মুহাম্মাদ সাআদ আহমাদ - মিরপুর, ঢাকা
প্রশ্ন
মুহতারাম! আমি হিদায়াতুন্নাহু জামাতের তালিবুল ইলম। আমি আরবী কিতাবের ইবারত মোটামুটি পড়তে পারি। কিন্তু যতটুকুই পড়তে পারি, সেই তুলনায় অর্থ বুঝি না। হযরতের নিকট আমার প্রশ্ন— আমি কীভাবে খুব সহজে বিশুদ্ধভাবে আরবী ইবারত পড়তে পারব? এবং কীভাবে ইবারত পড়ে তরজমা করতে না পারার দুর্বলতা দূর করব? জাযাকুমুল্লাহু খায়রান।
উত্তর
আপনার সমস্যা থেকে উত্তরণের একটাই পথ। তা হল, হুঁশের সঙ্গে পড়া এবং সবর ও ইস্তিকামাতের সঙ্গে মেহনত করতে থাকা। গত শিক্ষাবর্ষে আপনি নাহবে মীর ও ইলমুস সরফ পড়েছেন। এ বছর পড়ছেন হিদায়াতুন্নাহু ও ইলমুস সীগাহ। আপনার কর্তব্য হল, আরবী কিতাব পড়ার সময় মনোযোগসহ খেয়াল করবেন— নাহু-সরফের যেসব নিয়ম-কানুন আপনি পড়েছেন, আরবী ইবারতে সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগ কীভাবে হচ্ছে। বাক্যে إِنَّ থাকলে আপনাকে إِنَّ-এর ইসম ও খবর খুঁজতে হবে, এরপর ইসমে নসব আর খবরে রফা দিতে হবে। হরফুল জর থাকলে তার মুতাআল্লাক বের করতে হবে। মওসুল দেখলে তার সিলা নির্ধারণ করতে হবে। যমীর থাকলে তার মারজে চিহ্নিত করতে হবে। এভাবে খুঁটে খুঁটে পড়তে হবে।
এ মেহনতের সবচেয়ে সহজ ও উত্তম পদ্ধতি হল, দরসের আগে আপনি যখন সামনের সবক মুতালাআ করবেন তখন এ বিষয়গুলো খেয়াল করে করে মুতালাআ করবেন। যমীরের মারজে, হরফে জরের মুতাআল্লাক, মওসুলের সিলা, ইসম-খবর— এগুলো নিজেই নির্ধারণ করার চেষ্টা করবেন। যে জায়গাগুলো বুঝবেন না, সেগুলো চিহ্নিত করে রাখবেন। এরপর দরসে উস্তাযের তাকরীর অত্যন্ত মনোযোগসহ শুনবেন। উস্তাযের তাকরীরের সঙ্গে নিজের বুঝটা মিলিয়ে নেবেন এবং ভুলগুলো ঠিক করে নেবেন। এর পরও কোনো বিষয় না বুঝে থাকলে দরসে বা দরসের পরে উস্তাযকে জিজ্ঞেস করে বুঝে নেবেন। সাথীদের মধ্যে যারা বুঝেছেন তাদের থেকেও বুঝে নিতে পারেন। এরপর পুরো সবক এভাবে নিজে নিজে পড়ে আত্মস্থ করে নেবেন। মাঝেমধ্যে কিতাবের কোনো একটা বহস বা আলোচনা নিজে পড়ে বোঝার চেষ্টা করবেন। এরপর উস্তাযকে শুনিয়ে যাচাই করে নেবেন— আপনার বুঝটা ঠিক হল কি না। এভাবে সবর ও ইস্তিকামাতের সঙ্গে মেহনত করতে থাকলে ইনশাআল্লাহ আপনার দুর্বলতাও কেটে যাবে এবং ইলমের প্রতি মহব্বতও বৃদ্ধি পাবে।
আরবী ইবারত বিশুদ্ধভাবে পড়তে না পারা এবং ইবারতের মর্ম সঠিকভাবে বুঝতে না পারা— এ সমস্যাটা তালিবে ইলমদের মধ্যে দিন দিন প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হল, গোড়া থেকে মেহনত না করা। ইস্তি‘দাদ তো হঠাৎ করে হয়ে যায় না। এর জন্য শুরু থেকেই মেহনত করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ যদি আপনি আততরীক ইলাল আরাবিয়্যা ও কাসাসুন নাবিয়্যীন কিংবা নাহবে মীর ও রওযাতুল আদব ভালোভাবে পড়তেন, তাহলে আজ এ সমস্যা হত না। মনে রাখবেন, শুরুর জামাতগুলো ইস্তি‘দাদ তৈরির মূল ভিত্তি। এ জামাতগুলোতে যেসমস্ত কিতাব নেসাবভুক্ত থাকে, সেগুলো যদি হক আদায় করে উসূল মোতাবেক পড়া হয়, তাহলে পরবর্তী জামাতগুলোতে কিতাব না বোঝার সমস্যায় ভুগতে হয় না। কিন্তু আমাদের সমস্যা হল, আমরা সময়ের কাজ সময়ে না করে পরে হা হুতাশ করি। তাই তাইসীর থেকে দাওরায়ে হাদীস সব জামাতের তালিবে ইলমদেরই এ বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে। প্রত্যেক জামাতেরই একটা غرض ও غایت থাকে। সেটা ওই জামাতেই হাসিল করতে হয়। পরবর্তী বছর বা জামাতের জন্য রেখে দিলে সেটা হবে চরম আত্মঘাতী।