

সবক শুরুর কিছুদিন পর হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ মেছবাহ রহিমাহুল্লাহ খাবাশপুর মাদরাসায় তাশরীফ আনেন। হুজুর আমাকে তিনটি নসীহত করেছিলেন। ১. বদগুমানি ও বদযবানি থেকে বেঁচে থাকবে। ২. আড্ডাবাজি ও গল্পগুজবে যোগ দিবে না। এতে জীবনের সর্বনাশ হয়ে যায়। ৩. খবরদার! এই বয়সে ছাত্রদের কাছ থেকে শারীরিক খেদমত নিবে না। সাধারণক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করবে।

বছরের মাঝামাঝি সময়ে দারুল উলূম দেওবন্দের শায়েখে ছানী হযরত মাওলানা আব্দুল হক্ব আযমী দামাত বারাকাতুহুম তাশরীফ আনেন। মসজিদে হযরতের বয়ান। মুহতামিম ছাহেব (হযরত মাওলানা আব্দুল কাদের রহ.) আমাকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে এবং শায়খ সম্পর্কে কিছু বলতে হুকুম করলেন।

আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে আমি দারুল উলূম দেওবন্দ ও আকাবিরে দেওবন্দ সম্পর্কে পনের/বিশ মিনিট উর্দূতে কথা বললাম। সবেমাত্র দেওবন্দ থেকে ফিরেছি। আকীদত-মুহাব্বতের সব স্মৃতি তখনো তাজা। সুতরাং ইশকের সায়রে অবগাহন করে সেদিন হয়ত অনেক কিছু বলেছি। তবে কী বলেছি কিছুই মনে নেই। হযরত শায়খে ছানী দামাত বারাকাতুহুম বার বার আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দোয়া করেছিলেন। বয়ান শেষে হযরতের সাথে বিশেষ মুলাকাতও করেছি। হযরত বললেন, আরবী শুরুহাত মুতালাআ করবে। দরদ ও শফকতের সাথে পড়াবে। সবকে যাওয়ার সময় মনে মনে দোয়া করবে, আয় আল্লাহ! আমাকে সহীহ্ পড়ানোর এবং হক আদায় করে পড়ানোর তাওফীক দাও।

খাবাশপুর মাদরাসার আরেকটি স্মৃতি বেশ মনে পড়ে। এক দিন আছরের পর মুহতামিম ছাহেব আমার কামরায় এলেন। মালিবাগ জামিয়ার প্রতি সুধারণা প্রকাশ করে বললেন, এখান থেকে মাশাআল্লাহ যোগ্য ও সচেতন আলেম তৈরি হচ্ছে। এরা ভাষা চর্চায়ও অগ্রসর। হুজুর আমার হাতে একটি চিঠি দিয়ে বললেন, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ফরিদপুর শাখার উদ্যোগে কারবালার ঘটনা ঃ প্রেক্ষিত ও শিক্ষা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। কয়েকজন অধ্যাপক প্রবন্ধ লিখবেন আপনিও লিখুন।

হুজুরের পিড়াপিড়ির কারণে দুরুদুরু বক্ষে কলম ধরলাম। হাতের কাছে কোনো মাওয়াদ ছিল না। উস্তাদগণের মুখে যা শুনেছি, পূর্বের সামান্য যা মুতালা ছিল তা-ই অবলম্বন করে একটা কিছু লিখে ফেললাম! সেমিনারে গিয়ে অনুভব করলাম, উপস্থিত শ্রোতা-প্রবন্ধকার সবাই সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদীর চিন্তাধারায় প্রভাবিত। সুতরাং আমার প্রবন্ধের কথাগুলো তাদের কাছে ব্যতিক্রম ও আনকোরা ঠেকল। একই সঙ্গে তারা চমৎকৃতও হলেন। একজন আলোচক বললেন, তরুণ এ মাওলানার লেখা ভারসাম্যপূর্ণ। ভাষা গাম্ভীর্যপূর্ণ। এতে গবেষণার বিস্তর খোরাক আছে। আল্লাহ আল্লাহ করে আমাদের ঘরানার মান রক্ষা হল। মুহতামিম ছাহেব অনেক খুশি হলেন। আলহামদুলিল্লাহ।

গাড়ী আসরের সময় যশোর হয়ে সাতক্ষীরা পৌঁছল। জামেয়া শারইয়্যা সাতক্ষীরায় আমাদের অবস্থান। এ-মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা জালালুদ্দীন। ঢাকার জামেয়া শারইয়্যাহ মালিবাগের ফাযেল। আমাদের প্রিয় ছাত্র। এখানকার দ্বীনী অঙ্গনে তার কর্মতৎপরতা, সুপরিচিতি এবং তার প্রতি জেলার আলেমদের মুহাব্বত ও আস্থা দেখে দিল থেকে দোয়া আসল।

কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে শহরের কয়েকটি মাদরাসা জেয়ারতে বের হলাম। মাদরাসাতুস্ সাহাবায় মাগরিবের নামায আদায় করলাম। মুহতামিম ছাহেব চট্টগ্রাম জিরি মাদরাসার ফাযেল। হযরত মুফতী নুরুল হক রহিমাহুল্লাহ-এর শাগরিদ। মুফতী ছাহেবকে আমি উলামাবাজার মাদরাসার সালানা জলসায় বহুবার দেখেছি। তাঁর সুমধুর কণ্ঠের ঈমান-আফরোয বয়ানের কথা আজও মনে পড়ে। আমি উপস্থিত আসাতেযায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে মুরব্বীদের ইহতেরাম ও শোকরগুজারির বিষয়ে কিছু কথা আরয করলাম।

এখান থেকে আমরা তাবলীগের মারকাজ মাদরাসাতুস সুফ্ফায় আসলাম। মুহতামিম ছাহেব দারুল উলূম দেওবন্দের ফাযেল। হিন্দুস্তানের বিভিন্ন দ্বীনী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। তার সঙ্গে দাওয়াতের কাজের সাথে সাথে মাদরাসার তালীমের মান বজায় রাখার গুরুত্ব আলোচনা হল। এরপর গেলাম সাতক্ষীরা দারুল উলূম। এটি শহরের বড় মাদরাসা। জালালাইন জামাআত পর্যন্ত দরস হয়। সবশেষে আলীপুর হাফেজিয়া মাদরাসায় সালাতুল ইশা আদায় করলাম। এখানে নূরানী মক্তব ও হেফজখানা জারী আছে। প্রতিষ্ঠাতা জনাব সেলিম সাহেবকে তার নেক নিয়ত ও কুরবানীর জন্য সদকায়ে জারিয়ার সুসংবাদ শুনালাম। সন্তানদেরও আলেম ও দ্বীনদার বানানোর আহ্বান জানালাম।

আমরা রাত দশটার দিকে মাওলানা জালালের মাদ্রাসায় চলে এলাম। বিলম্ব না করে শুয়ে পড়লাম-

 اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ وَوَجَّهتُ وَجْهِي إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ، لاَ مَلْجَأَ وَلاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلاَّ إِلَيْكَ، آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ، وَنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ

ইয়া আল্লাহ! আমার প্রাণ তোমার হাতে সঁপে দিলাম। আমার চেহারা তোমার অভিমুখী করে নিলাম। আমার যাবতীয় বিষয় তোমার নিকট সোপর্দ করলাম। আমার দেহ-পিঠ তোমার আশ্রয়ে রেখেদিলাম। তোমার কাছে এই সমর্পণ তোমার সন্তুষ্টির আশায় এবং কোনো বিচ্যুতি ঘটে যাবার আশংকায়। তোমার পাকড়াও থেকে বাঁচার জন্য তোমার কাছে ফিরে আসা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। আমি তোমার নাযিল করা কিতাব এবং তোমার প্রেরিত নবীর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করলাম। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৪৮৮)

ভোরের হাওয়া ছুটি ছুটি করছে। মিষ্টি আলোও ফুটে ফুটে অবস্থা। সবকিছু থেকে ঝরে পড়ছে সতেজতা।

أصبحنا وأصبح الملك لله والحمد لله، لا إله إلاَّ الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كلِّ شيء قدير، ربِّ أسألك خير ما في هذا اليوم وخير ما بعده، وأعوذ بك من شرِّ ما في هذا اليوم وشرِّ ما بعد، ربِّ أعوذ بك من الكسل وسوء الكبر، ربِّ أعوذ بك من عذاب في النار، وعذاب في القبر

আমরা প্রভাতে উপনীত হয়েছি এবং সমগ্র জগৎ আল্লাহর অধীনে প্রভাত লাভ করেছে। সুতরাং প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক, তার কোনো শরিক নেই। সকল রাজত্ব তাঁরই। সকল প্রশংসাও তাঁর। তিনি সবকিছুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান। হে আমার রব! আমি তোমার কাছে এই দিবস ও তার পরের যাবতীয় কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং তোমার কাছে এই রজনী ও তার পরের সমুদয় অকল্যাণ থেকে পানাহ চাচ্ছি। হে আমার প্রতিপালক! তোমার কাছে অলসতা ও বার্ধক্যের চরম কষ্ট থেকে আশ্রয় চাই। হে আমার পালনকর্তা! তোমার কাছে জাহান্নাম ও কবরের আযাব থেকে পানাহ চাই। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭২৩

আমরা সাত সকালে সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে বের হলাম। সাতক্ষীরা ছেড়ে খুলনা জেলার পাইকগাছা হয়ে আমাদের পথ। দ্বীনী কথাবার্তার মধ্য দিয়ে গাড়ী চলছে এগিয়ে। রাস্তার দুপাশে চিংড়ির ঘের। দৃষ্টিসীমার শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত। পোনা আসে চট্টগ্রাম থেকে। চাষ হয় এখানে। রপ্তানী হয় বিদেশে। সাতটার দিকে একটা ঘেরে যাত্রা বিরতি হলো। এশরাকের নামায পড়ে চিংড়ি-চাষীদের কিছু দ্বীনী কথা শোনালাম। চা যোগের পর আবার যাত্রা। এদিকের বাতাস নোনা নোনা। বহু দূর পাড়ি দিলে ছোট ছোট জেলে-পাড়া ও বাজার পড়ে। নতুবা শুধু ঘেরের পর ঘের। সাড়ে আটটার দিকে পাইকগাছা সানা বাড়ীর দরজায় গাড়ী থামল। সেলিম ভাইয়ের আত্মীয় বাড়ী। তারা নাশতার বিশাল আয়োজন করল। সবকিছুতে আন্তরিকতার ছাপ ছিল। বাড়ির মুরুব্বীকে বললাম, দুনিয়াতে আল্লাহ আপনাকে বিত্তবান বানিয়েছেন আখেরাতেও বানান। নিজে দীনের ওপর চলবেন। সন্তানদেরও দীনদার বানাবেন। তারা আপনার জন্য সদকায়ে জারিয়া হবে। নাতিকে আলেম বানাবেন। এটা মহা নেয়ামত। অবশ্য প্রত্যেকের জন্য আলেম হওয়া ফরয নয়, সম্ভবও নয়। কিন্তু দ্বীনদার হওয়া সবার জন্য ফরয। মুরুব্বী জিজ্ঞেস করলেন, আপনার দেশের বাড়ী কোথায়? বললাম, বৃহত্তর নোয়াখালীর ফেনী। মুরুব্বী আবেগাপ্লুত হয়ে বললেন, আমরা কিছুই জানতাম না। নোয়াখালীর হুজুররা আমাদেরকে, আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দ্বীন শিখিয়েছেন। এ অঞ্চলে যেটুকু দীনী পরিবেশ দেখছেন তা তাঁদেরই আন্তরিক মেহনতের ফসল।

শিবশা নদীর পাড়ে পাড়ে আমরা হাড্ডা ঘাটে পৌঁছলাম ১০ টার দিকে। নৌকা নিয়ে প্রবেশ করলাম সুন্দরবনে। একজন বন-কর্মকর্তা আমাদেরকে ঘুরে ঘুরে বনের কিছু অংশ দেখালেন। কি অপরূপ লতাগুল্ম ও বৃক্ষরাজি। সুন্দরী, কেওড়া গোলপাতা ইত্যাদির প্রাকৃতিক বন। গোলপাতা নামে গোল কিন্তু তা নারিকেলের ডগার মতো লম্বা লম্বা। গোলপাতার ছানি এ অঞ্চলে প্রসিদ্ধ। এই জায়গাটায় বানর হনুমান বেশী। এক ভাই কলা ছুড়ে মারতেই বনের ভেতর থেকে বানর ছুটে আসল। কেমন বুদ্ধিমানের মত কলাটা খেয়ে খোসাটা ফেলে দিল। আমরা এক ঘন্টার মতো নদ-নদী আর বনবনানীর অপার সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ-এই কথা সুন্দর বনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মাঝিভাই বললেন, এই নদীতে, ঠিক এইখানে আমি কুমির দেখেছি, দেখেছি বাঘ সাঁতার কাটতে।

বনকর্মকর্তার অনুমতি এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিয়ে বনের আরো গভীরে গেলে চিত্রল হরিণ, মায়া হরিণসহ অনেক প্রাণী দেখা যায়। আসলে সুন্দরবন ঘোরার জন্য দুই-তিন দিনও যথেষ্ট নয়। অথচ আমাদের হাতে সময় মাত্র এক ঘণ্টা। এরই মাঝে আমরা ফেরা শুরু করলাম। আল্লাহর সৃষ্টি কুশলতা দেখে দেখে চোখ শীতল করলাম।

شجر  مین  حجر مین    تيرے  رنگ بو ہے

جدھر ديكھتا ہون ادھر تو ہی تو ہے

আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টি তার পরিচয় বহন করে/ সুতরাং তুমি যেদিকে তাকাবে তাঁরই সন্ধান পাবে।

و فى كل شيئ له شاهد يدل على انه واحد

প্রতিটি বস্তু সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়। তিনি অনুপম অতুলনীয়।

বন থেকে ফেরার কিছু সময় আগে মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেব সাতক্ষীরা পৌঁছেন। মাহফিলে পুরো জেলার ১৫ শত আলেম ও তালেবে ইলম কাসেমপুর মদীনাতুল উলুম মাদরাসায় একত্রিত হয়েছে। মাগরিব পর্যন্ত উলামা ও তালাবার উদ্দেশ্যে পৃথক পৃথক খেতাব। বাদ মাগরিব আম বয়ান। বড় বরকতময় নূরানী পরিবেশ। আমি মসজিদে উলামায়ে কেরামের মজমায় গেলাম। বয়ানে আরয করলাম, আজকের এ মাদরাসা-মক্তব এবং দীনী পরিবেশ আমাদের আকাবির ও আসলাফের কুরবানী ও ইখলাসের ফসল। তাদের মতো দ্বীনী গুণাবলী অর্জন করলে আল্লাহ পাক আমাদের দ্বারাও তাঁর দ্বীনের খেদমত নিবেন। কোরআন-সুন্নাহর অনুসরণে আমরা যত বেশি আকাবির-আসলাফের সাথে জুড়ে থাকব, তত বেশি আমরা হিদায়াতের উপর অটল থাকতে পারব। অন্যথায় বিচ্যুতি আসবে। এই যে দারুল উলূম দেওবন্দের মকবুলিয়্যাত, সারা পৃথিবীতে যার অগণিত শাখা-প্রশাখা। আরও হচ্ছে, কেয়ামত পর্যন্ত হতে থাকবে ইনশাআল্লাহ, নিজের জান-মাল-মেধা-যোগ্যতা কুরবানি করে দূর পৃথিবীর কোন এক অজপাড়া গাঁয়ে কেউ মাদরাসা স্থাপন করছে আর বলছে, এটা দেওবন্দী মাদরাসা, আমার নিসবত আকাবিরে দেওবন্দের সাথে, এটা কিসের বরকত? আরবের আলেম শায়েখ মুহাম্মদ আওয়ামা দামাত বারাকাতুহুমকে বলতে শুনেছি-

الاخلاص يصنع العجائب (كالامام النانوتوى رحمه الله...)

ইখলাস দুনিয়া আখেরাতে আশ্চর্য সাফল্য বয়ে আনে। ঘটায় মহা বিপ্লব। যার নজীর ইমাম কাসেম নানুতবী। এই যে তাবলীগ জামাআতের নীরব বিপ্লব। এটা কিসের ফসল? হযরতজী মাওলানা ইলিয়াস রহ. এর ইখলাসের বরকত ছাড়া আর কী! ভুল বুঝবেন না। কাউকে কাউকে বলতে শোনা যায়, হযরত ইলিয়াস রহ. ছিলেন তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা। আসলে বিষয়টা এমন নয়, তাবলীগ তো ইসলামের শুরু থেকে সবযুগেই ছিল। অন্যথায় এদেশের মানুষ দ্বীন পেল কোথায়? হযরত শাহ জালাল ইয়ামানী রাহ. কোন কাজটা করেছেন? আসলে দাওয়াত-তাবলীগের অনেক পদ্ধতির মধ্য হতে হযরতজী হলেন একটি বিশেষ পদ্ধতির প্রবর্তক। এই যামানায় যার মাধ্যমে দাওয়াতের কাজ প্রাতিষ্ঠনিক শৃংখলা ও গতিশীলতা লাভ করেছে, যা একটি মুবাহ মুফীদ পদ্ধতি। এ পদ্ধতি গ্রহণ করা এবং একে উৎসাহিত করা ভালো। হারদুঈর হযরত রাহ. বলেছেন,

تبليغ مفيد تو ہے ليكن كافي نہيں

হাঁ, এ শেকেলকে মাকসাদ এর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এবং এর মাঝে দ্বীনের তাবলীগকে সীমাবদ্ধ করা অন্যায়। এভাবেই বিদআত সৃষ্টি হয়, দ্বীনের মাঝে বিকৃতি আসে। তেমনি আরো বড় অন্যায় হলো, দাওয়াত-তাবলীগের মাঝে দ্বীন ও নুসরতে দ্বীনকে সীমাবদ্ধ মনে করা। কেননা তালীম, তাবলীগ, দাওয়াত, আমর-বিল মারুফ, নাহি আনিল মুনকার, জিহাদ, সিয়াসত ইত্যাদির সবই দ্বীনের কাজ এবং নুসরতে দ্বীনের অংশ। সুতরাং তাবলীগ হল নুসরতে দ্বীনের একটিমাত্র অংশ, সবকিছু নয়। আর মুমিনের মাকসাদে হায়াত হল দ্বীন ও ঈমান এবং ইসলাম ও ইহসান। আল্লাহর ইবাদত, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ইতাআত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনীত শরীয়ত ও সুন্নতের অনুসরণ। এই মাকসাদে হায়াতের উপর মুমিন সর্বপ্রথম নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করে এবং অন্যকে দাওয়াত দেয়। এই ধারণা একেবারেই বাতিল যে, দ্বীনের চেয়ে দ্বীনের দাওয়াত বড় এবং এ কথাও ঠিক নয় যে, দাওয়াত মাকসাদ আর ইলম জরুরত; বরং দ্বীনী ইলম অর্জন করা মাকাসিদে দ্বীনের শামিল। (আবদুল মালেক) আসলে দ্বীনের অন্যান্য কাজের মতো তাবলীগের এ শেকেলের সাথেও কোরআন-সুন্নাহর ইলম এবং আহলে ইলমের নির্দেশনা ও সুহবতের সমন্বয় হওয়া জরুরি। অন্যথায় আল্লাহ না করুন, তাবলীগের এ-পদ্ধতি বিপথগামিতার শিকার হতে বাধ্য। আল্লাহ পাক দ্বীনের এ মোবারক মেহনতকে হেফাজত করুন। আমীন।

আরয করছিলাম ইখলাসের কথা। ইখলাসের সাথে জরুরি হল ইখতেসাস অর্জন। ইখতেসাস মানে শুধু تخصص فى الفقه   বা  تخصص فى الحديث  পড়া নয়। আমি যে কিতাব পড়াব, যে বিষয় পাঠদান করব, সেটা বসীরাতের সাথে করব। তাহকীকের সাথে করব। আমি মক্তবের শিক্ষক। আমার অঙ্গনে আমি দক্ষ এবং এ বিষয়ে অন্যদেরও জন্য আদর্শ হব। হযরত আলী মিয়া নদভী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ইখলাস ও ইখতিসাস দুনিয়া-আখেরাতের যাবতীয় মর্যাদা ও কল্যাণের চাবিকাঠি।

মাওলানা আব্দুল মালেক ছাহেব ওলামাদের বয়ানে তাফাক্কুহ ফিদ দ্বীনের গুরুত্ব ও ব্যাপকতা আলোচনা করেন। সুরা তওবার ১২২ নং আয়াত-

وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنْفِرُوا كَافَّةً فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ

তেলাওয়াত করে বলেন, কেউ কেউ মনে করেন, আয়াতটি শুধু জিহাদের ফযীলত সম্পর্কে, ইলমের ফযীলত সম্পর্কে নয়। এ ধারণা ভুল। আসলে নাকেস ও সত্হী মুতালা, খণ্ডিত ও একতরফা অধ্যয়ন ক্ষতিকর। এতে তাআসসুব পয়দা হয়। যারা একতরফা মুতালা করে তারা আদাবুল ইখতিলাফ রক্ষা করতে পারে না। তাফাক্কুহ ফিদ দ্বীন, দীনের গভীর ও সঠিক বুঝ হাসিলের জন্য পূর্ণাঙ্গ মুতালা আবশ্যক। মুতালাকে মুয়াফেকে হাল, অন্য ভাষায় আপটুডেট করাও জরুরি। পূর্বে কিতাব ছাপা ছিল না। এখন ছেপে এসেছে। সে আলোকে পূর্বের মুতালা নবায়ন করে নিতে হয়। আরো বড় কথা হল, আহলে তাফাক্কুহ-এর সুদীর্ঘ সুহবতও গ্রহণ করতে হয়। আজীবন তাঁদের থেকে ইসতেফাদা জারি রাখতে হয়।

মাওলানা আরোও বললেন, তাফাক্কুহ ফিদ-দ্বীনের অনেক শাখা আছে।

১. ঈমান ও আক্বীদা সংক্রান্ত সঠিক জ্ঞান ও বুঝ। কী কী বিষয় ঈমানের জন্য জরুরী, ঈমানের দাবী কী, কুফর কী, কোন কুফরী কোন আক্বীদার খেলাফ তা জানা। যাকে আমরা বলি,

الفقه الاكبر  فقه الايمان  علم العقيدة الاسلامية

২. আখলাকে হাসানা এবং আখলাকে রজীলা সংক্রান্ত বিধি-বিধান জানা। আত্মার রোগ-ব্যধি সম্পর্কে অবহিত হওয়া। আমরা যাকে বলি,

فقه السلوك و الاحسان    বা علم التزكية و فقه أحوال القلوب

৩. ইলমুল ফিকহ অর্থাৎ, ইবাদত বন্দেগীর মাসআলা-মাসায়েল জানা। লেনদেন সংক্রান্ত বিধি-বিধান জানা। এরও বহু স্তর আছে। যাকে আমরা বলি,

فقه العبادات এবং  فقه المعاملات

৪. فقه الأدب الاسلامى খানা-পিনার আদব, বোল-চালের আদব। দেখা-সাক্ষাতের আদব। ঘরের আদব, মসজিদের আদব ইত্যাদি। আদব শুধু সুন্নাত-মুস্তাহাব নয়। কোন কোন আদব ফরয-ওয়াজিবও হয়। আদব জীবনের সকল অঙ্গনে বিস্তৃত।

৫. الفقه العام للدين দ্বীনের উমুমী সমঝ। যেমন ইতেদাল, জীবনের সর্বক্ষেত্রে পরিমিতিবোধ ও ভারসাম্য রক্ষা করা।

শেষে মাওলানা বলেন, আমাদের মসজিদ যেন সুন্নত ওয়ালা  মসজিদ হয়। শায়খুল হাদীস আল্লামা আজীজুল হক রাহিমাহুল্লাহ বলতেন, যে মসজিদের সাথে তালীমের ব্যবস্থা আছে, সেটি সুন্নতী মসজিদ। তালীম মাসালেহে মসজিদের অন্তর্ভুক্ত কি না আলোচনা করা হয়। এটা বুঝে আসে না। তালীম তো মাকাসেদে মসজিদের অন্তর্ভুক্ত!

তালেবে ইলমদের মজলিসে মাওলানা বলেছিলেন, তালেবে ইলম হতে পারা আল্লাহর বড় ইহসান। এটা কত বড় নেয়ামত তা বোঝার জন্যও অনেক ইলম প্রয়োজন। এ নেয়ামতের শোকর আদায় করা আমাদের কর্তব্য। শোকর আদায় না করলে নেয়ামত চলে যায় বা বরকতহীন হয়ে যায়। ইলমের শোকর আদায় হয় তিনভাবে।

১. যবানে এ নেয়ামতের কথা স্মরণ করে বলা- আলহামদুলিল্লাহ। এবং সকাল-সন্ধ্যা এই দোয়া পড়া,

اللهُمَّ مَا أَصْبَحَ بِي مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ، فَمِنْكَ وَحْدَكَ لَا شَرِيكَ لَكَ، فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ

ইয়া আল্লাহ! এই সকালে আমার যা কিছু প্রাপ্তি, কিংবা যে কোনো মাখলুকের, তা একমাত্র আপনার দান। আপনার কোনো শরীক নেই। সুতরাং যত হামদ-প্রশংসা সব আপনার জন্যই, আপনার জন্যই সকল শোকর ও কৃতজ্ঞতা। -সুনানে কুবরা নাসাঈ, হাদীস ৯৭৫০

সন্ধ্যায়ও একই দুআ। শুধু أَصْبَحَ-এর স্থলে হবে أَمْسَى

২. দিলের শোকর। এ অনুভূতি রাখা যে, আমার কোনো যোগ্যতা ছিল না। আল্লাহ মেহেরবানি করে তালেবে ইলম বানিয়েছেন। মেধাবী ছাত্রদের মাঝে উজব আসে। নিজের কাছে নিজেকে বড় মনে হয়। শোকরের অর্থই হল, আমি নেয়ামতের যোগ্য নই, আল্লাহ দান করেছেন। তিনি ইচ্ছা করলে যে কোন সময় তা ছিনিয়ে নিতে পারেন। অন্তরে এ মনোভাব জাগরুক থাকলে উজব ও কিবরের শিকড়ই কেটে যাবে। অন্যের গুণ ও নিজের দোষ দেখলে এ রোগ পয়দা হয় না।

সুতরাং নিজের ব্যপারে সুধারণা রাখবে না এবং অন্যের ব্যাপারে কুধারণা করবে না।

৩. আমল আখলাক ও সীরাতের মাধ্যমে শোকর আদায় করা। এর অর্থ হল, নেয়ামতকে আল্লাহর হুকুমমতো ব্যবহার করা। যে নেয়ামত যে কাজের জন্য আল্লাহ দিয়েছেন, সে কাজে তা ব্যয় করা। নেয়ামতের হক আদায় করা।

ইলমের নেয়ামতের হক অনেক। যেমন, ইনহেমাক ও দিল-জমঈ, একাগ্রতা ও নিমগ্নতার সাথে মেহনত করা। ইলমের মাঝে ডুবে থাকা। তাহকীক ছাড়া কিছু না বলা, না লেখা। আমল ও তাক্বওয়ার জিন্দেগী গঠন করা ইত্যাদি।

মাগরিবের পর আমরা আবার মাওলানা জালালের মাদরাসায় চলে এলাম। মাওলানাকে বললাম, আপনি তো মোবাইলকে البغيض النافع -আখ্যায়িত করেছেন। অর্থাৎ কাজের প্রয়োজনে মোবাইল যদিও হাতে নিতে হয়, কিন্তু এ যন্ত্র আমাদের কী ক্ষতি করে ফেলছে তা কারো অজানা নয়। সুতরাং এ যন্ত্র উপকারী আবার অপছন্দনীয়- البغيض النافعকিন্তু মাওলানা! আমার কাছে এটা আরো ঘৃণ্য, তালাকের মতো ابغض الحلال -ঘৃণ্যতম হালাল। মাওলানা বললেন, হাঁ, এটাই যথার্থ তাবীর। আলহামদুলিল্লাহ! আমার এ সফর সার্থক। 

একফাঁকে মাওলানাকে শুনালাম, হযরতুল উস্তাদ মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম দরসে সূরা তাওবার ১২২ নং আয়াত পড়ানোর সময় বলেছিলেন, বুঝলে খোকারা, নেসাব দাওরা হাদীস নয়। নেসাব তাফাক্কুহ ফিদ-দ্বীন। আজ আপনার বয়ানে হুজুরের এ বাণীর তাফসীর শুনে ধন্য হলাম। মাওলানা অভিভূত হলেন। আল্লাহর শোকর আদায় করলেন।

আমাদের দেশে প্রচলিত ওয়াজ মাহফিল আকাবিরের রেখে যাওয়া আমানত। উম্মতের ইসলাহ ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এর উপকারিতাও সুদূর প্রসারী। যেমন-

ক) মাহফিলকে কেন্দ্র করে এলাকার মুসলমানদের মাঝে দীনী জাগরণ সৃষ্টি হয়।

খ) মানুষ দীনমুখী, মাদরাসামুখী ও আলেমমুখী হয়।

গ) দীনের নিসবতে ঘরে ঘরে খুশির আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।

ঘ) হকের ইজহার, লা এবং শক্তি প্রদর্শিত হয়। বাতিল অবদমিত হয়।

ঙ) জান-মাল আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

চ) পাপী-তাপী মানুষ তাওবা ইস্তেগফার করে। ঈমানী ও আমলী জিন্দেগীর প্রেরণা লাভ করে।

ছ) দ্বীনে ইসলাম এবং দীনের ধারক-বাহক উলামায়ে কেরামের প্রতি আযমত, মুহাব্বত এবং আস্থা বাড়ে।

জ) আলেমগণ আম মুসলমানদের কাছাকাছি যাওয়ার এবং তাদের হাল জানার সুযোগ পান।

ঝ) তালীম ও তাবলীগের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরী হয়।

ঞ) আলেম-উলামার নেতৃত্বে মুসলিম জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়।

ট) জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ তুলে ধরা সম্ভব হয়।

এ-সমস্ত মাহফিল-কেন্দ্রিক ত্রুটি-বিচ্যুতিও কম নয়। সে সবের ইসলাহ করে ইখলাস, মুজাহাদা ও শৃংখলার সাথে এ মাহফিলগুলো অব্যাহত রাখা গেলে উম্মতের আরো অনেক ফায়দা হবে।

আমরা রাত সাড়ে দশটায় আবার মাহফিলস্থলে গেলাম। মাওলানা দোয়ার গুরুত্ব বয়ান করলেন। বললেন, দোয়া-ই ইবাদত, ইবাদতের সার নির্যাস। সব বড় বড় ইবাদতে দোয়া আছে। নামায শুরু হয় দোয়া দিয়ে । শেষও হয় দোয়ার মাধ্যমে। রোযা এবং হজ্বেও দোয়া আছে। যাকাতেরও দোয়া আছে। যাকাতদাতা মনে মনে দোয়া করবে, আল্লাহ আমার দান কবুল কর। গ্রহীতা দোয়া করবে, আল্লাহ দাতার মালকে পবিত্র কর। দোয়াকে আনুষ্ঠানিকতার মাঝে সীমাবদ্ধ করা উচিৎ নয়। শুধু বিপদে পড়লে দোয়া করা কিংবা অন্যের কাছে দোয়া চাওয়া, নিজে দোয়া না করা দোয়ার হাকীকত না জানার লক্ষণ। দোয়া বরং সর্বহালে করা চাই।

দোয়া কবুল হওয়ার অনেক শর্ত আছে। যেমন রিযিক হালাল হওয়া, ইয়াকীন রেখে মনোযোগের সাথে দোয়া করা। আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিলমুনকার ত্যাগ না করা ইত্যাদি।

মাওলানার দোয়ার মাধ্যমে মাহফিল শেষ হল। আমি মাওলানাকে কিছুক্ষণ মঞ্চে অবস্থান করতে বললাম। কারণ, মঞ্চ থেকে নামলেই তিনি উত্তাল ঢেউয়ের মুখে পড়বেন। মাওলানা বললেন, কামাল থাকার পরও আপনারা নিজেদের কিভাবে লুকিয়ে রাখেন, কামাল না থাকার পরও যাদের শোহরত হয়ে গেছে, তারা কিভাবে আত্মরক্ষা করবে, আমাকে সেই তদবিরটা শিখিয়ে দিন। বললাম, মুফতী শফী রহিমাহুল্লাহকে  হযরতজী ইলিয়াস রাহ. জিজ্ঞাসা করেছিলেন, দাওয়াতের কাজ বাড়ছে, কিন্তু ভয় হয়, এটা ইসতিদরাজ (আল্লাহর পক্ষ থেকে ঢিল দেওয়া) কি না? মুফতী ছাহেব বললেন, এটা ইসতেদরাজ নয় মক্ববুলিয়্যাত। হযরতজী বললেন, আপনার কাছে কি দলীল আছে? বললেন, হাঁ আছে। আল্লাহ যাদেরকে ঢিল দেন, তাদের মনে এ ভয় আসেই না। আপনার অন্তরে এ ভয় আসাই দলীল, এটা ইসতেদরাজ নয় মক্ববুলিয়্যাত।

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمَنُ وُدًّا

যারা ঈমান এনেছে ও নেক আমল করেছে নিশ্চয়ই দয়াময় আল্লাহ তাদের জন্য (মাখলুকের অন্তরে) ভালোবাসা সৃষ্টি করবেন। -সূরা মারইয়াম: ৯৬

সকালে মারকাজ মাদরাসায় একটি নতুন ভবনের ভিত্তি-প্রস্তর স্থাপন এবং দোয়া ও নাশতার পর আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। যশোর থেকে বিমানে সহী-সালামতে ঢাকায় পৌঁছলাম। আলহামদুলিল্লাহ।

  لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، آيِبُونَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ سَاجِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُونَ

আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই। সমগ্র জগতের রাজত্ব তাঁর, প্রশংসাও তাঁর। আমরা সফর থেকে ফিরছি তওবাকারী বান্দা রূপে। আমাদের রবের সামনে সিজদাকারী ও প্রশংসাকারী রূপে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৯৭ 

 

advertisement