ইবনে সাইর - জামিআ রাহমানিয়া আরাবিয়া মুহাম্মাদপুর ঢাকা-১২০৭
প্রশ্ন
আমি হেদায়া আওয়ালাইন জামাতে পড়ি, যা দরসে নিযামীর মাসআলা বিষয়ক প্রায় শেষ স্তরের কিতাব। এর প্রথম খণ্ডে ত্বহারাত, ইবাদাত সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, ফুরূআত বিলআদিল্লা আয়ত্ত করার চেষ্টা করছি, কিন্তু আমার প্রশ্ন হল :
ক) দ্বিতীয় খণ্ডে কিছু বাব রয়েছে যেমন তাফবীযে তালাক, ফসলূন ফিল ইখতিয়ার ফিল আমরি বিল ইয়াদ ইত্যাদিতে উল্লেখিত আরবী আলফাযগুলো সম্পর্কে দীর্ঘ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ জানার ফায়েদা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কতটুকু? এবং কীভাবে পড়লে ফায়দা বেশি হবে?
আগামীতে শেষ দুটি খণ্ড পড়ার নিয়ত আর তার সাথে অনেক আধুনিক মাসাইলের সম্পর্ক রয়েছে। যেমন ইলমুল ইকতিসাদে বিশেষ করে মাহারাত অর্জন করার খেয়াল, যেমন শাইখুল ইসলাম দা.বা. বলেছেন। এজন্য এখন থেকেই কোন পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সাথে পরিচিতির জন্যে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পরি এ ব্যাপারে হযরতের সুপরামর্শ কামনা করি।
উত্তর
আপনি যেসব অধ্যায়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করেছেন সেখানে আরবী ইসতিলাহ ছাড়াও অনেক ফিকহী হুকুম আহকাম ও দলীলাদিও বিদ্যমান রয়েছে। এগুলোর ফায়েদা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া প্রশ্নোক্ত আরবী ইসতিলাহগুলোও ফিকহে ইসলামীর গুরুত্বপূর্ণ অবিচ্ছেদ্য অংশ। কুরআন ও সুন্নাহ থেকেই যার আহকাম উৎসারিত হয়েছে। অতএব আরবী এই ইসতিলাহ বা পরিভাষার আলোকে স্থান ও কাল ভেদে বিভিন্ন ভাষায় প্রচলিত এর সম অর্থের পরিভাষা ও ইংগিত ইশারার অর্থ অনুধাবন করে এর শরয়ী হুকুম আহকাম জেনে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ফিকহে জাদীদ কখনো ‘ফিকহে ক্বাদীম’ থেকে ‘বে-নিয়ায হতে পারে না।
হিদায়া পড়ুয়া একজন তালেবে ইলমের উচিত, প্রথমত উস্তাযের কাছ থেকে হেদায়ার মূল আরবী পরিভাষাগুলো বোঝার পর আমাদের দেশে প্রচলিত পরিভাষা ও ইশারা-ইঙ্গিত এবং প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইনের বিবাহ-তালাক সংক্রান্ত আইন ও নিয়মগুলো জেনে নেওয়া। সাথে সাথে ঐ পারিবারিক আইনের যে সব ধারা-উপধারা কুরআন ও সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক, তার জন্য মাওলানা মুফতী তাকী ওসমানী দামাত বারাকাতুহুম-এর অনন্য কিতাব ‘হামারে আয়েলী মাসায়েল’ও পড়ে নেয়া জরুরি।
দ্বিতীয়ত কিফায়াতুল মুফতী, ইমদাদুল ফাতাওয়া বা এই ধরনের উপমহাদেশে সংকলিত অন্য কোনো ফাতাওয়ার কিতাবের এই সংক্রান্ত অধ্যায়গুলো অধ্যয়ন করা। এছাড়া দেশ বা অঞ্চল ভেদে এই সংক্রান্ত আরো যে সব ইসতিলাহ প্রচলিত, প্রয়োজনের সময় সেগুলোও কোনো বিজ্ঞ মুফতী সাহেবের শরণাপন্ন হয়ে জেনে নিতে হবে। তাহলে সহজে হিদায়ার এই ধরনের মাসআলাগুলোর প্রয়োগ-ক্ষেত্র ও উপকারিতা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ হবে ইনশাআল্লাহ।
এই জন্য আপনি হেদায়ার শেষ দুই খণ্ডের সাথে ফাতহ মুহাম্মাদ লাখনোভীর ‘ঈতরে হিদায়া’ নিয়মিত মুতালাআয় রাখার চেষ্টা করবেন। আর ইলমুল ইকতিসাদ বিষয়ের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে মাওলানা হিফযুর রহমান সিওহারবী রাহ. রচিত ‘ইসলাম কা ইকতিসাদী নেযাম’ (ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা) পড়ে নিন। আরো ভালো হয়, ইসলামী অর্থনীতির পাঠের সাথে সাধারণ অর্থনীতির কোনো বই অধ্যয়নে রাখা, যাতে ইসলামের সাথে প্রচলিত অর্থনীতি ও এর অসমতা সম্পর্কেও আপনি ধারণা লাভ করতে পারেন। এজন্য সাধারণ অর্থনীতির উপর উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারী সিলেবাসভুক্ত কোনো অর্থনীতির বইও অধ্যয়ন করতে পারেন।