নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - জামিআ রাহমানিয়া, রাজশাহী
প্রশ্ন
আমি মেশকাত জামাতে পড়ি । আমি ছাত্র হিসাবে দুর্বল প্রায়। দেশের মানুষের অবস্থা দেখে এই চিন্তা হয় যে, দেশ ও দেশের মানুষ সম্বন্ধে কবিতা লেখি। এই মুহূর্তে একটি কবিতাও লিখেছি দেশের মানুষ সম্পর্কে। কবিতার একাংশ এই -
হাতে নিয়েই কলম সাজিয়েছি হাহুতাস,
সত্যের পাথেয় হিসাবে কারে করিব বিশ্বাস।
সকলের হৃদয় করেছে দখল লোভের আশ্বাস,
কারো আর নেই সঠিক সরল পথে চলার অভ্যাস,
বিশ্বাস, বল কারে করিব বিশ্বাস ইত্যাদি
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমি যখন কবিতা লেখার পিছনে টাইম দিচ্ছি, তখন কিতাব পড়ার কমতি হচ্ছে। কোন নিয়মে লেখা পড়া করলে কবিতা লেখার জন্য টাইম দিতে পারব এবং তার সাথে কিতাবের পড়াও ঠিকমতো পড়তে পারব। পরামর্শ দিলে অত্যন্ত উপকৃত হতাম।
উত্তর
আপনার প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য আমি মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত রাবাকাতহুম এর সঙ্গে পরামর্শ করেছি। তিনি যা বলেছেন তার খুলাসা এই-
ক. সাহিত্য চর্চার পক্ষে পদ্য এমনিতেও উপযোগী নয়, বিশেষত একজন তালিবে ইলম, যার কাছে কবিতা চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ ও শিক্ষক নেই তার জন্য তো এটা আরও অনুচিত। প্রশ্নে উল্লেখিত নমুনাটিই এর দলীল। এজন্য সাহিত্য চর্চায় অগ্রসর হতে হলে আপনাকে গদ্য চর্চা করতে হবে।
খ. আপনি নিয়মিত গুরুত্বের সঙ্গে রোয নামচা লিখবেন। যদি কোনো রুচিশীল ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে লিখতে পারেন তবে তো খুব ভালো। না হয় খোদ রোযনামচাই এক ধরনের শিক্ষক। রোযনামচায় আপনি আপনার দেখা বিভিন্ন ঘটনা, আপনার বিভিন্ন সময়ের অনুভব অনুভূতি লিখতে পারেন। এছাড়া কোনো সাহিত্যিকের কোনো একটি প্রবন্ধ পড়ে নিজের ভাষায় তার খুলাসা লিখুন। এরপর দুই লেখার মধ্যে বিচার করে আপনার লেখাকে সংশোধন করুন। এভাবে মেহনত অব্যাহত রাখুন। মোটকথা, গদ্যচর্চার ক্ষেত্রেই মেহনত করুন। এটাই আপনার জন্য মুনাসিব হবে।
গ. এ সময় আপনার জন্য দরসী কিতাবাদির পিছনে সময় ও মনোযোগ নিবন্ধ রাখাই হল সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। এজন্য অন্যান্য কাজ দরসিয়াতের হক আদায় করার পরই করা উচিত। মূল দায়িত্ব পালন করার পর যদি পনের মিনিট সময়ও পান তবে এটুকুই অন্য খানে ব্যয় করতে পারবেন, এর বেশি নয়।
ঘ. হুজুরের সঙ্গে মশোয়ারা করার জন্য আমি যখন আপনার চিঠিটি তাঁকে শোনাচ্ছিলাম, তখন তিনি আমাকে একটি ঘটনা শুনিয়েছেন যে, “আজকে আমাদের এলাকার এক সচিব সাক্ষাত করতে এসেছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তার পর যাওয়ার সময় তিনি বললেন, ‘আপনার বহুত কিমতী ওয়াক্ত নিলাম’। লক্ষ করুন, মানুষটি একজন সচিব, কিন্তু তিনি সময়ও বললেন না, ‘টাইম’ও বললেন না। বললেন, ‘কীমতী ওয়াক্ত’ অথচ একজন তালিবে ইলম আপনার কাছে মশোয়ারা চাচ্ছে কিন্তু সে বারবার ‘টাইম’ শব্দটি ব্যবহার করছে।”
এ বিষয়টি আমাকে খুব পেরেশান করে যে, মাদরাসার পরিবেশে ইংরেজি শব্দ ও ইংরেজি পরিভাষা ব্যবহারের এই ব্যধি কীভাবে ছড়িয়ে পড়ল আর এর চিকিৎসাই বা কীভাবে হবে? দ্বীনদার ইংরেজি শিক্ষিত ভাইয়েরা আরবী শব্দ ও দ্বীনী পরিভাষা বেশি বেশি শেখার ও ব্যবহার করার চেষ্টা করেন; অথচ আমরা নিজেরা চলেছি উল্টো পথে”।
আমি এ কথাটি এখানে এজন্য উল্লেখ করলাম যে, এটা এখন আমাদের ব্যাপক রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি প্রসঙ্গে যখন কথাটা এসেই গেল তখন তা লিখে দেওয়াটাই মুনাসিব মনে করেছি। যাতে সবাই উপকৃত হতে পারে। আল্লাহ আপনাকে কবুল করুন। আপনার ইলম ও ফাহম-এ বরকত দান করুন। আপনার সময়েও বরকত দান করুন এবং আপনাকে দ্বীনের মুখলিস খাদিম হিসেবে কবুল করুন, আমীন।