নাম নেই - বরিশাল
প্রশ্ন
ক) ফতহুল বারী (খ. ১১ পৃ. ৪২১) উমদাতুল কারী (খ. ২২ পৃ. ৪৬) ফতহুল মুলহীমসহ (খ.১ম পৃ. ৪২১) বিভিন্ন কিতাব لحية (দাড়ির) সংজ্ঞা লিখেছে ما نبت على الخدين والذقن এই সংজ্ঞা দ্বারা উদ্দেশ্য কী? এটাই কি দাড়ির প্রকৃত সংজ্ঞা ও সীমারেখা?
لعن الله المتنمصات للحسن مغيرات خلق الله (بخارى(
খ) চেহারায় গজানো দাড়ি কাটা জায়েয কিনা? যদি জায়েয হয় তবে বুখারী শরীফে উল্লেখিত হাদীসের যুগশ্রেষ্ঠ গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা-গ্রন্থের ব্যাখ্যার উদ্দেশ্য কী?
النماص ازالة شعر الوجه بالمنقاص (فتح البارى(
هو ازالة الشعر من الوجه مأخوذ من النماص، وقال النبى : هوحرام الا اذا نبتت للمرأة لحية او شارب..(عينى(
النمص : نتف الشعر من الوجه تزيينا، وهو حرام، واباحوا نتف اللحية والشوارب اذا نبتت للنساء (حاشية ابى داود(
গ) কোনো কোনো ফতওয়ার কিতাবে গালের দাড়ি কাটাকে জায়েয লিখেছে, নরম ভাষায়। অথচ একটি প্রসিদ্ধ কায়েদা হল-
اذا اجتمع الحلال والحرام والمبيح والمحرم غلب الحرام و المحرم (قواعد فقه(
এখন যদি তা হালাল হয় তবে সর্বসম্মত, প্রয়োগিক কায়েদার সমাধান কী? আর متنمصات-এর ব্যাখ্যা ও মেসদাক কোথাও কোথাও মহিলাদেরকে লিখেছে তবে মোল্লা আলী ক্বারী রহ. লিখেছেন-
وهى تعم الرجل والمرأة فأنث باعتبار النفس، او لان الاكثر ان المرأة هى الامرة والراضية (مرقات(
তাহলে এই ইবারত দ্বারাই বা কী উদ্দেশ্য?
ঘ) ফতোয়া শামীতে আছে- قد يطلق الجائز على ما لا يمتنع فيشمل المكروه
এর দ্বারা বুঝা যায় জায়েয দুই প্রকার (১) সুন্নাত জায়েয (২) মাকরূহ জায়েজ। তো উল্লেখিত দাড়ি কাটা যদি জায়েয হয় তবে ‘সুন্নাত জায়েয’ হবে না অবশ্যই। হবে ‘মাকরূহ জায়েয’। আর তাতে ছগীরা গুনাই হয়। আমরা বাইজাবীসহ অনেক কিতাবে পড়েছি ছগীরা গুনাহ বার বার করলে কাবীরা হয়। ফলে হারাম ছাবেত হওয়ার কথা। ঠিক কি-না। না হলে কিভাবে হল না। সমাধানমূলক উত্তর চাই।
উত্তর
ক) আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহ. ‘ফাতহুল বারী’র ইবারতের যে পর্যালোচনা করেছেন তা যুক্তিসঙ্গত। এ আলোচনা আপনার সামনেও রয়েছে।
খ) যদি শুধু শব্দের তাহকীক ও কোনো হাদীসের কিতাবের শরহ থেকেই ফিকহী হুকুম প্রমাণ করা যেত তাহলে না আইম্মায়ে ফিকহের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন হত, আর না ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবের কোনো প্রয়োজন থাকত। এ বিষয়ে ফিকহী তাহকীক এই যে, শরীরের যে অংশে সাধারণত চুল থাকে না সেখানে যদি চুল গজায় তাহলে তা পরিষ্কার করা যাবে। অর্থাৎ বাড়তি ও অস্বাভাবিক চুল পরিষ্কার করা ওই নিষেধের আওতাভুক্ত নয়। এই সিদ্ধান্ত দলীলসিদ্ধ এবং প্রশ্নোক্ত হাদীসে তা নিষিদ্ধ হওয়ার সারাহাত নেই। যদি হাদীসের নিষেধ একদম ব্যাপক হত তবে إلا إذا نبتت للمرآة لحية أو شارب এই ইসতিসনা কীভাবে শুদ্ধ হয়?
ইমাম আবু হানীফা রাহ. ‘কিতাবুল আছারে’ (পৃ. ৩৭৮) উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
إن المرأة سألتها : أحف وجهى؟ فقالت : أميطى عنك الأذى
ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. বলেছেন, وبه نأخذ، وهو قول أبى حنيفة বোঝা গেল, যে চুল اذى-এর অন্তর্ভুক্ত তা দূর করা نمص বলে গণ্য হবে না। এজন্য দাড়ির সীমার বাইরে চেহারায় অতিরিক্ত যে চুল গজায় তা দূর করা ওই নিষেধের অন্তর্ভুক্ত নয়।
কাওয়াদে ফিকহের উল্লেখ এখানে অপ্রাসঙ্গিক। প্রথমত এই কায়েদাগুলো প্রয়োগ করার অধিকার শুধু ফকীহদেরই রয়েছে। যেকোনো শব্দ-পরিচয়-জ্ঞানধারী লোকের জন্য এই অধিকার সাব্যস্ত হয় না। এই কায়েদা যদি এতই ব্যাপক হত, যেমন আপনি ভাবছেন তবে যেসব বিষয়ে ‘মাযাহিবে আরবাআ’র মধ্যে বৈধতা-অবৈধতার মতাভেদ রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে আপনাকে অবৈধতার মতই গ্রহণ করতে হবে। বলাবাহুল্য, কেউই এমন করবে না। এজন্য ‘কাওয়াইদে ফিকহিয়্যাহ’র কিতাবসমূহ পড়ে প্রথমে কায়েদাগুলোর মর্ম অনুধাবন করা অপরিহার্য।
মিরকাত-এর ইবারত واصلة ও مستوصلة সম্পর্কে। এরপরও হাদীসের নিষেধ পুরুষ মহিলা উভয়ের জন্য হওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি নেই। এখানে বিবেচ্য বিষয় এই যে, নিষেধের ক্ষেত্র কোনটি? উপরের আলোচনায় প্রমাণ হয়েছে যে, শরীরের অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক চুল এই নিষেধের আওতাভুক্ত নয়। এ প্রসঙ্গে আপনি জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহ. -এর الأحاديث الواردة فى الاطلاء بالنورة পুস্তিকাটি অধ্যয়ন করতে পারেন। পুস্তিকাটি الحاوى للفتاوى তে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গ) তৃতীয় কথা হল ‘মুবাহে জায়েয’ প্রসঙ্গে। যে ফকীহগণ অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক চুল দূর করার অনুমতি দিয়েছেন তাদের মতে এটা ‘মাকরূহ-জায়েয’ নয়, ‘মুবাহ জায়েয’-এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে রিওয়ায়েতের সঙ্গে দিরায়াত এবং হাদীসের সঙ্গে ‘তাফাককুহ ফিদ্দীন’ নসীব করুন। আমীন।