মুহাম্মাদ মুহসিন উদ্দীন - ঝিনাইদহ
প্রশ্ন
প্রশ্ন : ২. ক) আমি একজন শরহে জামী জামাতের ছাত্র। আমাদের জামাতে ক. তরজমাতু মাআনিল কুরআন (শেষ ১০ পারা), খ. কানযুদ দাকাইক গ. নূরুল আনোয়ার (সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস) ঘ) শরহে জামী ঙ. শরহে তাহযীব চ. তালখীসুল মিফতাহ পড়ানো হয়। হযরতের নিকট আবেদন এই যে, আমরা উক্ত কিতাবগুলো কীভাবে পড়লে আয়ত্ত করা সম্ভব এবং কিতাবগুলোর সাথে কোন কোন শরাহ মুআলাআ করলে উপকৃত হতে পারব। প্রশ্ন : খ) ইরাবুল কুরআন বিষয়ক মুদ্রিত কিছু কিতাবের নাম নভেম্বর ’০৯ সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছিল। তার মধ্যে কোনটি আমাদের জন্য বেশি উপকারী হবে তা উল্লেখ করলে হযরতের নিকট চিরকৃতজ্ঞ থাকব।
উত্তর
ক) কিতাবী ইসতি’দাদ তৈরির প্রাথমিক ও মৌলিক স্তরটি আপনি পেরিয়ে এসেছেন। নেসাবভুক্ত কিতাবগুলোর দিকে নজর বুলালে আপনি দেখতে পাবেন, এখানে নাহব-ছরফের কোনো কিতাব নেই। শরহে জামী যদিও নাহুর কিতাব, তবে আমি একে ‘ফালসাফায়ে নাহু’র কিতাব বলাটাই শ্রেয় মনে করি। প্রায়োগিক ক্ষেত্রে যে ফালসাফার তেমন কোনো দখল নেই। যাই হোক, যেহেতু ‘কিতাবী ইসতিদাদ’ তৈরির মৌলিক স্তরটি আপনি পেরিয়ে এসেছেন এখন আপনার প্রধান কাজ হবে বাস-বক্ষেত্রে আপনার এই ইসতিদাদ কতটুকু অর্জিত হয়েছে তা যাচাই করে দেখা। আপনার পাঠ্যতালিকাভুক্ত সব কিতাবই যেহেতু আরবী ভাষায়, তাই সব কিতাবই এমনভাবে পড়তে হবে যাতে নাহবী-ছরফী কোনো দুর্বলতা আর না থাকে। কিতাবের সঠিক মর্ম ও মুসান্নিফের উদ্দেশ্য অনুধাবনে সব সমস্যা যাতে কাটিয়ে উঠতে পারেন এ জন্য নোটের সাহায্য নেওয়া একেবারে পরিত্যাগ করতে হবে। প্রত্যেকটি কিতাবের আরবী ‘মুআররা’ নুসখা পাশে রাখুন। প্রয়োজনে আরবী শরাহ, হাশিয়া ও সংশ্লিষ্ট উস্তাদের সহযোগিতা নিন। এ গেল একটি মৌলিক কথা। এবার আপনার নেসাবভুক্ত কিতাবগুলোর ব্যাপারে কিছু আরয করতে চাই। প্রথমত আপনাকে এজন্য মুবারকবাদ দেই যে, আপনি জামাতের কিতাবের মধ্যে ‘তারজমাতু মাআনিল কুরআন’-এর কথাই আগে উল্লেখ করেছেন। বাস্তবেও তা বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত। কিন্তু হায়! আজ তা বড় অমনোযোগ ও অবহেলার শিকার। যেহেতু শেষের দশ পারার পুরোটাই আপনার এই বছরের নেসাবভুক্ত তাই দীর্ঘ কোনো তাফসীরের পেছনে না পড়ে আপনার উচিত হবে, নিয়মিতভাবে প্রত্যেকটি আয়াতের অর্থ ও মর্ম অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া। যাতে একটি আয়াতও ছুটে না যায়। আর এজন্য আরবী ভাষায় জাবির জাযায়েরীকৃত ‘আয়সারুত তাফাসীর’ এবং ‘তাফসীরে উসমানী’ বা মাওলানা মুফতী তাকী উছমানী দা.বা.-কৃত ‘আছান তরজমায়ে কুরআন’ নিয়মিত পড়ুন। উর্দূ না বুঝলে এই দুটির বঙ্গানুবাদ অথবা এমদাদিয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত বঙ্গানুবাদ তো আপনার হাতের নাগালেই আছে। প্রাসঙ্গিক কোনো প্রয়োজনে ‘তাফসীরে ইবনে কাসীরের’ সাহায্য নিন। তবে শেষ দশ পারায় যে বিশেষ কাজটির প্রতি আপনাকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে তা হল, শেষ দিকের সূরাগুলোর গরীব শব্দগুলোর অর্থ ও তাহকীক ভালোভাবে আত্মস্থ করা। এজন্য লোগাতুল কুরআন বিষয়ের কোনো কিতাব সংগ্রহ করতে পারেন। দ্বিতীয় কিতাব কানযুদ দাকায়েক। এটি হানাফী ফিকহের প্রসিদ্ধ মতন। এটি পড়ার সময় কিতাবের মর্মার্থ বুঝার সাথে সাথে মুসান্নিফের নিজস্ব রুমুয ও ইশারাগুলো খুব ভালোভাবে বুঝতে চেষ্টা করবেন। সুরতে মাসআলা, হুকুম এবং ইখতেলাফে উলামা (যদিও তা দলীল ছাড়াই হোক না কেন) আত্মস্থ করতে হবে। আর শরাহর কথা বললে হিন্দুস্থানী নুসখার আরবী হাশিয়া ও আল বাহরুর রায়েক নিয়মিত মুতআলাআ করার মতো। নূরুল আনওয়ার (সুন্নাহ) এর মতনেই তো মানার-এর মূল মতনের বিস্তৃত ব্যাখ্যা রয়েছে। প্রয়োজনের সময় কামরুল আকমার তো আছে। তবে উসূলে ফিকহ যেহেতু ইলমে দ্বীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফন আর দরসে নেযামীর প্রায় শেষদিকের একটি কিতাব হল নূরুল আনওয়ার তাই কিতাবের মূল মতন ‘আলমানার’ হল করার জন্য এবং ফনের সঙ্গে তাআল্লুক গড়ে তোলার জন্য আল্লামা নাসাফী রাহ.-এরই লিখিত মানারের শরাহ ‘কাশফুল আসরার’ আর আবদুল মাজীদ তুরকমানীর সদ্য লিখিত কিতাব ‘দিরাসাতুন ফী উসূলিল হাদীস আলা মানহাজিল হানাফিয়্যাহ’ সংগ্রহ করে নিয়মিত মুতালাআ করতে পারলে ভালো হবে বলে মনে করি। আর শরহে জামীর জন্য হাওয়াশী মুতাফাররাকা ও শরহে তাহযীবের জন্য ‘তুহফায়ে শাহাজাহানী’ অনেকটা সহজ ও সাবলীল বলে মনে হয়। ‘তালখীসুল মিফতাহ’র জন্য সুবকী-কৃত ‘আরুসুল আফরাহ’ তাফতাযানীর ‘মুখতাছার’ থেকেও কিছুটা সহজ। এটিও আপনি সংগ্রহ করতে পারেন। উত্তর : খ) কোনটি বেশি উপকারী হবে-তা বলার জন্য আপনার ইসতিদাদ এবং এই বিষয়ে মুতালাআর জন্য কতটুকু সময় আপনি বের করতে পারবেন তা জানা জরুরি। তবুও বলি, মুহিউদ্দীন আদ-দরবেশ লিখিত ‘ইরাবুল কুরআনিল কারীম ওয়াবায়ানুহু’ একটি সহজলভ্য কিতাব। এই কিতাবে ‘ইরাব’ ছাড়াও লুগাত, বালাগাত-বয়ান ও কিছু ফাওয়ায়েদও পাওয়া যায়, যা একটি বাড়তি লাভ। আর যদি সংক্ষিপ্ত কোনো কিতাবের কথা বলেন তাহলে বৈরুতের দারুন নাফায়িস থেকে এক খণ্ডে প্রকাশিত মুহাম্মাদ আত-তাইয়িব আল-ইবরাহীমের ‘‘ইরাবুল কুরআনিল কারীম’’ সংক্ষিপ্ত অথচ সহজ একটি কিতাব। এটিও আপনি সংগ্রহ করতে পারেন। তবে ভালো হয় আপনার হাতের কাছে যদি এ বিষয়ক কয়েকটি কিতাব থাকে তবে আপনি নিজেই একটি আয়াত নিয়ে কয়েকটি কিতাব থেকে ইরাব সংক্রান্ত বহস পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কোনটির উসলুব আপনার জন্য সহজ হবে এবং তরজমা বোঝার জন্য সহায়ক হবে। এরপর তা আপনি নিয়মিত মুতালাআ করতে পারেন।