ইমদাদুল্লাহ - জামিয়া মাদানিয়া, ফেনী
প্রশ্ন
প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ, হুজুরের নিকট নিমেণাক্ত সমস্যাগুলোর সমাধান কামনা করছি।
১। মুহাম্মাদ আওওয়ামাহ, মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ এ ধরনের নামের মধ্যে মুহাম্মাদ শব্দের ইরাব কী হবে এবং এটা মুরাক্কাবের কোন প্রকারের অন্তর্ভুক্ত।
২। حيث -এর পরে জুমলা না হয়ে মুফরাদ হলে সেই মুফরাদের ইরাব রফা না জর হবে? বিভিন্ন কিতাবে বিশেষত হুযুরের কিতাব যেমন আল-মাদখাল, আল-ওয়াজিয এবং শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ. ও শায়খ মুহাম্মাদ আউওয়ামাহ হাফিযাহুল্লাহ-এর কিতাবসমূহেও স্পষ্টভাবে حيث -এর পরে রফা দেখা যায়। কিন্তু ‘হিদায়াতুন্নাহু’-তে اما ترى حيث سهيل ساطع উক্ত পংক্তিতে ‘সুহাইল’ শব্দকে আমরা মাজরুর পড়েছি এবং বিভিন্ন শুরুহাতেও এমন দেখেছি, এখন সঠিক কী হবে? বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক। আল্লাহ হুযুরকে বাবরকত হায়াতে তায়্যিবাহ দান করুন। আমীন
উত্তর
উত্তর : (ক) এ ধরনের নামগুলি মূলত মুরাক্কাবে বয়ানী। দ্বিতীয় অংশটি প্রথম অংশের সিফাত কিংবা বদল কিংবা আতফে বয়ান কিংবা তাকীদে লফযী। মুহাম্মাদ আওয়ামাহ-এর মধ্যে ‘আওয়ামাহ’ নিসবত বা লকব হিসেবে ‘মুহাম্মাদ’ নামের সিফাত। মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ-এর মধ্যে আব্দুল্লাহ হল মুহাম্মাদ শব্দ থেকে বদল বা আতফে বয়ান কিংবা তাকীদে লফযী। সুতরাং প্রথমাংশের ইরাব হবে পূর্বোক্ত আমেল হিসেবে এবং দ্বিতীয় অংশের ইরাব হবে ‘তাবে’ হিসেবে। কিন্তু ইরাবে হিকায়ী হিসেবে উভয় অংশকে সর্বাবস্থায় অপরিবর্তিত রাখারও অবকাশ রয়েছে। এ তো হল ইরাবের কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক আরবী ভাষার প্রচলিত রীতি হচ্ছে, এ ধরনের মুরাক্কাব নামের প্রত্যেক অংশের শেষে সাকিন পড়া। এখানে আরো দুটি বিষয় মনে রাখতে হবে ১. এ ধরনের মুরাক্কাব নামের মধ্যে কিছু এমনও রয়েছে যে, পরস্পরের সম্পর্ক হল পিতা-পুত্রের। এ ক্ষেত্রে অংশ দুটির মাঝখানে ‘ইবনু’ শব্দ মাহযূফ থাকে। যেমন : محمد على حسن । মুজাম্মাউল লুগাতিল রাআবিয়্যাহ’ কাহেরা (কায়রো আরবী ভাষা একাডেমী)-এর সিদ্ধান্ত মতে এ ধরনের নাম দুভাবে পড়া যায়। এক. প্রথমাংশকে পূর্বোক্ত আমেল হিসেবে এবং পরবর্তী অংশকে মুযাফ ইলাই হিসেবে মাজরম্নর পড়া। দুই. সব অংশের শেষে সাকিন পড়া। এটি হয়ে থাকে إجراء للوصل مجرى الوقف । দ্রষ্টব্য : মাজমূআতুল কারারাতিল ইলমিয়্যাহ পৃ. ৩৬-৩৭, উসূলুল লুগাহ ৩/১৭০-১৭১
২. মুরাক্কাব নাম কখনো কখনো بعلبك ও حضرموت -এর মতো মুরাক্কাবে মাযজী হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অংশের শেষে গায়রে মুনসারিফ হিসেবে ইরাব হবে এবং প্রথমাংশের ইরাব অপরিবর্তিত থাকবে। আলামে বা নামের প্রকারভেদ ও হুকুম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আন-নাহবুল ওয়াফী (১/২৯২-৩২০) দেখা যেতে পারে।
উত্তর : (খ)حيث সাধারণত পরবর্তী একটি জুমলার দিকে মুযাফ হয়ে থাকে। পরবর্তী কোনো মুফরাদ শব্দের দিকে মুযাফ হওয়ার দৃষ্টান্ত খুবই কম। অধিকাংশ নাহুবিদের মতে حيث কোনো মুফরাদের দিকে মুযাফ হওয়া শায। তাই এর উপরে কিয়াস করা ঠিক হবে না। সুতরাং যেখানে حيث -এর পরে লফযে মুফরাদ উল্লেখ থাকবে সেখানে আরেকটি শব্দ মুকাদ্দার মেনে মুফরাদকে জুমলায় পরিণত করতে হবে। পক্ষান্তরে কোনো কোনো নাহুবিদ মনে করেন যে, حيث মুফরাদের দিকে মুযাফ হতে পারে এবং সেই মুফরাদ শব্দটি মুযাফ ইলাইহি হিসেবে মাজরম্নর হতে পারে। এর পক্ষে তারা প্রশ্নোক্ত কবিতার পংক্তিসহ এক দুটি শাহেদ পেশ করেছেন।
কিন্তু পৃথক রায়টি অধিক শক্তিশালী ও অধিক ফসীহ। তাই حيث -এর পরে বাহ্যত মুফরাদ উলেস্নখ থাকলেও সেটিকে জুমলার প্রথমাংশ ‘মুবতাদা’ হিসেবে রফা দিতে হবে। তবে দ্বিতীয় রায় অনুসারে মাজরম্নর পড়াও জায়েয রয়েছে। উল্লেখ্য যে, প্রশ্নোক্ত কবিতায় سهيل শব্দটিকে অনেকে ‘মারফু’ হিসেবেও যবত করেছেন। দ্রষ্টব্য- মুগনিল লাবীব পৃ. ১৪৮; শরহু শাওয়াহিদে ইবনে আকীল, পৃ. ১৬০
حيث সম্পর্কে বিসত্মারিত জানার জন্য উপরোক্ত কিতাবদুটিসহ নিমেণাক্ত কিতাবসমূহ দ্রষ্টব্য। (লিসানুল আরব (হাইছু মাদ্দা) তাজুল আরূস ৫/২২৮-২৩১, আওযাহুল মাসালিক ইলা আলফিয়াতি ইবনে মালেক ৩/১০৬ আন নাহবুল ওয়াফী ২/২৯০, ৩/৭৮-৮০