মুহাম্মাদ আমজাদ, আব্দুল মান্নান - রাজফুলবাড়িয়া মাদরাসা, সাভার, ঢাকা
প্রশ্ন
আমরা কাফিয়া জামাতে পড়ি। জানতে চাচ্ছি, কুদুরী ও উসূলুশ শাশী কোন্ নিয়মে পড়লে বেশি ফায়েদা পাব এবং সেইসাথে জানতে চাচ্ছি, উসূলুশ শাশী-এর লেখকের নাম কী এবং এই কিতাবের সঙ্গে আর কী কিতাব পড়লে উপকৃত হব? তা লিখে দেওয়ারও সবিনয় অনুরোধ রইল।
উত্তর
‘মুখতাসারুল কুদূরী’ রচনার উদ্দেশ্যই হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ মাসআলাসমূহ বোঝা এবং সেগুলো মুখস্থ করা। তাই এ কিতাবে আপনার প্রধান কাজ হবে- প্রথমে আপনি কিতাব ‘হল’ করবেন; এরপর সুস্পষ্টভাবে মাতৃভাষায় ওই মাসআলা বুঝবেন; মুযাকারা ও আলোচনার মাধ্যমে বা খাতায় নোট করে মাসআলাগুলো মুখস্থ করবেন।
মাওলানা আশেকে ইলাহী বুলন্দশহরী রাহ.-এর ‘আততাসহীলুজ জরুরী লি-মাসায়িলিল কুদূরী’-এর দুই-চার পরিচ্ছেদ পড়ে দেখতে পারেন- মাসআলা মুখস্থ করার ব্যাপারে এ কিতাব আপনার সহায়ক হয় কি না।
উসূলুশ শাশী সম্পর্কে এ কথা ঠিক যে, এর আগে যদি এ বিষয়ের সহজ ও সংক্ষিপ্ত কোনো কিতাব পড়ে নেওয়া যেত তাহলে খুবই ভাল হত। কিন্তু এই মুহূর্তে এমন কোনো কিতাব আমার জানা নেই, যার ব্যাপারে আমি পরামর্শ দিতে পারি। ‘মুখতাসারাত’ তো বেশ কয়েকটি রয়েছে যেমন : তালখীসুল মানার, হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী রাহ. (১৩৬২ হি.) এবং ওইটির তামরীন ও অনুশীলনী ‘আলমাদার’ যা তাঁরই সংকলিত ‘আততালখীসাতুল আশার’-এর একটি, তেমনি যাইনুদ্দীন আলহালাবী (৮০৮ হি.)-এর ‘মুখতাসারুল মানার’ মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এগুলোর ‘উসলূব’ উসূলুশ শাশী থেকে সহজবোধ্য নয়।
ড. মুহাম্মাদ সুলাইমান আলআশকার-এর الواضح في أصول الفقه مع أسئلة للمناقشة وتمرينات (للمبتدئين)
কিতাবটি তুলনামূলক সহজ। এর ৫ম সংস্করণ মোট ২৭৭ পৃষ্ঠায় ছেপেছে। যাদের আরবী ভাষার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো তারা কোনো উস্তাযের তত্ত্বাবধানে এটি মুতালাআয় রাখতে পারেন। আমার মতে ড. আব্দুল ওয়াহ্হাব খাল্লাফ-এর কিতাব ‘উসূলুল ফিকহ’ সমষ্টিগত বিচারে সহজই। তবে এই দুই কিতাবের বিন্যাস আমাদের দরসের কিতাবের বিন্যাস থেকে ভিন্ন।
মাওলানা উবায়দুল্লাহ আসআদীর উদূর্ কিতাব ‘উসূলুল ফিকহ’ এবং এর আরবী রূপ ‘আলমুজায ফী উসূলিল ফিকহ’-ও এ বিষয়ের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্যে সহজতার উদ্দেশ্যেই লেখা হয়েছে। মাওলানা আনওয়ার বদখশনী তো ‘তাসহীলু উসূলিশ শাশী’ নামেই কিতাব লিখে দিয়েছেন। এরপর তিনি আরেকটি কিতাব ‘তাইসীরু উসূলিল ফিকহ’ নামে লিখেছেন। কিন্তু ইনসাফের কথা হল, আমাদের মাদরাসার উপযোগী উসূলুশ শাশীর আগে পড়ানোর জন্যে বা এর স্থলে নেসাবভুক্ত করার মত কোনো কিতাব আমার জানা মতে এখানো তৈরি হয়নি। তবে এতে পেরেশান হওয়ার কিছু নেই। এতদিন পর্যন্ত তো তালেবে ইলমরা উসূলুশ শাশী দ্বারাই তাদের উসূলে ফিকহের তালীম শূরু করেছে এবং এটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে পড়ে আসছে। আপনিও তাই করুন। প্রথমে উস্তাযের দরসের সহযোগিতায় পরিভাষা ও কায়েদাগুলো ভালোভাবে বুঝে নিন। এরপর কিতাবের উপমাগুলো ছাড়াও অন্যান্য উপমাতেও সেসব প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন। আল্লাহ তাআলা আপনার মদদ করবেন এবং আগামীতে পথ চলা আরো সহজ করে দিবেন।
উসূলুশ শাশী-এর রচয়ীতা সম্পর্কে কিছু কথা
যিরিকলী রাহ. ‘আলআলাম’ ১/২৯৩-এ এবং উমর রেজা কাহহালা রাহ. ‘মুজামুল মুআল্লিফীন’ ১/২২৬-এ ইসহাক ইবনে ইবরাহীম শাশী (৩২৫ হি.)-এর জীবনীতে উসূলুশ শাশী কিতাবটি তাঁরই বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু একথা সঠিক নয়; কেননা এই কিতাবের উপস্থাপন-ভঙ্গি মধ্যবতীর্ যুগের। ৩য় শতাব্দীর উপস্থাপন-ভঙ্গির সঙ্গে এর যথেষ্ট অমিল রয়েছে। তাছাড়া এই কিতাবের কিয়াসের আলোচনায় ইমাম আবু যায়েদের উদ্ধৃতি এসেছে। ইমাম আবু যায়েদ দাবুসীর ইন্তেকাল হয় ৪৩০ হিজরীতে। উসূলুশ শাশী যদি ইসহাক শাশীরই হত তাহলে এতে আবু যায়েদের উদ্ধৃতি আসে কীভাবে?
এপর্যন্ত যত খোঁজাখুঁজি করা হয়েছে সে হিসেবে এই কিতাবের রচয়িতা নিযামুদ্দীন শাশী বলেই মনে হয়। যেমনটি ‘কাশফুয যুনূন’-এর বরাতে আল্লামা আব্দুল হাই লাখনোভী রাহ. তাঁর ‘আলফাওয়ায়িদুল বাহিয়্যা’-এর ‘খাতেমা’-এ (পৃ. ২৪৪) লিখেছেন। উস্তাযে মুহতারাম হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম তাঁর ‘হামারা তালীমী নেযাম’ ৭৩ পৃষ্ঠায় নিযামুদ্দীন শাশীর মৃত্যু তারিখ ৭৫৪ হি. বলে উল্লেখ করেছেন। এব্যাপারে আরো তাহকীক ও বরাতসহ আলোচনার জন্যে আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।