আব্দুল্লাহ - ঢাকা
প্রশ্ন
অনেক সময়ই এই হাদীসটি বলতে শোনা যায় যে, কিয়ামত সংঘটিত হবে আশুরার দিন এবং সেই দিনটি হবে জুমার দিন। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল, এমনটা কীভাবে ঘটতে পারে?! কেননা আমরা জানি, সারা পৃথিবীতে চন্দ্র ও সূর্যের উদয়স্থল এক নয়। অর্থাৎ সব স্থানে একই সময় চন্দ্র বা সূর্য উদিত হয় না। বরং সময়ের বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। এমনকি পৃথিবীর এক স্থানে যদি দিন হয় তবে অন্যস্থানে হয় রাত। তাই পৃথিবীর সব দেশে একই দিনে আশুরার দিন হয় না। সুতরাং আশুরার দিনেই সারা পৃথিবীতে একইসঙ্গে কিয়ামত সংঘটিত হবে কীভাবে? আশা করি প্রশ্নটির সঠিক উত্তর জানাবেন।
উত্তর
‘আশুরার দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে’- এই কথাটি প্রমাণিত নয়। এটি একটি জাল ও বানোয়াট বর্ণনা। এ সম্পর্কে মারকাযুদ দাওয়াহ থেকে প্রকাশিত ‘এসব হাদীস নয়’ বইয়ের ২য় খণ্ডে আলোচনা রয়েছে। আপনি তা দেখতে পারেন। তবে ‘জুমার দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে’- এ কথাটি সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। (দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৫৪)
কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো একদিনে একইসঙ্গে সারা পৃথিবীতে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে আপনার প্রশ্নে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা ঠিক নয়। কেননা কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার জন্য তো পূর্ণ এক দিনের ২৪ ঘণ্টার প্রয়োজন নেই; বরং এক মুহূর্তেও ঘটতে পারে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
وَمَا أَمْرُ السّاعَةِ إِلاّ كَلَمْحِ الْبَصَرِ أَوْ هُوَ أَقْرَبُ إِنّ اللهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
কিয়ামতের বিষয়টি কেবল চোখের পলকতুল্য; বরং তার চেয়েও দ্রুত। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান। -সূরা নাহল (১৬) : ৭৭
তাছাড়া দিন-রাতের ভিন্ন কোনো হিসেব অনুসারেও তো ঘটতে পারে। কেননা এখন পৃথিবীতে যে সৌরজাগতিক নিয়মে রাত ও দিন হয় তা এখনকার পৃথিবীর জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত একটি তাকবীনী ব্যবস্থা। কিন্তু এই সৌরজাগতিক দিন ও রাতের হিসেব ছাড়াও উর্ধ্বজগতে আল্লাহ তাআলার কাছে দিনের ভিন্ন গণনাও রয়েছে। এই বিশ্ব জগত সৃষ্টির আগে যেমন সৌরজাগতিক নিয়ম ছিল না তেমনি কিয়ামত নামক মহাপ্রলয় সংঘটিত হওয়ার মাধ্যমে জগৎ ধ্বংস হওয়ার পরও বর্তমানের সৌরজাগতিক নিয়ম আর বাকি থাকবে না।
কুরআনে কারীমে একাধিক স্থানে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তাআলা আসমান যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। আর এক সহীহ হাদীসে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে- আল্লাহ তাআলা এই জগতের কোন্ জিনিস কোন্ দিন সৃষ্টি করেছেন। এই আয়াত ও হাদীসে দিন দ্বারা উদ্দেশ্য কী? বলার অপেক্ষা রাখে না, চন্দ্র ও সূর্য সৃষ্টির আগে তো আর বর্তমানের সৌরজাগতিক দিন ও রাতের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। এমনিভাবে এই জগৎ ধ্বংসের পর আখেরাতের জগতে এখনকার সৌরজাগতিক ব্যবস্থা ও হিসেব বাকি থাকবে না। হাশরের ময়দান সম্পর্কে কুরআনের এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
تَعْرُجُ الْمَلائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ.
-সূরা মাআরিজ (৭০) : ৪
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَإِنَّ يَوْمًا عِندَ رَبِّكَ كَأَلْفِ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّونَ.
-সূরা হজ্ব (২২) : ৪৭
যা হোক বোঝা গেল, বর্তমান পৃথিবীর সৌরজাগতিক দিন-রাত ছাড়াও ঊর্ধ্বজগতে ভিন্ন গণনার দিন থাকা সম্ভব এবং আছে। আর সেই ঊর্ধ্বজাগতিক হিসেব অনুসারেও তো জুমার দিন কিয়ামত ঘটতে পারে- والله أعلم (আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত) এমনটা অসম্ভব কিছু নয়। কিয়ামতের আগে তো কত অস্বাভাবিক ও অলৌকিক ঘটনাই ঘটবে। এমনকি এই সূর্য একদিন পূর্ব দিক থেকে উদিত না হয়ে পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে।