Zilqad 1435   ||   September 2014

মুসলমানদের মাঝে ঈমান ও ইসলামী ভ্রাতৃত্বের ঐক্য সৃষ্টির চেষ্টা করুন একই দিনে ঈদ-প্রসঙ্গ দায়িত্বশীলদের উপর ছেড়ে দিন-১২

Mawlana Muhammad Abdul Malek

{বর্তমান সংখ্যাটি এই প্রবন্ধের বারোতম কিস্তি। বিগত কিস্তি থেকে এই বিষয়ে লিখিত কয়েকটি পুস্তিকার পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। সেই সূত্রে গত সংখ্যায় (শাবান-রমযান) সাদ্রার পীর সাহেব ও ড. আবদুল্লাহ আল মারূফ এর পুস্তিকার উপর সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা হয়েছিল। বর্তমান সংখ্যায় পর্যালোচনা হয়েছে ড. মাহবুবুর রহমান সাহেবের লিখিত পুস্তিকার। প্রবন্ধের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে বিগত কিস্তিগুলো পাঠক দেখে নিতে পারেন।

এছাড়া পর্যালোচনাকৃত পুস্তিকাগুলোর যে আপত্তিকর বিষয়গুলো অভিন্ন সে সম্পর্কে পরে ইনশাআল্লাহ বিস্তারিত আলোচনা হবে। -প্রবন্ধকার}

পুস্তিকাটির গ্রন্থনা ও সম্পাদনা শিরোনামে প্রথম নামটি ড. মাহবুবুর রহমানেরই। সম্ভবত তিনিই আসল লেখক। পুস্তিকাটি মুদ্রিত অবস্থায় হাতে এল মাত্র দুই-তিন মাস আগে। তবে কয়েক বছর আগে তা ফতোয়া আকারে নজরে এসেছিল। পুস্তিকার দাবি কী-বাহ্যত ৫ ও ১৫ পৃষ্ঠায় তা উল্লেখ করা হয়েছে। পৃথিবী গোল হওয়ার কারণে নতুন চাঁদ কখনো একই সময়ে গোটা পৃথিবী থেকে দেখা যায় না আর তা সম্ভবও নয়। তাহলে এখন প্রশ্ন, কীসের ভিত্তিতে তারিখ গণনা করা হবে। যে সকল অঞ্চলে প্রথম রাতে নতুন চাঁদ দেখা গেল সেখানে ঐ রাত থেকে পয়লা তারিখ আর অন্যান্য অঞ্চলে পরের রাত থেকে পয়লা তারিখ গণনা করবেন? না প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতেই একটি বৈশ্বিক তারিখ গণনা করা হবে?

ড. মাহবুবুর রহমানের বক্তব্য, একেই ফিকহের পরিভাষায়-

اختلاف المطالع معتبر أم لا

বলা হয়। ড. মাহবুব লিখেছেন-

‘‘এ প্রশ্নের জবাবে পবিত্র ইসলাম ধর্মের দেড় হাজার বছরের এ সুদীর্ঘ সময়কালে রচিত সকল ফিকহ গ্রন্থে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়েছে যে, হানাফী, হাম্বলী, মালেকী মাযহাবের ঐক্যমতে এবং শাফেয়ী মাযহাবের একদলের মতে পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখা গেলে সমগ্র পৃথিবীর জন্য ঐ চাঁদ চান্দ্রমাসের ১ তারিখ নির্ধারণ করবে এবং ঐ দিন থেকেই সমগ্র পৃথিবীতে বিশ্বজনীন ১ তারিখ গণনা শুরু হবে। ফলে সমগ্র পৃথিবীতে একই দিনে রোযা, ঈদ, কুরবানী, আইয়্যামে তাশরীকসহ চান্দ্রমাসের তারিখ নির্ভর সকল ইসলামী ইবাদাত পালিত হবে। নিম্নে উপস্থাপিত বিশ্বমানের ফিকহ গ্রন্থের তথ্যসমূহ দ্বারা এটা প্রমাণিত।

অনেক বিশ্বমানের ফিকহী কিতাবে চাঁদ দেখার ব্যাপারে যে সকল মতামত প্রদান করা হয়েছে সংক্ষেপে সূত্রসহ তার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো।’’

এই উদ্ধৃতিতে কয়েকটি দাবি আছে :

ক. চান্দ্রমাসসমূহের সূচনা গোটা পৃথিবীর জন্য প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে হওয়া চাই।

এ বিষয়টির শিরোনাম,

توحيد أوائل/بدايات الشهور القمرية/العربية

এটি একটি নতুন ও ব্যবস্থাপনাগত বিষয়; যে সম্পর্কে বিভিন্ন ফিকহী ও জ্যোতির্শাস্ত্রীয় বোর্ড কয়েক বছর যাবৎ চিন্তা-ভাবনা করছে। আমাদের জানামতে তাফসীর-গ্রন্থ, হাদীসের ভাষ্য-গ্রন্থ ও ফিকহ-ফতোয়ার কিতাবসমূহে এ বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। কিন্তু ড. মাহবুব সাহেবের কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে, তিনি একে ফিকহী মাসআলা মনে করেন। আর তাঁর পরিষ্কার বক্তব্য, এ মাসআলা ফিকহ-ফতোয়ার কিতাবসমূহে সুস্পষ্টভাবে আছে এবং এ বিষয়ে হানাফী, মালেকী ও হাম্বলী তিন মাযহাবের এই ঐকমত্যপূর্ণ সমাধান উল্লেখিত হয়েছে যে, পৃথিবীর যেখানেই চাঁদ দেখা যাক গোটা দুনিয়ায় এরই ভিত্তিতে পয়লা তারিখ গণনা করা হবে।

কিন্তু সামনে গিয়ে যত বরাত তিনি নকল করেছেন কোনোটিতেই তার এ দাবির উল্লেখ নেই। যে বরাতগুলো সঠিক তাতে শুধু এটুকু কথা আছে যে, রোযা রাখা ও রোযা ছেড়ে ঈদ করা-কোনোটিতেই উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য নয়। বলাবাহুল্য, শুধু এটুকু দ্বারা প্রমাণ হয় না যে, মুজতাহিদ ইমাম ও পূর্ববর্তী ফকীহগণ বিশ্বব্যাপী চান্দ্রমাসের  শুরু এক করার প্রসঙ্গকে আলোচ্য বিষয় বানিয়েছেন বা একে কোনো শরয়ী হুকুম সাব্যস্ত করেছেন।

খ. ড. মাহবুবুর রহমানের উপরোক্ত বক্তব্যে দ্বিতীয় দাবি এই যে, সর্বপ্রথম চাঁদ দেখাকে ভিত্তি বানিয়ে বিশ্বব্যাপী রোযা, ঈদ, কোরবানী, আইয়ামুত তাশরীকসহ ঐ সকল ইবাদত, যা চান্দ্রমাসের সাথে সংশ্লিষ্ট, একই দিনে আদায় করা হবে। তাঁর দাবি, এ বিষয়ে চার মাযহাবের তিন মাযহাবই একমত। শাফেয়ী মাযহাবের এক জামাত ফকীহের মাসলাকও তাই।

এ দাবির পক্ষেও তিনি কোনো বরাত দেননি। ঈদ ও রোযার ঐক্যের এ দাবিও নতুন। এর বয়স ষাট-সত্তর বছরের বেশি নয়। এটি পূর্ববর্তী ফকীহগণের আলোচনাতেই আসেনি। পনের শতকে যখন এ দাবি উঠল তখন সমসাময়িক ফকীহগণ এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করেছেন এবং তাদের কেউ কেউ আগের ফকীহদের, যারা উদয়স্থলের ভিন্নতা অগ্রাহ্য করেছেন তাদের মাসলাকে এর সমাধান ও সূত্র অন্বেষণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমাদের এখানকার গবেষকগণ বিশ্বব্যাপী একই দিনে সওম ও ঈদের এই নতুন চিন্তা ও দাবিকে কুরআন-হাদীসের সরাসরি মর্ম ও মুজতাহিদ ইমাম ও পূর্ববর্তী ফকীহগণের স্পষ্ট ফতোয়া সাব্যস্ত করছেন! অথচ দলীলের বিস্তারিত আলোচনায় গেলে কোনো আয়াত বা হাদীসের তরজমার পর যখন দেখেন যে, দাবি প্রমাণ হচ্ছে না তখন নিজের তরফ থেকে ব্যাখ্যা করেন এবং ব্যাখ্যায় নিজ দাবি অন্তর্ভুক্ত করে দেন। কিন্তু তাফসীরের স্বীকৃত কোনো উৎস থেকে নিজ ব্যাখ্যার সঠিক কোনো উদ্ধৃতি পেশ করতে পারেন না।

তদ্রূপ যখন ফিকহের কিতাবের বরাত নকল করেন তখন উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য না হওয়ার বরাত নকল করেই মনে করেন যে, তারা সওম ও ঈদ একই দিনে হওয়ার বরাত পেশ করেছেন। এমনকি শুধু বৈধতার নয়; ফরয হওয়ার বরাত! নাউযু বিল্লাহিল আযীম।

পাঠকবৃন্দের কাছে নিবেদন, তারা যেন আলকাউসারের জুমাদাল উখরা ১৪৩৫ হিজরী সংখ্যায় ‘‘উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য না হওয়ার অপরিহার্য অর্থ এই নয় যে, সওম ও ঈদে বৈশ্বিক ঐক্য শরীয়তের আদেশ’’ সংক্রান্ত আলোচনা আরেকবার পাঠ করেন।

فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ-এর তাফসীর সম্পর্কে

ড. মাহবুবুর রহমান পুস্তিকার ৬ পৃষ্ঠায় নিজ দাবির পক্ষে সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতের এ অংশ পেশ করেছেন-

فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

তরজমা করেছেন, তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ (রমযান) মাস পাবে সে যেন এ মাসে রোযা রাখে। ... (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

এরপর লিখেছেন, ‘‘এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা রোযা পালন করার শর্ত হিসেবে রমযান মাসের উপস্থিতিকে উল্লেখ করেছেন। এখন দেখা যাক যে, মাসের উপস্থিতি বলতে কী বুঝায়। পৃথিবীর আকাশে কোথাও নতুন চাঁদের অস্তিত্ব প্রমাণিত হলেই সারা বিশ্বময় চাঁদের উপস্থিতি প্রমাণিত হবে এবং পৃথিবীতে মাস শুরু হবে।’’ (পৃষ্ঠা : ৬)

নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, আয়াতের অর্থ শুধু এটুকু যে, যে ব্যক্তি রমযানে উপনীত হল, (রমযান পেল) তাকে রোযা রাখতে হবে। কোনো সন্দেহ নেই, আয়াতে مَنْ শব্দটি আম (ব্যাপক)। এ কারণেই গোটা বিশ্বের লোকদের উপর রোযা ফরয। কোনো অঞ্চল ও কোনো যুগের লোক এ বিধানের বাইরে নয়। কিন্তু প্রশ্ন এই যে, মাসের সূচনা ও সমাপ্তি কীভাবে প্রমাণিত হবে। রমযান ও শাওয়ালের উপস্থিতি কীভাবে সাব্যস্ত হবে এবং এর বিধিবিধান কী-এ সকল বিষয়ে এ আয়াত নীরব।

মুফাসসির মুহাম্মাদ তাহের ইবনে আশূর (১২৯৬-১৩৯৪ হি.) কী সুন্দর বলেছেন-

ولهذا فليس في الآية تصريح على طريق ثبوت الشهر، وإنما بينته السنةُ بحديث : لا تصوموا حتى تروا الهلال ...

মাস কীভাবে প্রমাণিত হবে এ আয়াতে এর স্পষ্ট বর্ণনা নেই। এর বর্ণনা আছে সুন্নাহয়-

لا تصوموا حتى تروا الهلال ...

 (আততাহরীর ওয়াত তানভীর, ইবনে আশূর ২/১৭২)

তো এ আয়াতে মাস প্রমাণিত হওয়ার বিবরণই নেই। উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য হওয়া-না হওয়া তো অনেক দূরের কথা। এ কারণেই ড. মাহবুবকে বলতে হয়েছে, ‘‘এখন দেখা যাক যে, মাসের উপস্থিতি বলতে কী বোঝায়।’’ কিন্তু এ প্রশ্নের জবাব তিনি কোনো আয়াত থেকে দেননি; বরং তিনি আমাদের নিজের মত সম্পর্কে অবগত করেছেন। আর তা এই যে, কোথাও নতুন চাঁদ প্রমাণিত হলে গোটা বিশ্বের জন্য চাঁদ প্রমাণিত হয়ে যাবে। অথচ যে আয়াত তিনি পেশ করেছেন এ আয়াতে বা অন্য কোনো আয়াতের অর্থে এ কথাটি নেই।

এখন বাইরের যে দলীল দ্বারা এ কথা প্রমাণ হয় তা যদি অকাট্য না হয় এবং তার উপর ইজমা না হয়ে থাকে তাহলে একে আয়াতে স্পষ্ট উল্লেখিত বিধানের মতো অকাট্য সাব্যস্ত করাও সঠিক হবে না এবং এতে অন্য কোনো ফকীহের ইজতিহাদ-ভিত্তিক মতকে বাতিল বা আয়াত বিরোধী সাব্যস্ত করারও অবকাশ থাকবে না।

আলোচ্য মাসআলার অবস্থাও এই যে, উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য কি না-তা এ আয়াতের বিষয়বস্ত্তও নয় আর না এর বিধান এ আয়াতে সরাসরি উল্লেখিত হয়েছে। মাসে উপস্থিতির যে প্রায়োগিক অর্থ অন্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত হবে তার যেটুকু অংশ কতয়ী (অকাট্য) তা কতয়ীভাবে আর যেটুকু অংশ যন্নী তা যন্নীভাবে এ আয়াতের বিধানগুলোতে শামিল হবে। এ কারণে শুধু এ আয়াতের বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্ট ইজতিহাদী বিষয়কে কতয়ী (অকাট্য) ও ইজমায়ী (সর্ববাদীসম্মত) বানানোর কোনো উপায় নেই।

ড. মাহবুব সাহেব ও তাঁর সঙ্গীদের বর্ণনার আলোকেই চিন্তা করুন। এতে তারা সামনে গিয়ে মাসে উপস্থিতি কীভাবে হয়-এ সম্পর্কে তাফসীরে কাবীরতাফসীরে বাইযাবীর বরাত নকল করেছেন। বাইযাবীর বরাতে লিখেছেন-

يثبت شهود هذا الشهر برؤية البصر أو بالسماع

অর্থাৎ, নতুন চাঁদ দেখা বা চাঁদ উদয়ের সংবাদ শোনার দ্বারাই মাস প্রমাণিত হবে। (পৃ. ১০)

পুস্তিকার লেখকগণ ভেবেছেন যে, এটুকু দ্বারাই সওম ও ঈদের ঐক্য কুরআন দ্বারা প্রমাণ হয়েছে। অথচ রাযী ও বাইযাবী এ কথা আয়াতের অর্থ হিসেবে বলেননি; বরং আয়াতে অনুল্লেখিত একটি প্রাসঙ্গিক বিষয়কে হাদীসের আলোকে অতি সংক্ষেপে বলেছেন যে, মাস প্রমাণিত হয় সে মাসের নতুন চাঁদ দেখা বা দেখার সাক্ষ্য পাওয়ার মাধ্যমে। এখানে তারা উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য হওয়াকে রদ করেননি; শুধু এটুকু যে, এ বিষয়ের অবতারণা এখানে করেননি। নতুবা রাযী ও বাইযাবী দুজনই শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী। বলাইবাহুল্য, তারা উদয়স্থলের ভিন্নতা স্বীকার করবেন।

ফিকহ-ফতোয়ার উপর রাযীর কোনো কিতাব মুদ্রিত আছে বলে আমার জানা নেই। কিন্তু বাইযাবীর কিতাব ‘‘আলগায়াতুল কুস্ওয়া ফী দিরায়াতিল ফাতওয়া’’ মুদ্রিত। তাতে কিতাবুস সওমে (সওম অধ্যায়ে) তিনি লেখেন-

ورؤية الهلال تثبت بشهادة عدلين، وفي رمضان بعدل على الأصح، احتياطا للعبادة ...، ويتعدى حكمه إلى ما دون مسافة القصر، فإنها حد البعد شرعا، وقيل : إلى ما هو من ذلك الإقليم، ورد بأن تحكيم المنجمين قبيح شرعا.

الغاية القصوى في دراية الفتوى، عبد الله بن عمر بيضاوي (٦٨٥ هـ)، ١ ٤٠٣-٤٠٤، القاهرة  ١٤٠٠هـ

এখানে বাইযাবী বলেছেন যে, রমযানের চাঁদ এক বিশ্বস্ত ব্যক্তির সাক্ষ্যের দ্বারা প্রমাণিত হয়। আর অন্যান্য মাসের চাঁদ দুই বিশ্বস্ত ব্যক্তির সাক্ষ্য দ্বারা। এরপর চাঁদের হুকুম কতদূর পর্যন্ত যাবে-এ প্রসঙ্গে নিজ মাযহাব অনুসারে বলেছেন, কসরের দূরত্ব পর্যন্ত চাঁদের হুকুম যাবে।

এখন চিন্তা করুন, পুস্তিকায় উদ্ধৃত বক্তব্যে বাইযাবীর উদ্দেশ্য যদি তা-ই হত যা এঁরা বলছেন অর্থাৎ যেখানেই চাঁদ প্রমাণিত হোক গোটা পৃথিবীর জন্য মাসের উপস্থিতি সাব্যস্ত হবে এবং সবার উপর রোযা ফরয হবে! আর এ কথা সরাসরি আয়াতের অর্থ হওয়ার কারণে অকাট্য! সুতরাং নিজ দেশে চাঁদ দেখার অপেক্ষায় যে থাকবে সে ফরয তরককারী! বাইযাবীর ঐ বরাতের অর্থ যদি এ-ই হত তাহলে ‘‘আলগায়াতুল কুসওয়া’’ কিতাবে তিনি ঐ কথা কীভাবে লিখতে পারেন, যা উপরে নকল করা হয়েছে?

তদ্রূপ ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রাহ.-এর যে বরাত নকল করা হয়েছে তাতেও সংক্ষেপে মাসে উপস্থিতির উপায় বলা হয়েছে। উদয়স্থলের ভিন্নতা প্রসঙ্গের অবতারণা করা হয়নি এবং তা রদও করা হয়নি। এই বরাত দ্বারা তা রদ প্রমাণ করতে যাওয়া সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক।

ফখরুদ্দীন রাযী রাহ.-এর তাফসীরের এক শানদার মুখতাসার (সংক্ষেপণ) প্রস্ত্তত করেছেন ইমাম নেযামুদ্দীন হাসান ইবনে মুহাম্মাদ নিশাপুরী (৭২৮ হি.), যার নাম ‘‘গারাইবুল কুরআন ওয়া রাগাইবুল ফুরকান’’। এতে তিনি উপরোক্ত আয়াত- فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ   এর আলোচনায় লেখেন-

وأما أن الشهر بمَ يثبت حتى يعتبر الشهود فيه فقد قال صلى الله عليه وسلم : صوموا لرؤيته وأفطروا لرؤيته، فإن غم عليكم فاستكملوا العدة ...

ومهما شهد عند القاضي عدل واحد أنه رأى الهلال ثبت ...، ولا يثبت الهلال في سائر الشهور إلا برؤية عدلين، وعند أبي حنيفة : يثبت هلال رمضان في الغيم بواحد، وفي الصحو تعتبر الاستفاضة.   وإذا رؤي في موضع شمل الحكم لمن هو على ما دون مسافة القصر منه، ولا يجب الصوم بذلك على من عداهم.

 (গারাইবুল কুরআন ওয়া রাগাইবুল ফুরকান ১/৫০৩, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত ১৪১৬ হি.)

এখানে নেযামুদ্দীন নিশাপুরী রাহ. হাদীসের আলোকে মাসে উপস্থিতির পদ্ধতি বর্ণনা করার পর লিখেছেন যে, কোথাও যদি চাঁদ দেখা যায় তাহলে এর হুকুম সফরের দূরত্ব পর্যন্ত অঞ্চলের অধিবাসীদের শামিল করবে। এর বাইরের লোকদের উপর শুধু এ চাঁদ দেখার কারণে রোযা ওয়াজিব হবে না।

দূরের অঞ্চল নির্ধারণের ক্ষেত্রে সফরের দূরত্বকে মানদন্ড বানানো দলীলের বিচারে কতদূর শক্তিশালী তা ইতিপূর্বে লেখা হয়েছে। এখানে আমার উদ্দেশ্য শুধু এটুকু জানানো যে, কোনো লেখক যদি মাস প্রমাণিত হওয়ার পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে লেখেন যে, চাঁদ দেখা বা চাঁদের সংবাদ শোনার দ্বারা মাসের সূচনা প্রমাণিত হবে তাহলে এ থেকে এ কথা বুঝে নেওয়া সম্পূর্ণ ভুল যে, তিনি উদয়স্থলের ভিন্নতা ইতিবার করার মাসলাক রদ করেছেন এবং তিনি নিকট ও দূরের পার্থক্য অস্বীকার করেছেন। আর তিনি প্রথম চাঁদ দেখাকে গোটা বিশ্বের জন্য অবশ্য-অনুসরণীয় হওয়াকে উল্লেখিত আয়াতের সরাসরি অর্থ মনে করেছেন! কারণ এগুলো তো আলাদা আলাদা বিষয় : এক. মাস প্রমাণিত হওয়ার পদ্ধতি দুই. এক অঞ্চলের নতুন চাঁদ দেখা কতদূর পর্যন্ত অবশ্য-অনুসরণীয়। প্রথম মাসআলা বর্ণনা করতে গিয়ে কেউ যদি বলেন, এক বিশ্বস্ত ব্যক্তির চাঁদ দেখা সবার পক্ষ হতে যথেষ্ট তাহলে এর অর্থ এই হয় না যে, এ চাঁদ দেখা গোটা বিশ্বের জন্য যথেষ্ট; বরং এর অর্থ, একজনের দেখা যথেষ্ট, প্রত্যেককে আলাদা করে দেখতে হবে না। ড. মাহবুবুর রহমানসহ একাধিক লেখক এখানে এ গোলমাল করেছেন যে, প্রথম মাসআলা-সংক্রান্ত বরাতকে দ্বিতীয় মাসআলার উপর প্রয়োগ করেছেন এবং সেই ফকীহগণের দিকে এমন কথা সম্বন্ধ করে দিয়েছেন যা তারা বলেননি।

এই কর্মপন্থার বিচ্যুতি পরিষ্কার হওয়ার জন্য এ দিকটিও চিন্তা করুন, ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর নিকট ২৯ শাবান রাতে, তেমনি ২৯ রমযান রাতে চাঁদ খোঁজার সময় যদি আকাশ একদম পরিষ্কার থাকে তাহলে দুই জনের সাক্ষ্যও যথেষ্ট নয়; বরং চাঁদ প্রমাণিত হওয়ার জন্য জম্মে গাফীর (অনেক মানুষের) সংবাদ জরুরি।

অথচ তিন মাযহাবের ইমামদের কাছে দুই বিশ্বস্ত ব্যক্তির সাক্ষ্যই যথেষ্ট; বরং রমযানে তাদের কাছে এ ক্ষেত্রেও এক বিশ্বস্ত ব্যক্তির সাক্ষ্যই যথেষ্ট।

এখন যদি ঐ ইমামদের সমর্থনে কোনো লেখক এ দাবি করে যে, আয়াতে মাসে উপনীত হওয়ার কারণে রোযা ফরয করা হয়েছে। এক বা দুই বিশ্বস্তের সাক্ষ্য দ্বারা যখন মাস প্রমাণিত হল তখন রোযা ফরয হবে। অনেক লোকের সাক্ষ্য না পেলে রোযা না রাখা ফরয তরকেরই নামান্তর ও তা কুরআনী হুকুম অস্বীকার করার শামিল।

আমার প্রশ্ন, এ লেখকের এই দাবির বিষয়ে ড. মাহবুবুর রহমান সাহেব ও ড. আবদুল্লাহ মারূফ সাহেব কী বলবেন? ইনসাফের সাথে চিন্তা করলে দেখা যাবে, তাঁরা যে আয়াতে কারীমা- فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ  -এর উদ্ধৃতিতে উদয়স্থলের ভিন্নতা অগ্রাহ্য করছেন তা-ও এ প্রকারের।

সারকথা, যে হুকুম সম্পর্কে আয়াত নীরব এবং অন্য কোনো যন্নী দলীল দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার কারণে তা ইজতিহাদী ও ইখতিলাফীর আওতাভুক্ত তাতে কোনো একটি মতকে আয়াতের অকাট্য অর্থ সাব্যস্ত করে অন্য মতকে নাকচ করে দেওয়া ভুল ও তাফসীরের সর্বসম্মত নীতির বিরোধী।

ড. মাহবুবুর রহমানের কাছে অনুরোধ, তিনি যেন এ মাসআলার সাথে সংশ্লিষ্ট শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ছালেহ উছাইমীনের বক্তব্যগুলো পাঠ করেন। তিনি তো উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য হওয়ার উপর এ আয়াত-

فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

দ্বারা দলীল দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন যে, আয়াতে ঐ সকল লোককে রোযা রাখতে বলা হয়েছে, যারা মাস পেয়েছে। সুতরাং যারা মাস পায়নি তাদের উপর রোযা ফরয হবে না। যাদের আকাশে চাঁদই নেই তারা তো মাস পায়নি। আমরা কীভাবে তাদেরকে রোযা রাখার আদেশ করব?

শায়খ উছাইমীনের উদ্দেশ্য এই যে, যদি মাসের সূচনায় ভিন্নতার কোনো ইতিবার না থাকে তাহলে তো মাসের সূচনার ভিত্তিতেই রোযার আদেশ করা সম্ভব হত। অর্থাৎ এভাবে যে, যখন রমযান আসে তো তোমরা এর রোযা রাখ। এমনটা কেন বলা হল যে, তোমাদের মধ্যে যে রমযান পাবে সে যেন এর রোযা রাখে। চাঁদের ভিন্নতা ইতিবার না করলে সাধারণ অবস্থায় কারো কি রমযান না পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে, যে কারণে শুধু রমযান যারা পাবে তাদেরই রোযা রাখার আদেশ করা হল?

আমার কাছে শায়খ উছাইমীনের এ ব্যাখ্যাও ইজতিহাদী। এ কারণে একেও সরাসরি আয়াতের অর্থ সাব্যস্ত করা যায় না। সুতরাং তার আলোচনাও কতয়ী নয়, যন্নী। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এ ব্যাখ্যা ড. মাহবুবুর রহমান সাহেব ও তার সঙ্গীদের ব্যাখ্যা থেকে অনেক বেশি স্পষ্ট।

হেলাল কি শুধু কয়েক মিনিটের নতুন চাঁদের নাম

ড. মাহবুবুর রহমান সূরা বাকারার ১৮৯ নং আয়াত দ্বারাও দলীল দিয়েছেন। তিনি লেখেন,

‘‘অপর এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-

অর্থ : ‘‘হে রাসূল সা. মানুষ আপনাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, এগুলো মানুষের জন্য সময় নির্ধারক।’’ [২:১৮৯]

এখানে লক্ষ্যণীয় যে, আয়াতে الأهلة শব্দের উল্লেখ করা হয়েছে যার অর্থ একেবারে (কয়েক মিনিটের) নূতন চাঁদ। প্রতি চান্দ্রমাসে চাঁদ একদিনই নূতন থাকে। পূর্ববর্তী চন্দ্রমাস শেষ হওয়ার পরে, আবার নতুন করে পৃথিবীর আকাশে সর্বপ্রথম যে চাঁদ দেখা যায়, ঐ চাঁদই হচ্ছে নতুন চাঁদ [তাফসিরে কাবীর ২য় খন্ড পৃঃ-২৫৫-২৫৬; তাফসিরে বায়যাবী] এবং প্রতি মাসে চাঁদ একদিনই নতুন থাকে। পরবর্তী দিনগুলোর চাঁদ কখনোই নতুন নয়। আরো লক্ষ্যণীয় যে, অত্র আয়াতের মধ্যে للناس শব্দের শুরুতে  ال টি জাতিবোধক। সমগ্র মানব জাতির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।’’ (পৃষ্ঠা : ৭)

এ কথা তো সঠিক যে, الناس শব্দে আলিফ-লাম ইসতিগরাকের জন্য। এ কারণে এতে প্রত্যেক অঞ্চলের প্রত্যেক মুকাল্লাফ ইনসান শামিল। আর নতুন চাঁদ প্রত্যেকের জন্যই মীকাত (সময় নির্ধারক) কিন্তু প্রশ্ন এই যে, কয়জনের দেখা দ্বারা চাঁদ প্রমাণিত হবে, এক অঞ্চলের দেখা অন্যসব অঞ্চলের জন্য অবশ্য-পালনীয় কি না- এ বিষয়ে আয়াত নীরব। অন্য দলীল থেকে এর সমাধান নিতে হবে। অন্য দলীল প্রমাণাদি থেকে এর সমাধান তালাশ করতে গেলে এ বিষয়টি  খুব স্পষ্টভাবে সামনে আসবে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীন, সাহাবায়ে কেরাম, তাবিয়ীন, তাবে তাবিয়ীন, সকলেই কুরআনে কারীমের নির্দেশনা অনুযায়ী হিলালকেই মীকাত হিসেবে গ্রহণ করতেন এবং হিলালের ভিত্তিতেই রোযা-ঈদ পালন করতেন। অথচ এরপরও এমন একটি ঘটনা আজ পর্যন্ত পেশ করা সম্ভব হয়নি যাতে তাঁরা অন্য অঞ্চলে তাঁদের পূর্বে নতুন চাঁদ উদিত হয়েছে কি না তা জানার জন্যে চেষ্টা তদবীর করেছেন। কিংবা পরবর্তীদের জন্য এমন কোনো নির্দেশনা দিয়ে গেছেন!!

এখন যদি পুরো পৃথিবীর যেখানে সর্বপ্রথম নতুন চাঁদ দেখা গেল সেটাই হিলাল হয় আর অন্য উদয়স্থল-ওয়ালাদের প্রথম চাঁদ হিলাল না হয় তাহলে তো একথা বলতে হবে যে, -নাউযুবিল্লাহ- ইসলামের অনুসরণীয় তিন যুগের মানুষেরা হিলাল বা নতুন চাঁদকে মীকাত নির্ধারণ করে রোযা-ঈদ পালন করা থেকে মাহরূম থেকেছেন!!!

একটু চিন্তা করুন, যদি কেউ কোনো আয়াতের তাফসীর এমনভাবে করে যার দ্বারা ঐ সকল মনীষী-যাদেরকে আল্লাহ তাআলা সত্যের মাপকাঠি বানিয়েছেন তাঁদের আমলই আয়াতের বিপরীত হওয়া আবশ্যক হয়, তখন কি সেই তাফসীরকে সহীহ বলার বা মানার কোনো সুযোগ থাকে?! এজন্য يسئلونك عن الأهلة এই আয়াতের মর্মকে এই অর্থের সাথে নির্দিষ্ট করে দেওয়া যে, এর দ্বারা পুরো পৃথিবীর প্রথম নতুন চাঁদই একমাত্র উদ্দেশ্য, গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কেননা এর দ্বারা সালাফে সালিহীন-এর কর্মপন্থা আয়াতের অধীনে থাকছে না, আর সে কথা কল্পনা করাও তো মহা অপরাধ।

হিলাল অর্থ নতুন চাঁদ। আর চাঁদ শুধু এক দিনই নতুন থাকে (অথচ তিনি ইতিপূর্বে লিখেছেন যে, কয়েক মিনিটের নতুন চাঁদ হচ্ছে হেলাল)- এ কথা বলে এ আয়াতের মাধ্যমে উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য না হওয়ার মাসলাক রদ করা ঠিক নয়। কারণ প্রথমত আলাদা উদয়স্থলের অধিবাসীদের যখন চাঁদ দৃষ্টিগোচর হবে তখন তাদের জন্য তা নতুন চাঁদই হবে। আর এমনিতেও আরবী ভাষায় শুধু প্রথম দিনের নয়, দ্বিতীয় দিনের চাঁদকেও হেলাল বলে। এ আমার নিজের কথা নয়, স্বয়ং পুস্তিকায় তাফসীরে কাবীরের যে বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, প্রথম দিনের চাঁদের নামই হেলাল, ওখানেই এ কথা আছে, ড. মাহবুবুর রহমানের কথা ওখানে নেই।

তাফসীরে কাবীরের উদ্ধৃতিটি লক্ষ্য করুন-

Óالأهلة جمع هلال، وهو أول حال القمر حين يراه الناس، يقال له : هلال، ليلتين من أول الشهر ثم يكون قمرا بعد ذلك.Ò

অর্থাৎ চাঁদের প্রথম অবস্থায়, যখন তা লোকে দেখে, হেলাল বলে। মাসের শুরুতে দুই রাত পর্যন্ত এর নাম হেলাল। এরপর কমর। (তাফসীরে কাবীর, ফখরুদ্দীন রাযী ২/২৮১; সূরাতুল বাকারার ১৮৯ নং আয়াতের আলোচনায়)

আরবী অভিধান-গ্রন্থসমূহেও আছে যে, এক মত অনুসারে হেলাল যদিও প্রথম রাতের চাঁদকে বলে, কিন্তু যেমনটা ইমাম আবু ইসহাক বলেছেন, অধিকাংশ (ভাষাবিদদের) কাছে দ্বিতীয় রাতের চাঁদকেও হেলাল বলে।

(والذي عندي وما عليه الأكثر أن يسمى هلالا ابن ليلتين، فإنه في الثالثة يتبين ضوؤه)

দ্র. লিসানুল আরব ১১/৭০৩; তাজুল আরূস ৩১/১৪৪; আলমিসবাহুল মুনীর, আহমদ ইবনে মুহাম্মাদ আল ফাইয়ূমী (৭৭০ হি.) পৃ. ৩২৯ (هلل )

আলোচনা দীর্ঘ হয়ে গেল। এজন্য এ পুস্তিকার উপর আরো পর্যালোচনা কঠিন। সামনের সাধারণ পর্যালোচনা অংশ অবশ্যই পাঠ করুন। তবে দু-একটি কথা এখানে আরো নিবেদন করছি :

১. পৃষ্ঠা ১১তে تراءى الناس الهلال -এর তরজমা করা হয়েছে, কিছু সংখ্যক মানুষ নতুন চাঁদ দেখল। এ তরজমা ভুল। এ তো رآى -এর তরজমা। হাদীসের শব্দ تراءى الناس অর্থাৎ লোকেরা সম্মিলিতভাবে চাঁদ দেখার চেষ্টা করল। (চাঁদ দেখার জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল)।

পুস্তিকায় যেহেতু হাদীসের প্রথম শব্দের তরজমা ভুল করা হয়েছে এজন্য সামনের অংশে কথা পুরা করার জন্য নিজের পক্ষ হতে সংযোজন করতে হয়েছে।

২. পৃষ্ঠা ২০-এ এ পুস্তিকার দাবির উপর হাদীস-

صوموا لرؤيته وأفطروا لرؤيته

-এর দ্বারা দলীল দেওয়া হয়েছে আর পৃষ্ঠা ১৩তে বলা হয়েছে-

‘‘দ্বিতীয় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার সহীহ মুসলিম শরীফে। মুসলিম শরীফের যে পৃষ্ঠায় হাদীসটির বর্ণনা রয়েছে সে পৃষ্ঠায়ই হাদীসটির অর্থ করা হয়েছে এভাবে-

قوله صلى الله عليه وسلم :صوموا لرؤيته وأفطروا لرؤيته، المراد رؤية بعض المسلمين، ولا يشترط رؤية كل انسان، بل يكفي جميع الناس رؤية عدلين، وكذا عدل على الأصح، هذا في الصوم، أما الفطر، فلا يجوز بشهادة عدل واحد على هلال شوال عند جميع العلماء.

এবং চাঁদ দেখার প্রমাণ সাপেক্ষে তোমরা রোযা ছাড়, ঈদ কর।’’ এর অর্থ হলো কিছু মুসলমানের দেখার মাধ্যমে উদয় প্রমাণিত হওয়া। এ শর্ত করা যাবে না যে প্রত্যেক মানুষেরই চাঁদ দেখতে হবে। বরং যে কোন দেশের যে কোন দুজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির দেখাই সকল মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে। বরং সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতে রোযার ক্ষেত্রে একজন সৎ ব্যক্তির দেখাই সকলের আমলের জন্য যথেষ্ট। আর অধিকাংশ ফকিহগণের মতে শাওয়ালের নুতন চাঁদ প্রমাণের জন্য একজনের সাক্ষ্য যথেষ্ট হবে না। এ ক্ষেত্রে তারা দুজনের কথা বলেছেন। (মুসলিম শরীফ, খন্ড-১, পৃঃ-৩৪৭, শরহে নাবাবী) (ড. মাহবুবের পুস্তিকা পৃ. ১৩-১৪)

এক তো এখানে নববী রাহ.-এর ইবারতের তরজমাতেও কিছু সমস্যা করা হয়েছে। কিন্তু বড় কথা এই যে, এ বর্ণনায় নববীর বিষয়বস্ত্ত, কতজন লোকের চাঁদ দেখার দ্বারা চাঁদ প্রমাণিত হবে। এখানে এ আলোচনা নেই যে, চাঁদ প্রমাণিত হলে এর হুকুম গোটা বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য হবে, না বিশেষ অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকবে। কারণ এটা আলাদা মাসআলা। এ সম্পর্কে নববী রাহ. সামনের পৃষ্ঠায় আলোচনা করেছেন। ওখানে তিনি লিখেছেন-

باب بيان أن لكل بلد رؤيته، وأنهم إذا رأوا الهلال ببلد لا يثبت حكمه لما بعد عنه، فيه حديث كريب عن ابن عباس، وهو ظاهر الدلالة للترجمة، والصحيح عند أصحابنا أن الرؤية لا تعم الناس بل تختص بمن قَرُب على مسافة لا تقصر فيها الصلاة، وقيل : إن اتفق المطلع لزمهم، وقيل : إن اتفق الإقليم وإلا فلا، وقال بعض أصحابنا : تعم الرؤية في موضع جميعَ أهل الأرض، فعلى هذا نقول : إنما لم يعمل ابن عباس بخبر كريب، لأنه شهادة فلا تثبت بواحد، لكن ظاهر حديثه أنه لم يرده لهذا، وإنما رده، لأن الرؤية لا يثبت حكمها في حق البعيد.

 (শরহে সহীহ মুসলিম, নববী ১/৩৪৮)

এখানে নববী রাহ. উদয়স্থলের ভিন্নতার আলোচনা করেছেন এবং পরিষ্কার বলেছেন যে, এক অঞ্চলের লোকের চাঁদ দেখার হুকুম অন্য সকলের উপর প্রযোজ্য হয় না।

চিন্তা করুন, তাঁর এ স্পষ্ট বক্তব্য থাকার পরও একথা বলা যে, নববী রাহ.-এর কাছে صوموا لرؤيته অর্থ হচ্ছে, একজনের চাঁদ দেখা গোটা বিশ্বের জন্য অবশ্য-অনুসরণীয়, বিভ্রান্তি ছড়ানো ছাড়া আর কী হতে পারে?

এ ধরনের অপ্রাসঙ্গিক বরাত দলীল হিসেবে উপস্থাপনের নযীর এ পুস্তিকায় কম নয়, কিন্তু কত লেখা যায়।

৩. একটি বড় আপত্তিকর কাজ এ পুস্তিকায় এই করা হয়েছে যে, বিভিন্ন কিতাবের বরাত অসম্পূর্ণ উল্লেখ করে দাবি প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে। যদি পুরো বরাত উল্লেখ করা হত তাহলে বিপক্ষ মতটির উল্লেখ ও তার সমর্থন এ কিতাবগুলো থেকেই প্রমাণিত হতে পারত। তাবয়ীনুল হাকায়েক, যায়লায়ী; ফিকহুস সুন্নাহ, সাইয়েদ সাবেক; মাআরিফুস সুনান; ফাতাওয়া রশীদিয়্যাহর বরাত নকল করার ক্ষেত্রে এমনটিই হয়েছে; বরং পৃষ্ঠা ১৮ তে ফিকহুস সুন্নাহর উদ্ধৃতিতে তো স্পষ্ট বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। আর কিছু কিছু কিতাবের উদ্ধৃতির তরজমাও ভুল করা হয়েছে। যেমন ২১ পৃষ্ঠায় মাআরিফুস সুনানের যে অসম্পূর্ণ উদ্ধৃতি নকল করা হয়েছে তার তরজমাও সহীহ করা হয়নি।

আমি শুধু ফিকহুস সুন্নাহ ও ফাতাওয়া রশীদিয়্যাহর বরাত সম্পর্কে কিছু আরজ করছি।

ড. মাহবুব ফিকহুস সুন্নাহর উদ্ধৃতিতে লিখেছেন- ...অতএব উম্মতের মধ্য থেকে যে কেউ যে কোনো স্থান থেকে চাঁদ দেখুক উক্ত দেখাই সকল উম্মতের জন্য দলিল হবে। এমত পোষণ করেছেন হযরত ইকরামা, কাসেম ইবনে মুহাম্মাদ, সালেম এবং ইসহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহিম। হানাফী ফকীহগণের এটাই বিশুদ্ধমত। (আল-ফিকহুস সুন্নাহ, খন্ড : ১, পৃ : ৩০৭)

ড. মাহবুবের পুস্তিকায় (পৃ. ১৮) ফিকহুস সুন্নাহকে আল-ফিকহুস সুন্নাহ কীভাবে লিখলেন তা তিনিই ভালো জানেন। কিন্তু সাইয়েদ সাবেকের পুরো বক্তব্যকেই যে তিনি পাল্টে দিলেন এর হিসাব নিবে কে?!

ফিকহুস সুন্নাহয় সাইয়েদ সাবেক রাহ. উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য না হওয়ার মাসলাক উল্লেখ করার পর লেখেন-

وذهب عكرمة، والقاسم بن محمد، وسالم، وإسحاق، والصحيح عند الأحناف، والمختار عند الشافعية أنه يعتبر لأهل كل بلد رؤيتهم، ولا يلزمهم رؤية غيرهم.

لما رواه كريب قال : قدمت الشام ... رواه أحمد ومسلم والترمذي.

وقال الترمذي : حسن صحيح غريب، والعمل على هذا الحديث عند أهل العلم أن لكل أهل بلد رؤيتهم.

অর্থ : ইকরিমা, কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ, সালিম ও ইসহাকের মাযহাব এই যে, প্রত্যেক অঞ্চলের লোকদের জন্য নিজ নিজ চাঁদ দেখা গ্রহণযোগ্য অন্যদের চাঁদ দেখা তাদের জন্য অবশ্য-অনুসরণীয় নয়। হানাফীদের কাছে এটিই সহীহ কওল। শাফেয়ীদের মুখতার মাসলাকও এটিই।

তাদের দলীল কুরাইবের বর্ণনা ..., যা আহমাদ, মুসলিম ও তিরমিযী বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীস সহীহ। (হাসান, সহীহ, গরীব) এবং আহলে ইলমের কাছে এ হাদীস অনুসারেই আমল যে, প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য নিজেদের চাঁদ দেখা ধর্তব্য। (ফিকহুস সুন্নাহ, সাইয়েদ সাবিক, সিয়াম অধ্যায়)

পাঠকবৃন্দ দেখুন, ফিকহুস সুন্নাহর বরাত উল্লেখের ক্ষেত্রে কী মারাত্মক গরমিল করা হয়েছে যে, বক্তব্যই পবিরর্তন হয়ে গেছে। যেখানে সাইয়েদ সাবিক রাহ., ইকরিমা, কাসিম, সালিম ও ইসহাকের মাসলাক এই বর্ণনা করেছেন যে, তাদের কাছে প্রত্যেকের অঞ্চলে নিজ নিজ চাঁদ দেখা গ্রহণযোগ্য সেখানে ড. মাহবুব তাদের ঐ লোকদের মধ্যে শামিল করছেন যাদের কাছে উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য নয়।

 তেমনি সাইয়েদ সাবিক রাহ. বলছেন যে, হানাফীদের সহীহ  মাসলাক ও শাফেয়ীদের মুখতার মাসলাক এ-ই যে, প্রত্যেক অঞ্চলে নিজেদের চাঁদ দেখা অনুসরণীয় সেখানে ড. মাহবুব হানাফীদের সহীহ মাসলাক বলছেন উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য না হওয়াকে!

আমার জানা নেই, উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে এ ধরনের বিকৃতি কেন করা হল এবং এর প্রয়োজনই বা কেন হল?!

এরপর ‘‘ফাতাওয়া রশীদিয়্যাহ’’-এর বরাতের অবস্থা দেখুন :

২৬ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে :

‘‘উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ও পীর আল্লামা রশীদ আহমদ গাংগুহী রাহ-এর ভাষ্য নিম্নরূপ-

جواب : اختلاف مطالع صوم اور افطار ميں تو ظاہر روايت ميں معتبر نہيں مشرق كى رويت مغرب والوں پر ثابت ہو جاوے گى اگر حجت شرعيہ سے ثابت ہوئے مگر ...

এখানে ফতোয়া রশীদিয়্যাহর বরাত অসম্পূর্ণ নকল করা হয়েছে। উর্দুতে তো যা হোক ...  চিহ্ন ব্যবহার করে কিছু ইশারাও করা হয়েছে, কিন্তু এখানে এ ইশারা এজন্য যথেষ্ট নয় যে, অনুল্লেখিত অংশে এ পুস্তিকার দাবির বিপরীত কথা রয়েছে।

রশীদিয়্যাহ-এর উল্লেখিত ইবারতের পর আছে-

مگر قربانى، اور صلوة عيد، ذى الحجہ اور حج ميں معتبر ہوگا، كما حققه في رد المحتار.

অর্থ, কিন্তু কুরবানী, ঈদের নামায, যিলহজ্ব ও হজ্বে ধর্তব্য হবে। যেমনটা রদ্দুল মুহতারে আলোচনা করা হয়েছে।

(ফতোয়া রশীদিয়্যাহ ১/১১১ মুদ্রণে, মাকতাবায়ে ফকীহুল উম্মত, দেওবন্দ)

এটা ঠিক যে, এ মতের উপর হাকীমুল উম্মত থানবী রাহ. ‘‘ইমদাদুল ফাতাওয়া’’য় আপত্তি করেছেন এবং উপরোক্ত ক্ষেত্রগুলোতেও উদয়স্থলের ভিন্নতা অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। কিন্তু এ কারণে তো হযরত গংগূহী রাহ.-এর মত বদলে যাবে না। যখন তারা গংগূহী রাহ.-এর ফতোয়া পেশ করছেন তখন তা হুবহু পেশ করাই অপরিহার্য ছিল। এরপর কোনো অংশের সাথে দ্বিমত থাকলে নোট দেওয়া যেত।

৪. ৩২ পৃষ্ঠায় উদ্ধৃতি আনা ছাড়া অনেক কিতাবের শুধু খন্ড ও পৃষ্ঠা নম্বর লেখা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, এগুলোতে পুস্তিকার দাবি বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু আফসোস এই যে, এ তালিকার অনেক কিতাব শিয়াদের লিখিত। প্রশ্ন এই যে, শাফেয়ী মাযহাবের প্রতি যাদের এত বিদ্বেষ এবং হানাফী মাযহাবের বড় বড় ফকীহগণের মাসলাক (উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য হওয়া) যারা উল্লেখই করেননি তারা কেন শিয়াদের কিতাবাদির বরাত দিতে গেলেন। শিয়াদের মারাত্মক পর্যায়ের বিদআতী হওয়ার বিষয়ে তো কিছুমাত্র সংশয়ও নেই। এমনকি তাদের বহু ফের্কা এমন আছে, যারা বিদআতের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করতে করতে কুফরী ও বেদ্বীনী পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তাহলে শিয়াদের কিতাবের বরাত কেন দেওয়া হল?

৫. আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এ তালিকায় ‘‘তাফসীরে মাজেদী’’রও বরাত দেওয়া হয়েছে। আমি পাঠকবৃন্দের সামনে তাফসীরে মাজেদীর বক্তব্য তুলে দিচ্ছি। তারা দেখুন, তাফসীরে মাজেদীতে পুস্তিকার দাবির সমর্থন আছে, না স্পষ্ট বিরোধিতা!

সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতের অধীনে মাওলানা আবদুল মাজেদ দরিয়াবাদী লেখেন,

Óرويت ہلال معتبر كہاں كى ہوگى؟ فقہاء اسكے جواب ميں بڑى بڑى موشگافياں كى ہىں، ليكن صاف اور سيدهى بات يہ ہے كہ اسى شہر يا بستى كى يا قرب وجوار كى بستيوں كى. سينكڑوں ہزاروں ميل دورسے رويت ہلال كى خبريں منگانے كا تار، ٹيليفون، ريڈيو، وغيرہ كے ذريعہ سے انتظام كرنا يا كلكتہ كی رويت كو ١٩٠٠ ميل دور بمبئ پر حجت گرداننا شريعت اسلامى كى اصل روح پر ظلم كرنا ہے اختلاف مطالع ايك صريح مشاہدہ كى چيز ہے اسے كيونكہ جهٹلايا جاسكتا ہے، وحدت امت يقينا ايك بڑى اہم چيز ہے ليكن اس كے لئے يہ زبردستى كى كوششيں كرنا طبعى كو غير طبعى كى حد تك پہنچا دينا ہےÒ

কোথাকার চাঁদ দেখা গ্রহণীয় হবে-ফকীহগণ এর উত্তরে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করেছেন, কিন্তু সহজ ও স্পষ্ট কথা এই যে, ঐ শহর বা জনপদের কিংবা নিকটবর্তী জনপদের (চাঁদ দেখা গ্রহণীয়।) হাজার হাজার মাইল দূর থেকে চাঁদ দেখার খবর সংগ্রহের জন্য টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, রেডিও ইত্যাদির দ্বারা ব্যবস্থা করা বা কলকাতার চাঁদ দেখা ১৯০০ মাইল দূরে বোম্বাইয়ে দলীল মনে করা বস্ত্তত শরীয়তে ইসলামীর প্রকৃত রূহের উপর অত্যাচার করা।

উদয়স্থলের ভিন্নতা এক স্পষ্ট-প্রত্যক্ষ বিষয়। একে কীভাবে অস্বীকার করা যায়? উম্মাহর ঐক্য নিঃসন্দেহে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন্তু এর জন্য এই জবরদস্তির চেষ্টা তো স্বাভাবিককে অস্বাভাবিকের পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া। (তাফসীরে মাজেদী ১/৩৩৯ প্রকাশনায় : মজলিসে নশরিয়াতে কুরআন, নাযেম আবাদ, করাচী)

সামনে মাওলানা দরিয়াবাদী রাহ. এ বিষয়ে একাধিক বরাত উল্লেখ করেছেন যা আহলে ইলম তাঁর কিতাবে দেখতে পাবেন। উপরোক্ত উদ্ধৃতি তাফসীরে মাজেদীর পাক কোম্পানী উর্দু বাজার লাহোর প্রকাশিত এডিশনে পৃ ৯০-৯১ তে আছে।

এই হলো মাওলানা দরিয়াবাদী রাহ.-এর বক্তব্য। এখানে শক্তিশালীভাবে তিনি উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য হওয়ার মাযহাবকে উপস্থাপন করলেন। অথচ ড. মাহবুব তার নাম পেশ করেছেন উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য না হওয়ার পক্ষে মত প্রকাশকারী হিসেবে!!

৬. বিস্তারিত আলোচনার তো সুযোগ নেই। তবে কিছু কথা ইনশাআল্লাহ সাধারণ পর্যালোচনা অধ্যায়ে আসবে। এখানে শুধু আরেকটি কথা উল্লেখ করছি যা দিয়ে ড. মাহবুবুর রহমান তাঁর পুস্তিকা সমাপ্ত করেছেন। তিনি লিখেছেন,

‘‘আসুন আমরা হকের পক্ষে কথা বলি:

আলেম সমাজ ও আম জনতাকে আহবান জানাচ্ছি, আসুন আমরা সকল অসত্যের জাল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসি, সঠিক দ্বীনী চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সকল সমস্যার সমাধান করি। আজকের মুসলমানদের ফরয দায়িত্ব হচ্ছে, মানুষের তৈরি সীমানা উপড়ে ফেলে মরোক্ক থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত ইসলামী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার, যারা জীবনের সকল ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ইসলাম বাস্তবায়ন করবে এবং ইসলাম অনুযায়ী সমাধান প্রদান করবে, সকল মুসলমানকে একই তারিখে রোযা রাখা এবং ঈদ উদযাপন করার ঘোষণা প্রদান করবে এবং সকল উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করবে। মূলতঃ একমাত্র ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্রের পক্ষেই তা সম্ভব। আমিন।’’ (পৃষ্ঠা : ৪৮)

পাঠকবৃন্দ! ডক্টর সাহেবের এ কথা অবশ্যই মনে রাখুন। ইনশাআল্লাহ তা আপনাকে আলোচ্য বিষয়ের ধরন ও স্বরূপ বুঝতে সহায়তা করবে।

হায়! তিনি যদি তার এ কথার আলোকে নিজ পুস্তিকাটি সম্পাদনা করতেন! Adobe Systems         (চলবে ইনশাআলস্নাহ)

 

advertisement