আমাদের কৃতিত্ব নেই : সবকিছু আল্লাহ তাআলার দান
আলকাউসার মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা’র মাসিক মুখপত্র। ২০০৫-এর ফেব্রম্নয়ারিতে এর পথচলা শুরু। এই ফেব্রুয়ারিতে একাদশ বছরে পড়তে যাচ্ছে। এর মধ্যে মান ও বৈশিষ্ট্য ধরে রাখার পাশাপাশি প্রচারসংখ্যায় পৌঁছেছে প্রায় ৩ গুণ। প্রতিকূলতার মধ্যে বাংলাদেশে ইসলামী সাময়িকীর অস্তিত্ব ও এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি বড় ইতিহাস। নিঃসন্দেহে এটি আল্লাহ তাআলার অশেষ দান ও অনুগ্রহ। ১০ বছর আগে মুরববীদের সেণহছায়ায় এ পদক্ষেপের সূচনা থেকেই দায়িত্ব, ধৈর্য ও সাফল্য নিয়ে পত্রিকাটির সম্পাদকের হাল যিনি ধরে আছেন সেই সফল সম্পাদক মুফতী আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহর মুখোমুখি হয়েছিলাম গত ১৯ জানুয়ারি বিকালে। তিনি একই সঙ্গে আলকাউসারের মূল প্রতিষ্ঠান-মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা’র মুহতারাম রঈস ও মারকাযের আততাখাসসুস ফিল ফিকহের মুশরিফ। সাধারণভাবে ফিকহে ইসলামী এবং বিশেষভাবে আধুনিক প্রসঙ্গ ও অর্থনৈতিক বিষয়াবলির ফিকহের ক্ষেত্রে স্বীকৃত একজন বিশেষজ্ঞ। পঞ্চাশোর্ধ এই যুবক-প্রাণ আলেমেদ্বীন মাসিক আলকাউসার প্রকাশের সূচনা ও বর্তমান এবং আলকাউসারের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য, লক্ষ্য-মিশন এবং গণমাধ্যম ও প্রকাশনা বিষয়ে মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা’র ভবিষ্যত-উদ্যোগ ও ভাবনার কথা দিল খুলে তুলে ধরেছেন।
দশ বছর পূর্ণ হয়ে এই ফেব্রুয়ারি মাসে মাসিক আলকাউসার একাদশ বছরে পড়তে যাচ্ছে। এ পথযাত্রায় সম্পাদক হিসেবে আপনার অনুভূতি কী?
ষষ আল্লাহ তাআলার দরবারে আমাদের সার বা-সুজুদ। অসংখ্য-অগণিত শুকরিয়া আমাদের। আলকাউসারের যাত্রা যখন শুরু হয়েছিল তখন বিভিন্ন সুধীজন আমাদেরকে বিভিন্ন রকম পরামর্শ দিয়েছিলেন। ইতিবাচক-নেতিবাচক কথা বলেছিলেন। অনেকেই নেতিবাচক পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, পত্রিকা শুরু করা সহজ, টিকিয়ে রাখা কঠিন। প্রত্যেকেই তাদের অভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতা থেকেই এসব পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমরা তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ। আজ আলকাউসার যে আশা-জাগরুক জায়গায় এসেছে, আমরা মনে করি এখানে আমাদের কোনো কৃতিত্ব নেই। এর সব কিছুই আল্লাহ তাআলার দান। হয়তো আল্লাহ তাআলা এই মেহনতকে কবুল করেছেন তাই এ পথচলাকে দিন দিন সহজ ও সম্ভাবনাময় করে দিয়েছেন।
এ পর্যায়ে আমি হযরত মাওলানা আবদুল হাই পাহাড়পুরী ছাহেবের কথা স্মরণ করছি যিনি প্রথম থেকেই দুআ ও পরামর্শ দিয়ে আমাদের উৎসাহিত করে আসছেন। আর মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেবের কথা না বললেই নয়। আসলে তিনিই হলেন আলকাউসারের প্রাণ। তার ইলমী তত্ত্বাবধান ও ঐকান্তিক মেহনত পত্রিকাটিকে নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত করতে সাহায্য করে থাকে। পত্রিকাটির বিশুদ্ধতা ঠিক করার পিছনে তিনি যতটুকু সময় ব্যয় করেন সে সময় দিয়ে তিনি কয়েকটি গবেষণামূলক কিতাব লিখে ফেলতে পারতেন এতদিনে। আমি আরো শুকরিয়া আদায় করছি মাওলানা যোবায়ের হোসাইন, মাওলানা মুতীউর রহমান, মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ, মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ, মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ ও মাওলানা ফজলুল বারীসহ বর্তমান ও সাবেক সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আলকাউসার বর্তমান জায়গায় আসতে পেরেছে।
ষ আলেমসমাজ ও তালিবে ইলমদের মাঝে এই পত্রিকাটির গ্রহণযোগ্যতা তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
ষষ আমরা আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করি। একই সঙ্গে শুকরিয়া আদায় করি আলকাউসারের সব পর্যায়ের পাঠক-পাঠিকা, লেখক, পরামর্শদাতা, শুভাকা্ঙ্ক্ষী, এজেন্ট-গ্রাহক ও বিজ্ঞাপনদাতার। আমরা মনে বড় আস্থা অনুভব করি যখন দেখি দ্বীনের মূল বাহক উলামায়ে কেরাম এই পত্রিকাটি পড়েন, পড়তে বলেন, পরামর্শ দেন এবং সহযোগিতা করেন। বিশেষজ্ঞ মহলের পছন্দ ও সহযোগিতার মধ্যে থাকার মানে হচ্ছে, আলকাউসার দ্বীনী দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক পথেই আছে। এক্ষেত্রে কোনো নড়চড় হলে তারা সঙ্গে থাকবেন না। বাকি, আলকাউসারকে তারা কেন পছন্দ করেন, এর মূল কারণটি তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমরা যেটা মনে করি সেটা হচ্ছে, প্রত্যেক পত্রিকা বা প্রকাশনার একটি মূল চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য থাকে। আমরাও এমন একটি বৈশিষ্ট্য রক্ষা করি। সেটি হল, পত্রিকার লেখাগুলোর আলোচ্য বিষয়ের তথ্য, চিন্তা ও প্রমাণের বিশুদ্ধতা বজায় রাখা এবং সিরাতে মুসত্মাকিমে অটল থেকে মুসলমানদের সামনে দ্বীনী বিষয়কে তুলে ধরার চেষ্টা করা। আমরা ইচ্ছা করে বা সচেতনভাবে এ বৈশিষ্ট্যটির ব্যাপারে কোনো আপস বা কমতি করি না। এই তাহকীকী মেযাজ বা প্রমাণভিত্তিক উপস্থাপনার প্রবণতাটাই হয়তো তারা পছন্দ করছেন। ইনশাআল্লাহ নীতিগত কারণেই আমরা এ বৈশিষ্ট্যটি ধরে রাখার চেষ্টা করব।
ষ কী উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে আলকাউসার প্রকাশের সূচনা হয়েছিল, সে উদ্দেশ্য কতটা পূরণ হয়েছে বলে মনে করেন?
ষষ আলকাউসারের মূল প্রতিষ্ঠান-মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা। এই মারকাযুদ দাওয়াহ শুরু হয়েছে কিছু বিশেষ উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে। এসবের মধ্যে রয়েছে বাংলাভাষী মুসলমানদের মাঝে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক বিশুদ্ধ ইসলামী শিক্ষা ও তথ্যের প্রসার, দ্বীনের অনুকূল চেতনা নির্মাণ, উলামা-তলাবাদের মাঝে ইলমের গভীরে প্রবেশের স্পৃহা জাগ্রত করা, ইলমী বিষয়ে পাঠাভ্যাস বাড়িয়ে তোলা এবং দ্বীনী বিষয়ে আগত জিজ্ঞাসাগুলোর যথাযথ দলিলভিত্তিক সহীহ সমাধান পেশ করা। এসব উদ্দেশ্যের সব কটিই একটি বিদ্যাপিঠের ক্যাম্পাস থেকে বাসত্মবায়ন করা কঠিন। এ জন্য শুরু-যুগেই আমরা অনুভব করেছি যে কিছু নিয়মিত সাময়িকী প্রকাশ ও প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সে উদ্দেশ্যে মারকায প্রতিষ্ঠার প্রথম বছরেই কিছু চেষ্টাও করা হয়েছিল। কিন্তু নিবন্ধন পেতে ও অন্যান্য প্রস্ত্ততি নিতে দেরি হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় ২০০৫ সালে ‘আলকাউসার’ নামে মাসিক একটি ম্যাগাজিনের নিবন্ধন পেয়েছি। তখন থেকেই পুরোদমে কাজ শুরু করা হয়। যেসব উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে আলকাউসারের যাত্রা শুরু হয়েছিল, আলহামদুলিল্লাহ তার সিংহভাগই পুরো হচ্ছে। এটি আসলে একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাকাযা ও চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিয়ে যেতে থাকা আলকাউসারের কাজ। উলামায়ে কেরাম, শিক্ষিত মুসলিম সমাজ ও সাধারণ পর্যায়ের পাঠকদের যে ধরনের সুচিমিত্মত প্রতিক্রিয়া ও স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া আমরা লক্ষ্য করেছি এবং করি তা থেকে অনুমিত হয় যে, আলকাউসার তার উদ্দেশ্য পূরণের দিকেই অগ্রসরমান। বিশেষত এই পথচলা উদ্দেশ্য পূরণের ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ববোধ ও উৎসাহ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থাটি আলকাউসারের পূর্ণ লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যেতে আমাদেরকে যথেষ্ট প্রেরণা যোগাচ্ছে। তবে একথাও সত্য যে, করার মতো অনেক কিছুই বাকি রয়ে গেছে। কিছু উযর, কিছু পরিবেশ-পরিস্থিতিগত প্রতিকূলতা, উপায়-উপকরণের কমতি এবং নিজেদের যোগ্যতার ঘাটতির কারণে অনেক কিছুই এখনো বাস্তবায়ন করা যায়নি। আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করি এবং সবার কাছে দুআ চাই যেন আলকাউসার সেসব অপূরণকৃত উদ্দেশ্যগুলোও পূরণ করতে পারে।
ষ এই দশবছর সময়ে বিশেষভাবে আলকাউসারের অবলম্বনকৃত কোনো নীতি বা কর্মপন্থার কোনো সাফল্য কি আপনার চোখে পড়েছে?
ষষ বিষয়টা আসলে ওইভাবে আমরা লক্ষ্য করি না। তারপরও কয়েকটি বিষয় চোখে পড়লে খুব ভালো লাগে। যেমন : আলকাউসারে আমরা কওমী মাদরাসার ছাত্রদের ইলমী ফায়েদার জন্য ‘শিক্ষার্থীদের পাতা’ ও ‘শিক্ষা পরামর্শ’ বিভাগ চালু করেছি। আলহামদুলিল্লাহ এটা এখন আরো কেউ কেউ করছেন। একইভাবে আমরা প্রশ্নোত্তরে মূল কিতাবের হাওয়ালা বা সূত্র উলেস্নখ করার ধারা শুরু করেছি। আলহামদুলিল্লাহ এটাও এখন অনেকেই করছেন। এ দুটি বিষয়ই সহীহ দ্বীনী ইলম চর্চার বিকাশের পক্ষে অনেক বেশি অনুকূল। এর একটি সুপ্রভাব হচ্ছে, বহু মৌলিক কিতাব এখন ছাত্রদের ঘরে ঘরে, হাতে হাতে। হাজার হাজার তালিবে ইলম মূল শরাহ মুতালাআ করছেন। তাফসীর, হাদীস, ফিকহ তথা উলূমে ইসলামিয়ার মৌলিক আরবী কিতাবগুলো পড়ে দেখছেন। মাকতাবাগুলো বাহির থেকে কিতাব আনছে-ব্যবস্থা করছে। এগুলো দেখলে খুশি লাগে। আলহামদুলিল্লাহ।
ষ বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও প্রকাশনা ক্ষেত্রে যে ব্যাপক ইসলামবিরোধী প্রবণতা সক্রিয়। সেখানে একটি মাসিক ম্যাগাজিনের মাধ্যমে কতটুকু কাজ করা যায় বলে আপনি মনে করেন?
ষষ এটিতো পরিষ্কার ব্যাপার যে, একটি মাসিক ম্যাগাজিন কিছুতেই একটি দৈনিক পত্রিকার চাহিদা পূরণ করে না, করতে পারে না। দৈনিক-সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোর ক্ষেত্রে সংবাদ থাকে মুখ্য। চিন্তা, বিশ্লেষণ ও গঠনমূলক বিষয় থাকে গৌণ। মাসিক বা পাক্ষিক ম্যাগাজিন ঠিক এর উল্টো। অর্থাৎ সেগুলোতে ফিকরী ও তা‘মীরী তথা বিশ্লেষণমূলক ও গঠনমূলক লেখাই মুখ্য থাকে। বলতে গেলে এ দুটি বিষয়ের পাঠক ভিন্ন বা ভিন্ন দুই উদ্দেশ্যে পাঠক এগুলো পড়ে থাকে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মাসিক ম্যাগাজিনের মাধ্যমে দৈনিক কিংবা সাপ্তাহিকীর চাহিদা পূরণ না হলেও দ্বিতীয় উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকরী হয়ে থাকে। দৈনিক-সাপ্তাহিকগুলো ঘন ঘন বের হওয়ার কারণে মাসিক ম্যাগাজিনের তুলনায় সেগুলো পাঠকের বেশি কাছাকাছি থাকে। এজন্য একটি মাসিক ম্যাগাজিন দিয়ে দৈনিক পত্রিকার সব রকম প্রভাবের পুরোপুরি মোকাবেলা করা যায় না। সেকারণেই পাক্ষিক-সাপ্তাহিকও থাকা দরকার। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্য করার মতো একটি ব্যাপার হল, দৈনিক-সাপ্তাহিকগুলো প্রতিনিয়ত তথ্য বা বিশ্লেষণ দিয়ে দ্বীনবিরোধী চেতনা ও বোধ নির্মাণে যে ভূমিকা রাখছে, যে খারাপ প্রভাবটা ফেলছে, মাসের শেষে অন্তত সেটার একটা সুস্থ জবাব বা দ্বীনী সমাধান মাসিক ম্যাগাজিনের মাধ্যমে পেশ করার চেষ্টা করা যাচ্ছে। এতে পুরোপুরি বিচ্যুত ও ভুল চিন্তার সয়লাবের মধ্যেও ভালো ও ইতিবাচক একটি মত-চিন্তা বা বিশ্লেষণ পাঠকরা পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। অনেক সময় সরাসরি পাঠকরাও সাম্প্রতিক বিভিন্ন নেতিবাচক ইস্যু ও প্রচারণার জবাবে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে আলকাউসারে কিছু লিখতে অনুরোধ করে থাকেন। সুচিন্তা ও সুস্থতার পথে থাকতে আগ্রহী পাঠকরা এভাবে মাসের শেষে হলেও স্বাস্থ্যকর কিছু খোরাক সংগ্রহ করতে পারেন। অবশ্য ঈমানী চেতনা থেকেই আমরা বিশ্বাস করি, বাতিলের শক্তি, সংখ্যা ও আয়োজন বাহ্যিকভাবে যত বড়ই দেখা যাক, আর হক্বের শক্তি যত ছোটই মনে হোক, বাতিলের নৈতিক শক্তির দুর্বলতার কারণে শেষ পর্যায়ে হক্বই প্রবল হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন- (তরজমা) এমন কত ছোট দলই না রয়েছে, যারা আল্লাহর হুকুমে বড় দলের উপর জয়যুক্ত হয়েছে! আর আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন, যারা সবরের পরিচয় দেয়। -সূরা বাকারা ২ : ২৪৯
ষ আলকাউসারের টার্গেট পাঠক কারা? কাদের উদ্দেশ্যে পত্রিকাটি প্রস্ত্তত ও প্রকাশ করা হয়- এ সম্পর্কে কিছু বলবেন?
ষষ আলকাউসার যেহেতু বাংলা ভাষার একটি মাসিক পত্রিকা বা সাময়িকী, তাই সকল বাংলা-ভাষাভাষী পাঠক-পাঠিকাই আমাদের টার্গেট। আলকাউসারের মূল বৈশিষ্ট্য তাহকীকী-ফিকরী-দাওয়াতী-র অন্যতম হচ্ছে দাওয়াহ। দাওয়াহ মানে হল, সত্য-ন্যায় ও কল্যাণের পথে আহবান করা। আমরা চাই সেই আহবানকে সকল বাংলাভাষাভাষীর মাঝে ছড়িয়ে দিতে। সে হিসেবে আমরা কোনো দল বা গোষ্ঠীর বিপক্ষে নই। আমরা যাকে যে কথাটি বলি সেটা দলমত নির্বিশেষে দ্বীনী খায়েরখাহি বা কল্যাণকামিতা হিসেবেই বলি।
ষ কখনো কখনো দেখা যায় চলমান বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত লেখায় কোনো কোনো মহল বা ব্যক্তির বিপক্ষে কিছু বক্তব্য চলে আসে। অনেকেই জানতে চান, এটা কি এড়ানো যায় না?
ষষ কোনো কোনো সময় চলমান বিভিন্ন বিষয়ে দ্বীনী দৃষ্টিভঙ্গি মাসিক আলকাউসার তুলে ধরে থাকে। আমাদের বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে বিষয়টিকে বিচ্ছিন্ন মনে হতে পারে। কারণ দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইসলামী খিলাফত না থাকার কারণে এসব বিষয়ে কথা বলাকেও দ্বীনের বাইরের অংশ মনে করা হতে পারে। কিন্তু আসলে সেসব কিছুই দ্বীনের অংশ। যেমন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি-হ্রাস, আইন-শৃঙ্ক্ষলার উন্নতি-অবনতি, বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা, নাগরিকদের মাঝে দ্বন্দ্ব-গোলযোগ, রাষ্ট্রের বাজেট-কর এবং বিচার ও শাসিত্ম ইত্যাদি। এসব বিষয়েও মাঝে মাঝে ইসলামী আদর্শ ও তালীমের আঙ্গিকে আলকাউসার পথনির্দেশ দিয়ে থাকে। এ জাতীয় পরিবেশনার প্রেক্ষাপটে কারো কারো মনে হতে পারে আমরা কোনো মহলের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছি। আসলে কারো পক্ষে-বিপক্ষে যাওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়। এটা আলকাউসারের সম্পাদকীয় নীতির বিরোধী। সুতরাং সবাই আমাদের আপন। আমরা চাই আমাদের কল্যাণকামিতার আহবানের সুফল সব মহলের মাঝেই ফুটে উঠুক। কখনো কোনো ভ্রান্তি নিরসনে আমাদের বক্তব্য বা বিশ্লেষণ কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠি বা দলের বিরুদ্ধে গেলেও ওই ব্যক্তির বিরোধিতা আমাদের উদ্দেশ্য থাকে না। বরং তার বা তাদের ওই ভুল চিমত্মা বা পদক্ষেপ সম্পর্কে তাদেরকে সাধারণ পাঠকদের সতর্ক করা কিংবা প্রভাবগ্রহণ থেকে রক্ষা করা আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য থাকে। একজনের ভুল যেন শতজনকে প্রভাবিত করতে না পারে সে চেষ্টাটাই কেবল করা হয়ে থাকে। কাউকে আহত করা বা দোষযুক্ত করা বা ঘায়েল করা আমাদের উদ্দেশ্য থাকে না।
ষ কখনো কখনো দেখা যায় আলকাউসারে বিজ্ঞাপনের পরিমাণ বেশি। অপরদিকে অনেক সময় বিজ্ঞাপনদাতাদের বিজ্ঞাপন আপনারা গ্রহণ করেন না। আবার অনেক সময় ছাপানো বিজ্ঞাপনের ভাষায় নির্ভর করে মানুষ ধোকা খেয়েছে বলে অভিযোগ আসে বলেও শোনা যায়। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে বলে অভিযোগও এসেছে। তো বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে আলকাউসারের নীতি একটু খুলে বলবেন কি?
ষষ সাধারণভাবে স্বীকৃত বিষয় হচ্ছে, বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্ত্তর দায়-দায়িত্ব বিজ্ঞাপনদাতার। পত্রিকা কর্তৃপক্ষের পক্ষে মাঠপর্যায়ে সবকিছু যাচাই করা সম্ভব হয় না। তবুও আলকাউসার শুরু থেকেই এই নীতি আঁকড়ে আছে যে, ইসলাম পরিপন্থী বা শরীয়াসম্মত না- এমন কোনো বিজ্ঞাপন আলকাউসারে গ্রহণই করা হয় না। এ ছাড়াও যেসব ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পাঠকের মনে প্রশ্ন বা সন্দেহ জাগার মতো বিষয় থাকে কিংবা যেসব ক্ষেত্রে সাধারণভাবে ধোকা কিংবা দায়িত্বহীনতার অভিযোগ উঠে থাকে যেমন : হাউজিং, মাল্টিপারপাস সোসাইটি অথবা হজ্বসেবার এজেন্সি- এসবের বিজ্ঞাপনও আলকাউসারে ছাপা হয় না। যদিও হজ্ব এবং হাউজিং ব্যবসায়ও অনেক ভালো মানুষ এবং প্রতিষ্ঠানও জড়িত আছেন। তবুও সবকিছুর শুদ্ধাশুদ্ধি যাচাই করা সম্ভব হয় না বিধায় এ জাতীয় বিজ্ঞাপনও এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। আলকাউসারে সাধারণত মাকতাবা/ লাইব্রেরী বা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠিানের বিজ্ঞাপন ছাপা হয়। এক্ষেত্রে শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য কাজ করে না। বরং পাঠক-সাধারণ যেন দ্বীনী বইপত্রের জগতের সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন সেটাও আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য থাকে। এছাড়া শিক্ষাবর্ষ শেষে বহু মাদরাসা ভর্তি-বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। শুধু দ্বীনী হামিয়্যাত থেকেই সেসব বিজ্ঞাপন ছাপাতে হয়। সব প্রতিষ্ঠানের বর্ণিত তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় ওইসব বিজ্ঞাপনও ছাপার আগ্রহ না থাকা সত্ত্বেও একটি দ্বীনী প্রতিষ্ঠানকে ফিরিয়ে না দেয়ার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিজ্ঞাপনটি ছাপতে হয়। তবে এ প্রসঙ্গে একটি কথা উলেস্নখ করা দরকার যে, বিশেষ সময়গুলোতে ভিতরের পাতাগুলোতে নির্ধারিত ৩/৪ পৃষ্ঠা অতিক্রম করে আরো ৩/৪ পৃষ্ঠা বা তার বেশি বিজ্ঞাপন ছাপা হলে আমরা পত্রিকার কলেবর ৪/৮ পৃষ্ঠা বৃদ্ধি করে থাকি। বিজ্ঞাপনের বর্ধিত আয়তনের কারণে যেন পাঠ-উপাদান কমে না যায় আমরা সে বিষয়ে কঠোর থাকার চেষ্টা করি। পাঠকসমাজের কাছে আমাদের অনুরোধ, বিজ্ঞাপনের তথ্য ও বিষয়বস্তু আপনারা নিজেরা দয়া করে যাচাই করে নেবেন। আলকাউসারে বিজ্ঞাপন ছাপা হওয়াটাকে তথ্যের সত্যতার সনদ মনে করবেন না এবং বিজ্ঞাপনের তথ্যের ব্যাপারে যাচাই না করে (আলকাউসারে ছাপা হয়েছে বলে) নির্ভর করবেন না।
ষ দেশের দ্বীনসংশিস্নষ্ট অনেক রাজনৈতিক বিষয়ে প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে আলকাউসারে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা হয় না। কেউ কেউ জানতে চায়, এটা কী কারণে?
ষষ আলকাউসার একটি দাওয়াতী পত্রিকা। দাওয়াহর সাধারণ মেযাজ বা রুচি হল সেটি সর্বজনীন হওয়া। রাজনীতি যদিও দ্বীনেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, কিন্তু খিলাফত ব্যবস্থা বিলুপ্তির পর বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলো অনেকটা বাস্তবতার চাপেই পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ধারা অনুসরণ করে চলে। আর পশ্চিমা ধারার রাজনৈতিক তত্ত্ব মানুষকে বিভক্ত করে। একদল আরেক দলের বিরুদ্ধে লেগে যাওয়া এবং হানাহানি করাটাই দলগুলোর নীতি হয়ে যায়। তাই সাধারণভাবেই কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণেও কোনো দলের পক্ষে অবস্থান নিলে বাইরের লোকেরা সেটা গ্রহণ করতে চায় না এবং কোনো দলের বিপক্ষে গেলে তার পক্ষের লোকেরা সেটা মানতে চায় না। এ কারণেই দলীয় কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে বহু চিমত্মাভাবনা করতে হয় যে, এতে আলকাউসারের দাওয়াতী কাজে বিঘ্নতার সৃষ্টি হয় কি না। তবে সচেতন পাঠকরা লক্ষ্য করলে দেখবেন, জাতীয় ইসলামী ইস্যুগুলোতে কোনো দল বা গোষ্ঠী বা ব্যক্তি নেতিবাচক কোনো পদক্ষেপ নিলে আমরা যথাসময়ে পাঠকসমাজের সামনে অরাজনৈতিক ভঙ্গিতেই দরকারি কথাটা বলার চেষ্টা করেছি। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সংবিধান থেকে ইসলামী ইস্যুগুলো সরিয়ে দেয়া, শিক্ষা ও নারীনীতিতে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারার সংযোজন কিংবা ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-বিরোধী পদক্ষেপ ও বক্তব্য সামনে এলে আলকাউসার যথাসময়ে জাতিকে ওই বিষয়ে দিকনির্দেশনা দানের চেষ্টা করেছে। সুধীজনেরা সেগুলোকে ইতিবাচক চোখে দেখেছেন ও প্রশংসা করেছেন।
ষ সামনে আলকাউসার নিয়ে কিংবা পত্রিকা ও প্রকাশনা নিয়ে আপনাদের আর কী কী পরিকল্পনা রয়েছে?
ষষ আলকাউসারের পাঠকের আওতা যত বাড়ছে পত্রিকার চাহিদাও বাড়ছে। আমরা অনুভব করছি সব চাহিদা পূরণ করতে না পারলেও কিছু কিছু বিষয় আরো দেয়া দরকার। পত্রিকার মূল চরিত্র অক্ষুণ্ণ রেখে বহু সংখ্যক পাঠকের বিচিত্র চাওয়ার মাঝে সমম্বয় করে আরো সমৃদ্ধ ও পাঠকবান্ধব করার চেষ্টা ইনশাআল্লাহ আমরা করে যাব। এতে করে আলকাউসারের পৃষ্ঠাসংখ্যা বাড়াতে হয় কি না বা বাড়ানো যায় কি না সেটাও আমরা ভাবছি। ভবিষ্যতে আমরা যা ভাবছি এবং চেষ্টা করছি তার একটি হচ্ছে, আলকাউসার ও মারকাযকেন্দ্রিক একটি প্রকাশনা বিভাগ চালু করা এবং সেখান থেকে বই-পুস্তক প্রকাশ করা। ইতিমধ্যে সে চেষ্টা অনেক দূর এগিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। আশা করি আর কিছু দিনের মধ্যেই আমাদের ভবিষ্যত-প্রকাশনা থেকে বেশ কিছু বই প্রকাশ হবে ইনশাআল্লাহ। দ্বিতীয়ত পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে আরো কী কী উদ্যোগ আমাদের প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী গ্রহণ করা যায়- আমরা সেটা নিয়েও ভাবছি। যেমন আরো কিছু শ্রেণিভিত্তিক সাময়িকী : উদাহরণস্বরূপ শিশুদের জন্য, নারীদের জন্য, কর্মজীবীদের জন্য, শ্রমিকদের জন্য, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য কিংবা দ্বীনী-তাহক্বীক্বী অথবা সাহিত্য বিষয়ে স্বতন্ত্র পত্রিকা করা যায় কি না আমরা চিন্তাভাবনা করছি। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক ইস্যু ও চলমান পরিস্থিতির উপর সার্বক্ষণিক রাহনুমায়ীর জন্য আরো কোনো সাপ্তাহিক কিংবা পাক্ষিক করা যায় কি না সেটা নিয়েও কথাবার্তা বলছি। ইনশাআল্লাহ শুভাকাঙ্ক্ষী সব মহলের দুআ থাকলে এবং আল্লাহ তাআলা মনযুর করলে সেসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথ তৈরি হবে। ষ
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : শরীফ মুহাম্মদ