নাম উল্লেখ নেই - None
প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আমি হেদায়াতুন্নাহু জামাতের একজন ছাত্র। কুদূরী পড়ার সময়ে একটি ইবারতে অস্পষ্টতা দেখা দেয়, ইবারতটি হল-
وليس في الفصلان والحملان والعجاجيل صدقة عند أبي حنيفة ومحمد، إلا أن يكون معها كبار. وقال أبو يوسف: تجب فيها واحدة منها.
আমরা জানি যে, উট, গরু ও বকরির বাচ্চার যাকাত আসে না। সেগুলোর যখন এক বছর পূর্ণ হয় তখন যাকাত আসে। আর বছর পূর্ণ হলে তো সেগুলো আর বাচ্চা থাকে না। সুতরাং আমার প্রশ্ন হল, ইমাম আবু ইউসুফ রাহ.-এর মতে বাচ্চাগুলোর মধ্য হতে যাকাত হিসেবে একটি বাচ্চা দেয়া কীভাবে ওয়াজিব হয়। জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
আপনার প্রশ্ন যথাযথ। কারো কাছে নেসাব পরিমাণ শুধু উট, গরু বা বকরির বাচ্চা আছে; বড় কোনো পশু নেই। ইমাম অবু ইউসুফ রহ.-এর মতে এগুলোরও যাকাত ফরয। কিন্তু প্রশ্ন হল, তা কীভাবে? যাকাত তো এক বছরের আগে দেওয়া ফরয নয়। আর এক বছর হয়ে গেলে সেগুলো বাচ্চাই থাকল না; ‘মুসিন্না’ হয়ে গেল। এবং এক্ষেত্রে সবার নিকটই এগুলোর উপর যাকাত ফরয। তাহলে শুধু এই বাচ্চাগুলোতে যাকাত ফরয হওয়ার অর্থ কী? যদি এগুলোর সাথে বড় পশুও থাকে তাহলে তো সহজ বিষয়। বড়গুলোর বয়স হিসেবে বছর শেষে যাকাত আদায় করবে। কিন্তু যখন শুধু বাচ্চা রয়েছে; সেগুলোর উপর যাকাত ফরয- এ কথার কী অর্থ? মোটকথা, এই মাসআলার বাস্তব সূরত কী, যাতে ইমামদের ইখতেলাফ হয়েছে এবং ইমাম আবু ইউসুফ রাহ. যাতে যাকাত ফরয হওয়ার কথা বলেছেন?
প্রশ্নটি নিয়ে ফুকাহায়ে কেরাম ভিন্নভাবে আলোচনা করেছেন এবং এর সমাধানও তাঁরা দিয়েছেন। ইমাম কাসানী রাহ. প্রশ্নটি এভাবে উল্লেখ করেছেন-
وأما صورة هذه المسألة فقد تكلم المشايخ فيها؛ لأنها مشكلة؛ إذ الزكاة لا تجب قبل تمام الحول، وبعد تمامه لا يبقى اسم الفصيل والحمل والعجول بل تصير مسنة.
এই প্রশ্নের সমাধান ইমাম কুদূরী রাহ.-এর আরেক কিতাবেই বিদ্যমান রয়েছে। তিনি ‘আত্তাজরীদ’ কিতাবে বলেন-
قال أبو حنيفة ومحمد: لا زكاة في الفصلان والحملان والعجاجيل. وصورة المسألة: أن يكون له نصاب من الكبار فتتوالد كعددها، ثم تموت الأمهات
فيحول الحول وهي صغار. وقال أبو يوسف: فيها واحدة منها، وبه قال الشافعي رحمه الله.
অর্থাৎ কারো কাছে যদি নেসাব পরিমাণ উঁট, গরু বা বকরি থাকে। পরবর্তীতে সেগুলো সে পরিমাণ বাচ্চাও দেয় (অথবা অন্য কোনোভাবে মালিক হয়) এবং বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই কোনো দুর্ঘটনায় বড় পশুগুলো মারা যায়, তাহলে এক্ষেত্রে মৃত পশুগুলোর যাকাতবর্ষ যখন পূর্ণ হবে, তার হুকুম ছোট বাচ্চাগুলোর ক্ষেত্রেও আসবে কি না। ইমাম আবু ইউসুফ রাহ. (এবং ইমাম শাফিয়ী রাহ.)-এর রায় হল, মৃত বড় পশুগুলোর বছরপূর্তির হুকুম ছোট বাচ্চাগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে এবং সে হিসেবে এগুলোর যাকাত দিতে হবে। (আততাজরীদ ৩/১১৭৯)
ইমাম জাস্সাস রাহ. আরো কিছুটা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন-
والمسألة في الحملان أن يكون له أربعون شاة في أول الحول، فتوالدت أو استفاد أربعين حملاً قبل الحول بشهر أو نحوه، ثم ماتت المسان، وبقيت الحملان، لا تصح مسألة الحملان إلا على هذا، لأنها لو بقيت في ملكه حولاً، كان مسان، تجب فيها الصدقة عند الجميع إذا حال عليها حول بعد ما صارت مسان.
দেখুন : শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/২৬৯)
খুলাসা কথা, এই মাসআলার সূরত হচ্ছে, বছরের শুরুতে কারো কাছে নেসাব পরিমাণ বড় পশু ছিল এবং বছরের ভেতর সে নেসাব পরিমাণ বাচ্চারও মালিক হয়। কিন্তু বছর শেষে তার কাছে শুধু বাচ্চাগুলোই থেকে গেছে, বড় পশু থাকেনি। এক্ষেত্রে ইমাম আবু ইউসুফ রাহ.-এর মত হল, বড় পশুগুলো এখন তার কাছে না থাকলেও সেগুলোর হিসেবে যখন বছর পূর্ণ হবে তখন বাচ্চাগুলোর যাকাত আদায় করতে হবে।
আরো দেখুন : বাদায়েউস সানায়ে ২/১২৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৭৫-১৭৬; আলইয়ানাবী‘ ফী মারিফাতিল উসূলি ওয়াত তাফারী‘ ১/২০২; শরহু মুশকিলাতিল কুদূরী ১/৩৫৪