Muharram 1431   ||   January 2010

আত্মশুদ্ধি: দায়মুক্তির চেষ্টা সবার দরকার

Waris Rabbani

এবার আশুরার দিনটি অতিবাহিত হয়েছে সোমবার ২৮ ডিসেম্বর। সেদিনের একটি দৈনিক পত্রিকার ৫-এর পাতায় অত্যন্ত আশাজাগানিয়া একটি সংবাদ ছাপানো হয়েছে বক্স করে। জাগতিক উন্নয়ন, উৎপাদন ও অগ্রগতির কোনো খবর ছাড়া যখন অন্য কোনো ভালোত্বের মাঝে, আত্মিক কোনো অগ্রগতি ও পরিশুদ্ধির মাঝে আশা ও সম্ভাবনার আলামত খোঁজার অভ্যাস আমরা প্রায় ছুঁড়ে ফেলতে বসেছি তখন শিরোনামসহ ওই সংবাদটি দেখুন-

৪০ বছর পর অনুশোচনা
কৃতকর্মের জন্য দীর্ঘ ৪০ বছর পর অনুশোচনা করলেন তিনি। যে কাজটি করেছিলেন তার জন্য এখন তিনি অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। ক্ষতিপূরণ বাবদ নগদ টাকা পাঠিয়েছেন। টাকাগুলো নিয়ে তাঁকে দায়মুক্ত করার বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষকে। কক্সবাজারের সদর উপজেলার শিকদারপাড়া গ্রামের মিনারুল ইসলাম (ছদ্মনাম) রাঙামাটির কাপ্তাই মিলে (কেপিএম) সমপ্রতি ৩০০ টাকা মানি অর্ডার করে পাঠান। মানি অর্ডারে চিঠি লেখার অংশে ওই মিনারুল ইসলাম উল্লেখ করেন, আজ থেকে ৪০ বছর আগে ১৯৬৯ সালে তিনি কর্ণফুলী পেপার মিল ও কর্ণফুলী রেয়ন মিল (বর্তমানে পে-অফ) ঘুরতে যান। সে সময় তিনি কারখানা থেকে অতি ক্ষুদ্র একটি জিনিস (নাম উল্লেখ নেই) হাতে করে নিয়ে আসেন। কাউকে না বলে সবার অগোচরে ওই জিনিসটি আনার পর থেকে তিনি অনুশোচনায় ভুগছিলেন। তাঁর বিবেচনায় বর্তমান বাজার দর হিসেবে জিনিসটির মূল্য ৩০০ টাকার বেশি হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।

কেপিএমের সমন্বয় কর্মকর্তা মোমিনুল হক হারুন জানান, ওই টাকা কারখানার কল্যাণ তহবিলে জমা দেওয়া হয়েছে। কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ওই ব্যক্তি অনুতপ্ত হয়ে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে, টাকা পাঠিয়ে যে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন, তা অনুকরণীয় ও নজিরবিহীন। অনুতপ্ত মিনারুল ইসলামের এক ছেলে ... বলেন, তাঁর বাবার বয়স এখন ষাটের বেশি হবে। তরুণ বয়সে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে তিনি কর্ণফুলী পেপার মিল ও কর্ণফুলী রেয়ন মিল ঘুরতে গিয়ে ওই জিনিসটি নিয়ে এসেছিলেন। জিনিসটি কী-এ প্রশ্নের জবাব দিতে মিনারুল ইসলামের ছেলে অপারগতা প্রকাশ করেন।

ইসলাম বান্দার হক আদায় করে তাওবা করার যে শিক্ষা আমাদের দিয়েছে তার একটি দৃষ্টান্ত এটি।

আল্লাহ তাআলা তাকে হায়াত ও তাওফীক দিয়েছেন তিনি চল্লিশ বছর পরে হলেও মূল্য পরিশোধ করে দায়মুক্ত হয়েছেন। সবার ক্ষেত্রে সুযোগটি সময়ের বিবেচনায় একই রকম না-ও ঘটতে পারে। তাই এখন থেকেই যদি প্রত্যেকে যে কোনো আর্থিক হক সম্পর্কে সচেতন হই এবং কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি ঘটে গেলে দায়মুক্ত হওয়ার জন্য নিজ থেকে উদ্যোগী হই তাহলে আমাদের জন্যই মঙ্গল।
এভাবে যে, রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, অপচয় ও লোটপাটের মাত্রাও কমে আসতে পারে সেসব অতি ব্যবহৃত শ্লোগানের পেছনে না গিয়ে আমরা বলতে পারি-এমন অনুতাপ প্রকাশে উদ্যোগী হলে পরকালে এই খেয়ানতের দায় থেকে আমরা ইনশাআল্লাহ রেহাই পেয়ে যাব। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন।

 

advertisement