আবদুল্লাহ - গুলশান, ঢাকা
প্রশ্ন
ক. আমরা যে দরসের মধ্যে ‘খাসিয়াতে আবওয়াব’-এর জন্য ‘ফুসূলে আকবরী’ জাতীয় কিতাব পড়ে থাকি তা থেকে ওই বিষয়টি আত্মস্থ করা কতটুকু সম্ভব? তাছাড়া ‘খাছিয়াতে আবওয়াব’ সম্পর্কে জানার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? মনে তো হয় যে, এর অনেক প্রয়োজন রয়েছে। এর জন্য তামরীনী কোনো কিতাব আছে কি যার সাহায্যে এর মাকসাদ পর্যন্ত পৌঁছা যাবে?
হযরত দা.বা. কাছে বিনীত দরখাস্ত যদি এ ব্যাপারে সুপরামর্শ দিতেন তাহলে কৃতজ্ঞ হতাম।
খ. আমাদের মাদরাসায় আরবী প্রথম কিতাব হিসেবে ‘বাকূরাতুল আদব’ পড়ানো হয়। এখন এর দ্বারা তো তেমন কোন ফায়দা পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে তো তামরীনও তেমন নেই। এমনিভাবে আরেকটি কিতাব হল ‘রাওযাতুল আদব।’ এক্ষেত্রে কোন কিতাবটি ‘রওযা’এর স্থানে নিসাবের জন্য উপকারী হবে।
এখন আমরা যারা ছাত্ররা আছি তাদের কী করণীয়? মাদরাসা কর্তৃপক্ষরা সম্ভবত আকাবিরদের ‘তরয’ মনে করে এড়িয়ে যান। এমনিভাবে মাতৃভাষা শেখাকে জরুরি মনে করছেন না। এ ব্যাপারে আপনার সদুপদেশ প্রত্যাশা করছি। আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করে শেষ করছি।
উত্তর
ক. ‘মুজাররাদ’ এর বাবগুলোতে ‘খাসিয়াত’ বলতে কিছু আলামতকে বোঝানো হয়। যাতে তালিবে ইলমদের একটি ধারণা সৃষ্টি হয় যে, কোন ধরনের ‘ফেল’ কোন ধরণের ‘বাব’ থেকে আসে। এতে‘মাজী’ ও ‘মুযারি’- এর ‘আইন কালিমায়’ কী হরকত হবে তার একটা অনুমান ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। যদিও এ বিষয়ে ইয়াকীনী ইলম লুগাতের কিতাব থেকেই অর্জন করতে হবে।
‘ছুলাছী মাযীদ ফীহ, গায়রে মুলহাক’-এর বাবগুলোতে ‘খাসিয়াত’ বলতে ওই অর্থগুলো বুঝানো হয় যেগুলো নতুন অক্ষর সংযুক্তির কারণে সৃষ্টি হয়। ‘মুজাররাদ’-এর সঙ্গে যখন নতুন অক্ষর যুক্ত হয়ে মাযীদ ফীহ তৈরি হয় তখন কিছু নতুন অর্থ সৃষ্টি হয়। ওই অর্থগুলোই ‘খাসিয়াত’ শব্দে নির্দেশ করা হয়েছে। ইবনুল হাজিব রহ. ‘আশশাফিয়া’ তে ‘খাসিয়াত’ কে ‘মাআনী’ শব্দে উল্লেখ করেছেন। তদ্রূপ আবু হায়্যান আনদালুসী ‘ইরতিশাফুয যারাব মিন লিসানিল আরব’ গ্রন্থে (১/৭৬)এই আলোচনার শিরোনাম দিয়েছেন-‘বাবু আবনিয়াতিল আফআল ওয়ামা জাআত লাহু মিনাল মাআনী’।
এখানে ‘মাআনী’ বলতে ধাতুগত অর্থ উদ্দেশ্য নয়; বাবের ‘ওজন’ ও কাঠামোগত অর্থ উদ্দেশ্য। অর্থাৎ ধাতুগত দিক থেকে এ শব্দের অর্থ যাই দাঁড়াক না কেন, তার অন্তর্নিহিত ব্যাঞ্জনায় বাবের কাঠামোগত সূর ধ্বনিত হবে।
এ বিষয়ে অবহিত হলে আরবী ভাষায় পরিপক্কতা ও পারদর্শিতা অর্জনে সাহায্য পাওয়া যায়। পূর্বাপরের সঙ্গে মিলিয়ে আরবী ইবারতের ফে’লসমূহের মর্ম নির্ধারণ করা সহজ হয় এবং সহজে লুগাতের কিতাব থেকে ফে’লসমূহের মর্ম অনুধাবনের যোগ্যতা অর্জিত হয়। এজন্য এ আলোচনা, যেমনটি আপনিও বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ এবং তা পড়া ও অনুধাবন করার প্রয়োজন রয়েছে।
আমি শায়খ আবদুল ফাত্তাহ রহ.-এর কাছে শুনেছি, এক আরব আলিম অসুস্থ ছিলেন। তাকে দেখতে আসা একজন দুআ করছিলেন-‘আল্লাহুম্মা আশফিহি’ (বাবে ইফআল থেকে)! বেচারা ‘বাবে ইফআল’ এর একটি অর্থ ‘সালবে মাখায’ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না তাই তিনি নিজের অজান্তেই তার সুস্থতার স্থলে মৃত্যু কামনা করছিলেন। ওই আরব আলিম তার দুআ শুনে বলতে লাগলেন-‘আল্লাহুম্মা আমীন আলা নিয়্যাতিহী, লা আলা লাফযিহ’।
ফুসূলে আকবরী যদি আপনি উস্তাদের কাছে বুঝে শুনে পড়তে পারেন তাহলে এ কিতাবের মাধ্যমেও ‘খাসিয়াত’ সম্পর্কে ধারণা লাভ হবে। শুনেছি, মাওলানা রোকনুদ্দীন ছাহেব মুদ্দাযিল্লুহুম সাবেক উস্তাদ, বড় কাটারা মাদরাসা তার কিতাব-‘কাওয়াইদুস সারফে’ খাসিয়াতের আলোচনা সহজ করে লিখেছেন। জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া-এর মুহতামিম মাওলানা আবদুল হালীম ছাহেব বুখারী মুদ্দাযিল্লুহুমও এ বিষয়ে একটি স্বতন্ত্র রিসালা-‘আসান খাসিয়াতে আবওয়াব’ নামে লিপিবদ্ধ করেছেন। তবে এ কিতাবগুলো দেখার সুযোগ আমার হয়নি।
আপনার একটি প্রশ্ন ছিল, এ বিষয়ে তামরীনী কোনো কিতাব আছে কি না? আমার জানা নেই। তবে একজন বুদ্ধিমান তালিবে ইলম শুধু ‘আলমু’জামুল ওয়াসীত’ এর সাহায্যেই এক একটি‘খাসিয়াতে’-র বহু উদাহরণ সংগ্রহ করতে পারবে। তামরীন বা অনুশীলন তো আসলে তালিবে ইলমের নিজের কাজ। নিজে মেহনত করে তামরীন করলে তবেই এর উপকারিতা পাওয়া যাবে।
কুরআন মজীদ তেলাওয়াতের সময়ও যদি এ বিষয়ে দৃষ্টি দেন তাহলেও অনেক উদাহরণ সংগ্রহ হবে। এরপর এ বিষয়ে কোনো তামরীনী কিতাব আপনি নিজেও তৈরি করে ফেলতে পারবেন।
খ. মেরে ভাই, তালিবে ইলমের কাজ হল, সে যে প্রতিষ্ঠানে পড়ছে সেখানকার নিয়ম-কানুন এবং যে উস্তাদদের কাছে পড়ছে তাঁদের নির্দেশনা মোতাবেক চলা। ‘বাকুরা’ ও ‘রাওযা’ যদি আপনাদের ওখানে নিসাবে থেকে থাকে তাহলে উস্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী মেহনত করে পড়তে থাকুন। ইনশাআল্লাহ ফায়েদা হবে।
আপনার তা’লীমী মুরববী যদি অনুমতি দেন তাহলে আপনি পরিপূরক অনুশীলনী হিসেবে‘আততরীক ইলাল আরাবিয়্যা’ ও ‘আততামরীনুল কিতাবী আলাত তরীক ইলাল আরাবিয়্যা’ পাশে রাখতে পারেন। ইনশাআল্লাহ এতে ফায়েদা বৃদ্ধি পাবে।
আপনার এ কথা-‘মাদরাসা কর্তৃপক্ষরা সম্ভবত আকাবিরদের তরয-তরীকা মনে করে এড়িয়ে যান। এমনিভাবে মাতৃভাষা শিক্ষাকে জরুরি মনে করছেন না।’ আমার কাছে ভালো লাগেনি। কথাবার্তার এ ঢং তো ভালো নয়। তাছাড়া এ ধরনের মন্তব্য যে মানসিকতা প্রকাশ করে সেটাও ভালো মানসিকতা নয়। সমালোচনা ও পর্যালোচনার একটি সময় আছে। এর জন্য যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। আর তা ফলপ্রসূ হওয়া নির্ভর করে এ বিষয়ক অনেক ‘আদব’ মেনে চলার উপর। আমরা যারা তালিবে ইলম, আমাদের সীমার মধ্যেই থাকা উচিত।
আমি যদ্দূর জানি তাতে একথা ঠিক নয় যে, মাদরাসা-কর্তৃপক্ষরা ছাত্রদের মাতৃভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না। তবে তারা এ বিষয়ে ছাত্রদেরকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দেওয়ার পক্ষপাতী নন। এটা অবশ্যই সঠিক। কেননা, মাতৃভাষা চর্চা হয়তো প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে হতে হবে কিংবা ছাত্রের তা’লীমী মুরববীর তত্ত্বাবধানে। অধ্যয়ন যদি ‘পরিছন্ন’ না হয় এবং নিয়ম অনুযায়ী না হয় তবে এতে কোনো সুফল আসে না। নিজেই ভাবুন, এ বিষয়টি সঠিক তত্ত্বাবধান ছাড়া সম্ভবপর কি না।