মুহাম্মাদ বুরহানুদ্দীন বিন সা‘দ - জামিয়া মাদানিয়া, ফেনী
প্রশ্ন
আল্লাহ হুযুরকে আজীবন সুস্থতার সাথে ইলমে দ্বীনের খেদত আঞ্জাম দেওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন। হুযুর! আমাকে নি¤েœর সমস্যাগুলোর সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন। (ক) কুদূরী কিতাবটি কীভাবে পড়লে কিতাবটি পড়ার উদ্দেশ্য অর্জিত হবে?
(খ) আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন যে, আরবী সাহিত্যে মাহারাত অর্জন করবো। কিন্তু আরবী চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় মনটা প্রায় সময় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। তাই হুযুরের কাছে বিনীত নিবেদন এই যে, কীভাবে আরবী চর্চা করলে আমি আরবী সাহিত্যে পূর্ণ মাহারাত অর্জন করতে পারবো?
(গ) আমাদেরকে মাওলানা সফিউল্লাহ ফুয়াদ ছাহেব-এর তালীকযুক্ত কাসাসুন নাবিয়্যীন ৩য় ও ৪র্থ খ- পড়ানো হয়। কিতাবদ্বয় কীভাবে পড়লে ফায়দা হবে?
(ঘ) মুজা‘আফের জন্য হরফে ইল্লত না হওয়া কি শর্ত? حيى শব্দটি কি মুজা‘আফ হতে পারে?
উত্তর
(ক) মুখতাসারুল কুদূরী রচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ ফিকহী মাসআলাসমূহ বোঝা এবং সেগুলো মুখস্থ করা। তাই এ কিতাবে আপনার প্রধান কাজ হবে - প্রথমে আপনি কিতাব ‘হল’ করবেন এবং সুস্পষ্টভাবে কিতাবের মাসআলাগুলো বুঝে নিবেন। এরপর মুযাকারা ও আলোচনার মাধ্যমে বা খাতায় নোট করে মাসআলাগুলো মুখস্থ করবেন। কিতাবে ব্যবহৃত ফিকহী পরিভাষাসমূহ এবং সেগুলোর অর্থ ও উদ্দেশ্য যথাযথভাবে বুঝে নিবেন এবং মুখস্থ করবেন।
মোটকথা, কুদূরীর মাসায়েল ও পরিভাষা ভালোভাবে বুঝে কণ্ঠস্থ করাই আসল কাজ। এর সাথে ভিন্ন মুতালাআর দরকার নেই। দরসেই উস্তাযের কাছ থেকে মাসআলাসমূহ ভালোভাবে বুঝে নিবেন।
(খ) মূল বিষয় হলো, কিতাব বোঝার যোগ্যতা এবং অন্যকে বোঝানো ও কিতাবের বিষয়গুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপনের যোগ্যতা। এ দুটি যোগ্যতা যদি কারো মধ্যে থাকে তাহলে এরপর আরবী সাহিত্যে মাহারাত অর্জনের জন্য প্রয়োজন হবে সাহিত্যের ফিতরি যওক, আরবী সাহিত্যের কিছু গ্রন্থের ইযাফী মুতালাআ। বলা ও লেখার অনুশীলন এবং আদবী যওকের অধিকারী কোনো ব্যক্তির সোহবত। আরবী আদবের ইযাফী মুতালাআ এবং তামরীন তো আপনি আপনার অবস্থা সম্পর্কে পূর্ণ অবগত এমন একজন মুশফিক উস্তাযের নেগরানীতে জারি রাখতে পারেন। এরপর যখন সুযোগ হবে তখন উস্তাযের পরামর্শে কোনো আদীবের সোহবতে থেকে ইস্তেফাদা করতে পারেন। আলকাউসারের গত জানুয়ারী সংখ্যায় ‘আরবী সাহিত্য চর্চা : কিছু কথা’ শিরোনামে যে লেখাটি ছাপা হয়েছে তা থেকেও আপনি আরবী সাহিত্য চর্চার একটি ধারণা পেতে পারেন।
(গ) ‘কাসাসুন নাবিয়্যীন’ কিতাব কীভাবে পড়তে হবে সে সম্পর্কে কিছু কথা কিতাবের শুরুতে মাওলানা সফীউল্লাহ ফুয়াদ সাহেবের ভূমিকায় রয়েছে। এ কিতাবের প্রধান উদ্দেশ্য হল, বিশুদ্ধ আরবী পঠন ও কিতাবে বর্ণিত ঘটনাবলী এবং সেগুলোর শব্দ ও ভাষা, তা‘বীর ও বাকরীতি আত্মস্থ করা। কিতাবটির পঠন-পাঠনের পদ্ধতি সম্পর্কে আলকাউসারের (যিলকদ ১৪৩৬/ সেপ্টেম্বর ২০১৫) শিক্ষার্থীদের পাতায় মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত বারাকাতুহুম-এর দিকনির্দেশনামূলক লেখা ছাপা হয়েছে, আপনি তা দেখে নিতে পারেন।
(ঘ) সরফ শাস্ত্রের পরিভাষায় ‘মুজা‘আফ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় এমন ‘সহীহ’ শব্দের জন্য যার মূল হরফের মধ্যে একই হরফ তাকরার হয়। আর ‘মু‘তাল’ (হরফে ইল্লত বিশিষ্ট) শব্দের মূল হরফের মধ্যে হরফে ইল্লত যদি তাকরার হয় তবে তাকে পরিভাষায় ‘লাফিফ’ বলা হয়। এখন ঐ হরফে ইল্লত দুটি যদি আলাদা আলাদা বসে তবে তাকে বলা হয় ‘লাফিফে মাফরূক’। যেমন: وقى، وعي আর যদি পাশাপাশি একসাথে বসে তবে তাকে বলা হয় ‘লাফিফে মাকরূন’। সুতরাং عيّ، حيّ، جوّ এই শব্দগুলোকে পরিভাষায় লাফিফে মাকরূন বলা হয়। দ্রষ্টব্য: আসসরফুল কাফী ৪৪-৪৫ তাইসীরুল সরফ পৃ. ৩১।