Safar 1436   ||   December 2014

একটি ভিত্তিহীন ঘটনা : হাসান বসরীর পানির উপর জায়নামায বিছিয়ে নামায পড়া এবং রাবেয়া বসরীর শূন্যের উপর জায়নামায বিছিয়ে নামায পড়া।

রাবেয়া বসরী (হবে রাবেয়া বসরিয়্যাহ্) দ্বিতীয় হিজরী শতকের একজন প্রসিদ্ধ আবেদা নারী ছিলেন। ইমাম যাহাবী রাহ.-এর সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ইবনে খাল্লিকান রাহ.-এর অফাইয়াতুল আ‘ইয়ান, শা‘রানী রাহ.-এর আততাবাকাতুল কুবরাসহ আরো বিভিন্ন জীবনীগ্রন্থে তাঁর জীবনী সন্নিবেশিত হয়েছে। তাঁর বিষয়ে সমাজে বিভিন্ন বানোয়াট কিচ্ছা-কাহিনী প্রচলিত আছে।

তাঁর ও প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হাসান বসরী রাহ.-এর বিষয়ে একটি কাহিনী অনেককে বলতে শোনা যায়-

            একবার হাসান বসরী রাহ. পানির উপর জায়নামায বিছিয়ে নামায পড়লেন। রাবেয়া বসরিয়্যাহ্ একথা জানতে পারলেন এবং তিনি শূন্যের উপর জায়নামায বিছিয়ে নামায পড়লেন। হাসান বসরী রাহ. যখন একথা জানতে পারলেন তখন বললেন, রাবেয়ার মাকাম আমার অনেক উপরে।

            এ কিচ্ছার কোনোই ভিত্তি নেই। এটি একেবারেই কল্পনাপ্রসূত একটি কাহিনী, বাস্তবতার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। নির্ভরযোগ্য কোনো ইতিহাসগ্রন্থ বা রাবেয়া বসরিয়্যাহ-এর উপর রচিত কোনো নির্ভরযোগ্য জীবনীগ্রন্থে এ ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় না।

            তাঁরা কত বড় বুযুর্গ ছিলেন একথা বুঝাতেই এজাতীয় কিচ্ছা-কাহিনীর অবতারণা করা হয়।

            তাঁরা অনেক বড় মাপের বুযুর্গ ছিলেন, একথা স্বীকৃত। তাঁরা যুহ্দ ও তাকওয়ায়, দুনিয়াবিমুখতা ও খোদাভীতিতে অনেক অগ্রগামী ছিলেন। কিন্তু এধরনের কাহিনী দিয়ে তাদের বুযুর্গি প্রমাণ করার কী দরকার হয়ে পড়ল? আর এসবের সাথে বুযুর্গিরই বা কী সম্পর্ক?

            আর আল্লাহর ওলীদের থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারামত প্রকাশিত হয় একথা স্বীকৃত। সাথে সাথে একথাও স্বীকৃত যে, কারামতের সাথে বুযুর্গির কোনো সম্পর্ক নেই। বুযুর্গি ও আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়ার মাপকাঠি হল, তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় ও সুন্নত অনুযায়ী জীবন যাপন করা।

            আর বানোয়াট এঘটনায় আরেকটি দিক দেখা যাচ্ছে। তা হল, একজন পানির উপর জায়নামায বিছিয়ে নামায পড়ছেন তা শুনে অপরজন শূন্যের উপর জায়নামায বিছিয়ে নামায পড়ছেন; যেন বুযুর্গির পাল্লা চলছে! আল্লাহওয়ালারা নিজেদেরকে আড়াল করতে চান। আর তাঁদের মত অনুসরণীয় বুযুর্গরা যেন নিজেদের বুযুর্গির প্রদর্শন করছেন। নাউযুবিল্লাহ। এটা তাদের ব্যাপারে মস্তবড় অপবাদও বটে!

            আরেকটি বিষয় হল, হাসান বসরী রাহ. ইন্তেকাল করেছেন ১১০ হিজরীতে। আর রাবেয়া বসরীর জন্মই হয়েছে ৯৯ অথবা ১০০ হিজরীতে। অর্থাৎ হাসান বসরী রাহ.-এর ইন্তেকালের সময় রাবেয়া বসরিয়্যাহ রাহ.-এর বয়স ছিল সর্বোচ্চ ১১/১২ বছর। সিয়ারু আ‘লামিন নুবালায় (৮/২৪১) যাহাবী রাহ. বলেন, রাবেয়া বসরীয়্যাহ ১৮০ হিজরীতে ইন্তিকাল করেছেন। কথিত আছে, তিনি আশি বছর হায়াত পেয়েছেন। সুতরাং এ বিষয়টিও এঘটনার অসারতা প্রমাণ করে।

 

advertisement