Muharram 1431   ||   January 2010

তলাবায়ে কেরাম সাবধান হোন, আপনাকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে

Mawlana Muhammad Abdul Malek

কারো কাছ থেকে কোনো মাসআলা বা রেওয়ায়েত শুনলেই তা সঠিক বলে মনে করা এবং বর্ণনা করতে থাকা একজন সাধারণ মানুষের জন্যও ঠিক নয়। এটুকু অনুসন্ধান তাকেও করতে হবে যে, যার নিকট থেকে কথাটা শুনেছি তিনি দ্বীনী মাসায়েল বা হাদীস শরীফ বর্ণনা করার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য কি না। তদ্রূপ কোনো বই বা পুস্তুকে ছাপার অক্ষরে কোনো কিছু দেখলেই তা সঠিক মনে করা ঠিক নয়। এটুকু তাহকীক একজন সাধারণ মানুষের জনও অপরিহার্য যে, কোনো সচেতন ও নির্ভরযোগ্য আলিমকে জিজ্ঞাসা করতে হবে যে, তিনি যে কিতাব বা যে পুস্তিকা পাঠ করতে চাচ্ছেন তা নির্ভরযোগ্য কি না।

যখন সাধারণ মানুষের করণীয় এই তখন তালিবে ইলম ভাইদের তাহকীক ও অনুসন্ধানের মান কেমন হওয়া উচিত তা তো বলাই বাহুল্য। কিন্তু এখন অনেক তালিবে ইলমের মাঝেও এই ব্যধি সংক্রমিত হয়েছে যে, তারা সব ধরনের বই নির্বিচারে ও বিনা পরামর্শে পড়তে থাকে। কারো নামে কোনো কিতাব ছাপা হলেই তা হাতে তুলে নেয়। চিন্তা করে না যে, প্রকৃতপক্ষেই তা তাঁর কিতাব কি না। অথচ আগাগোড়া সম্পূর্ণ বই তৈরি করে কারো নামে চালিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও তো সমাজে আছে। তালিবে ইলমরাও যদি তাঁদের প্রতারণা থেকে আত্মরক্ষা করতে না পারে তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক বিষয় আর কী হতে পারে? বাংলাবাজার ও অন্যান্য স্থানের নাম-পরিচয়হীন বইপত্রের দোকানগুলোতে এমন কত অনুবাদ যে পাওয়া যায় তা তো সচেতন তালিবে ইলমদের অজানা নয়। এই অপরাধ এমনকি আরবী ভাষায় রচিত কিতাবের ক্ষেত্রেও করা হয়েছে।

এই মুহূর্তে আমার সামনে একটি পুস্তিকা আছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আলইসতি’দাদ লিইয়াওমিল মা’আদ’। এর প্রচ্ছদে হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. (৭৭৩-৮৫২ হি.) কে এই পুস্তিকার রচয়িতা হিসেবে দেখানো হয়েছে। মুহাক্কিক-পাণ্ডুলিপি সম্পাদক হিসেবে আবু আবদিল্লাহ সাইয়েদ তাওফীক ও প্রকাশক হিসেবে ‘দারুল কুতুবিল আরাবিয়্যা কাহেরা’র নাম মুদ্রিত আছে। বলা হয়েছে যে, এটি এই পুস্তিকার প্রথম মুদ্রন, যা ১৪১৮ হিজরীতে প্রকাশিত হয়েছে। এই পুস্তিকায় ‘বাবুছ ছুনায়ী’ ‘বাবুছ ছুলাছী’ থেকে ‘বাবুল উশারী’ পর্যন্ত সর্বমোট নয়টি বাব (অধ্যায়) আছে। প্রত্যেক বাবে শিরোনামের সংখ্যা হিসেবে রেওয়ায়েত ও আকওয়াল (বাণী ও বর্ণনা) উল্লেখ করা হয়েছে। সব কিছু হাওয়ালাবিহীন। আর আলাদাভাবে তাহকীক করলে দেখা যাবে যে, অধিকাংশ রেওয়ায়েত মুনকার ও ভিত্তিহীন। কিছু বর্ণনার মওযূ হওয়ার ব্যাপারে তো আহলে ইলম শোনামাত্রই ফয়সালা করতে পারবেন। পুস্তিকাটির তথ্য ও উপস্থাপনাই প্রমাণ করে যে, এর সঙ্গে হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ.-এর কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো প্রতারক প্রতারণার জন্য তাঁর নাম ব্যবহার করেছে। আমি শুধু ইঙ্গিত দিয়ে দিলাম, তালিবে ইলম ভাইগণ নিজেরা পরীক্ষা করে দেখুন। প্রসঙ্গত বলছি যে, যেভাবে বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে বইপত্র জাল করে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে তেমনি বড়দের কোনো রচনাকে তার রচনা নয় বলেও দাবি করা হয়েছে। এজন্য তালিবে ইলমদেরকে কিতাব ও রিসালা সম্পর্কে নিম্নোক্ত শ্রেণীভেদ ও সংশ্লিষ্ট নীতিমালা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি।

(আরবী)

মোটকথা, তালিবানে ইলমকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। এই বিষয়ের বুনিয়াদী মা’লূমাত হাসিল করার পাশাপাশি আহলে ফন ও আকাবিরের পছন্দনীয় কিতাব ও তাঁদের দৃষ্টিতে ক্ষতিকর ও নিন্দিত বইপত্রের তালিকা সম্পর্কেও জানা থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাকে ও আমার তালিবে ইলম ভাইদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।

 

advertisement