মুহাম্মাদ যাকারিয়া সিরাজী - মাদরাসা আলী ইবনে আবী তালিব রা. , কেরানীগঞ্জ, ঢাকা
প্রশ্ন
আমরা জানি যে, ফেয়েলের জমআ মুযাক্কার গায়েব ও হাযেরের ওয়াও-এর পরে (নূন না থাকলে) আলিফ লিখতে হয়। ওয়াহিদের সীগার পর আলিফ লিখতে হয় না। অথচ কুরআন মজীদের সূরা বাইয়্যিনাতে يتلو এবং সূরা বাকারার ২৩ নং আয়াতে يعفو এই ওয়াহিদের সীগা দুটির ওয়াও-এর পর আলিফ লেখা হয়েছে। আবার কুরআন মজীদেরই বহু আয়াতে ওয়াহিদের সীগার ওয়াও-এর পরে আলিফ লেখা হয়নি। এর কারণ কী? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
উত্তর
ইমলার নিয়ম-কানূন অনুযায়ী প্রশ্নে বর্ণিত নিয়মটি সঠিক এবং সাধারণ লিখায়ও এটি অনুকরণীয় কিন্তু প্রশ্নোক্ত ব্যতিক্রম দুটি এবং এই ধরনের আরো কিছু ব্যতিক্রম কুরআন মজীদে ‘রসমে খতে’ দৃশ্যনীয়। আর এটা তো জানা কথা, কুরআন মজীদের ‘রসমে খত’ বেশ কিছু ক্ষেত্রেই সাধারণ ইমলার উসূল থেকে ভিন্ন ও ব্যতিক্রম। এবং এ নিয়ম-কানূনের উর্ধ্বে। সাধারণ আরবী লিখন-পদ্ধতি ও কুরআন মজীদের লিখন পদ্ধতি বা রসমে খত’-এর মাঝে ছয় প্রকারের ভিন্নতা রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হল, ‘আয যিয়াদাহ।’ অর্থাৎ কুরআনী রসমে খতে এমন কিছু অক্ষর যায়েদ রয়েছে, যা ওয়াসল বা ওয়াকফ কোনো হালতেই উচ্চাণ আসে না। অথচ সাধারণ আরবী লেখায় এই যিয়াদাহ নেই। যেমন আলিফ, ওয়াও, ইয়া। প্রশ্নোক্ত আলিফ দুটিও এ ধরনের। ‘হক্কুত তিলাওয়া’ গ্রন্থের ভাষায়- أشكوا، أدعوا، لن ندعوا، نبلوا، وما كان مثله (হক্কুত তিলাওয়াত ৩৭৪) আরো দেখুন : আলইতকান, সুয়ূতী ২/৪; আযযিয়াদাতু ওয়াল ইহসান, ইবনে আকীলা মক্কী ২/৪৭১-৪৭২; কিন্তু কুরআন মজীদের কিছু আয়াতে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন সূরা আম্বিয়া ৯৯ নং আয়াত- عسى الله ان يعفو عنهم এর রসমে খতে ওয়াও এর পর আলিফ নেই। এখানে মূলকথা এই যে, যে আয়াতে যে শব্দ ও অক্ষর যেরূপে ‘আলমুসহাফুল ইমাম’ বা ‘মুসহাফে উসমানী’তে লিপিবদ্ধ হয়েছে হুবহু তারই অনুকরণ করতে হবে। কারণ কুরআনের এই বিশেষ রসমে খত ওহীর আলোকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সরাসরি আদেশ ও তত্ত্বাবধানে লিখিত হয়েছে। পরিভাষায় একে ‘তাওকীফী’ বলা হয়। অতএব এতে সামান্যতম পরিবর্তনও করা যাবে না। এবং আরবী লেখার সাধারণ নিয়ম-কানূনের অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না। উপরোক্ত কথাগুলো সহ কুরআনী রসমে খত নিয়ে উলূমুল কুরআন ও ইলমুত তাজবীদ ওয়াল কিরাআহ বিষয়ে রচিত কিতাবাদিতে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। শুধু কুরআনী রসমে খত নিয়েও স্বতন্ত্র কিতাবপত্র রচিত হয়েছে। দেওবন্দের কারী আবুল হাসান আাজমী তার ‘রসমুল মাসহাফ আওর উসকে মাসাদির’পুস্তিকায় এ বিষয়ে মোট ৬০ টি কিতাবের নাম উল্লেখ করেছেন। তাঁর নিজেরও ‘কুরআনী ইমলা আওর রসমুল খত’ নামে কিতাব আাছে। এই কিতাবগুলো অধ্যয়ন করলে এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন। ইনশাআল্লাহ।