সফর ১৪৩৭ || ডিসেম্বর ২০১৫

মুহাম্মাদ আব্দুল আযীয - হাটহাজারী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

প্রশ্ন

হযুর! আশা করি ভালো আছেন, আল্লাহ আপনার হায়াতে বরকত দান করুন।

আমি এ বছর দাওরায়ে হাদীস পড়ি। হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে একটি চিহ্ন দেখতে পাই যা অন্য কিতাবেও মাঝে মাঝে দেখা যায়। তা হল ( نــ   ) চিহ্ন । এখন আমার জানার বিষয় হল,

(ক) এই চিহ্ন দিয়ে যেই টীকা লেখা হয় তা কার লেখা, কিতাবের মূল হাশিয়া যিনি লিখেছেন তাঁর লেখা না অন্য কারো?

(খ) এ চিহ্ন দ্বারা কি নুসখাউদ্দেশ্য না অন্য কিছু?

(গ) মূল ইবারতে যা আছে তা অধিক শুদ্ধ নাকি টীকায় যা আছে তা অধিক শুদ্ধ? কোনো কোনো কিতাবে তো উভয়টির মাঝে অধিক তফাত দেখা যায়। যেমন কোথাও মূল ইবারতে আছে এক বচন আর টীকায় বহুবচন। আবার কোথাও ইবারতে আছে মুযাককার আর টীকায় আছে মুআন্নাছ। কোনো কোনো জায়গায় শব্দেরও পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন, বুখারী শরীফ ২য় খণ্ড পৃ. ৬৫৭-এ মূল ইবারতে আছে- فجلس يمسح النوم  আর টীকায় আছে  فجعل

(ঘ) আমরা হাদীস পড়তে, লিখতে বা মুখস্থ করতে কোনটার দিকে লক্ষ্য রাখবো?

(ঙ) এ টীকা যিনি লিখেছেন তা নিজের থেকে সংশোধন করেছেন নাকি অন্য কোনো নুসখা থেকে? জানালে খুবই উপকৃত হব।

(চ) আবু দাউদ শরীফের হাশিয়া কে লিখেছেন? তিনি কোন মাযহাবের ছিলেন? তার সংক্ষিপ্ত জীবনী আলোচনা করলে কৃতজ্ঞ থাকবো।


 


উত্তর

(ক-খ) সহীহ বুখারীর যে নুসখাটি হিন্দুস্তানে প্রচলিত তা মাওলানা আহমদ আলী সাহারানপুরী রাহ. (১২৯৭ হি.) কর্তৃক তাসহীহকৃতযিনি কিতাবের উপর হাশিয়াও লিখেছেন। এর মতন ও হাশিয়ায় (نــ) চিহ্ন রয়েছে সেটি نسخة শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলচিহ্নিত শব্দের ক্ষেত্রে নুসখার ইখতেলাফ ও বিভিন্নতা নির্দেশ করা।

(গ-ঘ) নুসখার ইখতিলাফের ক্ষেত্রে কোনটি বেশি সহীহ ও অগ্রগণ্য তা সংশ্লিষ্ট উসূলের ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে হবে। যেমনযেটি অধিকাংশ নুসখায় থাকে বা অধিক মুতকান ও নির্ভরযোগ্য নুসখায় থাকবে সেটি অগ্রগণ্য হবে। কিংবা যেটি আরাবিয়্যাতের বিচারে সহীহ বা অধিক ফসীহ সেটি বেশি অগ্রগণ্য। কিংবা যে শব্দটিকে গ্রহণ করলে সিয়াক ও সিবাকের বিবেচনায় মতনের অর্থ সঠিক থাকে সেটি অগ্রগণ্য। যা হোক এ ধরনের ক্ষেত্রে শুরুহাতের শরণাপন্ন হতে হয়। এক্ষেত্রে ফাতহুল বারী,উমদাতুল কারী এবং ইরশাদুসসারী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

(ঙ) আহমদ আলী সাহারানপুরী রাহ. সহীহ বুখারীর নুসখা তাসহীহ করার সময় দশটি নুসখাকে সামনে রেখেছেন। একথা তিনি নিজে কিতাবের এক জায়গায় নুসখার ইখতেলাফ বয়ান করার প্রসঙ্গে বায়নাস সুতুরে (দুই লাইনের মাঝখানে) উল্লেখ করেছেন। দেখুন ১ম জিলদ পৃ. ১৭-এর সাত ও আট নম্বর লাইনের মাঝখানে। এছাড়াও তিনি কিতাবের শুরুহাতকে সামনে রেখেছেন। বিশেষত পূর্বোক্ত তিনটি শরহকে। তিনি কিতাবের শুরুতে তার মুকাদ্দিমার চতুর্থ ফছলে নুসখার ইখতেলাফ বর্ণনার জন্য ব্যবহৃত অন্যান্য রুমুয ও চিহ্নসমূহেরও উদ্দিষ্ট অর্থ বয়ান করেছেন।

(চ) আমাদের দেশে মাদরাসাগুলোতে সুনানে আবু দাউদের যে দুটি নুসখা প্রচলিত তার একটি মাওলানা ফখরুল হাসান গাঙ্গুহী রাহ.-এর التعليق المحمود নামক হাশিয়া সম্বলিত। এ নামটি নুসখার শুরুতে ও প্রত্যেক পৃষ্ঠার হাশিয়ার শেষে উল্লেখ রয়েছে।

আর অপর নুসখাটি হল মুহাম্মাদ হায়াতসাম্বলী রাহ.-এর হাশিয়া সম্বলিত। তার এই নাম কিতাবের সর্বশেষ হাশিয়ার শেষে উল্লেখ রয়েছে। তিনি মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরী রাহ. এবং মাওলানা ইয়াহইয়া কান্দলবী রাহ.-এর শাগরেদতার জীবনী জানার জন্য দেখুনআশেক ইলাহী রাহ.-এর العناقيد الغالية من الأسانيد العالية পৃ. ৬৬। আর মাওলানা ফখরুল হাসান রাহ. হলেন শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান রাহ.-এর সহপাঠী এবং নানুতুবী ও গাঙ্গুহী রাহ.-এর শাগরেদ। তাঁর ওফাত ১৮৯৮ হিজরী সনে। তাঁর জীবনী জানার জন্য দ্রষ্টব্য : নুযহাতুল খাওয়াতির ৮/২৫৪আলইমাম ইবনু মাযাহ ওয়া কিতাবুহুস সুনানমাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নুমানী রাহ. পৃ. ২৮০

এই সংখ্যার অন্যান্য শিক্ষা পরামর্শসমূহ পড়ুন