মুহাম্মাদ যাকরিয়া - ময়মনসিংহ
প্রশ্ন
‘মাজমাউ বিহারিল আনওয়ার’ কিতাবের লেখকের নাম কি মুহাম্মাদ তাহের পাটনী, না মুহাম্মাদ বিন তাহের পাটনী? কিতাবের প্রচ্ছদে মুহাম্মাদ তাহের লেখা। কিন্তু তারই আরেক কিতাব ‘আলমুগনী’র প্রচ্ছদে ‘মুহাম্মাদ বিন তাহের’ লেখা। ‘এসব হাদীস নয়’ কিতাবের বিভিন্ন জায়গায় তার নাম লেখা হয়েছে- ‘মুহাম্মাদ তাহের’। কিন্তু ‘আলমাদখাল ইলা উলূমিল হাদীসিশ শারীফ’ কিতাবের ২০৬ নং পৃষ্ঠায় ‘মুহাম্মাদ বিন তাহের’ লেখা হয়েছে। সঠিক নামটি কী? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
উত্তর
‘মাজমাউ বিহারিল আনওয়ার’ গ্রন্থের প্রণেতার নাম মুহাম্মাদ তাহের পাট্টানী (মৃ. ৯৮৬ হি.)। তিনি ছিলেন হিজরী দশম শতাব্দীর গুজরাটের পাট্টান নামক এলাকার প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আলেম। তাঁর রচিত ‘কিফায়াতুল মুফরিতীন ফী শারহিশ শাফিয়া’ কিতাবের ভূমিকায় তিনি নিজের নাম ‘মুহাম্মাদ তাহের’ লিখেছেন।
এছাড়াও তাঁর জীবনীর উৎস-গ্রন্থগুলোতে তাঁর নাম ‘মুহাম্মাদ তাহের’ রূপেই পাওয়া যায়।
দেখুন : আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ. (১০৫১) কৃত (ফারসি ভাষায় রচিত) আখবারুল আখয়ার ফী আসরারিল আবরার, পৃ. ৫৫৯; আবদুল কাদের আইদারূস রাহ. (১০৩৮) কৃত দশম শতাব্দীর ইতিহাস নিয়ে রচিত আন নূরুস সাফির আন আখবারিল কারনিল আশির, পৃ. ৩২৩; ইবনুল ইমাদ রাহ. (১০৮৯ হি.)-এর শাযারাতুয যাহাব ১০/৬০১; গোলাম আলী আযাদ বুলগেরামী (১২২০ হি.) কৃত সিবহাতুল মারজান ফী আছারি হিন্দুস্তান, পৃ. ৯৭-৯৮; আবজাদুল উলূম, পৃ. ৬৯৬; আলআ‘লাম, খাইরুদ্দীন যিরিকলী ৬/১৭২
এছাড়াও উপমহাদেশের মুহাক্কিক আহলে ইলমদের লেখায় ব্যাপকভাবে তাঁর নাম ‘মুহাম্মাদ তাহের’ রূপেই পাওয়া যায়।
(দেখুন : আবদুল হাই লাখনোভী রাহ.-এর যফারুল আমানী, পৃ. ২৫২; হাবীবুর রহমান আজমী (১৪১২ হি.) কৃত মাজমাউ বিহারিল আনওয়ারের মুকাদ্দিমা; তারীখে দাওয়াত ও আযীমাত, আবুল হাসান আলী নদভী রাহ. ৪/৫৭; ইমাম ইবনে মাজাহ আওর ইলমে হাদীস, হযরত মাওলানা আবদুর রশীদ নুমানী রাহ., পৃ. ২৯১)
আমাদের জানামতে সর্বপ্রথম সিদ্দীক হাসান খান রাহ. (১৩০৭ হি.) রচিত ফুকাহা-মুহাদ্দিসীনের জীবনী বিষয়ে ফারসি ভাষায় লেখা ‘ইতহাফুন নুবালায়িল মুত্তাকীন বি ইহইয়া-ই মাআছিরিল ফুকাহা ওয়াল মুহাদ্দিসীন’ কিতাবে (পৃ. ৩৯৭) ‘মুহাম্মাদ বিন তাহের’ লেখা হয়েছে। এটি সিদ্দীক হাসান খান রাহ.-এর অনিচ্ছাকৃত ‘কলমের’ ভুল। নতুবা তিনিও তাঁর অন্যান্য কিতাবে তার নাম ‘মুহাম্মাদ তাহের’ লিখেছেন।
দেখুন : আবজাদুল উলূম, পৃ ৬৯৬, আলহিত্তাহ ফী যিকরিস সিহাহিস সিত্তাহ, পৃ. ১২২, আলবুলগাহ ইলা উসূলিল লুগাহ, পৃ. ২১৫।
এজন্যই আবদুল হাই লাখনোভী রাহ. তাকে ইঙ্গিত করে লিখেছেন-
ذكر غيرُ ملتزم الصحة من أفاضل عصرنا في اسمه: محمد بن طاهر. وهو زلة عن قلمه.
-যাফারুল আমানী, পৃ. ২৫২ (টীকা)
‘নুযহাতুল খাওয়াতির’-এ তাহের পাট্টানী রাহ.-এর জীবনীতে ইতহাফুন নুবালা থেকে ইস্তেফাদা করা হয়েছে। এতে তাসামুহটি ইতহাফুন নুবালা থেকে নুযহাতুল খাওয়াতিরেও এসে গেছে। ‘নুযহাতুল খাওয়াতির’ কিতাবটি হিন্দুস্তানী উলামা-মনীষীদের বিষয়ে একটি বৃহৎ ও নির্ভরযোগ্য জীবনীগ্রন্থ। পরবর্তীতে যারা শুধু নুযহাতুল খাওয়াতিরের উপর নির্ভর করে নামটি লিখেছেন তারা এ ভুলের শিকার হয়েছেন।
উল্লেখ্য, তাহের পাট্টানী রাহ.-এর ‘তাযকিরাতুল মাওযূআত’ ও ‘কানূনুল মাওযূআত’ কিতাবদ্বয় একই মলাটে ১৩৪৩ হিজরীতে মিসরের ইদারাতুত তিবাআতিল মুনীরিয়্যাহ থেকে ছেপেছে। প্রকাশক কিতাবের গিলাফে লেখকের নাম সহীহভাবেই ‘মুহাম্মাদ তাহের’ লিখেছেন। এবং কিতাবের শেষে শায়েখ আবু আবদুল কবীর মুহাম্মাদ আবদুল জলীল রাহ. কতৃর্ক লেখকের যে জীবনী সংযোজন করা হয়েছে, তাতেও ‘মুহাম্মাদ তাহের’ আছে। কিন্তু উভয় কিতাবের (মুদ্রিত এই নুসখার) মুকাদ্দিমায়, যেখানে তাহের পাট্টানী রাহ. নিজের নাম লিখেছেন, সেখানে লেখা হয়েছে ‘মুহাম্মাদ বিন তাহের’!! এটি লিপিকারের ভুল। কানূনুল মাওযূআতের মূল পাণ্ডুলিপিতে পরিষ্কার হরফে ‘মুহাম্মাদ তাহের’ লেখা রয়েছে।
দেখুন : কুতুবখানা আযহারিয়্যাহ, মাখতূত নং ৯৩৪৩১, (ق ২২، أ)।
আলমাদখাল ইলা উলূমিল হাদীসিশ শরীফ-এও বেখেয়ালিতে ‘মুহাম্মাদ বিন তাহের’ এসে গেছে। তলাবায়ে কেরামের নিজ নিজ নুসখা সংশোধন করে নেয়ার অনুরোধ করছি। পাকিস্তান থেকে প্রকাশিতব্য আলমাদখালের ষষ্ঠ এডিশনে ভুলটি সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে।
আপনি লিখেছেন, মুহাম্মাদ তাহের ‘পাটনী’ সঠিক উচ্চরণে হল- ‘পাট্টানী’। মুহাম্মাদ তাহের রাহ. হিন্দুস্তানে অবস্থিত বিহারের পাটনা এলাকার অধিবাসী নন। বরং তিনি গুজরাটের পাট্টান নামক এলাকার অধিবাসী। কানূনুল মাওযূআতের শেষে তাঁর যে জীবনী ছাপা হয়েছে, সেখানে এই ‘তাম্বীহ’ লেখা হয়েছে-
تنبيه: فَتَّن بفتح الفاء وشد التاء المثناة فوقُ مع الفتح، بعده نون معرب، فتَّن بلدة من بلاد كجرات قريبا من أحمد آباد.