আব্দুল হাকীম - জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া
প্রশ্ন
গত ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় শিক্ষার্থীদের পাতায় ‘কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলার শানে ব্যবহৃত বহুবচনরূপী সর্বনামের অনুবাদ প্রসঙ্গ’ নামে একটি প্রবন্ধ পড়লাম। এ থেকে ইস্তেফাদা করেছি। তবে আমার একটি খটকার বিষয় হল, প্রবন্ধটিতে উর্দু ভাষার বাকরীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, উর্দুতে সম্মানার্থে আল্লাহ তাআলার শানে বহুবচনের সর্বনাম ব্যবহার হয়। আমার প্রশ্ন হল, এটি কি উর্দু ভাষার সর্বজন-স্বীকৃত রীতি নাকি ভিন্ন কোনো রায়ও রয়েছে? কারণ উর্দু ভাষায় অনেক সময় আল্লাহ তাআলার শানে একবচনের সীগার ব্যবহারও লক্ষ করা যায়। ‘রাহবারে উর্দু’ নামক কিতাবে তো আল্লাহ তাআলার শানে হাযের ও গায়েবের একবচনের যমীর ব্যবহার হওয়াকেই উর্দু ভাষার রীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
উত্তর
উত্তর : লক্ষ করলে দেখবো, উর্দু ভাষার প্রাচীন ও আধুনিক উভয় বাকরীতিতেই সম্মানার্থে একবচনের স্থলে বহুবচনের প্রয়োগ বহু রয়েছে। দৈনন্দিনের কথ্য ভাষায়ও এর ব্যবহার সুপরিচিত। সম্মান ও আদবের উদ্দেশ্যে যমীর ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে ইসম ও সিফাতেরও বহুবচনের রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন বলা হয়-
وہ بچارے کیا کہتے ،سن کر چپ ہو رہے- وہ مجھ سے بڑے ہیںحضرت ہمارے بڑے ہیں
‘মুবতাদা’ যদি কোন সম্মানসূচক শব্দ বা যমীর হয় তবে তার খবর-ফেয়েলটি বহুবচন ব্যবহৃত হয়। যেমন উর্দূতে বলা হয়-
رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم فرماتے ہیں- والد فرماتے تھے- ابا کہتے ہیں- آپ کے ابا اب کیسے ہیں؟ -آپ کی اما ں اب کیسی ہیں؟ مولوی صاحب ابھی تشریف نہیں لائے - آپ كب تک قیام فرمائیں گے- حضرت کب آئے؟
তবে মনে রাখতে হবে নযম ও কবিতায় সম্বোধনের জন্য সাধারণত ‘তু’ এই একবচনের যমীর ব্যবহৃত হয়। এমনকি বড় ব্যক্তিত্ব ও রাজা-বাদশাদের জন্যও।[1]
কিন্তু মহান আল্লাহ তাআলা যেহেতু এক অদ্বিতীয়-লাশরীক তাই তার শানে কী ধরনের সীগা ব্যবহৃত হবেন এ বিষয়ে উর্দুতে কিছু তফসীল রয়েছে। দুআর স্থলে আল্লাহ তাআলাকে খেতাব ও সম্বোধন করার জন্য সাধারণত এক বচনের সীগাই ব্যবহৃত হয়।[2] এছাড়া সাধারণ অবস্থায় এবং বিশেষত যখন গায়েব ও মুতাকাল্লিমের সীগা ব্যবহৃত হয়, তখন আল্লাহ তাআলার শানে সম্মানার্থে বহুবচনের সর্বনাম ও ক্রিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে আহলে ইলম ও লেখক-সাহিত্যিকদের মাঝে রুচিগত বিভিন্নতা লক্ষ করা যায়।
কেউ কেউ তো সাধারণ উর্দু বাকরীতির কারণেই সম্মানার্থে বহুবচনের ব্যবহারকে পছন্দ করে থাকেন। যেমন উর্দুতে এভাবে বলা হয়-
اللہ تعالی یوں ارشاد فرماتے ہیں
خداے پاک ہر چیز پر قادر ہیں
(দ্রষ্টব্য : লুগাতে রোযেমাররাহ, শামসুর রহমান ফারুকী, আঞ্জুমানে তারাক্কী উর্দু (হিন্দ) পৃ. ৮৩ এবং ৩০২
পক্ষান্তরে কতক আহলে ইলম ও লেখক-সাহিত্যিক আল্লাহ তাআলার শানে বহুবচনের পরিবর্তে একবচনের সর্বনাম ও ক্রিয়া ব্যবহার করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। দ্রষ্টব্য : মাহের আল কাদেরী কে তাবসেরে,সংকলক : তালিব হাশেমী, ১/৩৮ ও ৮৭ মারকাযী মাকতাবা ইসলামী পাবলিশার্স (দিল্লী)
হযরত থানবী রাহ. এক প্রসঙ্গে এ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। সে আলোচনার সারসংক্ষেপ হল, আল্লাহ তাআলার শানে একবচনের সীগাহ ব্যবহার করা আদব ও ইহতেরামের পরিপন্থী নয়; কারণ উর্দূভাষাভাষীদের মাঝে এধরনের ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। তেমনি বহুবচনের সীগাহ ব্যবহার করাও তাওহীদ পরিপন্থী নয়।
একবচনের সীগা ব্যবহারে তাওহীদের অর্থ বেশি ফুটে উঠে আর বহুবচনের সীগাহ ব্যবহারে মহিমা ও গৌরবের অর্থ বেশি পরিস্ফুট হয়। তবে তিনি তাঁর উস্তায মাওলানা ইয়াকূব নানুতুবী রাহ.-এর অনুকরণে আল্লাহ তাআলার শানে বহুবচনের সীগা ব্যবহারকে পছন্দ করতেন। তিনি আলোচনার শেষে বলেছেন-
مگر پھر بھی میں کسی ایک شق کو دوسرے پر ترجیح نہیں دیتا کیونکہ ممکن ہے کہ اپنے استادکی محبت کی وجہ سے اس شق کو پسند کر تا ہوں
দ্রষ্টব্য : আশরাফুত তাফসীর ৩/৮৯-৯০ (বিভিন্ন আয়াত সম্পর্কে থানবী রাহ.-এর তাফসীরের সংকলন)
[1] দেখুন,দরইয়ায়ে লাতাফাত,মীর ইনশাউল্লাহ খাঁন ইনশা,পৃ.২৪০-২৪১,আঞ্জুমানে তরাক্কী উর্দু (হিন্দ),কাওয়াদে উর্দু,ড. মওলবী আব্দুল হক,পৃ. ১৭২,২০০,২৬৩,;উর্দু সরফ ও নাহু পৃ. ৭৪,১১৮,১৩৭,১৫৩;কাওয়াদে উর্দু,ফেদা আলী খাঁন,পৃ. ১০৪,খোদা বখশ ওরেয়েন্টাল পাবলিক লাইব্রেরী,পাটনা;উর্দু সরফ,উর্দু নাহু,মোহাম্মাদ আনসারুল্লাহ পৃ. ৩২,১৩;লুগাতে রোযেমাররাহ,শামসুর রহমান ফারুকী,আঞ্জুমানে তারাক্কী উর্দু (হিন্দ) পৃ. ৮৩,৩০২
[2] দেখুন,কাওয়াদে উর্দু,ড. মওলবী আব্দুল হক,পৃ. ৮৭;উর্দু সরফ ও নাহু পৃ. ৫৬;উর্দু সরফ,মোহাম্মাদ আনসারুল্লাহ পৃ. ৩২ কাওয়াদে উর্দু,ফেদা আলী খাঁন,পৃ. ১৫৪,খোদা বখশ ওরিয়েন্টাল পাবলিক লাইব্রেরী,পাটনা;