মুহাম্মাদ কাউসার আহমাদ - মাশিকান্দা, উজিরপুর, বরিশাল
প্রশ্ন
মুহতারাম, বর্তমানে আমি ফযিলত ২য় বর্ষের একজন তালিবুল ইলম। আজ থেকে তিন বছর পূর্বে যখন আমি কুরআন তরজমা পড়া শুরু করি তখন থেকেই এই ফনটি আমার প্রিয় ফন হয়ে ওঠে। সে হিসেবে তখন থেকে নিয়ে অদ্যবধি আমি আল-কাউসারে বর্ণিত এ ব্যাপারে দিক-নির্দেশনাসমূহ পরিপূর্ণ না হলেও যথাসাধ্য মেনে চলার চেষ্টা করেছি আলহামদু লিল্লাহ। আর মানসিকভাবে আমি তখন থেকেই তাখাস্সুসের জন্য এ বিষয়টি নির্বাচন করে রেখেছি এবং আমার উস্তাযের সাথে তখন মাশওয়ারাও করেছি। কিন্তু বর্তমানে যে বিষয়টি নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত ও মর্মাহত তা হল, আমার উস্তায ও অন্যান্য দুই একজন উস্তায ছাড়া প্রায় সকলেই যখন আমার এই মনোবাঞ্ছার কথা শুনেন তখনই বিভিন্ন বাক্যবাণে আমাকে জর্জরিত করেন। যেমন, কেউ বলেন, তাফসীর নিয়ে পড়ে জায়্যিদ তবকার ছাত্ররা। কেউ বলেন, বর্তমানে যুগের চাহিদা হচ্ছে ফিকহ ও হাদীস। অনেকে তো এর স্বপক্ষে প্রমাণস্বরূপ ‘মারকাযুদ দাওয়াহ’কে পেশ করে থাকেন। এমন আরো অনেক কথা, যা এই স্বল্প পরিসরে আমি বলতে অপারগ। এই প্রেক্ষিতে হুযুরের নিকট নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয়ে আমি জানতে একান্ত আগ্রহী। দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
ক) আলিম গায়রে আলিম নির্বিশেষে অধিকাংশের ফিকহ, হাদীস ও তাফসীরের ব্যাপারে উপরোক্ত মনোভাবের বাস্তবতা কতটুকু? বাস্তবেই কি বর্তমানে তাফসীরের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নেই?
খ) মারকাযুদ দাওয়াহ’তে উলূমুত তাফসীর বিভাগ খোলার চিন্তা-ভাবনা কি মুহতারাম কর্তৃপক্ষের আছে? থাকলে তা কখন?
উত্তর
(ক) তাফসীর, হাদীস ও ফিকহ এই তিনটি শাস্ত্রই জরুরি। তাই প্রতিটি শাস্ত্রেই বিশেষজ্ঞদের একটি করে জামাত থাকা অপরিহার্য। প্রাকৃতিকভাবেই মানুষের ইস্তেদাদের মধ্যে যেমন তারতম্য রয়েছে তেমনি যওক ও রুচির বিভিন্নতাও রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেকে তার ইস্তেদাদ ও যওক অনুসারে কোনো একটি ফনের ইখতেসাস লাভের জন্য মেহনত করবে। সুতরাং এ নিয়ে তর্ক-বির্তক অবান্তর। এ প্রসঙ্গে একটি জরুরি হেদায়েত আপনি শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ রাহ.-এর কিতাব ‘আলউলামাউল উযযাব’-এ ইমাম নববী রাহ.-এর জীবনীতে পাবেন। শায়খ এ বিষয়ে ইয়াকূত হামাবী রাহ.-এর ‘মুজামুল উদাবা’ গ্রন্থের মুকাদ্দিমা থেকে একটি ইবারত নকল করেছেন, যা তিনি ইলমে আদব বিষয়ে তাসনীফের সমালোচনা কারীদের জওয়াবে বলেছেনÑ
"وإني لجِدّ عالمٍ ببغيض يندّد ويزري عليّ، ويقبل بوجه اللائمة إلي ممن قد أشرب الجهل قلبه، واستعصى على كرم السجية لبّه، يزعم أن الإشتغال بأمر الدين أهم ونفعه في الدنيا والآخرة أعم، أما علم أن النفوس مختلفة الطبائع متلونة النزائع، ولو اشتغل الناس كلهم بنوع من العلم واحد لضاع باقيه ودرس الذي يليه، وأن الله جل وعز جعل لكل علم من يحفظ جملته وينظم جوهرته، والمرء ميسر لما خلق له "
যেকোনো প্রয়োজনীয় ইলম ও ফনের মাহারাত ও ইখতেসাস হাসিলের উদ্দেশ্যে মেহনত করা প্রসঙ্গে ইমাম ইবনু আতিয়্যাহ রাহ. তার রচিত ‘আল মুহাররারুল ওয়াজিয’ তাফসীর গ্রন্থের মুকাদ্দিমায় বলেছেন Ñ
رأيت أن من الواجب على من احتبى وتخير من العلوم، واجتبى أن يعتمد على علم من علوم الشرع، يستنفد فيه غاية الوسع، يجوب آفاقه، ويتتبع أعماقه، ويضبط أصوله، ويحكم فصوله، ويلخص ما هو منه، أو يؤول إليه، ويعني بدفع الاعتراضات عليه، حتى يكون لأهل ذلك العلم كالحصن المشيد، والذخر العتيد، يستندون فيه إلى أقواله، ويحتذون على مثاله.
এরপরই ইবনু আতিয়্যাহ রাহ. ইলমুল কুরআনের ফযীলতও বয়ান করেছেন। আশা করি উপরোক্ত উদ্ধৃতি দুটি পড়ার পর আপনার পূর্ণ প্রশান্তি লাভ হবে ইনশাআল্লাহ।
(খ) ভাই, প্রয়োজনীয় ইলম ও ফন তো অনেক। কিন্তু প্রতিটি ফনের জন্য স্বতন্ত্র বিভাগ খোলা এক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সহজসাধ্য নয়। সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোনো একটি ফন প্রয়োজনীয় হওয়া সত্তে¡ও যদি কোনো কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানে ঐ ফনের পাঠদানের ব্যবস্থা না থাকে তবে তা ঐ প্রতিষ্ঠানের যিম্মাদারদের কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ হওয়া প্রমাণ করে না।
মারকাযুদ দাওয়াহ-এর অনেক পরিকল্পনার মধ্যে একটি পরিকল্পনা হল, ‘কিসমুত তাখাসসুস ফী উলূমিল কুরআন’ নামে স্বতন্ত্র একটি বিভাগ খোলা। আপনি দুআ করুন উপায় উপকরণের ব্যবস্থা হয়ে গেলে এই বিভাগটি খোলা হবে ইনশাআল্লাহ।