রবিউল আখির ১৪৩১ || এপ্রিল ২০১০

মুহাম্মাদ তানিম আন্দালিব - ৪২/পি আজিমপুর এষ্টেট, ঢাকা-১২০৫

প্রশ্ন

আমরা লোকমুখে একটা ঘটনা শুনে থাকি যে, ইমাম বুখারী রাহ. যখন বোখারা শহরে বিভিন্ন মাসআলায় ফতোয়া দিতেন তখন জনৈক হানাফী ইমাম তাঁকে বারণ করেছিলেন। তবু তিনি ফতোয়া দিতে থাকেন। একসময় তিনি এক প্রশ্নের জবাবে দু’জন শিশুর একই বকরীর দুগ্ধপানের দ্বারা দুধের সম্পর্ক সাব্যস্ত হবে বলে ফতোয়া দেন। তার এই ফতোয়াকে কেন্দ্র করে বোখারাতে নাকি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। প্রশ্ন এই যে, উপরোক্ত বর্ণনাটি কি সঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আমাদের জানা মতে, যে সমস্ত কিতাবে উপরোক্ত ঘটনাটি পাওয়া যায় সেখানে এর কোনো সনদ বা সূত্রের উল্লেখ নেই। তাই ইমাম বুখারী রাহ.-এর মতো একজন ইমামের ক্ষেত্রে সনদবিহীন একটি ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ. বলেন, ولكنه لم يذكر سندها لا هو ولا غيره فيما أعلم ففي نسبتها للإمام البخاري وقفة অর্থাৎ আমার জানা মতে, কেউই এই ঘটনার সূত্র উল্লেখ করেননি। অতএব ইমাম বুখারী রাহ.-এর সঙ্গে এই ঘটনা যুক্ত করার বিষয়ে আমার দ্বিধা রয়েছে। (টীকা : আল-ইমাম ইবনু মাজাহ ওয়া কিতাবুহুস সুনান পৃ. ১২৯) ইমাম বুখারী রাহ.-এর সংকলিত সহীহ বুখারী ও অন্যান্য হাদীস-সংকলন পাঠকের সামনে রয়েছে। এসব গ্রন্থ থেকে তাঁর যে পাণ্ডিত্য প্রমাণ হয় এতে এ ধরনের ভুল অবিশ্বাস্যই মনে হয়। বিশেষত সহীহ বুখারীর ‘রাযা’ বা শিশুর দুগ্ধপান বিষয়ক অধ্যায়গুলোতে এর কাছাকাছি কোনো মাসআলারও অস্তিত্ব নেই। আল্লামা আবদুল হাই লাখনাভী রাহ. বলেন, وهي حكاية مشهورة في كتب أصحابنا ذكرها أيضا صاحب العناية وغيره من شراح الهداية لكني استبعد وقوعها بالنسبة الى جلالة قدر البخاري ودقة فهمه وسعة نظره وغور فكره مما لا يخفى على من انتفع بصحيحه وعلى تقدير صحتها فالبشر يخطئ এমনিভাবে শায়খুল হাদীস যাকারিয়া কান্ধলভী রাহ. লামেউদ দারারীর (১/১৩) ভূমিকায় লিখেছেন, ‘‘ওয়া ইসতিবআদুহা যাহিরুন।’’ অর্থাৎ এই ঘটনা বাস্তবতা বিরোধী মনে হওয়াই স্বাভাবিক। অতএব ইমাম বুখারী রাহ.-এর মতো জলীলুল কদর ইমামের সঙ্গে এ ধরনের সনদ ও সূত্রহীন ঘটনা যুক্ত করা থেকে বিরত থাকা জরুরি।

এই সংখ্যার অন্যান্য শিক্ষা পরামর্শসমূহ পড়ুন