শাওয়াল-১৪৩২ || সেপ্টেম্বর-২০১১

নূর ইবনে আবী তাহির - কোতয়ালী, চট্টগ্রাম

প্রশ্ন

ক) আমি দরসে নিযামীতে ইফতা সমাপ্ত করে একটি মাদরাসায় কয়েক বছর ধরে তাদরীসে আছি। আরবী ভাষার প্রতি আমার আন্তরিক টান আছে তবে মাহারত যাকে বলে তা নেই। আমি মনে করি, একজন আলিম যদি যে কোনো আরবী বই-পুস্তক বা সাহিত্য পত্রিকা অনায়াসে বুঝতে না পারে তবে তার ছাত্রজীবন ব্যর্থ, যার একটি জীবন্ত নমুনা আমি অধম। নাহবের কায়দা-কানুন ও আরবী তারকীব জানা আছে। তবে ছাত্রজীবনে আদাবে আরবী বিষয়ে তামরীন হয়নি বলে হয়ত আমার এই দুর্বলতা। আমার এই নাকস দূর করার জন্য আমি কি কোনো আরবী সাহিত্য কোর্সে ভর্তি হব নাকি অন্য কোনো পদ্ধতি আছে, যার দ্বারা আমি উপকৃত হতে পারব? দয়া করে জানাবেন।

খ) আমি অন্তরের কয়েকটি ব্যধিতে ভুগছি, যা একমাত্র আল্লাহ রাববুল আলামীনই জানেন। এজন্য আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন অনুভব করছি। তবে এই মহৎ কাজের জন্য কোথায় ও কোন ধরনের মানুষ নির্বাচন করব তা বুঝে ওঠতে পারছি না। তাই আপনার সহযোগিতা কামনা করছি।

গ) আমি ইফতা পড়েছি কিন্তু ফিকহের বিষয়ে আক্ষরিক অর্থে আমি কাঁচা, যা পড়েছি তাও দিন দিন ভুলে যেতে বসেছি। কিভাবে ফিকহের বিষয়টি আয়ত্তে আনতে পারি এ বিষয়ে পরামর্শ কামনা করছি। 

উত্তর

আপনার প্রথম ও তৃতীয় সমস্যা সম্পর্কে ভালো পরামর্শ তো আপনার তালীমী মুরববীই দিতে পারেন। কারণ তিনিই আপনার হালত সম্পর্কে সম্যক অবগত। তাঁর পরামর্শক্রমে আপনি আদাবে আরবী ও ইফতা-এই দুই বিষয়ের মধ্যে যে কোনো একটিকে আপনার মাশগালা হিসেবে বেছে নিন এবং জীবনের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করুন। বুলন্দ হিম্মত ও অবিরাম মেহনতের মাধ্যমে সম্ভব সব উপায়-উপকরণ অবলম্বন করে ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে থাকুন। যেহেতু ইফতার দ্বারা কিছু না কিছু ফায়েদা হয়েই থাকে আর আপনিও কিছুদিন  এ বিষয়ে তামরীন করেছেন সে হিসেবে আপনি এটাকে আপনার মাশগালা হিসেবে বেছে নিতে পারেন।

আপনি যখন কোনো বিষয়কে নিজের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন তখন নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে অভিজ্ঞ কোনো আহলে ফনের কাছে সময় দিতে পারলে খুব ভালো। আপনি যে মাদরাসায় তাদরীসে আছেন সেখানে যদি এমন কোনো উস্তায থেকে থাকেন তাহলে তাঁর নেগরানিতে তাদরীসি খেদমতের পাশাপাশি আপনার মেহনত জারি রাখতে পারেন।

তাছাড়া আপনি প্রাথমিক মেহনত এভাবেও শুরু করতে পারেন যে, ঐ ফনের কোনো কিতাব যদি আপনার তাদরীসের যিম্মাদারিতে থাকে, তাহলে তাকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিগতভাবে বাড়তি মেহনত করুন। এভাবে ধীরে ধীরে ইনশাআল্লাহ মানযিলের দিকে অগ্রসর হতে পারবেন।

আপনি চিঠিতে যে বলেছেন, একজন আলিম যদি যে কোনো আরবী সাহিত্য পত্রিকা বা এই মানের বই-পুস্তক বুঝতে না পারে তাহলে তার ছাত্রজীবন ব্যর্থ-এই ধারণাটা অনেক সময় হীনম্মন্যতার কারণেও হয়ে থাকে। কারণ মৌলিক কিতাবী ইস্তিদাদ তৈরি করা দরসে নিযামীর একটি মৌলিক লক্ষ্য। এটি যদি কারো অর্জিত হয় তাহলে সে কুরআন, হাদীস ও ফিকহসহ উলূমে ইসলামিয়্যাহ সংক্রান্ত যে কোনো কিতাব সহজেই বুঝতে পারবে। তার সাথে সে যদি ব্যবহারিক আরবী ও আধুনিক পত্র-পত্রিকা বুঝতে পারে তাহলে ভালো। কিন্তু এই বাড়তি অর্জনটা না হলে তার ছাত্রজীবনকে ব্যর্থ মনে করা সঠিক নয়। কারণ এর জন্য আলাদা মেহনত দরকার। কিছুদিন মেহনত করলে ঐ সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে সলীম খান সংকলিত আলমুখতারাতুল আরাবিয়্যাহ জাতীয় কোনো কিতাবের সহযোগিতাও নেওয়া যেতে পারে।

ইসলাহী মুরববী সম্পর্কে আপনার অনুভূতি মোবারকবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে এটাও সত্য যে, এটা কেউ কাউকে নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয় নয়। বরং প্রত্যেকেই নিজের রুচি, চাহিদা ও

ইস্তেফাদা করার সুযোগ-সুবিধা, সর্বোপরি নিজের হাল হিসেবে একজন মুরববী বেছে নিবে। এক্ষেত্রে একটি উসূল মনে রাখা দরকার, যা আমরা অনেকেই খেয়াল করি না। তা হল, আমরা নিজের ইসলাহের জন্য ফিরিশতা সিফাত অথবা কমপক্ষে ত্রুটি-বিচ্যুতিমুক্ত মুসলিহ তালাশ করি। অথচ নিজের অবস্থার কথা ভেবে দেখি না। এই মনোভাব সঠিক নয়। আরবীতে একটি প্রবাদ আছে-

من لم ير مفلحا لن يفلح أبداً

অতএব যত দ্রুত সম্ভব কোনো মুসলিহ মুরববীর হাতে নিজেকে সোপর্দ করে ইসলাহী সফর শুরু করুন। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন। 

এই সংখ্যার অন্যান্য শিক্ষা পরামর্শসমূহ পড়ুন