মাহমুদাতুর রহমান - গফরগাও, ময়মনসিংহ
প্রশ্ন
ক) তারীখ এবং সীরাতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কিতাব কোনটি?
খ) কানযুল উম্মাল কিতাবের সব হাদীস ও রেওয়ায়াত কি সহীহ? বিস্তারিত জানালে বাধিত হব।
উত্তর
ক) নির্দিষ্ট কোনো কিতাবকে নির্ভরযোগ্য বলার অর্থ সামগ্রিক বিচারে নির্ভরযোগ্য হওয়া। এর অর্থ কস্মিনকালেও এমন নয় যে, এর প্রত্যেকটি কথাই বিশুদ্ধ; বরং সেখানেও অনির্ভরযোগ্য কোনো কিছু পাওয়া যায়।
যাহোক, সীরাতও তারীখেরই একটি গুরত্বপূর্ণ অংশ। বিধায় প্রায় তারীখের কিতাবে সীরাত অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়েছে। তাছাড়া স্বতন্ত্রভাবে সীরাতের উপর রচিত কিতাবের সংখ্যা প্রচুর। এর মধ্যে ইবনুল কইয়িম রাহ.-এর যাদুল মাআদ খুব নির্ভরযোগ্য। তবে তা একটি ইলমী কিতাব এবং কোনো কোনো জায়গায় ইখতিলাফি মাসায়েলের আলোচনায় ইনসাফের সাথে সমাধানে পৌঁছা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া এর মূল বিষয়বস্ত্ত, যা তার নাম থেকেও স্পষ্ট সীরাতের প্রসিদ্ধ পরিচ্ছদগুলোর পরিবর্তে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরীকা বর্ণনা করা। যদি তাহকীকের যোগ্যতা থাকে তাহলে সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ’, মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ আসসালেহী এবং ‘শরহুল মাওয়াহিবিল লাদুনিয়্যাহ’, যুরকানীতে যথেষ্ট তথ্য ও আলোচনা রয়েছে। অন্যথায় শায়খ সালেহ আহমদ আশশামীর রচনাবলি থেকে সহযোগিতা নেওয়া উচিত। ‘মিন মায়ীনিস সীরাতিন নববিয়্যাহ’, ‘মিন মায়ীনিশ শামাইল’ ও ‘মিন মায়ীনিল খাসাইস’ নামে তার কয়েকটি কিতাব প্রকাশিত হয়েছে। আল্লামা সালমান মানসুরপুরী--এর কিতাব‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’ ও তার আলোকে প্রস্ত্তত ‘আররহীকুল মাখতুম’ কিতাব দুটিও সাধারণভাবে নির্ভরযোগ্য। ‘আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া’, ইবনে কাসীরের সীরাত, শামাইল ও ফাযাইল অংশটিও হাওয়ালা ও সনদভিত্তিক এবং ইবনে কাসীর রাহ. সাধারণত রেওয়ায়েতের সনদগত দুর্বলতা (যদি থাকে) উল্লেখ করে থাকেন।
খ) না; রবং কানযুল উম্মালে নির্ভরযোগ্য হাদীস ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে যয়ীফ, মুনকার ও মাওযূ (জাল ও ভিত্তিহীন) রেওয়ায়েত রয়েছে। কারণ কানযুল উম্মাল হিন্দুস্থানের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা আলী মুত্তাকী আলহিন্দী রাহ.-এর অনন্য এক কীর্তি হলেও কিতাবটি মূলত হাফেয সুয়ূতী রাহ.-এর পূর্ণাঙ্গ তিনটি কিতাবের সুবিন্যস্ত রূপমাত্র।
সুয়ূতী রাহ.-এর তিনটি কিতাব হল : ১. আলজামেউল কাবীর, যার আরেক নাম‘জামউল জাওয়ামে’।
সূয়ুতী রাহ.-এর ইচ্ছা ছিল, বিভিন্ন কিতাবে বিক্ষিপ্ত সব ধরনের হাদীসগুলোকে কওলী ও ফে’লী দুভাগে ভাগ করে এই কিতাবে সংকলিত করা। সে হিসেবে এই কিতাবে সহীহ, হাসান ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে যয়ীফ, মুনকার ও মাওযূ রেওয়ায়েত এসেছে। ২. আলজামেউস সগীর। সূয়ুতী রাহ. এই কিতাবে মাওযূ কোনো রেওয়ায়েত না আনার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।
৩. যিয়াদাতুল জামেউস সগীর। এটিও জামেউস সগীর-এর শর্ত অনুযায়ী পরিবর্তীতে বর্ধিত হাদীসগুলোর সংকলন।
এই দুটি কিতাবে মাওযূ (জাল) হাদীস না আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও সূয়ুতী রাহ. এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি। এছাড়া যয়ীফ ও মুনকার পর্যায়ের রেওয়ায়েত তো রয়েছেই।
কানযুল উম্মাল-এ এই তিনটি কিতাবকে ফিকহী অধ্যায় অনুসারে বিন্যস্ত করা হয়েছে মাত্র।
অতএব স্বাভাবিকভাবেই সূয়ুতী রাহ.-এর তিন কিতাবের যয়ীফ, মাওযূ ও মুনকার রেওয়ায়েতসমূহ কানযুল উম্মাল-এ হুবহু রয়ে গেছে।
যেমনিভাবে রয়েছে সহীহ, হাসান ও নির্ভরযোগ্য হাদীসসমূহের বিশাল ভান্ডার।
এখন কেউ যদি কানযুল উম্মাল থেকে কোনো হাদীস নিতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই এর বিশুদ্ধতা ও নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করে নিতে হবে। তবে যদি তাতে এমন কোনো কিতাবের উদ্ধৃতি থাকে, যাতে কেবলমাত্র সহীহ হাদীস সংকলিত হয়েছে তবে সে কথা ভিন্ন।