মুহাম্মদ জিয়াউল হক - ইফতা-১ম বর্ষ আলজামেয়া ইসলামিয়া, পটিয়া
প্রশ্ন
বাদ তাসলিম আরয এই যে, আমি জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া মাদরাসার ইফতা বিভাগের একজন নগণ্য ছাত্র। আমি আপনাদের নিকট একখানা পত্র পাঠিয়ে জানতে চাই যে, আমি কিভাবে কিতাব মুতালাআ করব এবং কোন পদ্ধতিতে মাসআলার উসূল মুখস্থ এবং যবত্ করব? এ ব্যাপারে অল্প কিছু ধারণা দিলে বান্দার খুবই উপকার হত। কোন কোন কিতাব মুতালাআ করলে বেশি ফায়দা এবং উপকার হবে ঐ সমস্ত কিতাবের নাম পত্রিকায় ছাপিয়ে দিলে আমি উপকৃত হব। আর বেশি কিছু লিখে আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করতে চাই না।
আর উপরোক্ত সমস্যাগুলোর সমাধান তাড়াতাড়ি পত্রিকায় ছাপালে উপকৃত হব।
উত্তর
মাসআলার ‘আছল’ তালাশ করার দুই অর্থ হতে পারে। এক. মাসআলার শরয়ী দলীল তালাশ করা। দুই. মাসআলাটি শরীয়তের মূলনীতিগুলোর মধ্যে কোন নীতির আওতায় পড়ে তা অন্বেষণ করা।
প্রথম বিষয়টি ফিকহের বিস্তারিত দলীল ও প্রমাণসমৃদ্ধ গ্রন্থসমূহে পাবেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, আপনি যদি ‘হিন্দিয়া’ বা ‘রদ্দুল মুহতার’ গ্রন্থে কোনো মাসআলা পড়ে থাকেন তাহলে তার দলীল জানার জন্য এ মাসআলা হিদায়া, মাবসূতে সারাখসী, ও বাদায়ে’ থেকে বের করুন। সেখানে দলীল পেয়ে যাবেন। এরপর আরো অধিক জানার জন্যে ফাতহুল কাদীর, বিনায়া, নসবুর রায়া ইত্যাদি গ্রন্থ দেখবেন। এই কিতাবগুলোর সাহায্যে আহকামুল কুরআন ও তাফসীরের বিশদ গ্রন্থাবলির মুরাজাআত করতে পারবেন। শুধু ‘আলমুসান্নাফ’ ইবনে আবী শাইবা ও ‘আলমুসান্নাফ’আবদুর রাযযাক- যা অত্যন্ত বুনিয়াদী গ্রন্থ ও কুতুবে সিত্তার আগে সংকলিত- এদুটি কিতাবেই শামী ও হিন্দিয়ার অসংখ্য মাসআলার স্পষ্ট দলীল পেয়ে যাবেন।
এই পন্থাটা, যা এখানে উল্লেখ করলাম, তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের জন্য কিতাব ঘাঁটাঘাঁটির অভ্যাস গড়ে তোলার একটি সহজ পন্থা। এর চেয়েও সহজতায় আগ্রহী হলে ‘ইলাউস সুনানে’র সাহায্য নিতে পারেন।
মাসআলার তামরীনের সময় শুধু ফিকহে মুজাররাদের কিতাব সমূহের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন না, দলীল-প্রমাণ বিষয়ক কিতাবাদি অধ্যয়নের অভ্যাস গড়ে তুলবেন। ইনশাআল্লাহ এতে অনেক উপকার হবে।
আর দ্বিতীয় বিষয়টি অর্থাৎ শরীয়তের মূলনীতি বোঝার ক্ষেত্রেও ‘হিদায়া’, ‘বাদায়ে’ ও ‘মাবসূতে সারাখসী’ মনোযোগের সঙ্গে অধ্যয়ন করলে উপকার হবে। এ প্রসঙ্গে মুতাকাদ্দীমীনের ‘শরহুল হাদীস’ বিষয়ক গ্রন্থাবলি ও আহকামুল কুরআনের তাহকীকী গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন খুবই ফলদায়ক হয়। যথা: জাসসাস ও ইবনুল আরাবীর ‘আহকামুল কুরআন’, কুরতুবীর ‘আলজামে’ লি আহকামিল কুরআন’, খাত্তাবী রহ. এর ‘মাআলিমুস সুনান’, ইবনে আবদুল বার রহ. এর ‘আততামহীদ’ ও‘আলইস্তেযকার’ ইবনুল আরাবীর ‘আলকাবাস’ ও মাম্বিজী কৃত ‘আলজামউ বাইনাল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ’ থেকে সাহায্য নেওয়া যাবে।
আর এ বিষয়ে সহজ ও সংক্ষিপ্ত পন্থা হচ্ছে, ‘আলকাওয়াইদুল ফিকহিয়্যাহ’ ও ‘আলআশবাহ ওয়ান নাযাইর’ শিরোনামে যে কিতাবগুলো রয়েছে সেগুলোর মধ্যে যা সহজ মনে হয় সে কিতাব বারবার অধ্যয়ন করা; বরং কোনো উস্তাদের নিকট থেকে পড়ে নিলে ভালো। এক সময় দেখবেন, কোনো মাসআলা সামনে এলে নিজেই বলতে পারবেন এ মাসআলার সম্পর্ক অমুক অমুক কায়েদার সঙ্গে।
আপনি এ প্রশ্নও করেছেন যে, মাসআলার ‘আছল’ কীভাবে মুখস্থ ও আত্মস্থ করবেন। এ প্রসঙ্গে পন্থা একটিই। তা হচ্ছে বারবার অধ্যয়ন, আলোচনা এবং খাতায় নোট গ্রহণ। তবে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কেননা, ইলমের প্রকৃতিই হল তা ধীরে ধীরে হাসিল হয়।
এজন্য ধীরে ধীরে সামনে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। আলাহ তাআলা আপনার মদদ করবেন।
সর্বশেষ দরখাস্ত এই যে, আপনি লেখার বিষয়েও কিছু অনুশীলনী অব্যাহত রাখুন। প্রতিদিন কিছু সময় এ বিষয়ে ব্যয় করুন। কেননা, এটাও প্রয়োজনীয় বিষয়।