Zilhajj 1435   ||   October 2014

লিবাসুল ইহরামের শুভ্রতা সত্য হোক আমাদের জীবনে

আল্লাহ তাআলা যখন হজ্বের তাওফীক দান করেছেন, তখন বাকী জীবনে এর মর্যাদা রক্ষা করা কর্তব্য। ঐ পবিত্র স্থানে যাওয়ার পর প্রত্যেকের মনে ভালো হওয়ার ও ভালো হয়ে চলার যে প্রেরণা জেগেছে তা কাজে লাগাতে হবে। সহীহ হাদীসের বর্ণনা অনুসারে ইখলাসের সাথে বিধিনিষেধ পালন করে যিনি হজ্ব করেন তিনি শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে যান। তাই তার মনটাও থাকে পবিত্র এবং নিষ্কলুষ। সৎকাজের প্রতি তার আগ্রহ হয় এবং অসৎ কাজ ও অসৎ স্বভাব পরিত্যাগ করার প্রেরণা জাগে। এটাও আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নেআমত ও মুমিনের অগ্রসর হওয়ার উপায়। এই আগ্রহ ও প্রেরণাকে কাজে লাগিয়ে গোনাহের স্বভাব ছাড়তে পারলে এবং  নেক আমলে অভ্যস্ত হতে পারলে একটি নতুন ও নির্মল জীবনের আশা করা যায়।

স্তুত এটিই হচ্ছে মুমিন বান্দার হজ্ব কবুল হওয়ার সবচেয়ে বড় লক্ষণ।

ক্ষান্তরে হজ্ব থেকে ফেরার পর যদি অন্তরের  এই প্রেরণাকে কাজে লাগানো না হয়, অলসতায় অবহেলায় হজ্বপরবর্তী দিনগুলো অতিবাহিত হতে থাকে তাহলে এ পবিত্র প্রেরণা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে একসময় বিলুপ্ত হয়ে যায়। আগের বদঅভ্যাসগুলো আবার শক্তি সঞ্চয় করে জেগে ওঠে। ফলে হজ্বের মাধ্যমে জীবনে যে আমূল পরিবর্তনের সম্ভাবনা ছিল তা বিনষ্ট হয়ে যায়। এটা আল্লাহ তাআলার নেআমতের নাশোকরির একটি দিক। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ -

لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ

(তরজমা) তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক  দেব। আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর। -সূরা ইবরাহীম ১৪ : ৭

অনেকের মনেই আশা ও তামান্না থাকে, (যদিও এ সকল তামান্না নিয়ে বসে থাকা উচিত নয়,) হজ্ব করার পর একেবারে ভাল হয়ে যাব। পাঁচ ওয়াক্ত নামায নিয়মিত পড়ব। দাড়ি রাখব। হারাম পন্থায় কোনো উপার্জন করব না। কবরের প্রস্তুতি নেব, ইত্যাদি।

হজ্বের পর যদি ভালো হওয়ার পথে যাত্রা শুরু না করা হয় তাহলে বুঝতে হবে, ঐসব আশা ও আকাঙ্খা ছিল নিতান্তই শয়তানের ধোঁকা। আগামীর আশাবাদ জাগিয়ে শয়তান আসলে বর্তমান থেকে উদাসীন রেখেছে। হজ্বের আগে সে কুমন্ত্রণা দিয়েছিল যে, ‘হজ্বের পর ভালো হয়ে যেও।’  যখন হজ্ব হয়ে গেল তখন বলছে, ‘মাত্রই তো হজ্ব হল, কিছুদিন যাক, ইত্যাদি। ’ আল্লাহ না করুন ! এভাবে মৃত্যু পর্যন্ত শয়তান মানুষকে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে চায়। সুতরাং সাবধান হওয়া উচিত। আর দেরি নয় লিবাসুল ইহরাম ধারণ করে তালবিয়া পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে যে অঙ্গীকারের  নবায়ন করা হয়েছে এখন থেকেই সে অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে। সে অঙ্গীকার ছিল তাওহীদের, আল্লাহর শর্তহীন আনুগত্যের ও আল্লাহর বিধানের প্রতি সমর্পণের। সুতরাং সব ধরনের শিরক বর্জন করে তাওহীদের উপর অবিচল থাকতে হবে। সব ধরনের বিদআহ বর্জন করে  সুন্নাহর উপর অটল থাকতে হবে। সকল অনাচার ও পাপাচার ত্যাগ করে নির্মল নিষ্কলুষ জীবন যাপন করতে হবে। এককথায় শরীয়তের সকল বিধানের পূর্ণ অনুগত হতে হবে। এটাই হবে আমাদের জীবনের নীতি। আর তাহলেই ইহরামের সফেদ লিবাস আমার জন্য বয়ে আনবে শুভ্রতা, আনবে শান্তি ও প্রশান্তি, এজীবনেও এবং সে জীবনেও। আল্লাহ রাববুল আলামীন আমাদের তাওফীক দিন। আমীন!!

 

advertisement