যিলহজ্ব ১৪৩৫ || অক্টোবর ২০১৪

আব্দুল হালীম - শরহে বেকায়া সিলেট

প্রশ্ন

(ক)حروف تحضيض   হলো মোট পাঁচটি যথা : ألا - هلا - لولا - لوما - ألَّا  এভাবেই ‘মাওসুআতুন নাহব ওয়াস সারফ’ এবং ‘জামিউদ দুরূসিল আরাবিয়্যাহ’ এবং আরো অনেক কিতাবে বলা হয়েছে। কিন্তু ‘মুখতাসারুল মাআনী’-এর ২০৮ নং পৃষ্ঠার তিন নম্বর হাশিয়ায় ‘তাজরীদ’-এর হাওয়ালায় ব্যক্ত করা হয়েছে যে حروف تحضيض ছয়টি। ছয় নাম্বার হরফ হল لو এখন প্রশ্ন হল لو  কি তাহদ্বীদ্ব-এর জন্য আসে? যদি তা ব্যবহার হয় তাহলে তার ‘শাহেদ’সহ জানালে উপকৃত হব আর যদি ব্যবহার না হয় তাহলে এ হাশিয়ার ব্যাখ্যা কী?

(খ)عشر  ও عشرة  -এর শীন হরফের হরকতের ব্যাপারে ‘মাওসুআতুন নাহব ওয়াস সারফ’-এ বলা হয়েছে عشرة -এর শীন যবর বিশিষ্ট হবে যদি তা মুফরাদ হয়। আর যদি মুরাক্কাব হয় তাহলে কখনও সাকীন হবে বা মাফতূহ হবে বা মাকসূর হবে। আর عشر -এর শীন সাকীন হবে মুফরাদ-এর সুরতে। আর মুরাক্কাবের মধ্যে মাফতুহ হবে। অথচ আলকাউসারের নভেম্বর ২০১০ সংখ্যায় ‘জামিউদ দুরূসিল আরাবিয়্যাহ’-এর হাওয়ালায় বলা হয়েছে যে, যদি মা’দূদটি মুযাক্কার হয় তাহলে উভয়টির শীন মাফতুহ হবে। আর যদি মা’দূদটি মুআন্নাস হয় তাহলে শীনের হরকত সাকীন হবে। হুযুরের কাছে আকুল আবেদন এই যে, দয়া করে উভয়ের মধ্যে কোন কায়দাটি সঠিক তা জানিয়ে আমাদেরকে উপকৃত করবেন।

উত্তর

(ক) প্রসিদ্ধ হল ‘হুরূফুত তাহদ্বীদ্ব’ চারটি। যথা :

 هلَّا - لولا - لوما - ألَّا মুখতাসারুল মাআনীতে এই চারটির কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে পরবর্তী কোনো কোনো আরবী ভাষাবিদ لو এবং ألا এ দুটিকেও হুরূফে তাহদ্বীদ্ব এর মধ্যে গণ্য করেছেন। মুখতাসারুল মাআনীর হাশিয়ায় যে ‘আত তাজরীদ’-এর হাওয়ালা দেয়া হয়েছে তা মুখতাসারুল মাআনীরই একটি হাশিয়া। এটি তৈরি করেছেন তের শতকের মিসরের আদীব শায়খ মুসত্মফা ইবনু মুহাম্মাদ আল-বান্নানী। তিনি এর অধিকাংশই মূলত তালখীস করেছেন নিজ শায়খ মিসরের আদীব ও ভাষাবিদ মুহাম্মাদ ইবনে আলী আস-সাববান (মৃত্যু ১২০৬ হি.) লিখিত মুখতাসারুল মাআনীর হাশিয়া থেকে।

      যাহোক لو এবং ألا কখনো কখনো তাহদ্বীদ্ব তথা উৎসাহ ও উদ্দীপনার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু এই অর্থটি কি এই হরফ দুটির স্বতন্ত্র অর্থ নাকি এ দুটির العرض و الطلب -এর অর্থ থেকেই উৎপন্ন বা এরই অংশ- এ বিষয়ে আরবী ভাষাতাত্ত্বিক বিশেস্নষণে মতানৈক্যের অবকাশ রয়েছে। لو  এই হরফটি ‘তাহদ্বীদ্ব’-এর অর্থে ব্যবহার হওয়ার পক্ষে শায়খ বান্নানী ‘আত তাজরীদ’-এ কোনো শাহেদ বা উদাহরণ পেশ করেননি। তবে ড. আববাস হাসান রচিত ‘আন-নাহবুল ওয়াফী’ কিতাবে এই অর্থে দুটি উদাহরণ পেশ করা হয়েছে- لو تحترم القانون فتأمن العقوبة এবং কোনো হাসপাতালে কোনো কৃপণ ব্যক্তিকে দেখে কেউ বলল  لو تتبرع لهذا المستشفى فتنال خير الجزاء দ্রষ্টব্য, আন নাহবুল ওয়াফী ৪/৩৬৯ এবং ৫০৩।

(খ)عشر  ও عشرة   এর শীন হরফের হরকত সম্পর্কে আরবী লোগাতে বিভিন্নতা রয়েছে। আলকাউসারে এ সম্পর্কে যে যাবেতাটি উল্লেখ করা হয়েছে তা এ বিষয়ের সুপ্রসিদ্ধ একটি যাবেতা, যা লুগাতের নির্ভরযোগ্য কিতাবের উদ্ধৃতিতে লেখা হয়েছে। আর আপনি ‘মাওসুআতুন নাহব’-এর বরাতে যা উল্লেখ করেছেন সেটিও  হয়ত এ বিষয়ের একটি ভিন্ন যাবেতা। কিন্তু মাশহুর লোগাত অনুসারে, عشر  ও عشرة  মুফরাদ হোক বা মুরাক্কাব হোক উভয় অবস্থায় মা’দূদটি মুযাক্কার হলে শীন মাফতুহ হবে। আর মা’দূদটি মুআন্নাস হলে শীনের হরকত সাকীন হবে। (‘আননাহবুল ওয়াফী, খ- ৪ পৃষ্ঠা ৫২০-৫২২) ‘মাওসুআতুন নাহব’ কিতাবটি এ মুহূর্তে আমার সামনে নেই। তবে আপনি যেভাবে উল্লেখ করেছেন তাতে তা মাশহুর লোগাতের সাথে কোথাও কোথাও সাংঘর্ষিক হবে। কিন্তু আপনার উল্লেখিত এই যাবেতার সাথে যদি একটি কয়েদ যোগ করা হয় তবে তখন আর তেমন কোনো তাআরুয বাকি থাকে না। সেটি হলো যা ড. মুহাম্মাদ আব্দুল আযীয আন-নাজ্জার উল্লেখ করেছেন। তিনি ‘যিয়ায়ুস সালিক ইলা আউযাহিল মাসালিক’ ৪/১২৪ -এ লিখেছেন-

الأفصح في شين عشرة الفتح مع التاء والتسكين بدونها إذا كانت مفردة، والعكس إذا كانت مركبة

অর্থাৎ মুফরাদ অবস্থায় শেষে যদি ‘তা’ (আলামাতে তানীছ) যুক্ত হয় তবে শীনে ফাতাহ হবে। আর যদি শেষে ‘তা’ যুক্ত না হয় তবে শীনে সাকিন হবে। কিন্তু মুরাক্কাব অবস্থায় এর বিপরীত হবে অর্থাৎ আলামাতে তানীছ ‘তা’ যুক্ত হলে শীনে সাকিন হবে এবং শেষে ‘তা’ যুক্ত না হলে শীনে ফাতাহ হবে’।

এখন চিন্তা করলেই দেখবেন যে যাবেতার এই তাবীর এবং আলকাউসারে বর্ণিত তাবীরের মাঝে প্রকৃতপক্ষে কোনো সংঘর্ষ নেই বরং কেবল ইবারতের পার্থক্য। 

এই সংখ্যার অন্যান্য শিক্ষা পরামর্শসমূহ পড়ুন