Shawal 1430   ||   October 2009

শংকা ও ঝুঁকি : অনুতাপ ও আত্মসমর্পণই আমাদের পথ

Waris Rabbani

ভূমিকম্পের ঘটনা ঘন ঘন ঘটে চলেছে। ঢাকা থেকে চারশ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে ৬ রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প হওয়ায় ঢাকায় তার মৃদু ছাপ পড়েছিল গত ৪ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে। এ মাত্রার ভূমিকম্প যদি চারশ কিলোমিটারের ভেতরে সংঘটিত হয় তাহলে ঢাকায় ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি অনেক তীব্র রূপে প্রকাশ পেতে পারে বলে আশংকা করছেন ভূ তত্ত্ববিদ ও আবহাওয়াবিদরা। তারা জানিয়েছেন গত জুন থেকে আগস্ট পর্যন- তিন মাসে ৫২টি ছোট বড় ভূকম্পন রেকর্ড করা হয়েছে। আর চারশ কিলোমিটারের দূরত্বের মধ্যে এ রকম আটটি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। তারা আরও বলেছেন, এই অঞ্চলে বড় একটি ভূমিকম্প আঘাত হানা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এটি কবে হবে সেটা আগে থেকে বলা যাবে না। উপুর্যপরি মৃদু ও মাঝারি ভূমিকম্পের ফলে প্রবল ভূমিকম্পের এক সর্বগ্রাসী ঝুঁকি ও আতংকের মধ্যে পড়ে গেছে এখন দেশের নগরাঞ্চলগুলো। কিন' পূর্ব প্রস'তি কিংবা আত্মরক্ষার কোনো ব্যবস'া নেই। এত প্রযুক্তি, এত উন্নয়ন ও অগ্রগতির হইচই শুনে কান ঝালাপালা হয়ে গেলেও আমরা এখন বুঝতে পারছি যে, মানুষ হিসেবে আমরা কত অসহায়, কত দুর্বল ও অকিঞ্চিৎকর। ভূমিকম্পের কথা উঠলেই আসে সতর্কতা অবলম্বন ও ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রমের প্রস'তি গ্রহণের উপদেশ। অথচ গত আগস্ট মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে ভূমিকম্পের পূর্ব প্রস'তি’ শীর্ষক কর্মশালার এক জরিপে বলা হয়েছে-রিখটার স্কেলে সাড়ে সাত মাত্রার ভূমিকম্প হলে শুধু রাজধানী ঢাকাতেই সোয়া লাখ মানুষের প্রাণহানি হতে পারে, সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বাহাত্তর হাজারেরও বেশি ভবন। ঢাকার মতো বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলেও। আল্লাহ না করুন, এরকম কিছু যদি ঘটেই যায় তখন পূর্ব প্রস'তি আর পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতায় কতটুকুই আর উদ্ধার ঘটবে? জাগতিক ও বৈষয়িক চিন-ার একচ্ছত্র প্রভাবে এখন পরিসি'তি এমন হয়ে গেছে যে, কোনো গভীর সমস্যা নিয়েই আমরা আর মহান সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা আল্লাহ তাআলার কাছে আত্মসমর্পণ করার কথা ভাবি না। পাপের পরিণতি, মানুষের দুষ্কর্মের ফলে দুর্ভোগ পোহানোর যে আমোঘবানী পবিত্র কুরআন আমাদের জানিয়েছে সেদিকেও আমাদের চোখ ও মনোযোগ যায় না। এর সবই মুসলমান হিসেবে আমাদের চিন-ার দৈন্য ও মানসিকতার বিপর্যয়। বিপদ ও শংকার সব পর্যায়ে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য চাওয়া এবং পাপাচার ছেড়ে অনুতাপের পথ ধরার মধ্য দিয়ে আত্মরক্ষার উপায় খোঁজার ভুলে যাওয়া জীবনধারা বদলে ফেলা ছাড়া আসলে কি আমাদের সামনে কোনো পথ এখন খোলা আছে-এটা নিয়ে গভীরভাবে ভাবা উচিত এবং আশু কর্তব্য ঠিক করা উচিত। গত কিছুদিন যাবত এদেশেও সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এ রোগে কয়েকশত মানুুষ আক্রান- হয়েছেন। কয়েকজন মারাও গেছেন। সরকারের স্বাস'্য দপ্তর থেকে বহু নির্দেশনা ও উদ্যোগের খবর মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে। কিন' বাস-বে এ রোগ এবং এ রোগে আক্রান- হওয়ার পরবর্তী পর্যায়গুলো নিয়ে আতংক ও দুশ্চিন-া দেশব্যাপি ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো মুখে মাস্ক পরে সতর্ক হয়ে চলাচল করতে দেখে যাচ্ছে বহু মানুষকে। রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চিকিৎসকের নির্দেশ মানার মধ্যে কোনো দোষ নেই। কিন' এক্ষেত্রেও প্রধান স্মরণযোগ্য বিষয়টির প্রতি উদাসীনতার যেন কোনো অন- নেই। কেউ ভাবতেই চাচ্ছি না, অজ্ঞাত-অপরিচিত এমনতর রোগব্যধি বিস-ারে হঠাৎ করে আমরা এবং আমাদের চারপাশ কেন আতংকজন পরিসি'তির মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। আমাদের জীবনাচারে শুদ্ধাচারের বড় কোনো ঘাটতি কি ঘটতে শুরু করেছে? পাপের অনিবার্য ফল কি আমরা ভোগ করার পর্যায়ে চলে যাচ্ছি? কিংবা এভাবেও তো ভাবা যায়, আমাদের জন্য যদি এসবই পরীক্ষার নিমিত্ত হয় তবুও তো আমাদের উচিত তওবা-ইসি-গফার এবং ‘ইনাবাত ইলাল্লাহ’র পথে এগিয়ে যাওয়া। মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে অনুতপ্ত হৃদয় নিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করে যাওয়ার পথটি আঁকড়ে ধরলে তো বিপদ থেকে বেঁচে যাওয়ার পথ খুলে যেতে পারে। আর যদি তাকদীর কোনো বিষয় নির্ধারিত করে রাখে তবুও ক্ষমাপ্রাপ্তি ও আশাবাদী অবস'ার মধ্যে জীবন যাপন করতে পারি। বিপদ, সংকট ও ঝুঁকিতে মুমিনের জন্য তো কর্মপন'া এটিই। এমনিতেই আমাদের দেশটিতে প্রতি বছর বন্যা, সাইক্লোন আর বিভিন্ন দুর্যোগ নেমে আসে। প্রতি বছরই একাধিকবার আত্মিক পর্যায়ে সতর্ক হওয়ার মতো ঘন্টাধ্বনি শুনতে পেয়ে থাকি। তারপরও আমাদের আচরণে-চিন-ায় ও বিশ্বাসে বিশেষ কোনো পরিবর্তন হতে দেখা যায় না। এখন ভূমিকম্প এবং সোয়াইন ফ্লুর যে আতংক আমাদেরকে ঘিরে ফেলেছে, ঘন্টাধ্বনি হিসেবে এর মাত্রা ও পর্যায় নিঃসন্দেহে বড়। এই বড় ঘন্টা ধ্বনি শুনেও যদি প্রকৃত চিন-া ও কাজ নিয়ে আমাদের মাঝে কোনো হুঁশ না আসে তাহলে কি এ বিপর্যয় বন্ধ হওয়ার পথ তৈরি হবে? মুমিনের জন্য সব বিপদ ও শংকায় আল্লাহর দরবারে কাতর ও অনুতপ্ত আত্মসমর্পণ ও সাহায্য প্রার্থনার পথে এগিয়ে যাওয়ার যে কর্তব্য রয়েছে, সে কর্তব্য পালনের তাওফীক আল্লাহ তাআলা আমাদের দান করুন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হেফাযত করুন।

 

advertisement