Rabiul Auwal 1436   ||   January 2015

প্রসঙ্গ : মাদক ও সিগারেট ‘বুদ্ধিজীবী’র প্রতি আমেরিকার এক ডাক্তারের চিঠি

আনসার আববাসী

আমেরিকার শহর ওকলাহোমা সিটির ড. বেলাল হুসাইন আমাকে একটি চিঠি লিখেছেন। তাতে তিনি বলেন,
পাকিস্তানের জনৈক বুদ্ধিজীবীর সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ আমাকে কলম ধরতে বাধ্য করেছে। তার বক্তব্য হল,
বুদ্ধিজীবী সাহেব দেশের সকল বিষয়ের জন্য নিজের মনমতো পানীয় সহজলভ্য না হওয়াকে দায়ী মনে করেন।

তিনি আরো বলেন, গত কয়েক বছর আগে রাজনীতি থেকে লাঞ্ছনাকর অপসারণের পর থেকে তিনি ধূমপান নিয়ে নিজের খোলামেলা বক্তব্য দ্বারা যেভাবে ভ্রান্ত জাতিকে উৎসাহিত করে চলেছেন এবং অতি সাম্প্রতিক কলামের শুরুতে ধূমপানের ক্ষতি তুলে ধরার পর কিছুটা সামনে গিয়ে যেভাবে মদপানের ফযিলত বর্ণনা করেছেন তা থেকে সহজেই অনুমান হয় যে, আমাদের বড় বড় বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধির গোড়ায় উম্মুল খাবাইস কতটা প্রভাব বিস্তার করে আছে।

সে ও তার ঘরানার লোকেরা যেহেতু আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের কথা বোঝে না, তাই আমি তাদের জন্য তাদের একমাত্র আইডল আমেরিকার গবেষণা ও শিক্ষার আলোকে কয়েকটি বাস্তবতা তুলে ধরছি। যাতে স্পষ্ট হবে যে, সিগারেট মানুষের দেহ ও মনে কতটা বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে থাকে।

কোনো অনুমানের ভিত্তিতে নয়; বরং আমেরিকার National Institute of Alcohol-এর গবেষণা অনুযায়ী শুধু আমেরিকাতেই  প্রতি বছর প্রায় ১৭ মিলিয়ন অর্থাৎ ১ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ Alcohol use disorder-এর শিকার হয়ে থাকে। যার অর্থ হল, এই বিপুল পরিমাণ রোগ-ব্যাধি ও ক্যান্সার মানুষের মস্তিষ্ক থেকে হার্ট এমনকি মূত্রথলি পর্যন্ত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাছাড়া এই ধূমপান অতি দ্রুত তরুণদের যৌনশক্তি নষ্ট করে দেয়। আর তরুণ বলতে উদ্দেশ্য ১২ থেকে ১৭ বছরের নিষ্পাপ ছুটন্ত প্রাণ। প্রতি বছর এই বয়সের ৮ লক্ষ ২৫ হাজার তরুণ-তরুণী ঘাতক ব্যাধির শিকার হয়ে থাকে। যার মধ্যে নারী স্বাধীনতার ধ্বজাধারী গোষ্ঠীর সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ অর্ধেকের বেশিই হচ্ছে অসহায় তরুণী। এছাড়া এসবের পেছনে মার্কিন প্রশাসনকে বার্ষিক ২২৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়। এতকিছুর পরও এই ঘাতক ধূমপান প্রতি বছর ৮৮ হাজার জীবন্ত প্রাণকে গ্রাস করে।

ব্যক্তিগতভাবে আমেরিকায় কয়েকটি করুণ দৃশ্য অধমেরও চোখে পড়েছে, যা কিশোর-তরুণদের শিক্ষা গ্রহণের উপকরণ হতে পারে। আমাদের কাছে তারা এমন সময় আসে বা আনা হয় যখন তারা থাকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

কয়েক বছর থেকে জনৈক মহিলার ঘটনাটি আমাকে এখনো উদ্বিগ্ন করে রেখেছে। ২৭ বছরের এক যুবতীকে মাতাল অবস্থায় তার বয়ফ্রেন্ড যখন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছে দিয়ে পালিয়ে গেল তখন তার অবস্থা ছিল খুবই সঙ্কটাপন্ন। যেহেতু সে তখন স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসেও সক্ষম ছিল না তাই তাকে আইসিইউ-এর ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। চিকিৎসা চলাকালে বেশ কয়েকবার তাকে আইসিইউ থেকে স্থানান্তর করা হলেও অবস্থার অবনতির কারণে পুনরায় আইসিইউতে রাখা হয়েছিল।

তার শিয়রে ছিল শুধু তার হতভাগিনী মা। যে কি না অন্য একটি শহর থেকে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এসেছে। একনাগাড়ে এক মাসেরও বেশি সময় মেয়ের কাছে থাকার কারণে তার চাকরিটিও চলে যায়। তিনি এই ভেবে খুব চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন ছিলেন যে, স্কুলে সব সময় স্ট্রেইট এ পাওয়া তার মেয়ে কীভাবে এই অভিশাপের শিকার হল। অথচ তার মা ও অভিভাবকরা কিছুই বুঝতে পারল না। তার বাবা কোথায়? আমার এমন প্রশ্নের উত্তরে মহিলার কথায় আমি নির্বাক হয়ে গেলাম। জানতে পারলাম সে নিজেই একজন ডাক্তার। এখন দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে অন্য একটি শহরে থাকে। মেয়েটি যতদিন আমাদের হাসপাতালে ছিল ততদিন সে একটিবারের জন্যও আসেনি এমনকি ফোনেও আমাদের কাছে কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি। উপরন্তু মেয়েটির কোনো চিকিৎসাই যখন আর বাকি থাকল না, তাছাড়া আমাদের শহরে তার আপনজনও কেউ ছিল না, তাই আমরা যখন তাকে তার পিতার শহরের একটি নার্সিংহোমে স্থানান্তর করার চেষ্টা করলাম তখন সে তাতেও অস্বীকৃতি জানিয়ে দেয়। ফলে আমাদের হাসপাতালেই মেয়েটি করুণভাবে মৃত্যুবরণ করে। 

তো আমাদের জন্মভূমিতে যদি এই বুদ্ধিজীবী এই অভিশাপের অবাধ বাণিজ্য চায় তবে তার প্রতি আমার পরামর্শ, এর পরিবর্তে আপনি আপনার পছন্দের কোনো বড় দেশে চলে যান এবং মন ভরে পান করুন। এ দেশ ও তার  জনগণকে তাদের মত করে থাকতে দিন।

আর পরিশেষে নিবেদন এই যে, আমেরিকায় ধূমপানের বিরুদ্ধে Alcohol Anonymous নামে একটি প্রোগ্রাম চালু আছে। আর আমাদের দেশেও অসৌজন্যতার এই তুফানকে নিস্তেজ করার জন্য এমন প্রতিরোধ এখন সময়ের দাবি। বর্তমানে আমেরিকার প্রতিটি শহরের চার্চগুলোতে প্রতি মাসে সভা-সমাবেশ হয়ে থাকে। সেখানে ধূমপানে অভ্যস্ত লোকেরা আসে এবং তাদের মাঝে শুধু এবং শুধু স্রষ্টার দয়ার আশা জাগ্রত করা হয় এবং তাদের মধ্যে আত্মিক বোধ জাগ্রত করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে তারা এই উম্মুল খাবাইস ত্যাগ করতে সমর্থ হচ্ছে। মানবতা যেন স্রষ্টার আঁচলেই তার শেষ আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য হল!  l

(লেখক: এডিটর, দ্যা নিউ এইজ

ভাষান্তর : আব্দুল্লাহ ফাহাদ)

 

advertisement